বাংলার জন্য ক্লিক করুন
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
   * তিন বিদায়ী জাপানী বিনিয়োগকারীকে সংবর্ধনা দিলো নোভো কার্গো   * রমজানে বাজার নিয়ন্ত্রণে কঠোর হওয়ার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর   * বাঙালির সব অর্জনই এসেছে ত্যাগের মাধ্যমে: প্রধানমন্ত্রী   * যুক্তরাজ্যে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার সাম্রাজ্য   * মৌলভীবাজারে ২৫ কোটি টাকার দরপত্র দাখিলে অনিয়মের অভিযোগ   * জিএম কাদের-চুন্নুকে বহিষ্কার করলেন রওশন এরশাদ   * সমসাময়িক বিষয় নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে আছি: ওবায়দুল কাদের   * বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বন্ধুত্ব অব্যাহত থাকবে: ডা. রাজীব রঞ্জন   * বিএনপি নেতাদের সঙ্গে ইইউ ইলেকশন এক্সপার্টদের বৈঠক   * ভবনের পাইলিং-ছাদ ঢালাইয়ে থাকতে হবে রাজউক কর্মকর্তাকে  

   উপ-সম্পাদকীয় -
                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                 
পাম্পে বিস্ফোরণে দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে একজনের মৃত্যু

Online Desk(DTV BANGLA NEWS):   রাজধানীর মুগদায় সিএনজি পাম্পে ট্রাকে গ্যাস নেওয়ার সময় সিলিন্ডার বিস্ফোরণে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় একজন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (২১ মার্চ) ভোর ৫টার দিকে মুগদা স্টেডিয়াম সংলগ্ন বেস্ট ইস্টার্ন সিএনজি পাম্পে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতের নাম সাদ্দাম হোসেন (২৫)। তিনি ওই ট্রাকের হেলপার ছিলেন। মুগদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জামাল উদ্দিন মীর ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ভোরে বেস্ট ইস্টার্ন সিএনজি পাম্পে ট্রাকটি গ্যাস নিচ্ছিল। পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন চালকের সহযোগী। এমন সময় বিকট শব্দে ট্রাকের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়। এতে সাদ্দামের শরীর প্রায় ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায় সে। আহত হয় ট্রাকেরর এক শ্রমিক। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই যুবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে সিলিন্ডারে গ্যাসের প্রেশার অনেক বেশি হয়ে গিয়েছিল অথবা সিলিন্ডারটি মেয়াদ উত্তীর্ণ ছিল। তাই দুর্ঘটনা ঘটে। তবে বিস্তারিত জানার জন্য কাজ চলছে। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) মর্গে পাঠানো হয়েছে।

সূত্র: বাংলানিউজ

পাম্পে বিস্ফোরণে দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে একজনের মৃত্যু
                                  

Online Desk(DTV BANGLA NEWS):   রাজধানীর মুগদায় সিএনজি পাম্পে ট্রাকে গ্যাস নেওয়ার সময় সিলিন্ডার বিস্ফোরণে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় একজন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (২১ মার্চ) ভোর ৫টার দিকে মুগদা স্টেডিয়াম সংলগ্ন বেস্ট ইস্টার্ন সিএনজি পাম্পে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতের নাম সাদ্দাম হোসেন (২৫)। তিনি ওই ট্রাকের হেলপার ছিলেন। মুগদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জামাল উদ্দিন মীর ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ভোরে বেস্ট ইস্টার্ন সিএনজি পাম্পে ট্রাকটি গ্যাস নিচ্ছিল। পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন চালকের সহযোগী। এমন সময় বিকট শব্দে ট্রাকের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়। এতে সাদ্দামের শরীর প্রায় ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায় সে। আহত হয় ট্রাকেরর এক শ্রমিক। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই যুবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে সিলিন্ডারে গ্যাসের প্রেশার অনেক বেশি হয়ে গিয়েছিল অথবা সিলিন্ডারটি মেয়াদ উত্তীর্ণ ছিল। তাই দুর্ঘটনা ঘটে। তবে বিস্তারিত জানার জন্য কাজ চলছে। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) মর্গে পাঠানো হয়েছে।

সূত্র: বাংলানিউজ

অহংবোধ আর গর্বের তর্জনীর শেষ পরিণতি
                                  

মো: ফজলুল হক মাস্টার: 

শ্রষ্টার সৃষ্টি আমরা। নির্মাতা এবং আকৃতিদাতা তিনি। বয়সের তারতম্য, রোগ-বালাইয়ের কারণে আমাদের আকৃতি বিভিন্নরূপ দেখা দেয়। ভেঙে যায় সব কিছু। আমরা নশ^র। কর্মগুণে আমাদের পরিচিতির ভালোমন্দের নানান দিক উঠে আসে। অনন্য সাধারণ মানবিক গুণসম্পন্ন মানুষদের ভারি ওজনদার করে তোলে। মানুষের মৌলগুণ হলো বুদ্ধিবৃত্তি এবং বিবেক আর তাদের চরিত্রটার অনুরূপ পরিস্ফুটন ঘটুক- এটাই কাম্য। শক্তিশালী রাজারা শক্তির মহড়া দেয়। জয় করতে চায় পুরো বিশ^। নির্যাতন, শোষণ চলে দুর্বলদের ওপর এবং সংখ্যালঘিষ্ঠদের ওপর। রাজশক্তির পরিবর্তন হয়ে রাজা প্রজা বনে যায়। অহংবোধ আর গর্বের তর্জনীর শেষ পরিণতি চাক্ষুষ করে সবাই কিন্তু সাময়িক লোভ আর মোহের বশে বিপথগামী হয়ে ওঠে তখন বুদ্ধিবৃত্তি হয়ে যায় খাটো। ওজনটাও কমে আসে তখনই। নমরুদের মতো দাপুটে বাদশার নাকে ঢোকা মশা মস্তকে পৌঁছালে শেষ হবার করুণ কাহিনি সবারই জানা। তারপরও ভোগবাদীদের দৌরাত্ম্য কমে না। ভালো মানুষ পাওয়া এখন স্বপ্নলব্ধ বিষয়। এমপি শহিদ ইসলাম পাপুল, নাঈমুর রহমান দুর্জয় এবং এনামুল হকদের দুর্নীতি আর পাহাড়সম সম্পদের যে খবর পাওয়া যাচ্ছে তা কিন্তু সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে। দলটির ঐতিহ্যের ইতিহাস আর অর্জনের ইতিহাস খাটো না। আবার নানাবিধ ষড়যন্ত্রের কবলে থাবা খেয়ে দুর্ভোগটাও পোহাতে হয়েছে কম না। দুর্জয় এবং এনামুল হকের আমলনামা কেন দলটির হাতে নেই, কেনইবা সরকার-প্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নখদর্পণে নেই- তা বোধগম্য হবার নয়। কাউয়া, ফেউর কোন পথ দিয়ে দলে ঢোকে- এসব ভাবতেই মন বিষন্ন হয়ে যায় নিজের অজান্তেই।
৭১তম জন্মবার্ষিকী এবং মুজিব শতবর্ষ উদযাপনের পূর্বেই সংগঠন এবং কজন সাংসদের পুরোটাই বিশুদ্ধকরণে আত্মনিয়োগ করাটা প্রয়োজন ছিল বলে আমরা মনে করি। আত্মমর্যাদা রক্ষার জ্ঞান যাদের নেই তাদেরকে সাংসদ হবার সুযোগ দেওয়া কি সঠিক? অসম্ভব। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ভাষণে স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন, ঘরে ঘরে দুর্গ তৈরি করে স্বাধীনতার জন্যে যুদ্ধ করতে বলেছিলাম। এখন ঘরে ঘরে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে আন্দোলন চাই। বঙ্গবন্ধুকে আমরা শ্রদ্ধা করি, তাঁর নির্দেশনা মানতে পারব না? প্রশ্নটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে কেন করতে পারব না? করোনার কিট তথ্যে লুকোচুরি, করোনায় আক্রান্ত তথ্যে এবং মৃতদের তথ্যেও গোঁজামিল- এসব কেন হচ্ছে! কারা এটার দেখভাল করছে? তারা কি রাষ্ট্রের শত্রæ? সবকিছুতেই হযবরল হতে থাকলে করোনা নিবৃত্তকরণে সরকারের পদক্ষেপ তো কার্যকরী হবে না।
নোয়াখালী-৪ আসনের এমপি একরামুল চৌধুরী স্বাস্থ্যখাতের অনিয়মের কথা ফেসবুকে স্টেটাস দিয়েছিলেন, এটা কিন্তু একজন এমপির বিচক্ষণহীনতার লক্ষণ। তিনি সংসদীয় কমিটিতে কথা বলতে পারতেন- পারতেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকেও জানাতে। তাছাড়া রাশেদ খান মেননও সরকারের শরিক, ‘দুর্নীতিতে বেহাল স্বাস্থ্যখাত’ এই মর্মে তিনিও পত্রিকায় কথা বলেছেন। ঘরের মানুষ যদি বাইরে কথা বলেন- তাতে কিন্তু সরকারের গৃহীত কার্যক্রম অবশ্যই ম্লান হয়ে যাবে। একরামুল চৌধুরীকে এমপি হিসেবে রাখলে তার ভিডিও ভাইরালের দায় সরকারকেই নিতে হবে? এবং প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠবে জনমনে- সরকার কি করোনা সংকট মোকাবিলায় ব্যর্থ? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, অর্বাচীন কিছু এমপি কি আওয়ামী লীগের খুবই প্রয়োজন?
বড় দুশ্চিন্তায় থাকেন তারা, যারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে শ্রদ্ধা করেন। যারা তাঁর নেতৃত্বের ওপর পূর্ণ আস্থা রাখেন। জোট শাসকদল দু’শ এর অধিক পদে নির্বাচনী কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছিল। তারা কিন্তু তাদের কোনোই কাজে আসেনি বা আসছে না। প্রত্যেক এমপি-মন্ত্রীর পেছনে কাউয়া বা ফেউর রয়েছে, তারা মধু আহরণের পর উড়ে যাবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য বিভাগে ‘মিঠু সিন্ডিকেট’, এমনকি সিন্ডিকেট হোতার নামও পত্রিকান্তরে এসেছে- এখনই সময় স্বাস্থ্য বিভাগকে দুর্নীতিমুক্ত এবং দালালদের বিদায় করবার।
করোনাকালে বিদ্যুৎ বিল নিয়েও কথা উঠেছে। পূর্বের বিদ্যুৎ বিলের তুলনায় ডিজিটাল বিদ্যুৎ বিল দ্বিগুণ আসছে। সাধারণ মানুষের আয় কিন্তু দ্বিগুণ হয়নি। গ্যাসবিলও বাড়তি। যারা এসব নিয়ে মুখ খুলেছেন তাদেরকে রাষ্ট্রের শত্রু মনে করার কোনো কারণ নেই। ধীরে ধীরে জনমনে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হচ্ছে। আস্থা কমে গেলে ওই ফাটল পথে বিরোধীরা ঢোকার চেষ্টা করবে এটাই স্বাভাবিক। দলীয় এমপি যারা চেইন অব কমান্ডের বাইরে কথা বলেছেন তারা মানুষের মনে আশাহত অবস্থার সৃষ্টি করছেন। অন্যদিকে করোনার থাবায় দিশেহারা মানুষ, তারা নানা প্রতিশ্রুতি চায়। আতঙ্ক আর ভয় যদি তাদের নিত্যসঙ্গী হয়ে যায় এবং জীবনযুদ্ধে যদি পরাহতভাবের উদয় হয় তারা ষড়যন্ত্রকারীদের উস্কানিমূলক কথাকেই অন্তকরণ করতে থাকবে- তখন নিশ্চয়ই বিপজ্জনক অবস্থার অবতারণা ঘটতে পারে।
ষড়যন্ত্রকারীরা অতীতে খুনীদের প্রকাশ্যে মঞ্চে উঠিয়ে বলাতে পেরেছে- ‘আমিই মুজিবের খুনি’; তখন কিন্তু আমজনতা হ্যাঁ করে দেখেছে। বুদ্ধিজীবীদের একটা অংশ আনন্দিত হয়ে দোলনায় দোল খেয়েছে। সমাজের আমজনতা ন্যায়ভিত্তিক সমাজ চায়। তাইতো ২০০৮ সালের নির্বাচনে অকল্পনীয় বিজয় হয়েছিল মহাজোটের। সমাজ রাষ্ট্রের অধিকাংশের স্বপ্ন ভালো শাসকের। জনগণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর মাত্রাতিরিক্ত ভরসা রাখে। প্রধানমন্ত্রীর উপলব্ধিটা জনমানসে অটুট থাকুক- প্রত্যাশা আমাদের অনুরূপই।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এক নতুন রূপ পরিগ্রহ করেছে। প্রশাসনিক দক্ষতায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনিই বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোডম্যাপে বিকশিত করে বিশে^র দেশে দেশে নতুন মাত্রায় আত্মমর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন। আপনি দেশের মানুষকে ভালোবাসেন। দেশবাসীও আপনাকে ধারণ করেছে হৃদয়ে; কিন্তু তার পরও মানুষ নিজের জীবনকেও বেশি ভালোবাসে। করোনা সংকটকালীন সময়ে আত্মীয়-পরিজনরা লাশ দাফনে অংশ নিচ্ছে না। আবার বৃদ্ধ মাতা-পিতাকেও জীবনের মায়ায় ফেলে রেখে আসছে জঙ্গল বা রাস্তায়। জীবন বিপন্ন মানুষদের পুঁজি করা খুবই সহজ। ওঁৎ পেতে থাকা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী বলয় কোন ফাটল পথে ঢুকে যাতে দেশটাকে ক্ষত-বিক্ষত করতে না পারে সেভাবে সমাজ-রাষ্ট্রের বন্ধনকে সরল সমীকরণে হৃদয়ে গেঁথে রাষ্ট্র পরিচালনার বিকল্প কিছুই নেই।

মোঃ ফজলুল হক মাস্টার
জামালপুর
মোবাইল: ০১৭২১-৫৭৫৪৯৩

সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে সেবা খাতকে ব্যাংকে লেনদেনের উপর বন্ধক বিহীন ঋণ দেয়া
                                  

জাহিদ হোসেন ফিরোজ;

পৃথিবীতে মার্চ ২০২০ থেকে কোভিড ১৯ এর মহামারীর কারণে অর্থনীতিতে যে ধ্বস সৃষ্টি হয়েছে তাতে এই বিপর্যয় ঠেকাতে বিভিন্ন দেশের সরকার তাদের জনগণকে কিভাবে পুষিয়ে দেবে সেই কাজে ব্যস্ত। সরকারের কোনো প্রণোদনা বা ঋণ ২০২০ সনের এই করোনাকালে দেশের অতি ধণী ১ কোটি ৩০ লক্ষের জন্য প্রযোজ্য হওয়া উচিত না। কারণ কোভিড জনিত কারণে পৃথিবীর অর্থনৈতিক মন্দা অতি ধনীদের স্পর্শ করবে না। পাশাপাশি দেশের গন্ডি ছেড়ে যারা বিদেশে ব্যবসা ও স্থাপনা করেছে; তাদের বিষয়ে দেশের ব্যাংকের কোন দায়িত্ব থাকা উচিত না।
বিশিষ্ট্য অর্থনীতিবিদদের মতে, ৬ কোটি ১৫ লক্ষ লোক এই করোনা কালে দরিদ্র সীমার নীচে নেমে গেছে। দেশের রপ্তাণী বাণিজ্য এক বছর আগে থেকেই অবনমন চলছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে মার্শাল প্ল্যান গ্রহণ করে ইউরোপের দেশগুলো তাদের অর্থনীতিকে আগের চেয়ে উন্নত করেছিল।
ক) পৃথিবীব্যাপী কোভিড ১৯ এর প্রাক্কালে: বৃটেনের সরকার যাদের নূন্যতম ১৬ হাজার পাউন্ড ব্যাংকে জমা ছিল; অন্যদেরকে প্রণোদনা দিয়ে তাদেরকে বলেছে যে, আগে সেখান থেকে খরচ করে চলতে হবে।
খ) আমেরিকার সরকার যাদের ১০ হাজার ডলারের নিচে আয় তাদেরকে প্রথম স্ল্যাবে টাকা দিয়েছে। এরপর প্রয়োজন ও আবেদন অনুযায়ী স্ল্যাব বাড়িয়েছে।
গ) পাকিস্তান সরকার কমিউনিটি বেইজড ফ্রি ওয়েব পোর্টাল আপলোড করেছে। যাদের যা সমস্যা তারা তা সেখানে আপলোড করার জন্য। তারা ১ কোটি ২০ লক্ষ লোককে ৪ মাস ধরে মাসিক ১২ হাজার টাকা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
ঘ ) বাংলাদেশ সরকার অতি দরিদ্রদের জন্য ঘর করে দেয়া সহ অর্ধকোটি লোককে সরাসরি তাদের মোবাইলে টাকা দিয়েছে। কারা পেয়েছে সেটা একটা ওয়েব পোর্টালে দিয়ে দিলে কিংবা প্রিন্ট মিডিয়ায় দিয়ে দিলে অনেক প্রশ্ন কমে যেতো। একটা দেশের অর্থনীতি যখন বিপর্যস্ত হয় তখন সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে সেই দেশের শিল্পখাত ও সেবাখাতকে পৃষ্ঠপোষকতা করা।
প্রধানমন্ত্রী ১৩ এপ্রিল, ২০২০ ইং তারিখে একটা পরিপূর্ণ প্যাকেজ ঘোষণা দেন। যা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয় দেশের ব্যাংকসমূহকে। ব্যাংকগুলোর কর্তারা সমানে বলে যাচ্ছেন যে, ব্যবসায়ীরা ব্যাংকের টাকা মেরে দিচ্ছে। তাহলে কি করতে হবে ? ব্যাংকগুলো কি তাহলে ঋন দেয়া বন্ধ রাখবে। আর কর্তারা কি তাহলে শুধু বসে বসে বেতন খাবে?
ব্যবসা হচ্ছে অর্থনীতির রক্ত প্রবাহ। আর ব্যবসায়ী হচ্ছে তার হৃদপিন্ড। সেই ব্যবসায়ীকে জীবন দেয়া, বাঁচানো, অক্সিজেন দেয়া একটি সরকারের কাজ বা দায়িত্বের অংশ। একজন ব্যবসায়ী হচ্ছে একজন উদ্যোক্তা। একজন ব্যবসায়ী কখনো বসে থেকে জীবন অতিবাহিত করে না। সে সরকারকে কর দেয়, কর্মসংস্থান করে।
করোনাকাল শুরুর প্রথম থেকেই সরকার ঘোষিত প্যাকেজের মাধ্যমে সরকার বুঝিয়ে দেয় যে, এই বিষয়ে সে সজাগ। একজন ব্যবসায়ীকে ঋণ দেয়ার আগে ও পরে ব্যাংক তার উপর বিভিন্ন রকম দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান, ঘোষিত ও অঘোষিত খরচের কাঁচি চালাতেই থাকে। এটা করে তারা কিছু বাড়তি আয় করে নেয়। পৃথিবীব্যাপী কোভিড ১৯ জনিত কারণে অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়লেও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আগে থেকেই মন্দা চলছিল। বেশীর ভাগ গার্মেন্টস আগে থেকেই বন্ধ হয়ে পড়ছিল।
সরকার ১ লক্ষাধিক কোটি টাকার ১৯টি প্যাকেজ ঘোষণা দিয়েছে। যার সিংহভাগ হবে ব্যাংকের মাধ্যমে। জনগণকে প্রণোদনা দিয়ে বাঁচিয়ে রাখাও সরকারের কাজ। সরকার নিজে খাদ্য সাহায্য দিয়েছে ও দিচ্ছে। যেহেতু সরকারের পর্যাপ্ত মজুদ আছে। সরকার জনগণকেও দরিদ্রদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসতে আহবান জানিয়েছে।
এই প্যাকেজ মোট জিডিপির সাড়ে তিন (৩.৫) ভাগের বেশী না। অতি ধনীদের অন্যান্য দেশের মতো দরিদ্রদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়াতে তেমন একটা দেখা যায় নাই। যা করেছে তা হচ্ছে, সমাজের মধ্যবিত্ত সচেতন অংশ থেকে। ব্যাংকের সবচেয়ে খারাপ দিক হলো যে, সে মর্টগেজ চায়। মর্টগেজ খুবই অযৌক্তিক একটা শর্ত। যে কোন লোন দেয়ার আগে ব্যাংক সেই লোন ফেরত পাওয়ার সম্ভাব্যতা যাচাই করে নেয়। যে কোন লোক মর্টগেজ নিয়ে ব্যাংক হাজির হলেই ব্যাংক তাকে ব্যাংক লোন দেয় না। আবার কোন উদ্যোক্তাকেও লোন দেয় না। গাড়ির জন্য বা গৃহ ঋণ দেয়ার আগে বা অন্য কোন ব্যবসার জন্য ঋণ দেয়ার আগে; ব্যাংক যাচাই করে নেয় সেই ঋন গ্রাহক ঋন শোধ করতে পারবে কিনা। ১৩ এপ্রিল, ২০২০ ইং তারিখে সরকার শিল্পখাত ও সেবা খাতের জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা দিয়েছে। যা বাংলাদেশ ব্যাংকের বিআরপিডি শাখা থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে ।
শিল্পখাত তার ফ্যাক্টরির জায়গা, অন্যান্য জায়গা, তার নতুন ও পুরাতন আমদানি করা মেশিন বন্ধক রেখে ব্যাংক থেকে লোন নিতে পারে। সেবা খাত যদি এটা দিতে পারতো তাহলে তো তারা শিল্পই স্থাপন করে ফেলতো। সেবা খাত হচ্ছে মেধা ও অভিক্ততা। এই অভিক্ততা অর্জন করতে অর্থ ও সময়ের প্রয়োজন হয়।
বন্ধকি বাড়ি, গাড়ি, জায়গা ২০-৩০ ভাগ দামে নিলামে বিক্রি করে খেলাপী ঐ গ্রাহককে পথে বসিয়ে তারপর তাকে জেলে ঢোকানোর ব্যবস্থা করে। যা অযৌক্তিক। বিভিন্ন কারণে একজন উদ্যোক্তা তার ব্যবসা হারিয়ে ফেলতে পারে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সমস্যার কারণে এটা হতে পারে। অতি খরচ বা অতি বাকি দিয়ে। বা অতি সুদের কারণেও হতে পারে।
মূলত যাদের মর্টগেজ দেয়ার মতো সম্পদ রয়েছে, তারাই শুধু ব্যাংকের কাছে ঋণের জন্য আবেদন করতে পারে। তৃতীয় জনের জায়গাও বন্ধক দেয়া যায়। একজন গ্যারান্টরও লাগে। বেচারা গ্যারান্টর কোন লাভের অংশীদার না। তথাপি ব্যাংক কর্মচারীরা গ্যারান্টরের জীবন ওষ্ঠাগত করে ফেলে। আবার হেনস্তা করার জন্য ভাড়াটে লোকজন ও রাখে।
একজন অভিজ্ঞ ব্যবসায়ীকে সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে সুরক্ষা দেয়া হচ্ছে সরকারের কর্তব্য। যারা মর্টগেজ দিতে পারবে না। রাজস্ব বিভাগে দেয়া তাদের স্থিতিপত্র ও ব্যাংকে লেন-দেনের উপর ভিত্তি করে; সরকারের তাদেরকে ঋণ দেয়ার জন্য একটা নূন্যতম বরাদ্দ রাখতে হবে। মর্টগেজ রাখার ব্যাংক মানসিকতা কোনো কোনো পর্যায়ের জন্য শিথিল না হলে অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পরবে। সৎ মানসিকতায় সরকার ঘোষিত প্যাকেজ ব্যাংক মানসিকতার কারণে বাস্তবায়ন হওয়ার সুযোগ নেই। যদিও আয়কর বিভাগে পাশ হওয়া স্থিতিপত্র যাচাই করার কথা বলে এবং ক্রেডিট রেটিং করতে উদারতা পোষণ করে সরকার খুবই যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে। একজন ব্যবসায়ী ব্যাংক বহির্ভূত লেনদেন করার পরে ব্যাংকে যা লেনদেন করে তা না করলে কর বিভাগ তাকে ধরবে। এটা তাকে করতেই হবে। ব্যাংকে এই লেনদেনের উপর ভিক্তি করে তার ঋণ প্রাপ্যতা নির্ধারিত হবে। এই ঋণ প্রাপ্যতার ৩০ ভাগ সে ৩ বছরের জন্য ঋণ হিসাবে দিলে আশা করা যায় যে, গ্রাহক টাকা শোধ করতে পারবে। একমাত্র সমস্যা হচ্ছে এখন, মর্টগেজ। সরকারকে তার ঘোষিত নীতি মালার উপর ভিত্তি করে মর্টগেজ বিহীন লোন দিতে হবে। ঋণ শোধ করার নিয়মে ব্যাঘাত ঘটলে ১২ মাস পর্যন্ত সরকারের গ্রাহককে সময় দেয়া উচিত। কারণ ব্যবসার গতি সব সময় এক রকম থাকেনা।
সরকার প্রায় ১৬,৫৫০ কোটি টাকা এপ্রিল ও মে ২০২০ এর দুই মাসের সুদ মওকুফ করেছে। পাশাপাশি ৯ মাসের জন্য যে কোন ঋণের শ্রেণীমান নির্ধারণ করতে বলেছে।এটা স্বস্তিদায়ক হবে। তবে এটা ১২ মাসের জন্য করলে আরও স্বস্তিদায়ক হবে। কি কারণে জানি না আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য এটা প্রযোজ্য হয় নাই। ভুল করে কিনা কে জানে। এক দেশে দুই নীতি।
প্রত্যেক গ্রাহককে অনধিক ১ কোটি টাকা করে সুদ+আসল মওকুফ করলে ১৬,৫৫০ জন গ্রাহক এই টাকা মওকুফ পেতো। বা ৫০ লক্ষ টাকা করে মওকুফ করলে দ্বিগুন প্রান্তিক গ্রাহক সুযোগ পেতো। সরকার দুই মাসের সুদ মওকুফ করেছে। কে কতোটুকু লাভবান হয়েছে বোঝা মুশকিল। কিন্ত ব্যাংকগুলির কর্তারা টিভি ফাটিয়ে ফেলছে। এই বলে যে, ব্যবসায়ীরা আবারও কিছু সুবিধা নিয়ে নিলো। ব্যাংক কর্তাদের কাছে প্রশ্ন, সুবিধাগুলো কার জন্য বা কাদের জন্য হবে ? যারা কর দেয় ও কর্মসংস্থান করে তাদের জন্য ? নাকি যারা সুবিধার মধ্যে বসে আছে তাদের জন্য আরো আরো সুবিধা ? ১ কোটি টাকা তো স্বয়ংক্রিয় ভাবে গাড়ি কেনার জন্য এই কর্তারা পেয়ে থাকেন। সাথে আরো অনেক সুবিধা ওনারা পান। তাতে জনগণ কখনো কোন আপত্তি করে নাই। কর্তারা সমস্বরে বলছে যে, মোট ঋণের পরিমাণ ১২ লক্ষ কোটি টাকা। এর মধ্যে আসল কতো? সুদ কতো? মোট ঋণ গ্রাহক কতো জন ? কতো জন কতো টাকা খেলাপি ? তার হিসাব আছে। কিন্তু রেখে ঢেকে প্রকাশ করা হয় ।
ব্যাংক থেকে যাদের অনেক বেশি টাকা নেওয়া আছে, সরকার ঘোষিত এই দুই মাসের সুদ মওকুফ তাদের জন্য কোন প্রণোদনা হবে না। উদ্দেশ্য থাকতে হবে যেন কোন একটা প্রান্তিক গ্রুপ যাদের এই মওকুফ কাজে লাগবে। এই জন্য আমার প্রস্তাবটি হচ্ছে, সবার জন্য সমান মওকুফ (২ মাসের সুদ ঢালাওভাবে মওকুফ দিয়ে নয়) তাহলে কম ঋণ নেয়া প্রান্তিক গ্রুপটি সরাসরি সুবিধা পাবে। সেটা ১ কোটি হতে হবে তা আবশ্যিক নয়। অনধিক ১ কোটি হতে পারে। শেষ কথা হচ্ছে, যে, স্থিতিপত্র ব্যাংক লেন-দেন ও ব্যবসা বা কোম্পানীর বয়সের উপর বন্ধক বিহীন ঋণ অপরিহার্য।

জাহিদ হোসেন ফিরোজ
মো: ০১৭১১৮১৭২৬০
ইমেইল: firoze1969@gmail.com

 

 

বন্ধের আশঙ্কায় দেশের অর্ধেক ফ্রেইট ফরওয়ার্ডিং কোম্পানি
                                  

- নুরুল আমিন
বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের কারণে দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের স্থবিরতায় চরম সঙ্কটে দিন কাটাচ্ছে দেশের অন্যতম সেবা খাত ফ্রেইট ফরওয়ার্ডিং। ২০১৯ সনের ডিসেম্বর মাসে চীনের উহান শহর থেকেভাইরাসটির সংক্রমনের প্রভাবে পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়া এবং সরবরাহ চেইনে ব্যাঘাত সৃষ্টি হওয়ায় অর্থনীতির অন্যতম এই সেবা খাতটির আর্থিক সমস্যা শুরু হয়। পরবর্তীতে ভাইরাসটি বৈশ্বিক মহামারীতে রূপ নেয়ার কারণে বিশ্ব-বাণিজ্যে যে ধ্বস নামে। তার প্রভাবে দেশের আমদানি-রফতানিকারকদের ক্ষয়ক্ষতির সাথে সাথে ফ্রেইট ফরওয়ার্ডিং কোম্পানিগুলো একইভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতে থাকে। দেশের প্রধান রফতানি পণ্য তৈরি পোশাকের যে পরিমাণ ক্রয়াদেশ বাতিল হয়েছে, সে কারণে যে পরিমান আমদানি কমেছে, ফ্রেইট ফরওয়ার্ডাররা ঠিক সে পরিমান পণ্য পরিবহণের আয় হারিয়েছেন। একইভাবে সবজি, মাছ, কাঁকড়া, পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়া, চামড়াজাত পণ্য, হস্তশিল্পসহ সকল রপ্তানিতে ভাটা জনিত কারণে ঐ সব পণ্যের হ্যান্ডলিং আয়ও হারিয়েছেন। ক্রয়াদেশ বাতিল বা স্থগিত না হলে এসব পণ্যের প্রায় ৮৫ ভাগ পরিবহণ ও হ্যান্ডলিং ফরওয়ার্ডারদের মাধ্যমে সম্পন্ন হতো ।

অন্যদিকে বিদেশি এজেন্টদের কাছ থেকে পরিবহণের টাকা এবং দেশের রপ্তানিকারকদের কাছ থেকে প্রিপেইড শিপমেন্টের টাকা না পাওয়ার কারণে অনেক কোম্পানি চরম আর্থিক সংকটে পড়ে। যথাসময়ে এয়ারলাইন ও শিপিং লাইনের পাওনা পরিশোধ এবং কর্মচারীদের বেতনভাতা, ব্যাংক ঋণের সুদ, অফিস ভাড়া ও রক্ষণাবেক্ষন খরচ নির্বাহ করতেনা পেরে সংকটে পড়ে দেশের অর্থনীতির অন্যতম এই সেবা খাতটির সবাই, যারা এখন কমবেশি এই সংকটের সম্মুখীন। ভবিষ্যৎ ব্যবসায়িক অনিশ্চয়তা ও চলতি মূলধনের অভাবে অনেকেই ব্যবসা বন্ধ করার কথা ভাবছেন।
বিশ্বব্যাপী যাত্রীবাহী বিমান চলাচল সীমিত হওয়া, কার্গো বিমান স্বল্পতার বিপরীতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী পরিবহণের চাহিদা বেড়ে যাওয়া এবং বিশ্বের দীর্ঘায়িত লকডাউনের সুযোগে একচ্ছত্র উৎপাদন সামর্থ্য ও বিশ্ববাজার দখলের প্রতযেগিতায় চীন বেশীর ভাগ কার্গো বিমান অগ্রীম লিজ নিয়ে রাখে। ফলশ্র“তিতে পরিবহণ ব্যয় বহুগুণ বেড়ে যাওয়ার কারণে ফরওয়ার্ডারদের এখন অতিরিক্ত চলতি মূলধনের প্রয়োজন। করোনা পূর্ববর্তী সময়ে যেখানে ঢাকা থেকে ইঊরোপে প্রতি কিলোগ্রাম পণ্যের ভাড়া ছিল ১.৬৫ ডলার, তা এখন ৫.৫০ থেকে ৭.০০ ডলার। আর আমেরিকা ও কানাডায় আগের ১২.০০ স্থলে ১৫.০০ ডলার। এমতাবস্থায় কিছু কিছু এয়ারলাইন জিএসএ প্রচলিত পাক্ষিক বাকি প্রদানের নিয়ম লংঘন করে পরিবহণ ভাড়া অগ্রীম নগদ প্রদান ছাড়া অনেক ফরওয়ার্ডারের বুকিং নিচ্ছে না। এ কারণেও পর্যাপ্ত চলতি মূলধন না থাকায় অনেকে ব্যবসা করতে পারছেন না ।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে দেশে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী পাঁচটি প্যাকেজের আওতায় মোট ৭২ হাজার৭৫০ কোটি টাকার যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন, তা নিঃসন্দেহে সময়োপযোগী । আশা করি এই প্রণোদনা প্যাকেজ সহ সরকারের নেয়া অন্যান্য পদক্ষেপের ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যআবার স্বাভাবিক হবে, দেশের রপ্তানি বাণিজ্য ঘুরে দাঁড়াবে। দেশের রপ্তানি খাতের উন্নয়ন হলে তথা আমদানি-রপ্তানি খাত চাঙ্গা হলে তাদের সেবা প্রদানের জন্য সাপ্লাই চেইন পার্টনার হিসেবে ফরওয়ার্ডারের বিকল্প নেই। বৈদেশিক বাণিজ্য হ্যান্ডলিং করার যদি লজিস্টিকস সক্ষমতাই যদি না থাকে, তাহলে এসব প্রণোদনার কাঙ্খিত ফসল অর্জন সম্ভব হবে না।

তাই, ফ্রেইট ফরওয়ার্ডিংখাতকে বর্তমান ক্ষতি থেকে উত্তরণের জন্য ত্বরিত পদক্ষেপ নিতে হবে। সেজন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক তথা সরকারের কাছে কিছু প্রস্তাব তুলে ধরছি।

১। গার্মেন্টস শিল্পের শ্রমিকদের বেতন-ভাতার জন্য সরকার ২ শতাংশ সার্ভিস চার্জে যে প্রণোদনা দিয়েছে, একইভাবে ফরওয়ার্ডিং খাতের কর্মচারিদের বেতন-ভাতা ও ব্যবসা পরিচালনা ব্যয় নির্বাহের জন্য বিনা শর্তে ৬ মাসেরজন্যআর্থিক সহায়তা দেওয়া।

২। চলতি মূলধন সহায়াতার জন্য সেবা খাতে সরকার ঘোষিত ৩০,০০০ কোটি টাকা থেকে ফরওয়ার্ডারদের জন্য একটি ফান্ড নির্দিষ্ট করে দেওয়া। বাংলাদেশফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের তদারকিতে সেই ফান্ড থেকে ঋণের জন্য আবেদনকারী কোম্পানিকে ২০১৯ সালের মোট বার্ষিক ব্যাংক লেনদেনের ৩০শতাংশ পরিমাণ অথর্ ৪শতাংশ সুদে প্রদান করা।

৩। ঋণ প্রাপ্তির প্রতিটি ধাপ সহজ করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে তফসিলি ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেয়া। জামানতের পরিবর্তে ব্যবসার বয়স, আকার, পরিচালনা খরচ, সদস্য সনদ ও লাইসেন্সের মূলকপি জামানত, ব্যক্তিগত গ্যারান্টি চেক ও এয়ার লাইন্সে দেয়া গ্যারান্টি ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে ঋণ দেয়া। বিদেশী পার্টনারদের কাছে পাওনা টাকা ও স্থানীয় কাষ্টমার থেকে অনাদায়ী বকেয়াও একটি মাপকাঠি হতে পারে।
৪। যেহেতু কোম্পানিগুলোর লোকসান কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে, সেহেতু উপরোক্ত ঋণ সমুহের কিস্তি পরিশোধ প্রদান ৬ মাস পর থেকে শুরু করা। এই সময়ের মধ্যে ফরওয়ার্ডাররা ব্যবসা গুছিয়ে নিতে পারবে বলে বিশ্বাস করি। এই সময়ে ঋণ গ্রহনকারী কোম্পানি শুধু ঋণের সুদ প্রদান করবে, কিস্তি নয় ।
। চলমানঋণের সুদ মওকুপ করা।

৬। এআইটি নেয়া বন্ধ করা ও কর্পোরেটকরের হার কমানো ।

ফ্রেইট ফরওয়ার্ডিংখাতকে বর্তমান প্রতিকুল আবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য এবং লজিস্টিকস খাতে সক্ষমতা রক্ষার জন্য উপরোক্ত সুপারিশ সমুহ বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে গুরুত্ব বিবেচনা করে এব্যাপারে প্রয়োজনীয় জরুরি নির্দেশনা প্রদানের প্রত্যাশা করছি।

লেখকঃ

ডাইরেক্টর মিডিয়াওপাবলিকেশন, বাংলাদেশফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স এসোসিয়েসন (বাফা) এবং ম্যানেজিং ডাইরেক্টর, টাওয়ার ফ্রেইট লজিস্টিকস লিমিটেড ।

বাঙালির জাতীয় জীবনে গৌরবময় ও ঐতিহ্যপূর্ণ দিন ২১ ফেব্রুয়ারি
                                  

নজরুল ইসলাম তোফা: বাংলা ভাষা বাংলাদেশের মানুষের মাতৃভাষা। এই মায়ের ভাষাকে রক্ষা করতে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছে বাঙালি জাতি। তাইতো ২১ ফেব্রুয়ারি বাঙালি জাতির চেতনার দিন, নবজাগরণের দিন। কবিরাও বলেছে, মায়ের ভাষা, সেরা ভাষা খোদার সেরা দান। মাতৃভাষা বা ভাষা হলো সাহিত্য ও সংস্কৃতির অন্যতম মাধ্যম। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের বাহন। শিল্পকর্ম ও অগ্রগতির ধারক। একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালির জাতীয় জীবনে এক গৌরবময় ও ঐতিহ্যবাহী দিন। বাঙালির জাতীয় জীবনের সকল চেতনার উৎস হচ্ছে এ দিনটি। বাংলা ভাষাকেই রাষ্ট্রীয় ভাষার মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা করার ঐতিহাসিক দিন এটি। আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি। এমন গান শুনলেই মনে হয় আমরা ১৯৫২ সালের সেই দিনটিতে ফিরে যাই। আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী রচিত এমন গান চির অম্লান হয়ে রবে। প্রত্যেক জাতির জীবনে বিরল কিছু স্মরণীয় দিন থাকে, ইংরেজিতে যাকে বলে- রেড লেটার ডে। সুতরাং একুশের ফেব্রুয়ারি দিনটা অনন্য স্বতন্ত্রতায় ইতিহাসের পাতায় পাতায় কালজয়ী সাক্ষী হয়েই থাকবে। এই দেশের সকল চিত্রশিল্পী, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, সুরকার এবং গীতিকাররা একুশকে ধারণ করেছিল তাদের লেখায়, সুরে, কণ্ঠে আর শিল্পীর তুলিতে। আর সেসব গান, কবিতা বা শিল্পকর্ম আমাদের অনুপ্রেরণা দেয়। একুশকে সাথে নিয়ে সামনে এগিয়ে চলতে পথ দেখায়। ১৯৫২ সালে একুশে ফেব্রুয়ারির সময় একজন ভাষা সৈনিক:- মাহবুব উল আলম চৌধুরী একুশের কবিতা লিখে খুব আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। বলা যায় তিনিই অমর একুশের প্রথম কবিতার জনক। এই দিবসের তাৎপর্য উল্লেখ করে বিশিষ্ট ভাষা বিজ্ঞানী হুমায়ুন আজাদ বলে ছিল, আমি মুগ্ধ আমি প্রীত, আমাকে স্বীকৃতি দিয়েছে, আমার প্রাণের কথা আমার ভাষায় জানাতে পারব বলে আমার হৃদয় স্পন্দন বেড়েছে। সত্যিই গর্বিত আমি। তাই তো ভাষা আন্দোলন জাতি গোষ্ঠীর সর্ব বৃৃৃহৎ চেতনার ইতিহাস। ভাষার অধিকার আদায়ের সেই রাজপথ রঞ্জিত করা ইতিহাস। এখন বাংলাদের বাংলা ভাষা আন্তর্জাতিক ভাবেই স্বীকৃত। একুশ এখন সমগ্র বিশ্বের। কিন্তু কেমন ছিল একুশের প্রথম প্রহর বা একুশের অগ্নিস্ফুলিঙ্গের প্রথম সেই বারুদের সংযোজন। আর তখনকার সেই বিদ্রোহের অনুষঙ্গটাই বা কি ছিল? তা ক্ষুদ্র পরিসরে আলোচনার চেষ্টা করা মাত্র। সেই দিনের প্রথম কিছু বা প্রথম সৃষ্টি কিংবা তার অবদানকে নিয়েই লেখা। আজকের তরুণ প্রজন্ম আগামী দিনের স্বপ্ন দেখতে পারে এই লেখাটি বিশ্লেষণ করে। আসলেই এ আলোচনায় অনেক দিকই চলে আসেতে পারে, সব কিছু তো তুলে ধরা সম্ভব হবে না। তবুও মৌলিক কিছু কথা না বললেই নয়। এই ভাষার সঙ্গেই যেন সংশ্লিষ্ট জীবনবোধ, সাহিত্য-সংস্কৃতি স্বাতন্ত্র্য, জাতির আধ্মাতিক সত্তা সংরক্ষণের সংগ্রামের মূর্ত রূপ ছিল ২১ ফেব্রুয়ারি। বাংলাদেশের জনগণের কাছে তাই এমন দিনের গুরুত্বটা অবশ্যই হৃদয়গ্রাহী। প্রথমে এই ভাষার জন্যে এদেশের ছাত্ররাই যেন আন্দোলন চালিয়ে নিলেও পরবর্তীতে গোটা দেশবাসী ছাত্রদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে ছিল। ফলে সেই সময়র ছাত্রদের মনোবল অনেক বেড়ে যায় এবং তারা সামনের দিকে দৃঢ় মনোবলে এগোতে শুরু করে। মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার আন্দোলনে সেই ছাত্রসমাজ ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মিছিলও করে ছিল। পুলিশ মিছিলের উপর গুলী চালায়। এতে অনেকে নিহত হয়েছিল, আজ তাদেরকেই শহীদ বলা হয়। এ হত্যাযজ্ঞের জন্য ছাত্র সমাজসহ সকল শ্রেণীর মানুষেরা ভাষার আন্দোলনকে আরো বেগবান করে। ভাষার জন্যেই যেন আন্দোলনের প্রথম লিফলেট প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি গুলি বর্ষণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে। লিফলেটটির আকার ছিল প্লেট অনুযায়ী ১/১৬। গুলি বর্ষণের অল্প কিছুক্ষণ পর পরই হাসান হাফিজুর রহমান, আমীর আলী সহ অনেকেই যেন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের উল্টোদিকে ক্যাপিটাল প্রেসে চলে যান। সেখানে গিয়ে হাসান হাফিজুর রহমান লিফলেটের খসড়া তৈরি করেন। দুই তিন ঘণ্টার মধ্যেই মন্ত্রী মফিজউদ্দীনের আদেশে গুলি শীর্ষক লিফলেটটি ছাপার কাজ সম্পন্ন হয়েছিল। হাসান হাফিজুর রহমান লিফলেটটি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আসেন। প্রায় দুই/তিন হাজার লিফলেট ছাপানো হয়েছিল। উৎসাহী ছাত্ররাই এমন লিফলেটগুলো চারদিকে ছড়িয়ে দিয়ে ছিল। বলা যায় যে, চকবাজার, নাজিরা বাজার এবং ঢাকার অন্য সব এলাকাতেও লিফলেটগুলো কর্মীদের মাধ্যমে ঐদিনই ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। এই স্মৃতি মতো অনেক স্মৃতিই যেন আমাদের ভাষা আন্দোলনকে অমর ও অক্ষয় করে রেখেছে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে সংঘটিত হত্যাকান্ডের খবর সারা দেশেই পৌঁছে যায়। অতঃপর পাকিস্তান সরকার বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়। ১৯৯৯ সালের ১৭ নবেম্বর ইউনেস্কো এর সাধারণ পরিষদের ৩০তম পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে বাংলাদেশসহ ২৭টি দেশের সমর্থন নিয়ে সর্বসম্মতভাবে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালি জাতির মাঝে যে চেতনার উন্মেষ হয়, তার চরম বিস্ফোরণ ঘটে ছিল ঊনসত্তর থেকেই একাত্তরে।বাংলাদেশের সমস্ত আন্দোলনের মূল চেতনা একুশে ফেব্রুয়ারি। তখন থেকেই বাঙালি উপলব্ধি করেছিল তার বাঙালি জাতীয়তাবোধ, তার সংস্কৃতির অতন্দ্র প্রহরী। এমন এই সংগ্রামী চেতনাই বাংলার সাংস্কৃতিক আন্দোলন ও রাজনৈতিক আন্দোলন এই দুধারাকে একসূত্রে গ্রথিত করে মুক্তি সংগ্রামের মোহনায় এনে দিয়েছে। আর এই পরিপ্রেক্ষিতেই ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের সৃষ্টি হয়েছে। একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালি জাতির জীবনে একটি গুরুত্ব পূর্ণ দিন। একুশের চেতনাই যেন বাঙালি জাতিকে দিয়েছে অন্যায় ও অবিচার, অত্যাচার এবং শোষণের বিরুদ্ধেই আপোষহীন সংগ্রামের প্রেরণা।একুশের প্রথম নাটক কবর, তা মুনীর চৌধুরী রচনা করেছিল। এমন এই ভাষা আন্দোলনে জড়িত থাকার অপরাধেই যেন ৫২ সালে জেলে আটক ছিলেন মুনীর চৌধুরী সহ রণেশ দাশগুপ্ত। তাদের পাশাাপাশি অনেক লেখক বা সাংবাদিকরাও জেলে আটক হয়ে লাঞ্ছিত হয়েছিল। রণেশ দাশ গুপ্ত জেলের এক সেলে আটক, আর অন্য একটি সেলেই মুনীর চৌধুরীকে ভাষা আন্দোলনের ওপর একটি নাটক লিখে দেওয়ার অনুরোধ করে চিরকুট পাঠান। সে চিরকুটের লেখাটি ছিল- শহীদ দিবসে রাজবন্দিরাই নাটকটি মঞ্চায়ন করবেন, জেলে মঞ্চসজ্জা ও আলোর ব্যবস্থা করা যাবে না। এমন কথাগুলো কৌশলে মুনীর চৌধুরীকে বলা হয়, নাটকটি এমনভাবে লিখতে হবে, যাতে খুব সহজে কারাগারেই এটি অভিনয় করা যায়। মুনীর চৌধুরী ৫৩ সালের ১৭ জানুয়ারি নাটকটি লিখে শেষ করেন। ওই বছরের একুশে ফেব্রুয়ারি, রাত- ১০টায় কারাকক্ষগুলোর বাতি নিভিয়ে দেওয়ার পর শুধুমাত্র হ্যারিকেনের আলো-আঁধারিতেই কবর নাটকটি মঞ্চস্থ হয়। অভিনয়ে অংশ নেন বন্দি নলিনী দাস, অজয় রায় প্রমুখ। ভাষার আন্দোলনটি জাতীয়তাবাদেরই প্রথম উন্মেষ।

আন্দোলনের প্রত্যক্ষ ফল ছিল বাঙালি জাতির আপন সত্তার উপলব্ধি এবং ঐক্যবদ্ধ হওবার প্রেরণা। এমন আন্দোলন বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার আন্দোলনের অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষিত করে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সশস্ত্র সংগ্রামে লিপ্ত হওয়ার অনুপ্রেরণা দেয়। এমন আন্দোলনে প্রথম ছাপচিত্র অঙ্কন করেছিলেন বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী, বায়ান্নর ভাষাকর্মী- মুর্তজা বশীর। ছাপচিত্রটির শিরোনাম হলো রক্তাক্ত একুশে। মুর্তজা বশীর ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির ছাত্রহত্যার প্রত্যক্ষদর্শীও ছিলেন। শহীদ বরকতের রক্তে তার সাদা রুমাল রঞ্জিত হয়েছিল। প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে আঁকা তাঁর এমন ছাপচিত্রটিতে তিনি একুশের ঘটনা অঙ্কিত করেছিল। একজন গুলিবিদ্ধ ছাত্রনেতাকে একেঁছেন সেখানেই ফুটে উঠে- মিছিলে গুলি বর্ষণের ফলে পড়ে যান, তার স্লোগান সংবলিত প্ল্যাকার্ডটি পড়ে যায় এবং তার হাতে থাকা বইটিও মাটিতে পড়ে রক্তাক্ত হয়ে যায়। অমর একুশে আজও বাংলাদেশে শহীদ স্মরণে গ্রন্থমেলার আয়োজন করেই যেন মাতৃভাষার জন্যে বিভিন্ন শহীদ ও বুদ্ধিজীবীদেরকে স্মরণ করা হয়। অমর একুশে ফেব্রুয়ারির তাৎপর্য বিশ্লেষণে শুধু শহীদ দিবস কিংবা গ্রন্থমেলা পালনেই সরকার সীমাবদ্ধ থাকেনি, তাকে এই বাঙালির জাতীয় জীবনের সর্বত্র প্রভাব বিস্তারেও আগ্রহী ভূমিকা পালন করছে। একুশে ফেব্রুয়ারির পূর্ণ ইতিহাস কিন্তু সাধারণ ছাত্র-জনতার ইতিহাস। এমন এ ইতিহাসের নায়ক অথবা মহানায়ক তারাই। কোনো দল অথবা দলীয় নেতার নেতৃত্বে এর জন্ম হয়নি। এই দেশের চিন্তাবিদ-বুদ্ধিজীবীরা তাদের যুক্তিবাদী সৃজনশীল লেখনীর দ্বারা সমাজজীবনে এর ক্ষেত্র রচনা করেছিল। দেশের স্বাধীনচেতা মৃত্যুঞ্জয়ী তরুণরা সেই উর্বর ক্ষেত্রেই রক্তবীজ বপন করেছিল। ফলেই আজকের এই সোনালি ফসল। এই তরুণদের সংগ্রামী চেতনা সমগ্র সমাজে ছড়িয়ে পড়ে এবং গড়ে তোলে এক অজেয় শক্তি। তাই তো পরবর্তী সময়েই রাজনীতিতে প্রদান করে নতুন দ্যোতনা। সংস্কৃতির ক্ষেত্রেই যেন সৃষ্টি হয় এক নতুন শক্তি। সৃষ্টি হয় নতুন ইতিহাস। গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি ওই সব শহীদ এবং বীর যোদ্ধাদের রক্ত, অশ্রু ও ত্যাগের বিনিময়ে আমরা একুশে ফেব্রুয়ারির মতো এই স্মরণীয় দিবসটি লাভ করতে পেরেছি। এমন দিনের সৃষ্টিতে তরুণরা রক্তাক্ত অবদান রাখলেও এখন তা বিশ্বজনীন হয়ে উঠেছে। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠিত হলে শাসক চক্র বাঙালী জাতিকে দুর্বল করতেই বাংলার মাতৃভাষা বা মায়ের ভাষার উপর চক্রান্ত শুরু করে। এর প্রতিবাদে ১৯৫২ সালের শুরুতে মায়ের ভাষা রক্ষার আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে। আন্দোলন ঠেকানোর জন্য সরকার ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে। রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই প্রাণের দাবীতে ২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্র যুব সমাজ ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাজপথে মিছিল করে। এ মিছিলে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়। সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার সহ নাম না জানা অনেকেই যেন সেই দিন শহিদ হয়েছিল। আর বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারিতে সংঘটিত হওয়া মর্মান্তিক হত্যাকান্ডের খবর সারাদেশে ছড়িয়ে পড়লে দেশবাসী প্রচন্ড বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। উপায় না দেখে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতেই বাধ্য হয়ে ছিল। একটু ইতিহাসের দিকে দৃষ্টি দিলে পরিস্কার ভাবে জানা যাবে, তা হলো পাকিস্তান সৃষ্টির পূর্বে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় এর তৎকালীন উপাচার্য- ড. জিয়াউদ্দিন উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব উপস্থাপন করেছিল। আর পূর্ববঙ্গ থেকে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন এবং বাংলাকেই রাষ্ট্রভাষা করার দাবি উত্থাপন করেন। এইভাবেই যেন ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত। এ দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মাতৃভাষা বাংলা হওয়া সত্ত্বেও পাকিস্তান সৃষ্টির শুরু থেকেই উর্দুকে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চালিয়ে দেয়ার চক্রান্ত চলতে থাকে। ১৯৪৮ সালে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঘোষণা করেছিল উর্দু এবং উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। এর ফলেই তুমুল প্রতিবাদের ধ্বনি উচ্চারিত হয়েছিল। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ঘোষণার পর পরই এদেশের ভাষা আন্দোলন জোরদার হতে থাকে। পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক, সামাজিক ক্ষেত্রে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমেই তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানকে তাদের উপনিবেশ হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিল। এ উদ্দেশ্য সাধনের জন্যই বাঙালিদের মাতৃভাষার উপর চরম আঘাত হানে। পাকিস্তান সৃষ্টির পর পরই যেন রাষ্ট্র ভাষা আন্দোলন শুরু হলেও ১৯৫২ সালের রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নেই বাঙালি জাতি আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ হয়। কেউ কবিতা লিখে, কেউ গান বা নাটক লিখে, কেউ বা চলচ্চিত্র কিংবা চিত্রাঙ্কন করে। ভাষা আন্দোলনের গুরুত্বটা যে, এ সবের মাধ্যমেই এ দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রামী শিক্ষা নিয়ে থাকে। এই আন্দোলনের মাধ্যমেই যেন জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে শাসকচক্রের প্রতিটি ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিতে সক্ষম হয়ে ছিল। জানা প্রয়োজন তা হলো, একুশে ফেব্রুয়ারির পরের দিন অর্থাৎ ২২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত হয় একুশের প্রথম ক্রোড়পত্র এবং প্রথম অঙ্কিত চিত্র। ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে ছিল তৎকালীন দিলরুবা পত্রিকার প্রকাশক এবং এতে স্কেচ আঁকেন শিল্পী আমিনুল ইসলাম আর লেখেন ফয়েজ আহমদ এবং আবদুল্লাহ আল মুতী শরফুদ্দীন। সেই গুলোকে বিকেল পাঁচটার মধ্যে কাগজে ছাপা হয়ে যায় এবং পত্রিকার কর্মীরাই রাজপথে কাগজ গুলো বিলি করে ছিল। সেই দিন সন্ধ্যা ৬ টা থেকে কারফিউ ছিল বলে ৬ টার আগেই হাতে হাতে কাগজ বিলি করা হয়ে যায়। তাইতো ১৯৫২ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে প্রেরণা দিয়েছিল একুশ ফেব্রুয়ারির ভাষা আন্দোলনের রক্ত রাঙ্গা ইতিহাস। বলা যায় যে, সর্ববস্তরে মানুষ ও ছাত্র সমাজের তীক্ষ্ম মেধা দ্বারাই মাতৃভাষার জন্যে সংগ্রাম করেছিল। তাই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে গৃহীত হওয়ার ব্যাপারটি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গৌরবের। এখন আমাদের কর্তব্য বাংলা ভাষা চর্চার মাধ্যমে উন্নত জাতি হিসেবে নিজেকে দাঁড় করানো। ভাষার জন্য জীবন দান এ বিরল আত্মত্যাগকে সম্মান জানাতে জাতিসংঘের সংস্থা ইউনেস্কো ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি প্রথম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে সম্পূর্ণ ভাবে ঘোষণা করে বিশ্বের ১৮৮টি দেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় এ দিনটিকে প্রতি বছর পালন করে আসছে। জাতিসংঘে এর আগেও ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর জাতি সংঘের সংস্থা ইউনেস্কো আনুষ্ঠানিক ভাবেই এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয়। বাংলাদেশ ইউনেস্কোর সাধারণ সম্মেলনের ৩০ তম অধিবেশনে এক পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাবটির খসড়াও পেশ করেছিল। বাংলাদেশকে সমর্থন জানায় ২৭টি দেশ। দেশ গুলো হলো:- সৌদি আরব, ওমান, বেনিন, শ্রীলঙ্কা, মিশর, রাশিয়া, বাহামা, ডেমিনিকান প্রজাতন্ত্র, বেলারুশ, ফিলিপাইন, কোতে দি আইভরি, ভারত, হুন্ডুরাস, গাম্বিয়া, মাইক্রোনেশিয় ফেডারেশন, ভানুয়াতু, ইন্দোনেশিয়া, 

মাদক দমন যেন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নিধন না হয়
                                  

ডিটিভি বাংলা নিউজঃ

ক্ষমতাসীন সরকার যখনই কিছু করে, তার একটি কেতাবি ভাষা থাকে। জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় চমক থাকে। তার সাথে সাথে একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কাজ করে। রাজনীতিকেরা যেমন বলে থাকেন- ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়। তার উল্টোটি আমাদের দেশের ক্ষমতাসীন দলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তারা মনে করেন- রাষ্ট্রের চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে ব্যক্তিস্বার্থ বা ব্যক্তিক্ষমতা গুরুত্বপূর্ণ। আর গণতন্ত্র সম্পর্কে আব্রাহাম লিঙ্কনের সেই বহুল উচ্চারিত প্রবাদটি এভাবে বলা যায়- ‘ডেমোক্র্যাসি অব দ্য পার্টি, বাই দ্য পার্টি অ্যান্ড ফর দ্য পার্টি।’ ইতোমধ্যে যেসব অভিযোগ উঠেছে, তা যদি সত্যি হয়, তবে তার সর্বশেষ নমুনা হলো মাদক দমনের নামে দেশব্যাপী তথাকথিত ‘বন্দুকযুদ্ধের’ বেপরোয়া পাঁয়তারা। এটা যে জনগণকে প্রতারিত করার একটি কৌশল, তা বোঝা যায় মাদকবিরোধী অভিযানের লক্ষ্য ও প্রক্রিয়া দেখে। গাছের গোড়া উপড়ে না ফেলে দৃশ্যমান শাখা-প্রশাখা কেটে নেয়া যেমন নিরর্থক, তেমনি মাদক সেবনকারীদের ধরে ধরে নিধন করাও অর্থহীন। চলমান অভিযানে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত গত ১০ দিনে মাদক কারবারিদের সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ৪১ জন নিহত হয়েছে। প্রাপ্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ মাসের ১৫ তারিখে দুইজন, ১৭ তারিখে তিনজন, ১৮ তে একজন, ১৯ শে তিনজন, ২০ শে চারজন, ২১-এ ৯ জন, ২২ শে ১২ জন ও ২৩ শে সাতজন নিহত হয়েছে। এ কলামে একবার শিরোনাম ছিল ‘বন্দুকযুদ্ধ : যে গল্পের শেষ নেই’, সেই একই গল্প প্রতিদিন নানা রঙে, নানা ঢঙে বয়ান করা হচ্ছে। ২৩ তারিখ রাতের ‘বন্দুকযুদ্ধ’কে বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য বলা হয়েছে, এ ঘটনায় কিছু পুলিশও আহত হয়েছে।
মিথ্যাকে সত্য করার জন্য যদি ১০০ মিথ্যা কথা বলা হয়, তাহলে মিথ্যাটি সত্য হয়ে যায় না। চলমান অভিযানবিরোধী একটি জাতীয় ঐকমত্য ইতোমধ্যে সৃষ্টি হয়েছে। ডান-বাম, পূর্ব-পশ্চিমের সব মত ও পথের ধারকেরা একবাক্যে এর প্রতিবাদ করছে। কিন্তু সরকার অন্যসব বিষয়ের মতো এ ব্যাপারেও অনড়। পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, আরো ৫০০ জনের নাম রয়েছে হিট লিস্টে। সেই সাথে ঈদের আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে ‘মাদকবাণিজ্য’-এর অভিযোগ বেশ জোরেশোরেই গণমাধ্যমে উত্থাপন হয়েছে। এরা বিরোধী দল ও স্থানীয় অবস্থাপন্ন ব্যক্তিদের হুমকি-ধমকি দিয়ে বেপরোয়া চাঁদাবাজি করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। তাই বলা দরকার, মাদক দমন অভিযান যেন প্রতিপক্ষ দমন অভিযানে পরিণত না হয়।
প্রধান বিরোধী দল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “বিএনপি মাদকবিরোধী অভিযান চায়; কিন্তু সেটি অরাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হতে হবে। তাই ক্রসফায়ার নয়, আইনের আওতায় এনে তাদের বিচার করতে হবে। ২৩ মে ঠাকুরগাঁওয়ে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে তিনি ‘বন্দুকযুদ্ধে’ তাদের নেতাকর্মী হত্যার অভিযোগ উত্থাপন করেছিলেন। বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতা খন্দকার মোশাররফ হেসেন অভিযোগ করেছেন, ‘আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে বড় বড় ব্যবসায়ী, এমনকি উপজেলা পর্যায়ের নেতারাও এই ব্যবসায়ের সাথে জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।”
অপর দিকে ‘বন্দুকযুদ্ধ’সহ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করে মাদকের ভয়াবহতা নিরসনে কঠোরভাবে আইন প্রয়োগের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি- সিপিবি। দলটি বলেছে, যারা বিদেশ থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে মাদক এনে বিস্তৃত চক্রের মাধ্যমে গ্রামপর্যায়ে ছড়িয়ে দিচ্ছে, সেই উৎসমূল বন্ধ না করে, তাদের বিচারের আওতায় না এনে কিছু চুনোপুঁটি মাদকবিক্রেতাকে হত্যা করে এই মারাত্মক সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। বিবৃতিতে মাদক দমন অভিযানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধের’ নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সমালোচনা করা হয়।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, সমস্যা সমাধানের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যা সংবিধানের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। সিপিবি পরোক্ষভাবে এক দিক নির্দেশ করলেও জাতীয় পার্টি প্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ অনেকটা প্রত্যক্ষভাবেই বলেছেন : ‘মাদক সম্রাট সংসদেই আছে, তাদের ফাঁসিতে ঝুলান।’ সিভিল সোসাইটিতে এ ধরনের নির্বিচার হত্যায় তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। মানবাধিকার ব্যক্তিত্ব সুলতানা কামাল বলেছেন, ‘মানুষের জীবন কেড়ে নেয়ার অধিকার কারো নেই।’ সরকারি জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এ হত্যাকাণ্ডে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, ‘মাদকবিরোধী অভিযানের সময় মানবাধিকারের বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাথায় রাখতে হবে।’ কমিশন বলেছে, ‘বিচারবহির্ভূত কোনো হত্যাকাণ্ড তারা সমর্থন করে না।’
মাদক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ‘বন্দুকযুদ্ধে’র মাধ্যমে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে মাদকের ব্যবহার নির্মূল করা সম্ভব নয়। যদিও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনুরূপ মত পোষণ করেন, তবুও কার্যক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাচ্ছি এর ব্যতিক্রম। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার ও কারাদণ্ড দিচ্ছে; কিন্তু অভিযানদৃষ্টে মনে হচ্ছে, তারা মাদক ব্যবহারকারী ও বিক্রয়কারী সাধারণ মানুষকে হত্যা করাই আসল কাজ মনে করছে।
সাধারণভাবে বোঝা যায়, মাদকদ্রব্যের তিনটি স্তর রয়েছে। প্রথমত উৎপাদন, দ্বিতীয়ত সরবরাহ এবং তৃতীয়ত মাদক ব্যবহারকারী। মাদক উৎপাদন বাংলাদেশে হচ্ছে না। প্রতিবেশী মিয়ানমার এর মূল উৎস। ভারত থেকে ইয়াবা না হলেও মদ-ফেনসিডিল ব্যাপক হারে আসছে। তাহলে বোঝা যায়, সরকারের খোলা সীমান্ত নীতি মাদক উৎপাদনে সহায়তা দিচ্ছে। আকস্মিকভাবে দেশের অভ্যন্তরে মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালিত হলেও সীমান্তে কঠোরতম ব্যবস্থার কথা জান যায়নি। যদিও মাঝে মধ্যে ছিটেফোঁটা অভিযানের খবর প্রকাশ হয়েছে। এবার আসা যাক সরবরাহকারী, যারা ইয়াবা ও অন্যান্য নেশাদ্রব্য সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। এরা নানাভাবে কারবার করছে। প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো বলছে, বেশির ভাগ সরবরাহকারী বা কারবারী ক্ষমতাসীন দলের লোক।
ক্ষমতাসীনদের আশ্রয় ও প্রশ্রয়ে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কারবার পরিচালিত হচ্ছে। সম্প্রতি যেসব লোক ধরা পড়েছে, এদের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। কারো নাম উল্লেখ না করেই বলা যায়, আপনার এলাকায় কারা এর সাথে জড়িত। এ কথার অর্থ এই নয় যে, আওয়ামী লীগ দল হিসেবে নেশাকে অনুমোদন করে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক কালচার অনুযায়ী, অপরাধীরা ক্ষমতাসীন দলে নাম লেখায় এবং তাদের সহায়তা পায়। অপরাধী যদি ক্ষমতাসীন দলের লোক হয়, তাহলে তার সাত খুন মাফ। বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি তারা চালু করেছে, মাদক কারবারিরা তার ষোলআনা সুযোগ নিচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে দক্ষিণের মাদক সম্রাট বদি মিয়ার নাম এসেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, বদির বিরুদ্ধে তথ্য আছে; প্রমাণ নেই। এ কথার অর্থ কি এই সরকার তার বিরুদ্ধে প্রমাণ দিতে অক্ষম? অথচ অসংখ্য ক্ষেত্রে তারা প্রমাণ ছাড়াই মামলা এমনকি হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে। এমন লোকদের ক্রসফায়ারে দিচ্ছে, যারা রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতসীন দলের বিরোধী। ‘বন্দুকযুদ্ধের’ মুখোমুখি যুবকের পিতা-মাতা তার সন্তানকে নিরপরাধ দাবি করেছেন, এমনকি মামলা করেছেন- এ রকম উদাহরণ বিরল নয়। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে খবর এসেছে, ৪৫ মাদক গডফাদার ঢাকায়। এর মধ্যে পৃষ্ঠপোষক পাঁচ আওয়ামী লীগ নেতা ও তিন পুলিশ কর্মকর্তা। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে- এ রকম খবর জনগণ এখনো পায়নি।

অস্বীকার করার উপায় নেই- সরকার যখনই এ ধরনের হত্যাকাণ্ড অতীতে পরিচালনা করেছে, বিরোধী দলের ব্যক্তি ও গোষ্ঠী এর কবলে পড়েছে। জঙ্গিবিরোধী অভিযান, সন্ত্রাস দমন ও মানবতাবিরোধী অপরাধ- সব ক্ষেত্রেই স্থানীয় উল্লেখযোগ্য নেতাকর্মীরা পুলিশের অন্যায় সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হয়েছে। কী মনে করে রমজান মাসেই এ অভিযানগুলো বেশি পরিচালিত হয়। এ সময় ভালো মানুষ নিশ্চিন্তে ঘরে ফেরে আর এ সুযোগটি হেলায় হারাতে চায় না সরকার। মানুষ মারার ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীনদের জুড়ি নেই। স্বাধীনতার প্রাথমিক সময়ে জাসদ অভিযোগ করেছিল, তাদের ৪০ হাজার নেতাকর্মী হত্যা করেছে রক্ষীবাহিনী। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত যারা এ ধরনের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে, তাদের গরিষ্ঠ অংশই আওয়ামী জামানায়। বিশেষ করে এ সময়ে যে হত্যাকাণ্ড হয়েছে, স্বাধীনতার বিগত সময়ে একত্র করলেও তত হত্যাকাণ্ড ঘটেনি। অপরাধ যত বড়ই হোক না কেন, তাকে এভাবে হত্যা করা যায় না। কোনো সভ্য সমাজের আইনকানুন তা অনুমোদন করে না। বর্তমানে মাদকপ্রবণ ও মাদক প্রবেশদদ্বার বাদ রেখে যে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে, তা আইনের চোখে অচল হতে বাধ্য। সমাজতত্ত্ব বলে, এ ধরনের ব্যবস্থায় প্রতিশোধের হিংসা প্রজ্বলিত হয়। সন্ত্রাস উৎসাহিত হয়। সুতরাং এই অন্যায় ‘বন্দুকযুদ্ধ’ অবশ্যই পরিত্যাগ করতে হবে। এর স্থায়ী সমাধানের জন্য- ১. রাষ্ট্রকে নৈতিক হতে হবে, ২. শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনতে হবে, ৩. মাদক বেচাকেনার পরিবেশের পরিসমাপ্তি ঘটাতে হবে, ৪. উৎসমূল : উৎপাদন ও সরবরাহ বন্ধ করতে হবে, ৫. বিচারহীনতার সংস্কৃতির অবসান হতে হবে। আশু ব্যবস্থা হিসেবে পুলিশি জরিপ নয়, নিরপেক্ষ গবেষণা সংস্থার মাধ্যমে নেশার কারণ, ব্যাপ্তি ও গতিপ্রকৃতি নির্ণয় করতে হবে। গণমাধ্যম ও শিক্ষক-অভিভাবককে কাজে লাগাতে হবে। রাজনীতি নয়, সমাজকে জাগ্রত করার মধ্যে এর সমাধান খুঁজতে হবে।

ভাসানীর ফারাক্কা মিছিল
                                  

ডিটিভি বাংলা নিউজঃ

বাংলাদেশের একজন খ্যাতনামা অধ্যাপক ক’দিন আগে ঢাকার প্রেস ক্লাবের এক সভায় বলেছেন, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী হলেন প্রথম ব্যক্তি, যিনি ফারাক্কা ব্যারাজ তৈরি হলে বাংলাদেশ পানির অভাবে পড়বে বলে উপলব্ধি করেছিলেন। তার বক্তব্য মনে হয় ঠিক ঐতিহাসিক নয়। কেননা, ভারত ফারাক্কা ব্যারাজ তৈরির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ১৯৫৪ সালে। এ সময় সাবেক পাকিস্তান সরকার ফারাক্কা ব্যারাজ তৈরির বিপক্ষে প্রতিবাদ জানিয়েছিল। অন্য দিকে ভাসানী কেবলই করে চলেছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা। তিনি এ সময় ছিলেন একজন কড়া বিপ্লবী। তিনি ফারাক্কা ব্যারাজ নিয়ে এ সময় কোনো কথাই বলেননি। অনেক পরে তিনি করেছিলেন ফারাক্কা মিছিল। আর এই মিছিল করতে পেরেছিলেন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের বিশেষ সহযোগিতায়। এটা তার একক প্রচেষ্টার ফল ছিল না। কিন্তু এখন কিছু সংখ্যক বুদ্ধিজীবী বলতে চাচ্ছেন, এই মিছিল ছিল কেবলই ভাসানীর একক উদ্যোগের ফল।

অনেকেই জানেন না যে, ভাসানীর মিছিলের একদিন আগে তিনি রাজশাহীতে ঘরোয়া সভায় প্রসঙ্গক্রমে বলেছিলেন, তড়িঘড়ি করে সাবেক পাকিস্তান ভেঙে দেয়া ভুল হয়েছে। ভেঙে দেয়া না হলে গঙ্গার পানি পাওয়া অনেক সহজসাধ্য হতো। কেননা ভারতের ওপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করা সম্ভব হতো পূব ও পশ্চিম থেকে, যা এখন আর সম্ভব নয়। ভাসানীর রাজনৈতিক চেতনার ক্ষেত্রে এই পরিবর্তন আসা অনেককে বিস্মিত করেছিল। কারণ ১৯৭০ সালের নির্বাচনের সময় ভাসানী বলেছিলেন, তিনি ভোটে বিশ্বাস করেন না। তিনি চান ভোটের আগে ভাত। কিন্তু সেই তিনি, আবার ভোট হবার পরে বলেছিলেন, ভোট আসলে হয়েছে গণভোট। পশ্চিম পাকিস্তানকে জানাতে হবে ‘স্লামালেকুম’।
ভাসানীকে সবাই জানত চীনপন্থী কমিউনিস্টদের পক্ষে। কিন্তু তিনি একাত্তরে যান ভারতে। কলকাতায় বন্দী হয়ে থাকেন ভারতীয় গোয়েন্দাদের হাতে। ভাসানীর রাজনীতি বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছিল খুবই কঠিন। এই ভাসানী দেশে ফিরে হয়ে ওঠেন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের একজন সহযোগী। আর তার নির্দেশেই তিনি দেন ফারাক্কা মিছিলের নেতৃত্ব। এই হলো বিখ্যাত ফারাক্কা মিছিলের পটভূমি। আমি তাই ব্যক্তিগতভাবে খ্যাতনামা অধ্যাপকের বচনের সাথে ঐকমত্য পোষণ করতে পারছি না। সে সময় থেকে এখন নদীর পানির সমস্যা হয়ে উঠেছে আরো অনেক জটিল।

আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি পানি আসে গঙ্গা নদী দিয়ে নয়, ব্রহ্মপুত্র নদ দিয়ে। ব্রহ্মপুত্র নদের দৈর্ঘ্য ২৬৭০ কিলোমিটারের কাছাকাছি। ব্রহ্মপুত্রের উৎপত্তিস্থল হল চীনে তিব্বতের মানস সরোবর থেকে। যেসব নদীর উদ্ভব হ্রদ থেকে হয়, তাদের আমরা বাংলায় নদী না বলে উল্লেখ করি নদ বলে। যেমন সিন্ধু নদ, ব্রহ্মপুত্র নদ, নীলনদ। গঙ্গা নদী কোনো হ্রদ থেকে হয়নি। এর উদ্ভব হয়েছে হিমালয়ের তুষার নদী গঙ্গোত্রী থেকে। ব্রহ্মপুত্র নদকে তিব্বতে বলা হয়, সাং-পো (ঞংধহম-চড়)। ব্রহ্মপুত্র নদের ১৪৪৩ কিলোমিটার পড়েছে তিব্বতের মধ্যে। একে তাই প্রায় বলা চলে তিব্বতের নদী।
চীন সরকার চাচ্ছে এই নদীর ওপর ব্যারাজ নির্মাণ করে তিব্বতে পানি সেচব্যবস্থার মাধ্যমে কৃষি উন্নয়ন। চীন এটা করলে বাংলাদেশে ব্রহ্মপুত্র নদ দিয়ে পানি আসা অনেক কমে যাবে। আগে ছিল কেবল গঙ্গার পানির সমস্যা। কিন্তু এখন আমাদের ভাবতে হবে ব্রহ্মপুত্রের পানি সমস্যা নিয়েও। চীনের সঙ্গে আমাদের হওয়া উচিত পানি সমস্যা সমাধানের জন্য বিশেষ চুক্তি। না হলে আমাদের পানি-সমস্যা নিকট ভবিষ্যতে হয়ে উঠবে খুবই জটিল।

ভারত ফারাক্কা ব্যারাজ করেছিল তিন কারণে। কলকাতা বন্দরে নাব্যতা রক্ষা; ফারাক্কা ব্যারাজের ওপর দিয়ে রেলপথ ও সড়কপথ নির্মাণ করে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাংশের যোগাযোগ স্থাপন এবং ফারাক্কা ব্যারাজের মাধ্যমে গঙ্গার পানি আটকিয়ে যুদ্ধের সময় সাবেক পাকিস্তানকে যুদ্ধে কাবু করা। চীন সাং-পো নদীর ওপর যে ব্যারাজ তৈরি করছে, তার লক্ষ্য কৃষি-উন্নয়ন। তাই ফারাক্কা ব্যারাজ আর সাং-পো ব্যারাজ উদ্দেশ্যের দিক থেকে তুলনীয় নয়। ভারতের সাথে আমাদের যেরকম ঐতিহাসিক বিরোধ আছে, চীনের সাথে তা নেই। তাই চীনের সাথে একটা পানি চুক্তি অনেক সহজেই হতে পারে। অবশ্য চীনের সাথে ভারতের আছে চরম বিরোধ।
ব্রহ্মপুত্র নদ তিব্বত থেকে সরাসরি বাংলাদেশে বয়ে আসছে না, বয়ে আসছে ভারতের মধ্য দিয়ে। তাই এই নদীর পানি বিরোধ নিষ্পন্ন হলে লাগবে তিনটি দেশের সম্মতি। এই সম্মতির ব্যাপারটা নিতে পারে জটিল রূপ। ফারাক্কা ব্যারাজ যে উদ্দেশ্যে করা হয়েছিল, তাতে তার কার্যকারিতা আর থাকছে বলে আমার মনে হয় না। কেননা, গঙ্গা নদী এখন মুর্শিদাবাদের দিকে না ভেঙে, ভাঙছে উত্তরে মালদহের দিকে। অর্থাৎ গঙ্গা নদীর নতুন খাত সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। গঙ্গা নদীর প্রবাহ বিশেষভাবেই বদলে যেতে চলেছে।

ভারতে যা গঙ্গা নদী, বাংলাদেশে তার নাম হয়েছে পদ্মা। গঙ্গা নদী ফারাক্কা ব্যারাজের উত্তরভাগ ঘুরে এসে যুক্ত হতে চাচ্ছে পদ্মা নদীর সাথে। নদীর ঢাল যে দিকে থাকে, নদীর পানি সেদিকেই গড়ায়। স্বাভাবিকভাবেই গঙ্গার পানি তাই গড়িয়ে আসবে বাংলাদেশের মধ্যে। এরকমই আমার ধারণা। ফারাক্কা ব্যারাজ চালু হয় জিয়া যখন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট। এ সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী হন মোরারজি দেশাই। মোরারজি দেশাইয়ের পানিসম্পদমন্ত্রী ছিলেন অটলবিহারি বাজপেয়ী। বাজপেয়ী আমাদের যথেষ্ট পানি দিয়েছিলেন। কিন্তু মোরারজি দেশাইয়ের মন্ত্রিসভার পতন ঘটে। ক্ষমতায় আবার আসেন ইন্দিরাগান্ধী। তিনি আমাদের পানি দিতে চান না। এরপর আবার ইন্দিরা সরকারের পতন হয়। দেবগৌড়া হন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর দেবগৌড়া প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় গঙ্গার পানি বণ্টন-চুক্তি। এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হবার পেছনে ছিল পশ্চিমবঙ্গের তখনকার মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতিবসুর আন্তরিক প্রচেষ্টা। আমরা অবশ্য এখনও বাস্তবে প্রতি বছর শুকনো মওসুমে (১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে) চুক্তি অনুসারে পানি পাচ্ছি না। কিন্তু এই চুক্তির ফলে একটি লাভ হয়েছে, তা হলো ভারত নীতিগতভাবে মেনে নিয়েছে যে, গঙ্গা নদীর পানির ওপর বাংলাদেশেরও অধিকার আছে।

ভারতের সাথে নতুন করে পানি বিরোধ দেখা দিয়েছে তিস্তার পানি নিয়ে। তিস্তা নদীর উদ্ভব হয়েছে সিকিমে। সেখান থেকে তা বয়ে এসেছে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাংশে। সেখান থেকে সে বয়ে এসেছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে এটি বয়ে এসে পড়ছে বাংলাদেশে ব্রহ্মপুত্রে। তিস্তা এক সময় এসে পড়ত পদ্মা নদীতে। কিন্তু ১৭৭৭ সালে প্রবল বন্যার সময় তিস্তা তার খাদ বদলায়। এসে তিস্তা পড়তে আরম্ভ করে ব্রহ্মপুত্রে। ব্রহ্মপুত্র নদ বাংলাদেশে দু’ভাগে বিভক্ত হয়েছে। এক ভাগকে বলে নতুন ব্রহ্মপুত্র বা যমুনা। আর অন্য ভাগকে বলা হয় পুরাতন ব্রহ্মপুত্র। যা প্রবাহিত হয়েছে ময়মনসিংহ শহরের মধ্য দিয়ে। এই ধারাকে বলা হয় পুরাতন ব্রহ্মপুত্র।
ভারতের সাথে নদীর পানির বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে বরাক নদীর পানি নিয়ে। এই নদীর উদ্ভব হয়েছে নাগা-মণিপুর জলপ্রপাত থেকে। সিলেট বিভাগের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় বরাক নদী বিভক্ত হয়েছে সুরমা ও কুশিয়ারা নামে দু’টি শাখায়। পরে সুরমা ও কুশিয়ারা একত্র হয়ে ভৈরব বাজারের কাছে পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের সাথে সংযুক্ত হয়েছে। নাম ধারণ করেছে মেঘনা। যমুনা ও পদ্মা নদী গোয়ালন্দের কাছে একত্র হয়ে পদ্মা নামে পরিচিত হয়েছে। এই পদ্মা ও মেঘনা একত্র হয়েছে চাঁদপুরের কাছে। এই একত্রিত ধারা মেঘনা নামে পরিচিত হয়ে মিশেছে বঙ্গোপসাগরে।

ভারত চাচ্ছে বরাক নদীর ওপর আড়াআড়ি বাঁধ নির্মাণ করে জলবিদ্যুৎ উৎপন্ন করতে। কিন্তু এ রকম বাধ নির্মাণ করলে বাংলাদেশ আর আগের মতো বরাক নদীর পানি পাবে না। এ ক্ষেত্রেও তাই দেখা দিয়েছে একটা পানি বণ্টন চুক্তির প্রয়োজন।
বাংলাদেশ ছিল একটা নদীমাতৃক দেশ। কিন্তু সে আর আগের মতো নদীমাতৃক দেশ থাকছে না। তাকে এখন অধিক নির্ভরশীল হতে হবে বর্ষার বৃষ্টির পানির ওপর। বর্ষাকালে বাংলাদেশে যথেষ্ট বৃষ্টি হয়। এই বৃষ্টির পানি ধরে রেখে ব্যবহারের ব্যবস্থা করতে হবে পানির অভাব পূরণে। সাধারণত মরুময় অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ হয় বছরে ৫০ সেন্টিমিটারের কম। কিন্তু বাংলাদেশের কোনো অংশেই বছরে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ এত কম নয়। বর্ষার পানি ধরে রেখে তাই পানির অভাব পূরণ করা সম্ভব। বাংলাদেশে শীতকালে বৃষ্টি হয় না। কিন্তু শীতকাল এ দেশে থাকে মধ্য অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের শেষভাগ পর্যন্ত। বাংলাদেশে দক্ষিণ-পশ্চিম মওসুমি বাতাসের প্রভাবে যথেষ্ট বৃষ্টি হয়। দক্ষিণ-পশ্চিম মওসুমি বাতাসে বঙ্গপোসাগরীয় শাখা বঙ্গোপসাগর থেকে প্রচুর জলীয়বাষ্প বহন করে আনে। যা জমে পরিণত হয় মেঘে। মেঘ থেকে হয় বৃষ্টি। মেঘ থেকে বৃষ্টি হওয়ার একটা কারণ হলো, জলীয় বাষ্পপূর্ণ বাতাস হিমালয় পর্বতমালায় ধাক্কা খেয়ে উপরে উঠতে থাকে। ফলে সহজে মেঘের উদ্ভব হয়। পাহাড় আছে বলেই এরকম বৃষ্টি হওয়া সম্ভব হয়। না হলে হতো না।

দক্ষিণ এশিয়ার উত্তর ভাগের যে অংশে থর মরুভূমি অবস্থিত, সেখানে আড়াআড়ি পাহাড় নেই বলে জলীয়বাষ্পপূর্ণ বাতাস তাতে ধাক্কা খেয়ে উপরে উঠে মেঘে পরিণত হতে পারে না। এই অঞ্চল তাই বৃষ্টি বিরল অঞ্চল। বাংলাদেশের পরিস্থিতি এরকম হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বাংলাদেশের উত্তরে হিমালয় পর্বতমালা থাকছেই। যাতে মওসুমি বাতাস ধাক্কা খেয়ে উপরে উঠে মেঘ সৃষ্টি হবেই। হিমালয় পাহাড় পেরিয়ে মওসুমি বাতাস যখন তিব্বতে যায়, তখন তাতে জলীয়বাষ্প থাকে না বললেই হয়। তিব্বত তাই একটা বৃষ্টি-বিরল অঞ্চল ((Rain Shadow)। আমি প্রাথমিক ভূগোলের এসব কথা বলছি, কেননা অনেকেই বলছেন বাংলাদেশ ভবিষ্যতে হয়ে উঠবে একটা মরুময় অঞ্চল। কিন্তু তার সম্ভাবনা নেই। ভৌগোলিক বাস্তবতার বিচারেই সেটা বলা যায়।

গত সংখ্যার সংশোধনী : গত লেখায় (১৯ মে ২০১৮) ভুলবশত ছাপা হয়েছে : ‘কার্ল মার্কস বলেছিলেন, সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি প্রথমে প্রবর্তিত হল বিলাতে।’ সেখানে আসলে হবে ‘কার্ল মার্কস বলেছিলেন, সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি প্রথমে প্রবর্তিত হবে বিলাতে।’

চিঠির উত্তর : নয়া দিগন্তের ২৩ মে ২০১৮ সংখ্যায় ফরিদ মুন্্শী, ঢাকা থেকে জানতে চেয়েছেন, রবীন্দ্রনাথের জমিদারি পতিসরে একটি সমবায় কৃষি ব্যাংক স্থাপন করেছিলেন। এ সম্পর্কে আমি কিছু জানি কি না। আমি এই সম্পর্কে বিশদ কিছু জানি না। যা জানি তাও কতটা নির্ভরযোগ্য সেটা নিয়ে আমার নিজের মনেই সংশয় আছে। তাই এ বিষয়ে কিছু আলোচনা করা সমীচীন হবে বলে মনে করছি না। রবীন্দ্রনাথ পতিসরের জমিদারি লাভ করেছিলেন উত্তরাধিকার সূত্রে। রবীন্দ্রনাথের পিতামহ দ্বারকানাথ ঠাকুর নওগাঁর কালিগ্রাম মৌজার জমিদারি কিনেন ১৮৩০ সালে। পতিসর কালীগ্রাম মৌজায় অবস্থিত একটি গ্রাম। রবীন্দ্রনাথ এই জমিদারি উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেন। এ বিষয়ে যথাযথভাবে জানতে হলে পড়–ন সিদ্ধার্থ ঘোষ লিখিত প্রবন্ধ ‘প্রিন্স দ্বারকানাথ’ (দেশ, ১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৪, পৃষ্ঠা ২৫)।
শাহজাদপুর রবীন্দ্রনাথের জমিদারি নয়। শাহজাদপুর হলো অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জমিদারি। শিলাইদহ হলো গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের জমিদারি। এরা যখন নাবালক ছিলেন, রবীন্দ্রনাথ তখন এই দুই জমিদারি এদের পক্ষ হয়ে দেখাশোনা করতেন। তাই ভুল ধারণা জন্মেছে যে, এ দুটিও ছিল রবীন্দ্রনাথের জমিদারি। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির জমিদারি ছিল বহু ভাগে বিভক্ত। এর ছিল অনেক শরিক। ১৮৬৩ সালে রবীন্দ্রনাথের পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর বোলপুর স্টেশনের কাছে জায়গা কিনে শান্তিনিকেতন আশ্রম স্থাপন করেন। রবীন্দ্রনাথ ১৯০১ সালে এখানে ‘ব্রহ্মাচার্যাশ্রম’ নামে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। এতে কেবল হিন্দু ও ব্রাহ্মণ ছাত্ররাই পড়তে পারত। পরে রবীন্দ্রনাথ এখানে বিশ্বভারতী নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়। রবীন্দ্রনাথ এই অর্থের জন্য সে সময়ের ভারতে বিভিন্ন দেশীয় রাজাদের কাছে চাঁদা চেয়ে পাঠান। কিন্তু কোনো দেশীয় রাজা চাঁদা দেন না, একমাত্র হায়দ্রাবাদের নিজাম ছাড়া। তিনি এক লাখ টাকা চাঁদা দেন। এক লাখ টাকা সে সময় ছিল একটা বড় রকমের অঙ্ক। এই চাঁদা পাওয়ার পর রবীন্দ্রনাথ বিশ্বভারতীতে কিছু হাতেগোনা মুসলমান ছাত্রের লেখাপড়ার ব্যবস্থা করেন। এসব ছাত্রের মধ্যে বিশেষ খ্যাত হলেন সৈয়দ মুজতবা আলী। যা ছিল ব্রহ্মাচার্যাশ্রম, তাকে বলা হতে থাকে শান্তিনিকেতন। অর্থাৎ শান্তিনিকেতন হলো স্কুল আর বিশ্বভারতী হলো বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা হয় ১৯২১ সালের ডিসেম্বর মাসে। এখন শান্তিনিকেতন অথবা বিশ্বভারতীতে প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘বাংলাদেশ ভবন’। যা নিয়ে খুব সোরগোল করা হচ্ছে। বিশ্বভারতীয় লেখাপড়ার ব্যাপারে তেমন কোনো নামকরা প্রতিষ্ঠান নয়। বিশ্বভারতী খ্যাতি অর্জন করেছে চিত্রকলা, সঙ্গীত ও নৃত্যকলায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯২১ সালের জুলাই মাসে। এই বিশ্ববিদ্যালয় পূর্ববঙ্গে উচ্চশিক্ষা বিস্তারে খুবই উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে ও করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ফলেই পূর্ববঙ্গের মুসলমান সমাজে একটি শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর উদ্ভব সম্ভব হয়েছিল। যারা হলেন আজকের বাংলাদেশের উদ্ভবের ভিত্তিভূমি। ঢাকার নবাব সলিমুল্লাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে পালন করেন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। যদিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে তার মৃত্যুর পরে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে বাংলাদেশের একদল বুদ্ধিজীবী বোঝাতে চাচ্ছেন যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, আসলে বিশ্বভারতীই হচ্ছে বাংলাদেশের সংস্কৃতির উৎসভূমি। আমি জনাব ফরিদ মুনশীর চিঠির উত্তরে এসব কথার অবতারণা করছি এ জন্য যে, রবীন্দ্রনাথ কেমন জমিদার ছিলেন, সেটা আর আমাদের আলোচ্য হওয়া উচিত নয়। আলোচ্য হওয়া উচিত রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে বাংলাদেশে যে বিশেষ রাজনীতি করা হচ্ছে, সেইটাই; যদি আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করতে চাই।

কোঠা পদ্ধতি ছাত্রলীগ কী ভূল পথে হাটছে?
                                  

মো: হারিস চৌধুরী:

 

হায়রে বাংলাদেশ! আজ যদি বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকতেন লজ্জায় মাথা লুকতেন কোথায় ? এই লজ্জা বঙ্গবন্ধুর ; এই লজ্জা সমগ্র বাঙ্গালী জাতির। ছাত্র রাজনীতির উদার পাঠশালা থেকে নেতৃত্বের গুনাবলি বিকাশিত করে একটি জাতিকে স্বাধীনতা উপহার দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। আর বর্তমানে ছাত্ররাজনীতি হয়ে উঠেছে কিছু বিবেক-বুদ্ধিহীন, চাটুকার, তেলবাজ, সন্ত্রসী, ধর্ষণকারী তৈরির কারখান। যেই রাজনীতি ছাত্রদের লাভ বুঝতে পারে না, ছাত্রদেও যৌকিক্ত আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয় না, বরং সেই ছাত্র আন্দোলন দমনে রাষ্ট্রের লাঠিয়াল বাহিনী কাজ করে, সেই রাজনীতি ছাত্রদের জন্য তো নয়ই, সর্বোপরি দেশের জন্য কোন কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না।
বঙ্গবন্ধু যখন ১৯৭৫ সালে বাকশাল গঠন করেছিলেন বেশির ভাগ মানুষ তাকে ভুল বুঝেছিলেন। তৎকালীন আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের অনেকেই না বুঝে বাকশালে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু তারা কখনোও বাকশালের মর্মার্থ বুজতে পারেনি এবং বাকশালের চেতনা দেশের মানুষের কাছে পৌছে দিতে পারেনি। যার মূল্য বঙ্গবন্ধু দিয়ে গেছেন জীবন দিয়ে। এমনকি বর্তমানেও বাকশালকে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গালি হিসাবে ব্যবহার করা হয়। বেশির ভাগ আওয়ামী লীগের ভায়েরা তো এরিয়ে যান অথবা কুতর্কে জড়িয়ে পরেন। আজ ছাত্রলীগের মেধা -মননের চর্চা না থাকায় আওয়ামী লীগ কে বার বার লজ্জিত হতে হয়।
চীনের কিংবদন্তি নেতা মাও সে তুং ১৯৬৬ সালে দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন, যার ফলশ্রুতিতে আজ চীন বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ও শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ, যাকে নিয়ে চীনা কমিউনিষ্ট পার্টি এবং সমগ্র চীন গর্ব করে। অথচ একই উদ্দ্যেশে একই প্রক্রিয়ায় দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে তার জীবন উৎসর্গ করতে হল। আর আওয়ামী লীগ আজও বয়ে বেড়াচ্ছে বাকশালের অপবাদ। এই ব্যার্থতা কার ? অনেকের অনেক ধরনের উত্তর থাকতে পারে। কিন্ত আমি মনে করি এই ব্যর্থতা সম্পূর্ন রূপে ছাত্রলীগের , যারা তাদের দায়িত্ব-কর্তব্য ভূলে আওয়ামী লীগের লেজুড় এবং সরকারের পেটুয়া বহিনীতে পরিণত হয়েছে। মেধার চর্চা না থাকলে ছাত্ররাজনীতি তার উদ্দেশ্য হাসিল ব্যর্থ হয় তা আমরা বাঙ্গালীরা ছারা কেই বা ভাল বুজবে? 
ছাত্রলীগের রয়েছে এক গৌরবময় ইতিহাস, অথচ আজ ছাত্রলীগের বদনামের অন্ত নেই। কোটা পদ্ধতি সংষ্কারের মত একটি যৌকিক্ত ছাত্র আন্দোলন দমনে আজ ব্যবহৃত হচ্ছে ছাত্রলীগ।
ছাত্রলীগের  ভাইদের রাজপথের এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের গত কয়েকদিনের কর্মকান্ডে জাতি বাকরুদ্ধ। বিশেষ করে লন্ডনে সেচ্ছা নির্বাসিত একজন সাবেক ছাত্রলীগ নেতার অনলাইন কর্মকান্ড জাতিকে ব্যাথিত করেছে। তবে তাদের মনে রাখা উচিত ছাত্রদের বিরুদ্ধে গিয়ে ছাত্র রাজনীতি করা যায় না। আর ছাত্রলীগ যদি এই পথেই হাটে তবে তা আওয়ামীলীগের বোঝা ভারি করা ছাড়া কোন ইতিবাচক ফলাফল দিতে পারবে না। আওয়ামী লীগ বিরোধী নিন্দুকেরা একটা হাস্যকর প্রবাদের জন্ম দিয়েছিল বহু আগে “তুই মানুষ না, তুই আওয়ামী লীগ” আর এখন সমগ্র বাংলাদেশ বলে “তুই ছাত্র না, তুই ছাত্রলীগ”।
 
মো: হারিস চৌধুরী
সাবেক শিক্ষার্থী ও চাকুরীপ্রার্থী
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

 

১০/০৪/২০১৮/ডিটিভি বাংলা/মেহেদী হাসান

টিপটিপ বৃষ্টি এবং ওয়াসার এমডি
                                  

ওয়াসার মহামান্য এমডি ঢাকাবাসীর উদ্দেশে যে আশ্বাস বাণী উচ্চারণ করেছেন তাকে আশ্বাস বাণী না বলে সতর্কবার্তা বললে বাড়িয়ে বলা হবে না। তিনি বলেছেন, ঢাকায় টিপটিপ বৃষ্টি হলে পানি জমবে না। তা সে বৃষ্টি যদি টানা ১০ দিন ধরেও হয়। তবে ঘণ্টায় ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিকে কিছুটা সমীহ করে বলেছেন, ‘একটু জলজট হতে পারে’। এই একটু জলজট বলতে কতটুকু বোঝায় তাও পরিষ্কার করেননি তিনি।

টিপটিপ বৃষ্টিপাতের কথা বলে যে মহাকাব্যিক ব্যাখ্যা এই ব্যবস্থাপক উপস্থাপন করেছেন, সম্ভবত বিষয়টি আজকের শিশুটিও জানে। তবে জানেন না ওয়াসার এমডি তাসকিম এ খান। আমাদের জ্ঞানের স্বল্পতার কথা ভেবেই তিনি হয়তো টিপটিপ বৃষ্টির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। এ কথা স্মরণ না করিয়ে দেওয়াটাই বোধহয় শোভন ছিল। তবে শোভন-অশোভনের বাইরে তিনি বেশকিছু কঠিন ও বাস্তব কিছু চিত্র তুলে ধরেছেন, যা সত্যিকার অর্থেই প্রশংসার দাবি রাখে।

তিনি বলেছেন, একসময় ঢাকায় ৬৫টি খাল ছিল। এখন তার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া ভার। এখন মাত্র ২৬টি খালের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। যদি শহরের এই ৬৫টি খাল এবং শহর ঘিরে যে পাঁচটি নদী প্রবাহিত ছিল তা জীবিত থাকত, তাহলে যেকোনো অবস্থায় আজ আর জলজট নিয়ে এত দুশ্চিন্তায় পড়তে হতো না। তিনি বলেছেন, খাল দখল হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। তবে খাল দখলে ওয়াসার কেউই জড়িত নন। আর এটা কোনো চুনোপুঁটির কাজও নয়। যারা দখল করেছেন এবং করছেন তাদের হাত অনেক লম্বা। ক্ষমতাও অনেক।

রাজধানীর জলজট হওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে তিনি জল সংরক্ষণের জন্য যে পরিমাণ জলাভূমির প্রয়োজন, তা নেই বলে উল্লেখ করেন। তিনি জানান, রাজধানীতে জলজট নিরসনের জন্য প্রয়োজন ১২ শতাংশ জলাভূমি। সেখানে আমাদের হাতে এখন রয়েছে মাত্র ২ শতাংশ। যার অধিকাংশই চলে গেছে ভূমিদস্যুদের দখলে। এসব কারণে ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসন কিছুটা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

ওয়াসার এমডির উল্লিখিত ঐতিহাসিক তথ্যের সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত হয়ে বলতে চাই, আমরা ঢাকা মহানগরকে জলজটমুক্ত একটি শহর হিসেবেই দেখতে আগ্রহী। যা হারিয়েছি তা ভুলে গিয়ে, যা আছে তাই নিয়ে নতুন করে শুরু করতে চাই। যেটুকু আছে তা বাঁচাতে চাই। সেটুকু বাঁচাতে পারলে রাজধানীবাসীও রক্ষা পেতে পারে— এটাই তাদের প্রত্যাশা।

সুপেয় পানি সংকটে আমরা
                                  

প্রাণের উৎস পানি। এক ফোঁটা পানির কাছে তৃষ্ণার সময় সব খাবার অপ্রয়োজনীয়। পানির অস্তিত্ব খোঁজার জন্য বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর বাইরে চাঁদ ও মঙ্গলে অভিযান চালাচ্ছে। কারণ, পানির সন্ধান পেলেই সেখানে প্রাণের খোঁজ মেলা সম্ভব। আবার পৃথিবীর পরবর্তী মানুষের বাসস্থান এসব গ্রহ হতে পারে, যদি সেখানে পানি পাওয়া যায়। আমাদের এই ভূমণ্ডলের বেশির ভাগ অংশই পানি হলেও খাওয়ার উপযোগী পানির পরিমাণ কম। সেই কম থেকে আরো কমে আসছে।

নিরাপদ পানির উৎসস্থল ক্রমেই আশঙ্কাজনকভাবে কমে আসছে, যা আমাদের জীবন ও জীবিকার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে। বিশ্বেরর অনেক বড় শহর আজ পানির তীব্র সংকটে ভুগছে। কয়েকটি শহর তো রীতিমতো পানিশূন্য হওয়ার আশঙ্কায় ভুগছে। আমাদের তিলোত্তমা শহর ঢাকা সুপেয় পানির সংকটে ভুগছে। গরমের সময় এ সংকট আরো তীব্র আকার ধারণ করে। ক্রমেই ঢাকার আশপাশের নদনদীর অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাওয়াতে এবং তার সাতে পানি সংরক্ষণের কোনো সুবিধাজনক উপায় না থাকায় গত কয়েক বছরে পানির স্তর নষ্ট হচ্ছে।

কোনো সুপেয় পানির অভাব তার পেছনে অপরাপর বেশ কিছু কারণ জড়িত রয়েছে। আমাদের জনসংখ্যা দ্রুত বেড়ে চলেছে। অতিরিক্ত জনসংখ্যা বেড়ে চলার সঙ্গে সঙ্গে নদীনালা ভরাট হচ্ছে। নদীনালা, খালবিল ভরাট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিরাপদ পানির উৎস নষ্ট হচ্ছে। পাশাপাশি দ্রুত জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ার ফলে দ্রুত নগরায়ণ ঘটছে। কৃষিজমি ভরাট হয়ে গড়ে উঠছে শিল্প-কারখানা। এসব শিল্প-কারখানার বিষাক্ত পদার্থ নদীতে পড়ার ফলে দূষিত হচ্ছে পানি। তা ছাড়া বর্ধিত জনসংখ্যার জন্য পানির জোগান দেওয়া কর্তৃপক্ষের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। পানির জন্য রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের বিভেদ, উপমহাদেশীয় আন্তকলহ। বাংলাদেশের সথেঙ্গ ভারতের পানিবন্টন নিয়ে অমীমাংসিত ইস্যু বহুদিন ধরেই ঝুলন্ত রয়েছে। তাই প্রয়োজন পরে পানির সঠিক সংরক্ষণ ও সঠিক ব্যবহার।

সুপেয় পানি কাকে বলে এর সজ্ঞায় জানা যায়, পনিতে লবণাক্ততার মাত্রা ৫০০ পিপিএম বা এক মিলিয়নের পাঁচশত ভাগের চেয়ে কম থাকে তাকে সুপেয় পানি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ২০১৩ সালের হিসাব অনুযায়ী গোটা বিশে^র সিংহভাগ মানুষের নিরাপদ পানি সুযোগ নেই। নিরাপদ পানির অভাবে বিশ্বে প্রতিদিন এক হাজার চারশ শিশুর মৃত্যু হচ্ছে। এর অধিকাংশই দরিদ্র শ্রেণির মানুষ। সারা বিশ্বেই এই এক চিত্র। অথচ পানির অপচয় কমাতে পারলে এবং সুষ্ঠু বণ্টন করতে পারলে এই দরিদ্র্র শ্রেণির অনেকেই পানি থেকে বঞ্চিত হতে পারে না। আমাদের দেশে বৃষ্টি বা এ রকম উৎস থেকে যে পানি আসছে তার অধিকাংশই নষ্ট হচ্ছে। অর্থ্যাৎ তা মাটিতে ফিরে যেতে পারছে না। অধিকাংশ নদীর পানিপ্রবাহ কমে যাওয়ার কারণে পানির সংকট ঘনীভূত হচ্ছে।

গেল পানি দিবসেও বিজ্ঞানীরা বলেছেন, বিশ্বে যে পরিমাণ পানি রয়েছে তার মধ্যে মাত্র .০১৪ ভাগ খাবার পানি রয়েছে। পানি মানুষের জীবন-জীবিকা ও উন্নয়নের সব বিষয়ের অত্যাবশ্যক উপাদান। তাই পানির সঠিক হিসাব হওয়া উচিত। মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হলে পানির ন্যায্য হিসাব একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। ২০২১ সালের মধ্যে সবার জন্য সুপেয় পানি এবং মোট জনসংখ্যার অন্তত ৯০ শতাংশের জন্য পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধ পরিকর। বাংলাদশের জীবন-জীবিকা ও সংস্কৃতিতে পানি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমাদের কষিকাজ, শিল্প-কলকারখানা, মৎস্য চাষ, জলজ সম্পদের আরোহণ থেকে শুরু করে আমাদের ঐতিহ্য এর সঙ্গে জড়িত। বিজ্ঞানীরা বহুদিন ধরেই পানির সংকটের ব্যাপারে সতর্ক করে আসছেন। আমাদের দেশে কেবল রাজধানী ঢাকা শহর নয় বরং প্রধান প্রধান বিভাগীয় শহরগুলোয়ও পানির তীব্র সংকট ঘনীভূত।

বিভিন্ন মাধ্যম থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বিশ্বে সুপেয় পানির সংকটে ভুগছে প্রায় ৭৬ কোটিরও বেশি মানুষ। আগামী ২০৫০ সাল নাগাদ ৯৩০ কোটি মানুষের মধ্যে ৭০০ কোটি মানুষ সুপেয় পানির সংকটে পড়বে। এখনই বিশ্বে প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ পানি পায় না অথবা তাদের কাছে নিরাপদ পানি পৌঁছায় না। ইউনিসেফ এর আগে এক জরিপে বলেছিল, আমাদের দেশের প্রায় কোটি ৬০ লাখ জনগোষ্ঠী সুপেয় পানির সংকটে রয়েছে। সুপেয় পানির সুযোগ বঞ্চিত জনসংখ্যার দিক থেকে আমাদের দেশের অবস্থান সপ্তম।

এক জরিপে উল্লেখ করা হয়েছিল, বাংলাদেশের ৪৪ শতাংশ মানুষ খাওয়ার জন্য নিরাপদ পানি পায় না। আমাদের দেশের প্রায় এক হাজার তিন শ নদীর মধ্যে শুকিয়ে যাওয়ার কারণে ২১২টি নদীর অস্তিত্ব পাওয়া যায়। আর্সেনিক ঝুঁকিতে ভুগছে কয়েক কোটি মানুষ। পানযোগ্য সুপেয় পানির চাহিদা ক্রমেই তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। এ সংকট মোকাবিলায় আামদের বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া আবশ্যক। এর মধ্যে মিঠাপানির উৎস সৃষ্টি করা, জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সুপেয় পানির প্লান্ট করা, দেশের সর্বত্র বৃষ্টির পানির সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে, শহরের মতো গ্রামের মানুষের জন্য পানি ব্যবস্থাপনা করা, দেশের খাল বিল ও জলাভূমিগুলো রক্ষা করতে হবে, পরিকল্পিতভাবে নগরায়ণ করতে হবে, সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করতে হবে। এ ছাড়া দেশের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে পানির সঠিক ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নিতে হবে।

উন্নয়নের অভিযাত্রায় পদ্মা সেতু
                                  

পদ্মা সেতু এখন আর স্বপ্ন নয়। দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে এর বাস্তবায়নের কাজ। ইতোমধ্যেই এ সেতুর ৬০০ মিটার দৃশ্যমান হওয়ার পথে। চলছে চতুর্থ স্প্যান বসানোর প্রস্তুতি। সোনালি রঙের এই স্প্যানে গেন্ডিং মেশিন দিয়ে জোড়া লাগানো স্থানগুলো ফিনিশিং করা হচ্ছে। এ ছাড়া এই স্প্যানটি বহনের জন্য ৩৬০০ টন ওজন বহনের ক্ষমতার ভাসমান ক্রেনের জাহাজটিও বিশেষায়িত ওয়ার্কশপের জেডির অপর প্রান্তে নোঙর করা হয়েছে। রঙের কাজ শেষ হলেই ‘৭ই’ নম্বর স্প্যানটি বহন করে নিয়ে যাব ৪০ ও ৪১ নম্বর খুঁটিতে। এই খুঁটির ওপরই বসবে চতুর্থ স্প্যান। ৪১ নম্বর খুঁটিও স্প্যান বসানোর উপযোগী করা হচ্ছে। আর এর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হবে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর ৬০০ মিটার।

গতকাল প্রতিদিনের সংবাদে প্রকাশিত এক বিশেষ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ইতোমধ্যে পদ্মা সেতুর ১৪টি খুঁটির ডিজাইনও সম্পন্ন হয়েছে। শিগগিরই এটি সেতু কর্তৃপক্ষের হাতে হস্তান্তর হবে বলে দায়িত্বশীলরা জানিয়েছেন। অন্যদিকে, সেতুর ৪১টি স্প্যানের কয়েকটি ইতোমধ্যে তৈরি হয়ে গেছে। দ্রুত সময়ে এসব স্প্যান স্থাপনের কাজ শুরু করা হবে। এই সেতু প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ বিশেষভাবে উপকৃত হবে।

বিশেষ করে ফরিদপুর, শরীয়তপুর, বরিশাল ও পটুয়াখালীর বিভিন্ন এলাকায় নতুন করে শিল্পায়ন হবে। এতে ওই অঞ্চলের অনেক মানুষ রাজধানীর পরিবর্তে ওই অঞ্চলে গড়ে ওঠা শিল্প কারখানায় কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে। এ ছাড়া এ সেতুর মাধ্যমে রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার যাতায়াত ব্যবস্থাও সুগম হবে। আমরা জানি এ সেতুর সঙ্গে ট্রেন লাইনও সংযোগ করা হবে। আর তার বাস্তবায়ন হলে খুবই কম সময়ে ঢাকা থেকে ওই অঞ্চলের বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে। এতে যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন যুগের সূচনা হবে। বর্তমানে মংলা সমুদ্র বন্দরের অনেকটাই অব্যবহৃত পড়ে থাকে। পদ্মা সেতু চালু হলে মোংলা বন্দরের কর্মচাঞ্চল্য অনেক গুণ বেড়ে যাবে।

৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে পদ্মা সেতু নির্মিত হওয়ার কথা ছিল বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে। কিন্তু এ সেতু নির্মাণে পরামর্শক নিয়োগ এবং প্রাকযোগ্যতা যাচাই নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক প্রকল্পটিতে অর্থায়ন স্থগিত করে। এরপর অনেকেরই আশঙ্কা ছিল এ প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে।

তবে সব আশঙ্কা অমূলক প্রমাণ করে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে এ প্রকল্পের কাজ এখন দ্রুত এগিয়ে চলেছে। আমরা আশা করছি, যথাসময়েই এর কাজ শেষ হবে। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে রেল ও সড়ক যোগাযোগের পাশাপাশি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোয় বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষেত্রেও নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।

বিমানবন্দর নয় যেন মৃত্যুফাঁদ
                                  

ইউএস-বাংলা বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা বাংলাদেশ, নেপালসহ আজ বিশ্বব্যাপী আলোচিত ও সমালোচিত হচ্ছে। শোকাবহ করেছে সর্বস্তরের মানুষকে। শোক জানিয়েছে জাতিসংঘ, বাংলাদেশ, নেপাল, বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সংগঠন। ঢাকা থেকে কেবিন ক্রুসহ ৭১ জন যাত্রী নিয়ে নেপালের উদ্দেশে আকাশে উড়েছিল বিমানটি। একপক্ষের মতে, ১২ মার্চ দুপুর প্রায় ২টায় নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন এয়ারপোর্টের কন্ট্রোল রুমের ভুল নির্দেশনা ও সিদ্ধান্তের কারণে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। পাইলটসহ নিহত হন ৫১ জন।

হিমালয়কন্যা নেপালের এই ত্রিভুবন এয়ারপোর্টে বিমান দুর্ঘটনাই প্রথম নয়। ভয়ংকর অতীত আজো ইতিহাসে সাক্ষী হয়ে আছে। এ যেন এক মৃত্যুফাঁদ। নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর পাহাড়ের কোলঘেঁষে গড়ে ওঠা এই বিমানবন্দর বহু দুর্ঘটনার সাক্ষী। ১৯৫৬ সাল থেকে ১২ মার্চ ২০১৮ দুর্ঘটনার আগ পর্যন্ত মোট ১০টি বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে। কন্ট্রোল রুমের ভুল নির্দেশনা ও বৈরী আবহাওয়া প্রায় সব দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হলেও ত্রিভুবন এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষ বরাবরই পাইলটকেই দোষারোপ করেন।

৩১ জুলাই ১৯৯২ সালে থাই এয়ারওয়েজের একটি এয়ারবাস অবতরণ করার জন্য বিমানবন্দরের দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় একটি পাহাড়ে বিধ্বস্ত হয়। এতে ১১৩ জন যাত্রীর সবাই নিহত হন। একই বছর ২৮ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানি এয়ারলাইনস বিধ্বস্ত হয়। এতে নিহত হন ১৬৭ জন। ৭ জুলাই ১৯৯৯ সালে লুফ?টহানজা কার্গো বোয়িং ৭২৭ আকাশে ওড়ার পাঁচ মিনিট পড়ে চম্পাদেবী পর্বতে বিধ্বস্ত হয়। ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৯৯ সালে নিকন এয়ার ফ্লাইট ১২৮ পোখারা থেকে কাঠমান্ডু যাওয়ার সময় বিধ্বস্ত হয়। বিমানে থাকা ১০ যাত্রী এবং ৫ জন ক্রু সবাই নিহত হন।

২৮ সেপ্টেম্বর ২০১২ সালে সীতা এয়ার ফ্লাইটের বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন ১৯ জন। ২০১৬ সালে নেপালের বিমান ভেঙে মৃত্যু হয় ১৮ জন যাত্রীর। ইউএস-বাংলা বিমান বিধ্বস্তের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সালে টারা এয়ারল্যান্স বিমান দুর্ঘটনায় ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

সর্বশেষ ১২ মার্চ বাংলাদেশের বেসরকারি বিমান ইউএস কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন এয়ারপোর্টসংলগ্ন ফুটবল মাঠে বিধ্বস্ত হয়। কেবিন ক্রু, পাইলটসহ নিহত হন ৫১ জন। যার বেশির ভাগই বাংলাদেশি। ক্রমাগত বিমান দুর্ঘটনা নেপাল এয়ারলাইনসকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। কন্ট্রোল রুমে থাকা কর্মকর্তাদের উদাসীনতা কিংবা সেখানকার আবহাওয়াগত সমস্যার কারণেই দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। নেপাল গণমাধ্যম এ দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণের জন্য কমিটি গঠন করেছে। শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছে দেশটির সরকার।

আমরা নেপাল সরকারের প্রতি আহ্বান রেখে বলতে চাই, কেবল শোক ও দুঃখ প্রকাশের মধ্যে নিজেদের সীমাবদ্ধ না রেখে এয়ারপোর্টটির সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দিকে মনোযোগী হওয়ার সময় এসেছে। বিশ্বের শোকার্ত মানুষের আর্তির দিকে তাকিয়ে নেপাল সরকার নিশ্চয়ই সে আর্তির প্রতি মনোযোগী হবেন—এটাই প্রত্যাশা।

পাললিক ভূমিতে এলো নক্ষত্র মানব
                                  

আজ সেই দিন। পাললিক ভূমিতে যেন নেমে এলো বসন্ত বাতাস। বাতাসের কণ্ঠে ছিল একতারে বেজে ওঠা বাউলের গান। যে গানে ছিল এক রাখালের কথা। রাখাল কী বলেছিল? জন্মলগ্নের প্রথম প্রহরে প্রথম চিৎকারেই বলেছিল, ‘জয় বাংলা’। যার অর্থ, বাংলা ভাষাভাষী বাঙালি জাতির জন্য একটি স্বাধীন দেশ, স্বাধীন রাষ্ট্র।

১৭ মার্চ। জাতির জীবনে এক অনন্য দিন। প্রতিটি দিনের মতো সাধারণ নয়। কিছুটা হলেও ব্যতিক্রম। কেননা, এই দিনেই জন্মেছিলেন বঙ্গবন্ধু। গোপালগঞ্জের এক অখ্যাত গ্রাম টুঙ্গিপাড়ায়। তার জন্মের মধ্য দিয়ে টুঙ্গিপাড়া যেমন মর্যাদার মুকুট পরার সৌভাগ্য অর্জন করেছিল, দেশ ও জাতি সেই মর্যাদায় অভিষিক্ত হওয়া থেকে এক বিন্দুও পিছিয়ে ছিল না।

আমি এক মহামানবের কথা বলছি। আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কথা বলছি। আমি সেই অঙ্গুলি হেলনের কথা বলছি। দুর্বিনীত কণ্ঠস্বরের কথা বলছি। ‘ভায়েরা আমার’..., আমি আমার ৫৬ হাজার বর্গমাইলের রূপকারের কথা বলছি। গোপালগঞ্জের অখ্যাত গ্রাম টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নেওয়া যে শিশুটি আজ বিশ্বনন্দিত, আমি সেই নন্দিত শিশুটির কথা বলছি, ভালোবাসার কথা বলছি, আমাদের অহংকারের কথা বলছি।

যে স্বপ্ন দেখতে জানে না, সে মৃতদের সঙ্গে বসবাস করে। শেখ মুজিব স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসতেন। স্বপ্নবীজ বপনের কারিগর ছিলেন তিনি। তার স্বপ্নের শক্তিই গোটা জাতিকে একত্রিত করেছিল। আর একত্রিত করেছিল বলেই আজকের বাংলাদেশ সেই কারিগরের স্বপ্নের ফসল হয়ে পৃথিবীর মানচিত্রে এক স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে নিজের অবস্থানকে সুদৃঢ় করেছে। তার স্বপ্নে ভর করে নিরস্ত্র একটি জাতি অসামান্য ত্যাগের বিনিময়ে নিজেদের বিজয়কে ছিনিয়ে এনেছে।

কবি অন্নদাশঙ্কর রায়ের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, সময়টা ১৯৪৭। তখন তিনি সোহরাওয়ার্দী সাহেবের দলে। তিনি ও শরৎচন্দ্র বসু চান যুক্তবঙ্গ। তার স্বপ্ন ছিল বাঙালি জাতিগোষ্ঠীর জন্য একটি আলাদা রাষ্ট্র। কিন্তু মুসলিম লীগ ও কংগ্রেসের বিরোধিতায় তা হয়ে ওঠেনি। দিল্লি থেকে খালি হাতে ফিরে এলেন সোহরাওয়ার্দী ও শরৎচন্দ্র বসু।

বঙ্গবন্ধু হতাশ হলেন। স্বপ্ন থেকে এক চুলও নড়লেন না। তার সেই লালিত স্বপ্নকে আরো কঠিনভাবে লালন করলেন তার চিন্তা ও চেতনায়। ফিরলেন ঢাকায়। নতুন করে, নতুন উদ্যোগে, নতুন একটি রাষ্ট্রে শুরু হলো তার নতুন কার্যক্রম। যার পরিণতিতে জন্ম নিল নতুন এক দেশ। বাংলাদেশ যার নাম।

নারী শ্রমিকের বাঁচা-মরা
                                  

তিন দিন ধরে মোমেনার বাড়িতে চুলায় আগুন ধরাতে দেয়নি তার স্বামী ডেকোরেটর দোকানের সহকারী রফিকউল্লাহ মিয়া। চুলায় আগুন না জ্বললেও মোমেনার ঘরে জ্বলছে বিবাদের আগুন। যে আগুনে পুড়ে যাচ্ছে বিবাহিত জীবনের তিন বছরের সব সুখস্মৃতি-অন্তরঙ্গ মুহূর্ত, ভালোলাগা হাসি-খুশির প্রহর। পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে আগামী দিনের সাজানো স্বপ্ন এবং আশা। দরিদ্র ঘরের মেয়ে মোমেনা ক্লাস ফোর পর্যন্ত স্কুলে যাওয়া-আসা করেছিল। কিন্তু দরিদ্রতা তাকে আর স্কুলের আঙিনায় যেতে দেয়নি। কিশোরী বয়সের আভা অবয়বে প্রকাশিত হওয়ার আগেই মাত্র ষোলো বছর বয়সে, চাপকল মিস্ত্রি বাবা আতর আলী অনেক শখ করে পাশের গুনাইঘর গ্রামের জসিম খলিফার বড় ছেলে রফিকের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছিলেন। ভেবেছিলেন মেয়ে খেয়ে-পরে সুখেই থাকবে। বিয়ের বছর রফিকের সঙ্গে মোমেনার যাপিত-জীবন কাটছিল মোটামুটি ভালোই। অর্থের টানাটানি থাকলেও উপোস করতে হয়নি তাকে কোনোদিন। এরই মধ্যে সংসারের স্বচ্ছলতা আনতে মোমেনা গ্রামের দু-চারজন বউ-ঝিদের পরামর্শে কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার অন্দরে পাওয়ার লুম কারখানায় কাজ নেয়। এমন কাজের বিনিময়ে মজুরি খুব একটা কম নয়। মোমেনার এমন কাজে স্বামী রফিকউল্লাহ মিয়ার অসম্মতি থাকলেও পরে নিষেধ করেনি। সে-ও প্রতিদিন তাকে মিলে পৌঁছে দিত। আবার কাজ শেষে দুজনে মিলে বাড়ি ফিরত।

বিয়ের তিন বছর অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পর মোমেনার কোলজুড়ে কেউ না আসতে দেখে তার বিধবা শাশুড়ি সময়-অসময়ে তাকে জ্বালাতন করতেন। কখনো স্বামীর সামনে কখনো একা পেয়ে বকাঝকা করতেন। তা ছাড়া শাশুড়ির আকাঙ্ক্ষার শেষ ছিল না। কবে তার নাতি আসবে সে তাকে কোলে নিয়ে সারাগ্রাম ঘুরে বেড়াবে। আদর-যত্নে ভরিয়ে রাখবে ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু এতদিনে নাতির আগমনের কোনো সু-সংবাদ না পাওয়াতে তিনি হতাশ হয়ে পড়েন। ছেলেকে বলে-কয়ে কবিরাজ-তাবিজ-কবচ ইত্যাদি করিয়েছেন অনেক। কিন্তু কোনো ফল না পেয়ে ছেলেকে শত অনুরোধ করে মোমেনাকে নিয়ে শহরে ডাক্তার দেখায়। ডাক্তার অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানান দিয়েছেন মোমেনার মা হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। দীর্ঘদিন পাওয়ার লুম মিলে কাজ করতে করতে কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়ার প্রভাবে তার প্রজনন ক্ষমতাটি নষ্ট হয়ে গেছে। ডাক্তারের এমন কথায় মোমেনার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। সেই মুহূর্তে পাগলের মতো হয়ে ওঠে সে। তার কাজের সাথিরা তাকে সেই মুহূর্তে আশ্বস্ত করে। বাড়িতে এসে রফিকউল্লাহ মিয়া পাওয়ার লুমে কাজ করার অসম্মতির কথা তুলে তাকে রীতিমতো আক্রমণ করে বসেন। সন্তান না হওয়ার জন্য তাকে দোষী সাব্যস্ত করে সাত দিনের মধ্যে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে নির্দেশ দেন। সময়মতো গ্রামের মেম্বারের মাধ্যমে তালাকনামা পাঠিয়ে দেওয়ার কথাও জানান। কী করবে এখন মোমেনা? চলে যাবে রফিকের সংসার ছেড়ে? এসব কিছুরই উত্তর খুঁজে পায় না সে।

সভ্যতার অগ্রগতিতে মানুষ বিজ্ঞানকে তার উন্নতির সোপান তৈরিতে কাজে সাধিত করেছে। আর সুযোগ বুঝে বিজ্ঞান ও সভ্যতার সর্বাঙ্গে ছড়িয়েছে বিষাক্ত থাবা। তাই আজ মা ও শিশু সর্বদাই পরিবেশ দূষণে জর্জরিত। সারা বিশ্বে বর্তমান সময়ে বিশেষ করে অন্তঃসত্ত্বা মায়ের ও প্রসূতি মায়ের যত্নের প্রচুর উন্নতি হয়েছে। উন্নতকামী দেশগুলো সব সুযোগ নেওয়ার জন্য মরণপণ প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। গত শতাব্দীর দিকে লক্ষ করলে দেখা যায়, বিশ্বে পরিবেশ দূষণই হচ্ছে প্রধান বিষয়। শিল্পায়নের যুগে বিপ্লব ঘটাতে গিয়ে কল-কারখানায় বিষাক্ত রাসায়নিকদ্রব্য বা উপকরণ মার্কারি, সিসা, পারদ, রাসায়নিক জৈব, আর্সেনিক ইত্যাদি ব্যাপক ব্যবহারের ফলে আজ পরিবেশ দূষণের মাত্রা অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। যেকোনো শিল্পে ব্যবহৃত রাসায়নিকদ্রব্য প্রজনন ক্ষমতার ওপর কমবেশি প্রভাব ফেলে। ফলে অন্তঃসত্ত্বা নারী যারা কারখানাতে কাজ করেন তাদের সন্তানের জন্মগত ত্রুটি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

বেঁচে থাকার তাগিদে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কিশোরী থেকে শুরু করে যুবতী নারীরা বিভিন্ন ধরনের মিল-কারখানায় কাজ করছে। পরিবারের দরিদ্রতা লাঘবে প্রচেষ্টায় তারা জড়িয়ে পড়ছে মিল-কারখানার ঝুঁকিপূর্ণ কাজে। সারা দেশে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ লাখ শ্রমিক কাজ করছে বিদ্যুৎচালিত তাঁত (পাওয়ার লুম) কারখানায়। এর মধ্যে নারীর সংখ্যা ৫ থেকে ৭ লাখ। তবে তাদের মধ্যে ১৬ থেকে ৩০ বছর বয়সী নারীর সংখ্যাই বেশি। তাদের অধিকাংশই হতদরিদ্র পরিবার থেকে আসা নারী শ্রমিক তাদের প্রতিদিনের আয়ের ওপর খাবার নির্বাহ হয়। পাওয়ার লুমে অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশ, প্রচ- দাবদহে দিনের পর দিন এই নারী শ্রমিকরা কাজ করেন। বিশেষ করে বছরের পর বছর পাওয়ার লুমের ডাস্টে অবস্থান করার ফলে তাদের অনেকের প্রজনন ক্ষমতা বিনষ্ট হয়ে বন্ধ্যা হওয়ার ঝুঁকি শতভাগ। তা ছাড়া নানা অসুখ-ফুসফুসে ক্যানসার, কিডনি, লিভারসহ দেহের বিভিন্ন অঙ্গে জটিল ব্যাধি আক্রমণ করতে পারে এবং এসব ফিজিক্যাল ফ্যাক্টর মাতৃত্বের আঘাত হানে। এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগের প্রধান ডা. এ এফ এম জাফরউল্লাহ সরকারের মতে, ‘মিল-কারখানার তাপমাত্রা, কম অক্সিজেন, শব্দদূষণ ইত্যাদির জন্য দায়ী। হাই-অলটিটিউডে বিশুদ্ধ বাতাস পাওয়া গেলে তাতে অক্সিজেনের পরিমাণ কম, ফলে কম ওজনের শিশু জন্মায় কিংবা মায়ের গর্ভে শিশু পরিপূর্ণভাবে বৃদ্ধি পায় না। তা ছাড়া তাপমাত্রা অধিক হলে বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তা ছাড়া ক্রনিক ব্রংকাইটিস, নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, হাঁপানি ও ফুসফুসে পানি জমে পরে ক্যানসারের আশঙ্কাকে ঘনীভূত করে।’

দেশের অনেক এলাকায় বিশেষ করে বিদ্যুৎচালিত তাঁত মিলের নারী শ্রমিকদের কাছ থেকে জানা যায়, বিয়ের পর একজন নারীর সবচেয়ে বড় সাফল্য এবং স্বপ্ন সন্তানের মা হওয়া। কিন্তু বিয়ের পর তাদের অনেকেই সন্তান ধারণ করতে পারেননি। যার কারণে তাদের দাম্পত্যজীবন বিবাদ, নানা সমস্যা ও প্রতিকূলতা সৃষ্টি করছে। তবে অনেক নারী শ্রমিক এই পরিবেশে কাজ করতে করতে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের রোগ-ব্যাধিতে ভুগছে। বেশির ভাগ নারী শ্রমিকই রোগগ্রস্ত। এমনকি তাদের সন্তানরাও রক্ষা পাচ্ছে না।

বিশ্বে কিছু দেশে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন কল-কারখানা ও মিল ফ্যাক্টরিগুলোয় সব ধরনের মানুষের ওপর প্রভাব বিস্তার করে—এমন সব দ্রব্য ও উপকরণের ব্যবহারের সতর্কতা অবলম্বন শুরু করা হচ্ছে। দেশগুলোর মধ্যে সুইডেন, নরওয়ে, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস এবং কানাডা অগ্রগামী অবস্থানে আছে। তা ছাড়া ইন্দোনেশিয়ান সরকার ইকোলোজিক্যাল গবেষণা ও কর্মসূচিতে ব্যাপক অর্থব্যয়ের মাধ্যমে এসব দূষণ ও প্রভাব বিস্তারকে ৬৫ শতাংশ সতর্ক পর্যায় নিয়ে তাদের কল-কারখানায় উৎপাদনের হার ১২ শতাংশ বাড়িয়েছে। সুতরাং এ বিষয়ে আমাদেরও পিছিয়ে থাকার অবকাশ নেই। অতি দ্রুত নীতিনির্ধারণী মহল মিল-ফ্যাক্টরি ও কল-কারখানায় নারী শ্রমিকদের কাজ করার বিপজ্জনক অবস্থা থেকে সতর্কতা ও সীমাবদ্ধতা স্থির করা। তা না হলে মোমেনার মতো আরো অনেক নারীর জীবনে ঘটে যাবে দুর্ঘটনা এবং বয়ে আনবে দুঃসংবাদ।

নির্যাতনের বৃত্তে গৃহকর্মী
                                  

গৃহপরিচারিকাদের ওপর নির্যাতন কোনো কোনো গৃহকর্ত্রী বা গৃহস্বামীর অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। তারাও যে মানুষ এ উপলব্ধিও হারিয়ে ফেলেছেন কেউ কেউ। বিশেষত শিশু গৃহপরিচারিকাদের ওপর নির্যাতন যেভাবে বাড়ছে তা আতঙ্কিত হওয়ার মতো। যৌন হয়রানির শিকার হওয়া তো নারী গৃহপরিচারিকাদের একাংশের জন্য নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। এমনকি শিশুরাও রেহাই পাচ্ছে না। যারা শিশুদের ওপর কথায় কথায় নির্যাতন চালায়, তাদের মানসিক সুস্থতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।

দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ অন্যের বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করে। নির্যাতন যেন তাদের কপালের লিখন। সামান্য ত্রুটি হলেই নির্যাতিত হতে হয়। তিনবেলা ভাত খেতে পাবে, শুধু এই আশায়ই সব নির্যাতন মুখ বুজে সহ্য করতে হয়। অথচ ওসব বাড়িতেই হয়তো একই বয়সী ছেলেমেয়ে আছে। এই গৃহকর্মীদের অনেকেরই ভালো বিছানায় ঘুমানোর অধিকার নেই। বাড়ির লোকদের সঙ্গে কথা বলা, টেলিভিশন সেটের সামনেও বসতে পারে না অনেকে। শিশু বয়সে যে কাজ করা সম্ভব নয়, এমন ভারী কাজও এসব শিশু গৃহকর্মীকে দিয়ে করানো হয়। ফলে তার স্বাভাবিক বেড়ে ওঠাটা বাধাগ্রস্ত হবে এবং তাদের অনেকেই পুষ্টিহীনতায় ভুগবে- এটাই স্বাভাবিক।

দুর্ভাগ্যজনকভাবে এমন অসুস্থ মানুষের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। গৃহপরিচারিকা বিশেষত শিশু গৃহশ্রমিকদের ওপর নির্যাতনের ক্ষেত্রে কেউই পিছিয়ে থাকছেন না। সাংস্কৃতিক জগতের সঙ্গে যারা জড়িত, তারাও জড়িত হচ্ছেন নির্যাতনের মতো বর্বরতার সঙ্গে। বাদ যাচ্ছেন না ক্রীড়া জগতের নন্দিত খেলোয়াড়রা। মুখে যারা মানবাধিকারের বুলি আওড়ান তাদের অনেকের ঘর শিশু নির্যাতনের আখড়া হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ অনুযায়ী দেশে গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশুর সংখ্যা ১ লাখ ২০ হাজার। এদের এক বড় অংশকে প্রতিনিয়তই নির্যাতনের শিকার হতে হয়। দেশে শিশু শ্রমিকদের সুরক্ষায় আইন না থাকায় নির্যাতন-নিপীড়ন বন্ধে তা ভ‚মিকা রাখতে পারছে না। কোনো কোনো নির্যাতনের ঘটনায় নির্যাতকদের বিরুদ্ধে মামলা হলেও শেষ পর্যন্ত আপসের চোরাবালিতে তা ঢাকা পড়ে যায়। গরিব গৃহপরিচারিকা ও শিশুশ্রমিকদের অভিভাবকরা মামলা চালিয়ে আরো হয়রানি হওয়ার চেয়ে আপস করাকেই স্বস্তিদায়ক বলে মনে করেন। গৃহপরিচারিকা ও শিশু গৃহশ্রমিকদের নির্যাতন-নিপীড়ন বন্ধে কড়া আইনি সুরক্ষার ব্যবস্থা করা দরকার।

আইন করে শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করা হলে নির্মমভাবে এত শ্রমিককে প্রাণ দিতে হতো না। তাই অবিলম্বে আইন করে এ শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠার সরকারের প্রতি জোর দাবি জানানো যেতে পারে। ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত কাজ করেও বহু গৃহশ্রমিক নিস্তার পায় না। গৃহকর্তার কাছে অনেক গৃহশ্রমিক যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। তার পরেও চাকরি হারানোর ভয়ে গৃহকর্তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে পারে না অনেক শ্রমিক।

আবার কোনো পদক্ষেপ নিতে গেলে নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়। নেহাত পেটের দায়ে পরের বাড়িতে কাজ করতে আসা শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক কর্মীরা গৃহকর্তা বা কর্ত্রীর বিচিত্র নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে। শুধু আমাদের দেশের ভেতরেই নয়, আরব তথা গোটা মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আফ্রিকা, আমেরিকা, দক্ষিণ এশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শ্রমিক গৃহকর্মে নিয়োজিত রয়েছে। তাদের প্রায় আশি ভাগই নারী। তাদের মধ্যে অনেকেই নানাভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, যৌন হয়রানি ও অত্যাচারের শিকার হচ্ছে। আইএলও কনভেনশন অনুযায়ী তাদের অধিকার রক্ষা করা হচ্ছে না।

অতএব বাংলাদেশ সরকারকে যেমনিভাবে দেশীয় গৃহপরিচারীকাদের স্বার্থরক্ষা, অধিকার প্রতিষ্ঠা ও কল্যাণ সাধন করতে হবে, ঠিক একইভাবে প্রবাসী গৃহপরিচারীকাদেরও স্বার্থরক্ষা, অধিকার প্রতিষ্ঠা ও কল্যাণ সাধনে রাখতে হবে বলিষ্ঠ ভ‚মিকা। বিশেষ করে ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধ সমুন্নত রাখার স্বার্থে আমরা চাই তাদের আইনি সুরক্ষা। উল্লেখ করা যায়, গৃহকর্মে যারা সহায়তা করেন, উন্নত বিশ্বের দেশগুলোয় তাদের সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গির অনেক পরিবর্তন হয়েছে। তারা কোনো কৃতদাস বা দাসী নয়। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোয় গৃহকর্মী বা পরিচারিকাদের বেতনভুক্ত স্টাফের মর্যাদা দেওয়া হয়।

আমাদের বাংলাদেশে এখনো এক শ্রেণির শিক্ষিত বিবেকবান সচ্ছল গৃহস্থ বা সম্ভ্রান্ত পরিবার আছেন যারা বাড়িতে কাজের ছেলে বা মেয়ে রাখলেও পরিবারের অন্য সদস্যদের চেয়ে খুব একটা পার্থক্য নির্ণয় করেন না। তবে এ দেশে অর্ধশিক্ষিত, বিবেকহীন, হঠাৎ গজিয়ে ওঠা নব্য ধনী ও মধ্যবিত্ত সংসারে গৃহকর্মীর ওপর বর্বর নির্যাতন অতিমাত্রায় দৃশ্যমান বিধায় এর সঙ্গে মানসিক দৃষ্টিভঙ্গির সমস্যা কিংবা অনেকের অহংবোধের বিকারগ্রস্ততা থাকলেও থাকতে পারে। আবার পরিবার ও সমাজব্যবস্থা অন্য অনেক কিছুর মতো প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছে। এই ভাঙা-গড়ার ঘূর্ণাবর্তে এমন আরো অনেক সামাজিক সমস্যা দেখা দেওয়া অসম্ভব কিছু নয়। তবে আমাদের মতো দেশে গৃহশ্রমিকদের অবশ্যই আইনী সুরক্ষা দেওয়াটাই আজ সময়ের দাবি।

নিয়ন্ত্রণের বাইরে যানজট
                                  

কোনো কিছুতেই নিয়ন্ত্রণের ভেতরে আনা যাচ্ছে না যানজট। নিরসনের জন্য আধা ডজনেরও বেশি ফ্লাইওভার নির্মাণ করে অনেকটা বোকার মতো তাকিয়ে থাকতে হয়েছে। যানজটের মাত্রা তো কমেইনি বরং বেড়েছে বললে বাড়িয়ে বলা হবে না। পার্কিংয়ের নির্দিষ্ট স্থান করে দেওয়া এবং উল্টোপথে গাড়ি চালানোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ার পরও ঢাকা শহরে যানজট আগ্রাসী আকার ধারণ করেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, সরকার যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা জোর দিয়েছেন ২০১৫ সালের কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনার (এসটিপি) সুপারিশ বাস্তবায়নের ওপর। বলেছেন, ক্রমাগত জনসংখ্যা বৃদ্ধিই রাজধানী শহরের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই স্রোতকে ঠেকানোই হবে যানজট নিরসনের অন্যতম প্রধান এবং প্রথম শর্ত। যার জন্য প্রয়োজন হবে ডিস্সেন্ট্রালাইজেশন তত্ত্ব।

রাজধানীতে পানের দোকানের মতো গজিয়ে উঠেছে এবং উঠছে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ। যেগুলোকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দিতে পারলে এক ঢিলে দুই পাখি মারা সম্ভব হতো। প্রথমত, যানজটের আক্রমণ কিছুটা হলেও হাল্কা হওয়ার সুযোগ পেত। পাশাপাশি একটি বিশ্ববিদ্যালয় অথবা একটি মেডিক্যাল কলেজ জেলা অথবা উপজেলাকে অনেক বেশি সমৃদ্ধ করার সুযোগ পেত।

শুধু মেডিকেল কলেজ অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ই নয়, একসঙ্গে ঢাকা শহরে যেসব যানবাহন চলাচল করছে, তার অধিকাংশই ব্যক্তি মালিকানাধীন। বাস্তবতা বলছে, এ শহরে যত দিন পাবলিক সেক্টর অর্থাৎ সরকারি বাসের সংখ্যা বিশেষ করে দোতলা বাসের সংখ্যা শহরের চাহিদাকে পূরণ করতে না পারবে এবং প্রাইভেটকারের সংখ্যাকে কমানো না যাবে, ততদিন যানজটের বিষাক্ত নিঃশ্বাসে পুড়তে থাকবে প্রাচ্যের ভেনাস। সরকার হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে ফ্লাইওভার নির্মাণে সক্ষম হলে এক হাজার দ্বিতল বাস নামাতে সক্ষম হবে না কেন! যা ঢাকা শহরের যানজট কমানোসহ মানুষের বহুমুখী দুর্ভোগ নিরসনে বিশেষ ভূমিকা রাখতে সক্ষম। তখন নিজের প্রয়োজন এবং সাচ্ছন্দ্যের প্রশ্নে মানুষ পাবলিক সেক্টরের যানবাহনকে আঁকড়ে ধরবে এবং অন্যান্য যানবাহনের লাভ কমতে থাকায় ক্রমান্বয়ে তা কমতে থাকবে।

মানুষ রিকশাকে আর বাহন হিসেবে গ্রহণ করবে না। রিকশাকে ঢাকা শহরের বাইরে নেওয়া গেলে রাজধানী তার হারানো গৌরবকে ফিরে পাওয়ার সুযোগ পাবে বলেই সবার বিশ্বাস। একইসঙ্গে গণপরিবহনের মধ্যে ট্রেনের সহজলভ্যকে আরও গতিশীল করাটাই এখন সময়ের দাবি। আমরা আশা করব, কর্তৃপক্ষ আমাদের এই পরামর্শকে বিশেষ বিবেচনায় নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।


   Page 1 of 6
     উপ-সম্পাদকীয়
পাম্পে বিস্ফোরণে দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে একজনের মৃত্যু
.............................................................................................
অহংবোধ আর গর্বের তর্জনীর শেষ পরিণতি
.............................................................................................
সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে সেবা খাতকে ব্যাংকে লেনদেনের উপর বন্ধক বিহীন ঋণ দেয়া
.............................................................................................
বন্ধের আশঙ্কায় দেশের অর্ধেক ফ্রেইট ফরওয়ার্ডিং কোম্পানি
.............................................................................................
বাঙালির জাতীয় জীবনে গৌরবময় ও ঐতিহ্যপূর্ণ দিন ২১ ফেব্রুয়ারি
.............................................................................................
মাদক দমন যেন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নিধন না হয়
.............................................................................................
ভাসানীর ফারাক্কা মিছিল
.............................................................................................
কোঠা পদ্ধতি ছাত্রলীগ কী ভূল পথে হাটছে?
.............................................................................................
টিপটিপ বৃষ্টি এবং ওয়াসার এমডি
.............................................................................................
সুপেয় পানি সংকটে আমরা
.............................................................................................
উন্নয়নের অভিযাত্রায় পদ্মা সেতু
.............................................................................................
বিমানবন্দর নয় যেন মৃত্যুফাঁদ
.............................................................................................
পাললিক ভূমিতে এলো নক্ষত্র মানব
.............................................................................................
নারী শ্রমিকের বাঁচা-মরা
.............................................................................................
নির্যাতনের বৃত্তে গৃহকর্মী
.............................................................................................
নিয়ন্ত্রণের বাইরে যানজট
.............................................................................................
আইনের আওতায় কিন্ডারগার্টেন
.............................................................................................
ভালোকে ভালো বলুন
.............................................................................................
প্রতিভা ও প্রতিভাবান
.............................................................................................
মধ্যপ্রাচ্যে ওআইসির ভাবনা
.............................................................................................
কে এদের রক্ষক ?
.............................................................................................
কে এই সন্দেহভাজন হামলাকারী আকায়েদ
.............................................................................................
বেদনার নাম বৃদ্ধাশ্রম
.............................................................................................
ক্ষোভের আগুনে জ্বলছে...
.............................................................................................
পরিবেশ ও ওষুধশিল্পের কথা
.............................................................................................
টিভি দেখা বনাম খেলাধুলা
.............................................................................................
সাম্প্রতিক ভাবনা | মুহম্মদ জাফর ইকবাল
.............................................................................................
শৃঙ্খলার বাড়ি কোথায়
.............................................................................................
বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি
.............................................................................................
আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে
.............................................................................................
বোমার চেয়েও ভয়ংকর
.............................................................................................
স্বচ্ছ সুন্দর এক শান্তির সন্ধানে
.............................................................................................
বাল্যবিবাহ বনাম প্রতিরোধ ব্রিগেড
.............................................................................................
নতুন সমীকরণে দুই পরাশক্তি
.............................................................................................
রোহিঙ্গা সংকট ও নিষ্প্রভ পরাশক্তি
.............................................................................................
সৌদি আরবে কি হচ্ছে, কেন হচ্ছে?
.............................................................................................
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা পরিস্থিতি কিছু প্রসঙ্গ কিছু অনুষঙ্গ
.............................................................................................
আইন আছে আইন নেই
.............................................................................................
কোনো এক ভাষকের গল্প
.............................................................................................
কঠিন সংকটে স্পেন
.............................................................................................
স্বজন না দুর্জন আমাদের ডাক্তার
.............................................................................................
স্বেচ্ছাসেবা ও সমাজ উন্নয়ন
.............................................................................................
মূল্যবোধের অবক্ষয়
.............................................................................................
জাতিসংঘ ব্যর্থ হলেও বাতিঘর
.............................................................................................
আশ্বাসেই বিশ্বাস
.............................................................................................
কোন পথে চলেছে সন্তান...
.............................................................................................
এশীয় আর্থিক সংকট ও বাংলাদেশের আর্থিক খাত
.............................................................................................
স্বার্থের শিকলে বন্দি চীন ও রাশিয়া
.............................................................................................
নারী ও শিশু পাচার
.............................................................................................
দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি হতে পারে
.............................................................................................

|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
চেয়ারম্যান: এস.এইচ. শিবলী ।
সম্পাদক, প্রকাশক: জাকির এইচ. তালুকদার ।
হেড অফিস: ২ আরকে মিশন রোড, ঢাকা ১২০৩ ।
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: বাড়ি নং ২, রোড নং ৩, সাদেক হোসেন খোকা রোড, মতিঝিল বা/এ, ঢাকা ১০০০ ।
ফোন: 01558011275, 02-৪৭১২২৮২৯, ই-মেইল: dtvbanglahr@gmail.com
   All Right Reserved By www.dtvbangla.com Developed By: Dynamic Solution IT Dynamic Scale BD & BD My Shop    
Dynamic SOlution IT Dynamic POS | Super Shop | Dealer Ship | Show Room Software | Trading Software | Inventory Management Software Computer | Mobile | Electronics Item Software Accounts,HR & Payroll Software Hospital | Clinic Management Software Dynamic Scale BD Digital Truck Scale | Platform Scale | Weighing Bridge Scale Digital Load Cell Digital Indicator Digital Score Board Junction Box | Chequer Plate | Girder Digital Scale | Digital Floor Scale