ওয়াসার মহামান্য এমডি ঢাকাবাসীর উদ্দেশে যে আশ্বাস বাণী উচ্চারণ করেছেন তাকে আশ্বাস বাণী না বলে সতর্কবার্তা বললে বাড়িয়ে বলা হবে না। তিনি বলেছেন, ঢাকায় টিপটিপ বৃষ্টি হলে পানি জমবে না। তা সে বৃষ্টি যদি টানা ১০ দিন ধরেও হয়। তবে ঘণ্টায় ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিকে কিছুটা সমীহ করে বলেছেন, ‘একটু জলজট হতে পারে’। এই একটু জলজট বলতে কতটুকু বোঝায় তাও পরিষ্কার করেননি তিনি।
টিপটিপ বৃষ্টিপাতের কথা বলে যে মহাকাব্যিক ব্যাখ্যা এই ব্যবস্থাপক উপস্থাপন করেছেন, সম্ভবত বিষয়টি আজকের শিশুটিও জানে। তবে জানেন না ওয়াসার এমডি তাসকিম এ খান। আমাদের জ্ঞানের স্বল্পতার কথা ভেবেই তিনি হয়তো টিপটিপ বৃষ্টির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। এ কথা স্মরণ না করিয়ে দেওয়াটাই বোধহয় শোভন ছিল। তবে শোভন-অশোভনের বাইরে তিনি বেশকিছু কঠিন ও বাস্তব কিছু চিত্র তুলে ধরেছেন, যা সত্যিকার অর্থেই প্রশংসার দাবি রাখে।
তিনি বলেছেন, একসময় ঢাকায় ৬৫টি খাল ছিল। এখন তার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া ভার। এখন মাত্র ২৬টি খালের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। যদি শহরের এই ৬৫টি খাল এবং শহর ঘিরে যে পাঁচটি নদী প্রবাহিত ছিল তা জীবিত থাকত, তাহলে যেকোনো অবস্থায় আজ আর জলজট নিয়ে এত দুশ্চিন্তায় পড়তে হতো না। তিনি বলেছেন, খাল দখল হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। তবে খাল দখলে ওয়াসার কেউই জড়িত নন। আর এটা কোনো চুনোপুঁটির কাজও নয়। যারা দখল করেছেন এবং করছেন তাদের হাত অনেক লম্বা। ক্ষমতাও অনেক।
রাজধানীর জলজট হওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে তিনি জল সংরক্ষণের জন্য যে পরিমাণ জলাভূমির প্রয়োজন, তা নেই বলে উল্লেখ করেন। তিনি জানান, রাজধানীতে জলজট নিরসনের জন্য প্রয়োজন ১২ শতাংশ জলাভূমি। সেখানে আমাদের হাতে এখন রয়েছে মাত্র ২ শতাংশ। যার অধিকাংশই চলে গেছে ভূমিদস্যুদের দখলে। এসব কারণে ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসন কিছুটা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
ওয়াসার এমডির উল্লিখিত ঐতিহাসিক তথ্যের সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত হয়ে বলতে চাই, আমরা ঢাকা মহানগরকে জলজটমুক্ত একটি শহর হিসেবেই দেখতে আগ্রহী। যা হারিয়েছি তা ভুলে গিয়ে, যা আছে তাই নিয়ে নতুন করে শুরু করতে চাই। যেটুকু আছে তা বাঁচাতে চাই। সেটুকু বাঁচাতে পারলে রাজধানীবাসীও রক্ষা পেতে পারে— এটাই তাদের প্রত্যাশা।