আতিউর রহমান : মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের স্বপ্নের, আমাদের আখাঙ্খার একটি বিস্ফোরণ ঘটেছিল। যারা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন তারা সবাই ছিলেন সাধারণ ঘরের সন্তান। ৭৮ শতাংশ যোদ্ধাই ছিলেন কৃষকের সন্তান। তাদের স্বপ্ন ছিল, যদি দেশ স্বাধীন হয়, আমরা চাকুরি পাব, বাবা-মায়ের কষ্ট কমবে। দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে। দেশে শিল্প হবে, বেকারত্ব কমবে। এই চেতনায় তারা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তার চেয়ে বড় কথা, আমাদের একটি সৌভাগ্য আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো একজন নেতা পেয়েছিলাম। তিনি মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে দেশকে স্বাধীন করলেন। স্বাধীনতার পরে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশটিকে মোটামুটিভাবে দাঁড় করালেন। রেল লাইন, রাস্তাঘাটগুলোকে পুণঃনির্মাণ করে কিছুটা ভালো পর্যায়ে নিয়ে গেলেন। সবচেয়ে ভালো যে কাজটি করেছিলেন, সেটি হচ্ছে বঙ্গবন্ধু একটি সংবিধান তৈরি করেছিলেন।
এই সংবিধানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা আছে। সংবিধানের দ্বিতীয় খ-ে রাষ্ট্রীয়নীতির মৌলিক দিক নামে একটি অধ্যায় আছে। সেখানে ধারাগুলো খুব স্পষ্ট। যেমন: ১৪ থেকে ১৮ পর্যন্ত প্রত্যেকটি ধারাতে আছে, যারা অবহেলিত, যারা পিছিয়ে পড়া আছে, কৃষক, শ্রমিক এবং অন্যান্য যারা পিছিয়ে পড়া মানুষ, তাদের জন্য রাষ্ট্র কাজ করবে। রাষ্ট্র সবসময় চেষ্টা করবে বৈষম্য দূর করার। ধারা-১৮/এ- তে আমাদের পরিবেশ এবং জীব বৈচিত্র রক্ষা করার জন্যও উল্লেখ আছে। কোনো দেশের সংবিধানে এমন কথা লেখা থাকে না। কিন্তু আমাদের সংবিধানে খুব সুন্দর করে এগুলো লেখা আছে। তাছাড়া রাষ্ট্র শিক্ষার দায়িত্ব নিবে, স্বাস্থ্যের দায়িত্ব নিবে, এমন করে লেখা আছে। সেই কথা যদি চিন্তা করি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান খুব অল্প সময়ে দেশকে সঠিক পথে নিয়ে এসেছিলেন।
কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য যে, এমন একজন মহান নেতাকে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিরা শারীরিকভাবে সরিয়ে দিল। সপরিবারে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। তারপর দেশ অনেক উলটপালট হলো। স্বাধীনতা বিরোধীরা দেশে ক্ষমতায় এলো। তারপর আবার ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুর কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা এলেন। তিনি এসে, দেশকে আবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নিয়ে আসলেন। পাঁচ বছর পর্যন্ত দেশের অনেক পরিবর্তন আনলেন। দেশকে উন্নতির পথে নিলেন। সংবিধান অনুযায়ী সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করলেন। বিশেষ করে, বয়স্ক ভাতা, বিধবা বাতাসহ সামাজিক অনেক সংস্কারমূলক কাজ হাতে নিলেন। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য আবার তিনি ২০০১ সালের নির্বাচনে ক্ষমতায় আসতে পারলেন না। মাঝে ৮-৯ বছর আবার দেশ উলটপালট হল। দেশে দুর্নীতি বাড়ল। দুর্নীতি এমন পর্যায়ে গেল, আমরা পুরো পৃথিবীতে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন ছিলাম। তাও আবার টানা পাঁচ বছর। তারপর জনগণ আবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় আনলেন। তিনি এখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মূল কাজগুলো করছেন।