পুলিশ যদি হয়ে থাকে আমাদের রক্ষক, তাহলে ছিনতাইকারীদের রক্ষাকারী কে? একসঙ্গে বিপরীত মেরুর দুই পক্ষকে রক্ষা করা কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। কর্মটি অনৈতিকও বটে। বেশির ভাগ মানুষ এখন বিশ্বাস করতে শুরু করেছে, পুলিশ আর সাধারণ মানুষের রক্ষকের ভূমিকায় নেই। তারা তাদের আগের অবস্থান পরিবর্তন করে এখন অনৈতিক ও অন্যায়কারীদের পক্ষ নিয়েছে। তবে এদের সংখ্যা কত তা সুনির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব না হলেও সমাজে অনৈতিক ও অন্যায় কর্মকান্ডের ব্যাপকতা দেখে বলা যায়, তুলনামূলক বিচারে অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় এরা সংখ্যায় এখন অনেক বেশি এবং শক্তিশালী।
এমনই একটি অনৈতিক কর্মকাণ্ড হচ্ছে ছিনতাই। রাজধানীতে যে কর্মটি এখন রকেটগতিতে ছুটছে। অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে ছিনতাইকারীরা। পুলিশ প্রশাসনের অলৌকিক উদাসীনতাকেই দায়ী করছেন ভুক্তভোগীরা। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে টানা পার্টির দৌরাত্ম্য।
গত দুই মাসে রাজধানীর অপরাধ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ছিনতাইকারীদের গুলি ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নিহত হয়েছেন তিনজন এবং আহতের সংখ্যা অর্ধশতাধিক। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যের বাইরেও ছিনতাইয়ের ঘটনা আছে, যা সবসময়ই জানার বাইরে থেকে যায়। মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডে টানা পার্টির কবলে পড়ে মারা যান জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসক ফরহাদ আলম। টিকাটুলিতে এক নারীকে ছিনতাইকারীর কবল থেকে বাঁচাতে গিয়ে খুন হন ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী আবু তালহা খন্দকার।
দুঃখজনক হলেও সত্য, কাউকে ছিনতাইকারীর হাত থেকে রক্ষার জন্য সাধারণ মানুষ এগিয়ে এলেও পুলিশকে এগিয়ে আসতে কখনো দেখা যায়নি। বরং পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে ছিনতাইকারীর গোপন অংশীদার হিসেবে কাজ করার। কারণ হিসেবে বলা হয়, ছিনতাই চলাকালীন পুলিশের অবস্থান কাছাকাছি হলেও তাদের কখনো ভুক্তভোগীর সাহায্যে এগিয়ে আসতে দেখা যায় না।
গত সোমবার ভোরে ছিনতাইকারী রিকশায় বসা মায়ের কোল থেকে ব্যাগ টানতে গিয়ে শিশুসন্তানকে মাটিতে আছড়ে ফেলে। ঘটনাস্থলেই শিশু আরাফাত মারা যায়। এ মৃত্যুর জন্য আমরা কাকে দায়ী করব? সম্ভবত কেউই এর দায় স্বীকার করবে না, অতীতেও করেনি। অথবা বলা যায়, আমাদের সমাজব্যবস্থায় পুলিশ এ দায় বহন করার মতো নৈতিকতা বোধে নিজেকে সমৃদ্ধ করতে পারেনি। আর এখানেই আমাদের পুলিশের ব্যর্থতা। জাতি হিসেবে যা আমাদের কাছে লজ্জার। এ লজ্জা কাঁধে নিয়ে কতকাল চলতে হবে, তা আমরা জানি না। তবে এর থেকে আমরা মুক্তি চাই।