আজ সেই দিন। পাললিক ভূমিতে যেন নেমে এলো বসন্ত বাতাস। বাতাসের কণ্ঠে ছিল একতারে বেজে ওঠা বাউলের গান। যে গানে ছিল এক রাখালের কথা। রাখাল কী বলেছিল? জন্মলগ্নের প্রথম প্রহরে প্রথম চিৎকারেই বলেছিল, ‘জয় বাংলা’। যার অর্থ, বাংলা ভাষাভাষী বাঙালি জাতির জন্য একটি স্বাধীন দেশ, স্বাধীন রাষ্ট্র।
১৭ মার্চ। জাতির জীবনে এক অনন্য দিন। প্রতিটি দিনের মতো সাধারণ নয়। কিছুটা হলেও ব্যতিক্রম। কেননা, এই দিনেই জন্মেছিলেন বঙ্গবন্ধু। গোপালগঞ্জের এক অখ্যাত গ্রাম টুঙ্গিপাড়ায়। তার জন্মের মধ্য দিয়ে টুঙ্গিপাড়া যেমন মর্যাদার মুকুট পরার সৌভাগ্য অর্জন করেছিল, দেশ ও জাতি সেই মর্যাদায় অভিষিক্ত হওয়া থেকে এক বিন্দুও পিছিয়ে ছিল না।
আমি এক মহামানবের কথা বলছি। আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কথা বলছি। আমি সেই অঙ্গুলি হেলনের কথা বলছি। দুর্বিনীত কণ্ঠস্বরের কথা বলছি। ‘ভায়েরা আমার’..., আমি আমার ৫৬ হাজার বর্গমাইলের রূপকারের কথা বলছি। গোপালগঞ্জের অখ্যাত গ্রাম টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নেওয়া যে শিশুটি আজ বিশ্বনন্দিত, আমি সেই নন্দিত শিশুটির কথা বলছি, ভালোবাসার কথা বলছি, আমাদের অহংকারের কথা বলছি।
যে স্বপ্ন দেখতে জানে না, সে মৃতদের সঙ্গে বসবাস করে। শেখ মুজিব স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসতেন। স্বপ্নবীজ বপনের কারিগর ছিলেন তিনি। তার স্বপ্নের শক্তিই গোটা জাতিকে একত্রিত করেছিল। আর একত্রিত করেছিল বলেই আজকের বাংলাদেশ সেই কারিগরের স্বপ্নের ফসল হয়ে পৃথিবীর মানচিত্রে এক স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে নিজের অবস্থানকে সুদৃঢ় করেছে। তার স্বপ্নে ভর করে নিরস্ত্র একটি জাতি অসামান্য ত্যাগের বিনিময়ে নিজেদের বিজয়কে ছিনিয়ে এনেছে।
কবি অন্নদাশঙ্কর রায়ের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, সময়টা ১৯৪৭। তখন তিনি সোহরাওয়ার্দী সাহেবের দলে। তিনি ও শরৎচন্দ্র বসু চান যুক্তবঙ্গ। তার স্বপ্ন ছিল বাঙালি জাতিগোষ্ঠীর জন্য একটি আলাদা রাষ্ট্র। কিন্তু মুসলিম লীগ ও কংগ্রেসের বিরোধিতায় তা হয়ে ওঠেনি। দিল্লি থেকে খালি হাতে ফিরে এলেন সোহরাওয়ার্দী ও শরৎচন্দ্র বসু।
বঙ্গবন্ধু হতাশ হলেন। স্বপ্ন থেকে এক চুলও নড়লেন না। তার সেই লালিত স্বপ্নকে আরো কঠিনভাবে লালন করলেন তার চিন্তা ও চেতনায়। ফিরলেন ঢাকায়। নতুন করে, নতুন উদ্যোগে, নতুন একটি রাষ্ট্রে শুরু হলো তার নতুন কার্যক্রম। যার পরিণতিতে জন্ম নিল নতুন এক দেশ। বাংলাদেশ যার নাম।