বর্তমানে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান বিবেচনায় মনে হচ্ছে, আল্টিমেটলি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে। নির্বাচনে যাওয়ার জন্য যে কৌশলগ্রহণ দরকার সেভাবেই এগোচ্ছে দলটি। বিএনপি যদি এই মুহূর্তে ঘোষণা দিয়ে দেয় যে, ‘আমরা আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব’ তাহলে সরকার আরও আটঘাট বেধে নির্বাচনী প্রস্তুতি নেবে। এবং বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণের পথে বাধা সৃষ্টি করবে। বিএনপি এই মুহূর্তে তাদের সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করে সরকারকে দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে রাখার চেষ্টা করছে। বিএনপি নির্বাচনে যাবে কি যাবে না এ ব্যাপারে যাতে সরকার কোনো সিদ্ধান্ত নিতে না পারে। নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিএনপির সুবিধা হলো তারা সরকারকে যতটা অসতর্ক অবস্থায় পাবে, যত অগোছালো পাবে তাদের জন্য ততই সুবিধা। বিএনপি এক সময় এদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল।
তারা জানে ক্ষমতায় থাকলে সরকার বা ক্ষমতাসীন দলের কিছু সমস্যা হয়। সেই সমস্যাগুলো বর্তমান সরকারের মধ্যেও রয়েছে। সেই সমস্যাগুলোতে যেন আওয়ামী লীগ পরে এবং খুব সহজেই সমাধান না করতে পারে সেজন্য বিএনপি নানা ধরণের কথাবার্তা বলছে। এগুলো করছে তারা সরকারকে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ফেলার জন্য। বিএনপি একেক সময় একেক কথা বললেও দলটি নির্বাচনে যাবে। কারণ ২০১৪ আর ২০১৭ সালের বাংলাদেশ এক নয়। এটা সবদিক বিবেচনায়। আন্তর্জাতিক অঙ্গণ, দেশের বিপুল পরিবর্তন হয়েছে। অতীতে দেশের রাজনীতিতে বিদেশি হস্তক্ষেপ ও দেশের রাজনৈতিক পরিবেশসহ আরও বেশ কিছু ফ্যাক্টর ছিল। গত কয়েক বছরে দেশের রাজনীতি অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে। বিএনপি এখন জানে ভোট ছাড়া বর্তমান সরকার পরিবর্তন সম্ভব নয়।
২০১৪-১৫ সালেও মানুষের একটা ধারণা ছিল, বিশ্বাস করত যে, আমেরিকা যা চায় আমাদের দেশের রাজনীতিতে সেটাই হবে, বা পশ্চিমা দেশগুলো যা চায় তাই হবে। এখন এই জিনিসটা আর নেই। এই তত্ত্ব এখন আর কেউ বিশ্বাস করে না। এই বিশ্বাসটা না থাকার কারণে যেটা হবে এখন ভোট হবে। ভোট যদি হতে হয় সেক্ষেত্রে ভোটের জন্য কৌশল করতে হবে। কেননা বর্তমান সরকারের সঙ্গে শক্তিতে কোনো দিকেই বিএনপি পারবে না। এজন্য বিএনপি কিছু কৌশল খুঁজছে। এই কৌশলেরই অংশ হিসেবে তারা একেক সময় একেক কথা বলছে। তাই আমি বলব এখানে দ্বিধাদ্বন্দ্বের কোনো অবকাশ নেই। সরকার এখানে নিজেদের যতই শক্তিশালী মনে করুক না কেন, বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ঘোষণা দেয় তাহলে রাতারাতি নির্বাচনের নব্বই দিনের সময়টাতে নির্বাচনী আবহাওয়া এবং নির্বাচনের মাঠের অবস্থা পরিবর্তন হবে। নির্বাচনী আবহাওয়া এবং নির্বাচনের মাঠের অবস্থা কোন পর্যায়ে যাবে সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না। বর্তমানে নির্বাচনী প্রচারণা এবং সবকিছু যেমন সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছে তখনও যে একইভাবে সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকবে সেটা বলা যাচ্ছে না।
নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণা করার পর সময়টা সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণে থাকবে না। এটা আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, তখন পরিবেশটা টোটাল পরিবর্তন হয়ে যাবে।নির্বাচনের আরেকটি বিষয় নিয়ে দুদলের মধ্যে বাকবিত-তা দেখা যাচ্ছে, সেটা হলো ইভিএম। ইভিএম পদ্ধতি আসলে বাংলাদেশে এখনই কার্যকরি হবে না। এটা একটা কথার কথা বলেই মনে হয়। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও ইভিএম পুরোপুরিভাবে কার্যকর করতে পারছে না। এখন যেভাবে চলছে সেক্ষেত্রে বলা যায় ইভিএম বাংলাদেশে কার্যকর করতে আরও ২০ বছর সময় লাগবে। সর্বোপরি আমি মনে করি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সব দলের অংশগ্রহণে একটি প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ।