জেরুজালেমের ভাগ্য নির্ধারণের বিষয়টি এখন আর সেখানকার মানুষদের হাতে নেই। দায়িত্ব নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে বহুল আলোচিত ও সমালোচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে জেরুজালেমের নাম ঘোষণা করেছেন। এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে তিনি কতটা সীমা লঙ্ঘন করেছেন অথবা করেননি-এ প্রশ্নের জবাব পেতে সময়ের খুব একটা অপচয় হবে না বলেই বিজ্ঞজনদের ধারণা।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষোভের আগুনে জ্বলে উঠেছে মুসলিম বিশ্ব। যুক্তরাষ্ট্র জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মুসলিমরা বিক্ষোভে উত্তপ্ত করেন রাজপথ। ফিলিস্তিনে শুরু হয় সংঘাত। ইসরায়েলি সেনাদের বন্দুকের মুখে আহতের সংখ্যা অর্ধশতাধিক। পশ্চিম তীরে হাজার হাজার ইসরায়েলি সেনা পাহারায় বসেছে। গণঅভ্যুত্থানের ডাক দিয়েছে ফিলিস্তিন নেতৃত্ব।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ১৩ ডিসেম্বর ওআইসির বিশেষ শীর্ষ সম্মেলন ডেকেছে তুরস্ক। পাশাপাশি ট্রাম্পের নিন্দায় একাট্টা হয়েছেন বিশ্বনেতারা। তারা বলেছেন, এ ঘোষণায় মধ্যপ্রাচ্যে যে অগ্নুৎপাত হবে-সেই আগুনে পুড়ে মরতে হবে অনেককেই। অশান্ত হয়ে উঠবে পৃথিবী।
বিশ্বের সব বিরোধিতা ও প্রতিবাদ উপেক্ষা এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ডোনাল্ড ট্রাম্প যে কাজটি করেছেন তাকে স্বাগত জানাতে পারেনি কোনো বিবেকবান শান্তিপ্রিয় মানুষ। তার এ ঘোষণার আগে সমগ্র বিশ্বের পক্ষ থেকে তাকে সতর্ক করে বলা হয় যে, এ ধরনের ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যে নতুন কওে যে সংঘাত ছড়িয়ে দেবে, তা হবে ভয়াবহ। এবং এ সংঘাত কারো জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না। আঁচড়ে ক্ষত-বিক্ষত হতে পারে খোদ যুক্তরাষ্ট্রও। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট এ সতর্ক বার্তাকে আমলে না নিয়ে এক পাপিষ্ঠ বেনিয়ার মতো অস্ত্র বিক্রির স্বপ্নে বিভোর রয়েছেন। তবে তাকে এ কথাও মনে রাখা জরুরি যে, সব সময় সব স্বপ্ন পূরণ না হয়ে দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়ে নিজের দিকে ফিরে আসতে পারে।
বাংলাদেশ সব সময়ই বিশ্বশান্তির পক্ষে তাদের সমর্থন দিয়ে এসেছে। জেরুজালেম প্রশ্নে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে যে ঘোষণা দিয়েছেন, তা বাংলাদেশের কাছেও গ্রহণযোগ্য নয় বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প একতরফা যে ঘোষণা দিয়েছেন তা মুসলমি বিশ্বের কারো কাছেই গ্রহণযোগ্য হয়নি। আমরাও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে বলতে চাই, ডোনাল্ড ট্রাম্প যে সিদ্ধান্ত বিশ্ববাসীর ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, তা কখনোই সমর্থন করা সম্ভব নয়। সম্ভবত খোদ মার্কিন মুলুকের শান্তিকামী মানুষরাও এর বিপক্ষে দাঁড়াবেন।
একটা কথা মনে রাখা সবার জন্য জরুরি যে, বিশ্ববিবেকের বুকে বন্দুকের নল তাক করে বিশ্বকে জয় করা যায় না। ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এ সত্য অনুধাবন করতে হবে।