একটি দেশকে বিশ্ব মানচিত্র থেকে মুছে ফেলার জন্য দেশটির ওপর হামলা অথবা দখলের কোনো প্রয়োজন নেই। এখন তা আর কেউ করেও না। তবে তারা যা করে তা আবার যেকোনো আণবিক বোমার চেয়েও ভয়ংকর। তাদের শক্তি এতটাই প্রখর যে, কেবল কোনো দেশই নয়, এ অস্ত্র ব্যবহার করে বিশ্ব মানচিত্র থেকে কোনো একটি জাতির অস্তিত্বকে সম্পূর্ণরূপে বিলীন করে দেয়াটাও সম্ভব। সম্ভবত এ অস্ত্রের ব্যবহার হচ্ছে আমাদের ওপর, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার ওপর। শিক্ষা খাতের পুরো ব্যবস্থাটাই যেন দুর্নীতির জালে জড়িয়ে রয়েছে। এখান থেকে বের হওয়ারও কোনো রাস্তা খুঁজে পাচ্ছেন না দায়িত্বপ্রাপ্তরা।
আবার অনেকে বলছেন, ‘সর্ষের ভেতরে ভূত’ থাকলে সেই সরিষা দিয়ে ভূত তাড়ানো সম্ভব নয়। আসলে বিষয়টিও তাই। আমাদের শিক্ষাঙ্গনের প্রতিটি স্তরেই আজ দুর্নীতির অভয়ারণ্য। দুর্নীতিবাজদের আধিপত্যে ভেঙে পড়েছে পুরো শিক্ষাব্যবস্থা। বিশ্লেষকদের মতে, আর একটি দশক এভাবে চলতে থাকলে জাতির অস্তিত্ব যে পাতালের শেষ সীমানায় গিয়ে পৌঁছাবে, আজ গ্যারান্টি দিয়ে সে কথা বলা যায়।
দুর্নীতির মাত্রা এখন কোথায় গিয়ে ঠেকেছে! পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন এখন কালোবাজারে পাওয়া যায়। পরীক্ষার মৌসুম এলেই বাজারের চাঞ্চল্য বেড়ে যায়। লেনদেনের পরিমাণ কয়েক কোটি টাকার কম নয়। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে শিক্ষক-ছাত্র-ছাত্রনেতা কে নেই এই কালোবাজারে। সংখ্যায় এরা সংখ্যাগরিষ্ঠ না হলেও আকাশছোঁয়া ক্ষমতার অধিকারী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে পর্যন্তও তাদের রক্ষার জন্য পাশে দাঁড়াতে দেখা গেছে।
আমাদের শিক্ষাঙ্গনের প্রতিটি স্তরেই আজ দুর্নীতির অভয়ারণ্য। দুর্নীতিবাজদের আধিপত্যে ভেঙে পড়েছে পুরো শিক্ষাব্যবস্থা। আর একটি দশক এভাবে চলতে থাকলে জাতির অস্তিত্ব যে পাতালের শেষ সীমানায় গিয়ে পৌঁছাবে, আজ গ্যারান্টি দিয়ে সে কথা বলা যায়
এত গেল দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের বাস্তবচিত্র। পাশাপাশি প্রাথমিকের অবস্থা আরো নাজুক। এবারের প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে ভুলের ছড়াছড়ি। কিন্তু কেন? এ প্রশ্নের জবাব পেতে আমাদের গোড়াতেই যেতে হবে। প্রাথমিক থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের যেন আজ একই অবস্থা। নৈতিক অধঃপতনের কারণে আজ আমরা এখানে এসে দাঁড়িয়েছি। এ পাপাচার থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে আমাদের কোনো মুক্তি নেই। সর্বাগ্রে আমাদের রাজনীতিকদের ফিরে আসতে হবে ইতিবাচক নৈতিকতায়। এ কথা সবার জন্য প্রযোজ্য নয়। কেননা, সংখ্যায় কম হলেও ইতিবাচক নৈতিকতার রাজনীতিকরাও এখানে আছেন। তবে ক্ষমতার প্রশ্নে এরা ততটা শক্তিশালী নন।
রাজনীতিকরা যদি সততার সঙ্গে এই সংকট মোকাবেলায় এগিয়ে আসেন তাহলে দেশ ও জাতি এত দিনের জমে থাকা সব আবর্জনাকে পরিষ্কার করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে সক্ষম হবেন। আমরা বিশ্বাস করি, এ কাজে নিশ্চয়ই তারা এগিয়ে আসবেন এবং দেশ ও জাতি তার অস্তিত্ব সংকট থেকে মুক্তি পাবে।