শ্রষ্টার সৃষ্টি আমরা। নির্মাতা এবং আকৃতিদাতা তিনি। বয়সের তারতম্য, রোগ-বালাইয়ের কারণে আমাদের আকৃতি বিভিন্নরূপ দেখা দেয়। ভেঙে যায় সব কিছু। আমরা নশ^র। কর্মগুণে আমাদের পরিচিতির ভালোমন্দের নানান দিক উঠে আসে। অনন্য সাধারণ মানবিক গুণসম্পন্ন মানুষদের ভারি ওজনদার করে তোলে। মানুষের মৌলগুণ হলো বুদ্ধিবৃত্তি এবং বিবেক আর তাদের চরিত্রটার অনুরূপ পরিস্ফুটন ঘটুক- এটাই কাম্য। শক্তিশালী রাজারা শক্তির মহড়া দেয়। জয় করতে চায় পুরো বিশ^। নির্যাতন, শোষণ চলে দুর্বলদের ওপর এবং সংখ্যালঘিষ্ঠদের ওপর। রাজশক্তির পরিবর্তন হয়ে রাজা প্রজা বনে যায়। অহংবোধ আর গর্বের তর্জনীর শেষ পরিণতি চাক্ষুষ করে সবাই কিন্তু সাময়িক লোভ আর মোহের বশে বিপথগামী হয়ে ওঠে তখন বুদ্ধিবৃত্তি হয়ে যায় খাটো। ওজনটাও কমে আসে তখনই। নমরুদের মতো দাপুটে বাদশার নাকে ঢোকা মশা মস্তকে পৌঁছালে শেষ হবার করুণ কাহিনি সবারই জানা। তারপরও ভোগবাদীদের দৌরাত্ম্য কমে না। ভালো মানুষ পাওয়া এখন স্বপ্নলব্ধ বিষয়। এমপি শহিদ ইসলাম পাপুল, নাঈমুর রহমান দুর্জয় এবং এনামুল হকদের দুর্নীতি আর পাহাড়সম সম্পদের যে খবর পাওয়া যাচ্ছে তা কিন্তু সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে। দলটির ঐতিহ্যের ইতিহাস আর অর্জনের ইতিহাস খাটো না। আবার নানাবিধ ষড়যন্ত্রের কবলে থাবা খেয়ে দুর্ভোগটাও পোহাতে হয়েছে কম না। দুর্জয় এবং এনামুল হকের আমলনামা কেন দলটির হাতে নেই, কেনইবা সরকার-প্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নখদর্পণে নেই- তা বোধগম্য হবার নয়। কাউয়া, ফেউর কোন পথ দিয়ে দলে ঢোকে- এসব ভাবতেই মন বিষন্ন হয়ে যায় নিজের অজান্তেই। ৭১তম জন্মবার্ষিকী এবং মুজিব শতবর্ষ উদযাপনের পূর্বেই সংগঠন এবং কজন সাংসদের পুরোটাই বিশুদ্ধকরণে আত্মনিয়োগ করাটা প্রয়োজন ছিল বলে আমরা মনে করি। আত্মমর্যাদা রক্ষার জ্ঞান যাদের নেই তাদেরকে সাংসদ হবার সুযোগ দেওয়া কি সঠিক? অসম্ভব। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ভাষণে স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন, ঘরে ঘরে দুর্গ তৈরি করে স্বাধীনতার জন্যে যুদ্ধ করতে বলেছিলাম। এখন ঘরে ঘরে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে আন্দোলন চাই। বঙ্গবন্ধুকে আমরা শ্রদ্ধা করি, তাঁর নির্দেশনা মানতে পারব না? প্রশ্নটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে কেন করতে পারব না? করোনার কিট তথ্যে লুকোচুরি, করোনায় আক্রান্ত তথ্যে এবং মৃতদের তথ্যেও গোঁজামিল- এসব কেন হচ্ছে! কারা এটার দেখভাল করছে? তারা কি রাষ্ট্রের শত্রæ? সবকিছুতেই হযবরল হতে থাকলে করোনা নিবৃত্তকরণে সরকারের পদক্ষেপ তো কার্যকরী হবে না। নোয়াখালী-৪ আসনের এমপি একরামুল চৌধুরী স্বাস্থ্যখাতের অনিয়মের কথা ফেসবুকে স্টেটাস দিয়েছিলেন, এটা কিন্তু একজন এমপির বিচক্ষণহীনতার লক্ষণ। তিনি সংসদীয় কমিটিতে কথা বলতে পারতেন- পারতেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকেও জানাতে। তাছাড়া রাশেদ খান মেননও সরকারের শরিক, ‘দুর্নীতিতে বেহাল স্বাস্থ্যখাত’ এই মর্মে তিনিও পত্রিকায় কথা বলেছেন। ঘরের মানুষ যদি বাইরে কথা বলেন- তাতে কিন্তু সরকারের গৃহীত কার্যক্রম অবশ্যই ম্লান হয়ে যাবে। একরামুল চৌধুরীকে এমপি হিসেবে রাখলে তার ভিডিও ভাইরালের দায় সরকারকেই নিতে হবে? এবং প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠবে জনমনে- সরকার কি করোনা সংকট মোকাবিলায় ব্যর্থ? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, অর্বাচীন কিছু এমপি কি আওয়ামী লীগের খুবই প্রয়োজন? বড় দুশ্চিন্তায় থাকেন তারা, যারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে শ্রদ্ধা করেন। যারা তাঁর নেতৃত্বের ওপর পূর্ণ আস্থা রাখেন। জোট শাসকদল দু’শ এর অধিক পদে নির্বাচনী কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছিল। তারা কিন্তু তাদের কোনোই কাজে আসেনি বা আসছে না। প্রত্যেক এমপি-মন্ত্রীর পেছনে কাউয়া বা ফেউর রয়েছে, তারা মধু আহরণের পর উড়ে যাবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য বিভাগে ‘মিঠু সিন্ডিকেট’, এমনকি সিন্ডিকেট হোতার নামও পত্রিকান্তরে এসেছে- এখনই সময় স্বাস্থ্য বিভাগকে দুর্নীতিমুক্ত এবং দালালদের বিদায় করবার। করোনাকালে বিদ্যুৎ বিল নিয়েও কথা উঠেছে। পূর্বের বিদ্যুৎ বিলের তুলনায় ডিজিটাল বিদ্যুৎ বিল দ্বিগুণ আসছে। সাধারণ মানুষের আয় কিন্তু দ্বিগুণ হয়নি। গ্যাসবিলও বাড়তি। যারা এসব নিয়ে মুখ খুলেছেন তাদেরকে রাষ্ট্রের শত্রু মনে করার কোনো কারণ নেই। ধীরে ধীরে জনমনে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হচ্ছে। আস্থা কমে গেলে ওই ফাটল পথে বিরোধীরা ঢোকার চেষ্টা করবে এটাই স্বাভাবিক। দলীয় এমপি যারা চেইন অব কমান্ডের বাইরে কথা বলেছেন তারা মানুষের মনে আশাহত অবস্থার সৃষ্টি করছেন। অন্যদিকে করোনার থাবায় দিশেহারা মানুষ, তারা নানা প্রতিশ্রুতি চায়। আতঙ্ক আর ভয় যদি তাদের নিত্যসঙ্গী হয়ে যায় এবং জীবনযুদ্ধে যদি পরাহতভাবের উদয় হয় তারা ষড়যন্ত্রকারীদের উস্কানিমূলক কথাকেই অন্তকরণ করতে থাকবে- তখন নিশ্চয়ই বিপজ্জনক অবস্থার অবতারণা ঘটতে পারে। ষড়যন্ত্রকারীরা অতীতে খুনীদের প্রকাশ্যে মঞ্চে উঠিয়ে বলাতে পেরেছে- ‘আমিই মুজিবের খুনি’; তখন কিন্তু আমজনতা হ্যাঁ করে দেখেছে। বুদ্ধিজীবীদের একটা অংশ আনন্দিত হয়ে দোলনায় দোল খেয়েছে। সমাজের আমজনতা ন্যায়ভিত্তিক সমাজ চায়। তাইতো ২০০৮ সালের নির্বাচনে অকল্পনীয় বিজয় হয়েছিল মহাজোটের। সমাজ রাষ্ট্রের অধিকাংশের স্বপ্ন ভালো শাসকের। জনগণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর মাত্রাতিরিক্ত ভরসা রাখে। প্রধানমন্ত্রীর উপলব্ধিটা জনমানসে অটুট থাকুক- প্রত্যাশা আমাদের অনুরূপই। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এক নতুন রূপ পরিগ্রহ করেছে। প্রশাসনিক দক্ষতায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনিই বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোডম্যাপে বিকশিত করে বিশে^র দেশে দেশে নতুন মাত্রায় আত্মমর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন। আপনি দেশের মানুষকে ভালোবাসেন। দেশবাসীও আপনাকে ধারণ করেছে হৃদয়ে; কিন্তু তার পরও মানুষ নিজের জীবনকেও বেশি ভালোবাসে। করোনা সংকটকালীন সময়ে আত্মীয়-পরিজনরা লাশ দাফনে অংশ নিচ্ছে না। আবার বৃদ্ধ মাতা-পিতাকেও জীবনের মায়ায় ফেলে রেখে আসছে জঙ্গল বা রাস্তায়। জীবন বিপন্ন মানুষদের পুঁজি করা খুবই সহজ। ওঁৎ পেতে থাকা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী বলয় কোন ফাটল পথে ঢুকে যাতে দেশটাকে ক্ষত-বিক্ষত করতে না পারে সেভাবে সমাজ-রাষ্ট্রের বন্ধনকে সরল সমীকরণে হৃদয়ে গেঁথে রাষ্ট্র পরিচালনার বিকল্প কিছুই নেই।
মোঃ ফজলুল হক মাস্টার জামালপুর মোবাইল: ০১৭২১-৫৭৫৪৯৩