আশ্বাসের ওপর বিশ্বাস করেই চলতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। আশ্বাসটা দিচ্ছে কে? জবাবে বলতে হয়, ‘মিয়ানমার সরকার’। জবাবকে ‘অর্ধসত্য’ বলা যেতে পারে, পুরোটা নয়। কেননা, পৃথিবীতে মিয়ানমার সরকার সম্ভবত একমাত্র ব্যতিক্রমী সরকার, যেখানে পার্লামেন্টের ক্ষমতা ব্যাপকভাবে সীমিত। এখানে সেনাবাহিনীই সর্বক্ষমতার উৎস।
গত ১২ অক্টোবর অং সান সু চি ও সে দেশের সেনাপ্রধান রোহিঙ্গা ইস্যুতে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন। সেদিন জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে সু চি বলেছেন, রাখাইন থেকে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা চলছে। কিন্তু সেনাপ্রধান ছিলেন বিপরীত মেরুতে। তিনি বলেছেন, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের বাসিন্দা নয়। এমনকি রোহিঙ্গা মুসলিমরা মিয়ানমারের জনগোষ্ঠীও নয়। তিনি গণমাধ্যমে প্রকাশিত দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যাকে অতিরঞ্জিত বলে অভিহিত করেছেন। এমনকি রোহিঙ্গাদের পরিচয়কে অস্বীকার করে বলেছেন, ‘ওরা বাঙালি’।
প্রথম দফা বৈঠকের তিন সপ্তাহ পর গত মঙ্গল ও বুধবার বৈঠকে একইভাবে আশ্বাস পাওয়া গেলেও সীমান্তের ওপার থেকে রোহিঙ্গাদের পালিয়ে আসা থেমে থাকেনি। তবে একই সময়ে অনুষ্ঠিত দুই পক্ষের বৈঠকে সু চি বলেছেন, বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের ফিরিয়ে নিতে তার সরকার কাজ শুরু করেছে। কফি আনান কমিশন বাস্তবায়নেও তার সরকার কাজ করছে। এ ধরনের আশ্বাস একবার নয়, একাধিকবার পাওয়া গেছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে সু চির বক্তব্যের বিপরীত।
এদিকে কূটনৈতিক সূত্রমতে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ৩০ নভেম্বরের মধ্যে জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিলেও মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ ব্যাপারে কোনো দিনক্ষণ উল্লেখ করেননি। দুই দেশের সমানসংখ্যক প্রতিনিধি নিয়ে এ কমিটি গঠন হবে বলা হলেও প্রতিনিধিদের মধ্যে কারা থাকবেন, সে ব্যাপারে কিছুই বলেনি মিয়ানমার। মতবিরোধ দেখা দিয়েছে কফি আনান কমিশন রিপোর্ট বাস্তবায়ন নিয়েও। আসাদুজ্জামান খান রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধের দাবি জানালে মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, মিয়ানমারে কোনো নির্যাতন হচ্ছে না। রোহিঙ্গারা নিজেরাই চলে যাচ্ছে। আসাদুজ্জামান খান রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি স্বচক্ষে দেখতে চাইলে তাতে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি। এমনকি সীমান্তে মাইন পুঁতে রাখার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেছে, এ কাজ তারা করেনি। অন্য কেউ করেছে।
রোহিঙ্গা নির্যাতন প্রশ্নে আন্তর্জাতিক চাপ বাড়লেও মিয়ানমার সরকার ও সেনাবাহিনী তাদের রোহিঙ্গা নির্মূল অভিযান থেকে এক পাও পিছিয়ে আসেনি। যদিও মুখে তারা আশ্বাসের বাণী প্রচার অব্যাহত রেখেছে। যে অশ্বাসের ওপর ভরসা করা বাংলাদেশের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। আর এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। এ বাস্তবতাকে সামনে রেখে আমাদের ভাবনাকে ঢেলে সাজাতে হবে।