আমি তাঁকে চিনিনা কিন্তু মুখটা পুরোপুরি চিনি। বিভিন্ন প্র্যাংক ভিডিওতে তার সুঅভিনয় দেখেছি! আজ তাঁর পেইজ অথবা ব্যক্তিগত আইডি (দ্বিধান্বিত) থেকে তিনি পুলিশকে ঘৃণাভরে ছিঃ ছিঃ বলেছেন;
আমি তাঁর ভিডিওতে করা অভিযোগগুলো শুনছিলাম। হঠাৎ করেই খেয়াল করে দেখলাম তিনি যে এলাকা নিয়ে কথা বলছেন তা যাত্রাবাড়ী এলাকা; একটু থমকেই গেলাম। মনোযোগ দিয়ে তাঁর অভিযোগগুলো ভিডিওতে শুনলাম।
তিনি ও এক আপু বাইকে করে কমলাপুর যাচ্ছিলেন। ফ্লাইওভারে উঠে ভাইটি কাউকে ফোন করতে বাইক থামালেন। হঠাৎ তিনি দেখলেন পাশের বাড়ি থেকে ৩-৪টি ছেলে খুব অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করে টিজ করছে তার সাথের আপুকে। পরমুহূর্তেই তাঁরা সেই বাসার ওখানে চলে যান এবং যাত্রাবাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির অফিসারদের কাছে সাহায্য চান! যাত্রাবাড়ি ফাঁড়ির ইনচার্জ এস আই আজিজ তাদেরসহ উক্ত বাসায় যান। গিয়ে দেখেন ওখানে ৪ জন নয় ৩ জন ছেলে এবং তারা এসএসসি পরিক্ষার্থী!!
তাদের বাবা মায়েরা করজোরে বারবার বাইকার ভাই ও আপুর কাছে ক্ষমা চান এই বলে যে, আমরা জানিনা ওদের কী অপরাধ, আপনারা দয়া করে ক্ষমা করে দেন। ওরা এসএসসি পরীক্ষার্থী!! বাইকার ভাই সেখান থেকে ব্যাপারটা সুরাহা করে বাইরে চলে আসেন। বাহিরে এসে তিনি ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আজিজের সাথে চা পান করেন এবং নিজ গন্তব্যের পথে চলে যান।
এবার আসা যাক পুলিশ অফিসারের ভুল বিষয়ক প্রসঙ্গে:
প্রথম যে অফিসারকে তিনি রাস্তায় অভিযোগ করেন তিনি এএসআই শাহাদাৎ ; বাইকার ভাইয়ের বর্ণিত অভিযোগের চাক্ষুষ সাক্ষী তাঁরা নিজেরা দুজনই! এএসআই শাহাদাৎ তাকে বললেন আপনারা থানায় যেয়ে অভিযোগ করেন আমরা ব্যবস্থা নেবো। আইনগত জায়গা থেকে খুব বড় ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন তা নয়। কারণ থানা অতীব নিকটবর্তী আর সরাসরি এএসআইরা সকল বিষয়ে সবসময় অগ্রবর্তী হতে পারেন না, কিছু বাঁধাও থাকে।
পরমুহূর্তে বাইকার ভাই ৯৯৯ এ কল করলে এসআই আজিজ তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে যান এবং ব্যাপারটার সুরাহা করে আসেন। তিনি ৯৯৯ এর সাহায্য নিলেন, ফাঁড়ির ইনচার্জ ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষয়টি সুরাহাও করে আসলেন।
ঘটনা পরবর্তী বাইকার ভাইয়ের প্রতিক্রিয়া :
পুলিশের হেঁটে যাওয়ার দৃশ্য দেখিয়ে তার বলা; স্যালুট এবং ছি: ছি: ছি:! এত ঘৃণা কোত্থেকে আসেরে ভাই? এক পুলিশ আপনাকে থানায় অভিযোগ করতে বলে দোষ করে ফেললো! আরেক পুলিশ সদস্য ৯৯৯ এর মাধ্যমে আপনার অভিযোগ সঠিক জায়গায় প্রদান করলো এবং আরেকজন ঘটনাস্থলে এসে আপনাকে নিয়ে গিয়ে পুরো বিষয়টা সুরাহা করিয়ে আসলেন!! এসব কী কিছুই না? এত ঘৃণা তাই শুধু ঘৃণার অংশটুকুই উপস্থাপন করলেন?
আপনি ভালো অভিনয় করেন তা জানি, কিন্তু তা এতটা উচ্চমার্গীয় হবে তা ভাবিনি! আচ্ছা একটা প্রশ্ন ঘুরছে মাথায় এসএসসি পরীক্ষার্থী ছেলেগুলো বাসার ছাদে গাঁজা সেবন করছে সেটি ফ্লাইওভার থেকে কিভাবে বুঝলেন? এটা আমার জানতে চাওয়া কারণ আপনি তো ছাদে উঠেননি! আমরা প্রায়শই ঘটনার বিস্তৃতি নানান আঙ্গিকে ঘটাই কিনা? এই দেখেন না আপনি ৯৯৯ এর সাহায্য, ডিউটি অফিসার এস আই নূরজাহান, রেডিও অপারেটর আলতাফের ভূমিকা, ফাঁড়ির এস আই আজিজের ধনাত্মক ভূমিকা নিয়ে একটি শব্দও ব্যয় করেননি!
আপনাদের মত অনেকেই যখন ৯৯৯ এ ১৪ হাজার প্র্যাংক কল দিয়ে ফাজলামি করেন! আমরা পুলিশেরা একটিবারের জন্যও বলে উঠতে পারি না – ছিঃ!
ভালো-মন্দের মিশেলে যে সমাজ, সে সমাজের প্রত্যেকটি পেশায় ও শ্রেণিতে ভালো-মন্দের মিশেল থাকবে এটাই স্বাভাবিক…
আমারও ইচ্ছা ছিল আপনাকে স্যালুট জানানোর! পারলাম না। কারণ আপনার জাজমেন্টাল আচরণ আমাদের ব্যথিত করার পাশাপাশি বিস্মিতও করেছে।
নাহ ছিঃ বললাম না, একরাশ বেদনাই রেখে গেলাম…
ভালো থাকবেন আপনারা, ভাল থাকুক আপনার অবাক করা নাগরিক মন ও নাগরিক সাংবাদিকতা।
লেখক: সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার (ডেমরা জোন) (লেখকের ফেসবুক পেইজ থেকে সংগৃহীত)