আমাদের সবারই কোথাও না কোথাও একটা ঠিকানা আছে। আর সেই ঠিকানা একটি বাড়ি অথবা বাসাকে ঘিরে আবর্তিত। যে যেখানেই কাজ করি না কেন, সন্ধ্যার পর আমাদের বাড়ি অথবা বাসায় ফিরতে হয়। সম্ভবত এটাই নিয়ম। এটাই শৃঙ্খলা। এই শৃঙ্খলা ভাঙলে পরিবার ভেঙে যায়। পরিবার ভাঙলে সমাজও টুকরো টুকরো হয়ে পড়ে। সমাজ টুকরো হলে রাষ্ট্রও ভেঙে পড়ে। তখন তাকে ধরে রাখা খুব কঠিন হয়ে পড়ে।
দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের সবার জন্য ফেরার জায়গা থাকলেও শৃঙ্খলার কোনো বাড়ি নেই! অথচ কাজ শেষে তার জন্যও ফেরার একটা জায়গা থাকা উচিত ছিল। নেই বলেই চারপাশে এত বিশৃঙ্খলা। কথা ছিল দেশের প্রতিটি ঘরকেই নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে গড়ে তোলা হবে। যেখানে সে বসবাস করবে, কিন্তু তা হয়নি। লুটেরাদের অনৈতিক শক্তির কাছে পরাভূত হয়ে শৃঙ্খলা আজ পথে পথে ঘুরছে। পত্র-পত্রিকা খুললেই চোখে পড়ে, কোথাও শৃঙ্খলা নেই।
দেশের ব্যাংক খাতের অস্থিরতা তার একটি দৃষ্টান্ত। এ রকম অনেক খাত আছে যেখানে শৃঙ্খলার লেশমাত্রও নেই। ব্যাংক খাতের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে গত বছরের জানুয়ারি থেকে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। বিশেষ করে খেলাপি ঋণ আদায় ও ঋণ বিতরণের অনিয়ম ঠেকাতে ব্যবস্থাপনাসহ মালিকানায় পরিবর্তন এনেও কোনো ইতিবাচক ফল আসেনি। সর্বশেষ গত সোমবার ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরকে।
কথা ছিল দেশের প্রতিটি ঘরকেই নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে গড়ে তোলা হবে। কিন্তু তা হয়নি। লুটেরাদের অনৈতিক শক্তির কাছে পরাভূত হয়ে শৃঙ্খলা আজ পথে পথে ঘুরছে। পত্র-পত্রিকা খুললেই চোখে পড়ে, কোথাও শৃঙ্খলা নেই
এ ক্ষেত্রে বলতেই হয়, রোগী মারা যাওয়ার পর তাকে অপারেশন করে কি কোনো লাভ আছে! ফারমার্স ব্যাংকের ক্ষেত্রেও তাই করা হলো। শৃঙ্খলা কতটা অবনতি হলে একটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের উচ্চতা আকাশ সমান হতে পারে। তারল্য ঘাটতির সুবাদে আর্থিক সূচকগুলো কিভাবে মুখ থুবড়ে পড়তে পারে ফারমার্স ব্যাংক তার জীবন্ত সাক্ষী।
দেশের মোট ৪৮টি ব্যাংকের মধ্যে ১৩টির অবস্থা ফারমার্স ব্যাংকের মতো। বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকার ব্যাংকের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে যে নতুন আইনের সূচনা করেছে তাতে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এছাড়া দেশের অর্থনীতির যে বিশালতা সেখানে ব্যাংকের সংখ্যা এমনিতেই বেশি।
শোনা যাচ্ছে, সরকার আরো তিনটি নতুন ব্যাংকের ছাড়পত্র দিতে যাচ্ছে। যাকে কোনোভাবেই ইতিবাচক বলে মেনে নেওয়া যায় না। আমরাও মনে করি, নতুন করে ব্যাংকের ছাড়পত্র দেওয়ার আগে ধসে পড়া ব্যাংক অর্থনীতিকে জাগিয়ে তোলাটাই সরকারের জন্য বেশি জরুরি। কেননা, সব মিলিয়ে এ মুহূর্তে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি। যার ৮০ শতাংশই লোপাট হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।