আইন আছে সর্বত্রই। দেশ, জাতি বা সমাজকে নান্দনিক করে গড়ে তোলার জন্য অথবা কল্যাণমুখী রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে আইনই হচ্ছে অন্যতম উপাদান। তবে এ কথাও সত্য, আইন থেকেও আইন নেই—এমন দেশ বা রাষ্ট্রের সংখ্যাও কম নয়। বিশ্বে এমন অনেক দেশ বা রাষ্ট্র আছে যেখানে কাগজে-কলমে আইন ঠিকই আছে, তবে বাস্তবে তার কার্যকারিতা খুঁজে পাওয়া যায় না।
যখন একটি রাষ্ট্র বা সমাজ দুর্নীতির চাদরে ডাকা পড়ে যায় তখনই আইন তার কার্যকারিতা হারাতে থাকে। সেখানে আইন যত কঠিনই করা হোক না কেন তা জড় বস্তুতে পরিণত হতে বাধ্য। সম্ভবত আমাদের দেশও এর বাইরে নয়। আমাদের দেশকে সুন্দর ও নান্দনিক করে গড়ে তোলার জন্য আইনের কোনো ঘাটতি নেই। তবুও আমরা কল্যাণ রাষ্ট্রের কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়াতে পারিনি। কিন্তু কেন?
এ প্রশ্নের সহজ উত্তর, দুর্নীতি। এই ব্যাধি সমাজ থেকে সমূলে উৎপাটন করতে না পারলে কোনো আইনই (তা সে যত কঠিনই হোক না কেন) বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। দেশে প্রাইভেট ও কোচিং বন্ধে কঠিন আইন হচ্ছে। শিক্ষকদের কোচিং করানো বন্ধ করতে কঠোর বিধান রেখে প্রণয়ন করা হচ্ছে শিক্ষা আইন। এ আইন অমান্য করে কেউ কোচিং ব্যবসায় জড়িয়ে পড়লে তার এক বছরের জেল জরিমানা হবে। পাশাপাশি তিনি চাকরিও হারাবেন। আইনের প্রতিপাদ্য সবাইকে পুলকিত করলেও আশ্বস্ত করতে পারেনি।
সবাই খুব ভালোভাবেই জানেন, শিক্ষাকে সার্বিকভাবে সুন্দর ও কল্যাণমুখী করে গড়ে তোলার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের ভান্ডারে যত আইন আছে তার ৫১ শতাংশ কার্যকর করা গেলে গোটা জাতি সুশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার সুযোগ পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করত। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরাবরই সে সুযোগ থেকে আমাদের বঞ্চিত করেছে। অন্তত দীর্ঘদিন ধরে উঠে আসা মিডিয়ায় প্রকাশিত তথ্য সে কথাই বলেছে।
আমরা মনে করি, গাছের গোড়া কেটে মাথায় জল ঢালার কোনো প্রয়োজন নেই। স্কুলের প্রতিটি শিক্ষককে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হোক। স্কুলকেই দায়িত্ব নিতে হবে তাদের ছাত্রছাত্রীরা কোথাও কোনো কোচিং গ্রহণ করতে পারবে না। স্কুলেই প্রতিটি ছাত্রছাত্রীকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় তাদের ঘাটতি পূরণের ব্যবস্থা করা হবে। আর স্কুলেই যদি এ ঘাটতি পূরণের ব্যবস্থা থাকে, তাহলে কোচিং বাণিজ্য আপনা থেকেই বন্ধ হয়ে যাবে। কাউকে আলাদা করে আইন প্রণয়নের প্রয়োজন হবে না। আইন যদি কঠোর করতেই হয়, তাহলে তা স্কুলের ওপরই করা হোক। স্কুল ঠিক থাকলে শিক্ষকরাও ঠিক থাকবেন। নতুবা তা বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরোতে পরিণত হবে। আমাদের অভিজ্ঞতা সে কথাই বলছে।