আমরা কেউ কারো ভালোকে ভালো বলতে শিখিনি। বিষয়টি যেন আজ আমাদের সংস্কৃতি হয়ে উঠেছে। কেন জানি এখান থেকে বেরিয়ে আসার কথা আমরা আর ভাবছি না। রক্তের মধ্যে ভাইরাস প্রবেশ করে আমাদের বোধের সবকিছুকেই তছনছ করে দিয়েছে।
আমরা ভালোকে ভালো বলতে ভুলে গেছি। ভুলে গেছি সুন্দরকে সুন্দর বলতে। আর এ কারণেই নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাজে সহায়ক হবে—এমন অনেক ভালো উদ্যোগ আলোর মুখ দেখছে না। একজনের নেওয়া পদক্ষেপ অন্যজন এসে গ্রহণ করছেন না। ফলে পুরনো চিন্তাচেতনার সংস্কৃতির মাঝে ঘুরপাক খাচ্ছে সবকিছুই।
অভিযোগ রয়েছে, সংস্কার কিংবা ইতিবাচক পদক্ষেপ যারাই নিয়েছেন স্বল্প সময়ের ব্যবধানে তাদের দফতর কিংবা সংশ্লিষ্ট পদ থেকে সরে যেতে হয়েছে। গত বছর এমন দুজন ব্যক্তির ক্ষেত্রে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। একটি ইসি সচিবালয়ে, অন্যটি জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অণুবিভাগে। তবে এ ধরনের ঘটনা এ দেশে নতুন নয়, বিশেষ করে সরকারি কর্মক্ষেত্রে। দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে এই রেওয়াজ, যা আজকে অনেকটা কালচারে পরিণত হয়েছে।
ইসি অফিসে সংস্কার বা ব্যতিক্রমী কাজ করে প্রথমে বিশেষ ব্যক্তিটি বেশ বাহ্বা পেয়ে থাকেন। একটা পর্যায়ে পৌঁছানোর পর হঠাৎ একটি পক্ষ ওই ব্যক্তির নেওয়া ইতিবাচক কাজগুলোর সমালোচনা করতে থাকেন। এক পর্যায়ে পরিস্থিতিকে জটিল করে তোলা হয়। কাজটি চূড়ান্ত পর্যায়ে নেওয়ার পর কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগে উপর মহলকে ভুল বুঝিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর সংশ্লিষ্ট পদে নতুন ব্যক্তি এসে আগের জনের রেখে যাওয়া সব সংস্কার উদ্যোগ পরিত্যাগ করেন। অর্থাৎ কোনো ভালো কিংবা উন্নত মানসম্পন্ন কাজকে গ্রহণ না করে চিরায়ত অচল পদ্ধতিকে আঁকড়ে ধরে চলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। এতে তাদের ব্যক্তিগত চাহিদা বা আকাঙ্ক্ষা পূরণ হলেও প্রতিষ্ঠান ও সাধারণ মানুষের চাহিদা এবং আকাঙ্ক্ষা অপূর্ণই থেকে যায়।
আমরা মনে করি, দেশ, জাতি ও প্রতিষ্ঠানের কল্যাণের কথা মাথায় রেখে উপর মহলকে বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিতে হবে। অন্যথায় যেকোনো সময় ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে এসে সমাজকে পঙ্গুত্বের দিকে ঠেলে দিতে পারে, যা কখনই আমাদের কাম্য হতে পারে না।