পদ্মা সেতু এখন আর স্বপ্ন নয়। দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে এর বাস্তবায়নের কাজ। ইতোমধ্যেই এ সেতুর ৬০০ মিটার দৃশ্যমান হওয়ার পথে। চলছে চতুর্থ স্প্যান বসানোর প্রস্তুতি। সোনালি রঙের এই স্প্যানে গেন্ডিং মেশিন দিয়ে জোড়া লাগানো স্থানগুলো ফিনিশিং করা হচ্ছে। এ ছাড়া এই স্প্যানটি বহনের জন্য ৩৬০০ টন ওজন বহনের ক্ষমতার ভাসমান ক্রেনের জাহাজটিও বিশেষায়িত ওয়ার্কশপের জেডির অপর প্রান্তে নোঙর করা হয়েছে। রঙের কাজ শেষ হলেই ‘৭ই’ নম্বর স্প্যানটি বহন করে নিয়ে যাব ৪০ ও ৪১ নম্বর খুঁটিতে। এই খুঁটির ওপরই বসবে চতুর্থ স্প্যান। ৪১ নম্বর খুঁটিও স্প্যান বসানোর উপযোগী করা হচ্ছে। আর এর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হবে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর ৬০০ মিটার।
গতকাল প্রতিদিনের সংবাদে প্রকাশিত এক বিশেষ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ইতোমধ্যে পদ্মা সেতুর ১৪টি খুঁটির ডিজাইনও সম্পন্ন হয়েছে। শিগগিরই এটি সেতু কর্তৃপক্ষের হাতে হস্তান্তর হবে বলে দায়িত্বশীলরা জানিয়েছেন। অন্যদিকে, সেতুর ৪১টি স্প্যানের কয়েকটি ইতোমধ্যে তৈরি হয়ে গেছে। দ্রুত সময়ে এসব স্প্যান স্থাপনের কাজ শুরু করা হবে। এই সেতু প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ বিশেষভাবে উপকৃত হবে।
বিশেষ করে ফরিদপুর, শরীয়তপুর, বরিশাল ও পটুয়াখালীর বিভিন্ন এলাকায় নতুন করে শিল্পায়ন হবে। এতে ওই অঞ্চলের অনেক মানুষ রাজধানীর পরিবর্তে ওই অঞ্চলে গড়ে ওঠা শিল্প কারখানায় কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে। এ ছাড়া এ সেতুর মাধ্যমে রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার যাতায়াত ব্যবস্থাও সুগম হবে। আমরা জানি এ সেতুর সঙ্গে ট্রেন লাইনও সংযোগ করা হবে। আর তার বাস্তবায়ন হলে খুবই কম সময়ে ঢাকা থেকে ওই অঞ্চলের বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে। এতে যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন যুগের সূচনা হবে। বর্তমানে মংলা সমুদ্র বন্দরের অনেকটাই অব্যবহৃত পড়ে থাকে। পদ্মা সেতু চালু হলে মোংলা বন্দরের কর্মচাঞ্চল্য অনেক গুণ বেড়ে যাবে।
৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে পদ্মা সেতু নির্মিত হওয়ার কথা ছিল বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে। কিন্তু এ সেতু নির্মাণে পরামর্শক নিয়োগ এবং প্রাকযোগ্যতা যাচাই নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক প্রকল্পটিতে অর্থায়ন স্থগিত করে। এরপর অনেকেরই আশঙ্কা ছিল এ প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে।
তবে সব আশঙ্কা অমূলক প্রমাণ করে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে এ প্রকল্পের কাজ এখন দ্রুত এগিয়ে চলেছে। আমরা আশা করছি, যথাসময়েই এর কাজ শেষ হবে। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে রেল ও সড়ক যোগাযোগের পাশাপাশি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোয় বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষেত্রেও নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।