কোটা পদ্ধতি ছাত্রলীগ কী ভুল পথে হাটছে !
মো: হারিস চৌধুরী:
হায়রে বাংলাদেশ! আজ যদি বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকতেন লজ্জায় মাথা লুকাতেন কোথায় ? এই লজ্জা বঙ্গবন্ধুর ; এই লজ্জা সমগ্র বাঙ্গালী জাতির। ছাত্র রাজনীতির উদার পাঠশালা থেকে নেতৃত্বের গুনাবলি বিকাশিত করে একটি জাতিকে স্বাধীনতা উপহার দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। আর বর্তমানে ছাত্ররাজনীতি হয়ে উঠেছে কিছু বিবেক-বুদ্ধিহীন, চাটুকার, তেলবাজ, সন্ত্রসী, ধর্ষণকারী তৈরির কারখানা। যেই রাজনীতি ছাত্রদের নার্ভ বুঝতে পারে না, ছাত্রদের যৌক্তিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয় না, বরং সেই ছাত্র আন্দোলন দমনে রাষ্ট্রের লাঠিয়াল বাহিনী কাজ করে, সেই রাজনীতি ছাত্রদের জন্য তো নয়ই, সর্বোপরি দেশের জন্য কোন কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না।
বঙ্গবন্ধু যখন ১৯৭৫ সালে বাকশাল গঠন করেছিলেন বেশির ভাগ মানুষ তাকে ভুল বুঝেছিলেন। তৎকালীন আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের অনেকেই না বুঝে বাকশালে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু তারা কখনোও বাকশালের মর্মার্থ বুঝতে পারেনি এবং বাকশালের চেতনা দেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারেনি। যার মূল্য বঙ্গবন্ধু দিয়ে গেছেন জীবন দিয়ে। এমনকি বর্তমানেও বাকশালকে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গালি হিসাবে ব্যবহার করা হয়। বেশির ভাগ আওয়ামী লীগের ভাইয়েরা তা এড়িয়ে যান অথবা কুতর্কে জড়িয়ে পরেন। আজ ছাত্রলীগের মেধা -মননের চর্চা না থাকায় আওয়ামী লীগ কে বার বার লজ্জিত হতে হয়।
চীনের কিংবদন্তি নেতা মাও সে তুং ১৯৬৬ সালে দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন, যার ফলশ্রুতিতে আজ চীন বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ও শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ, যাকে নিয়ে চীনা কমিউনিষ্ট পার্টি এবং সমগ্র চীন গর্ব করে। অথচ একই উদ্দ্যেশে একই প্রক্রিয়ায় দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে তার জীবন উৎসর্গ করতে হল। আর আওয়ামী লীগ আজও বয়ে বেড়াচ্ছে বাকশালের অপবাদ। এই ব্যার্থতা কার ? অনেকের অনেক ধরনের উত্তর থাকতে পারে। কিন্তু আমি মনে করি এই ব্যর্থতা সম্পূর্ন রূপে ছাত্রলীগের , যারা তাদের দায়িত্ব-কর্তব্য ভুলে আওয়ামী লীগের লেজুড় এবং সরকারের পেটুয়া বহিনীতে পরিণত হয়েছে। মেধার চর্চা না থাকলে ছাত্ররাজনীতি তার উদ্দেশ্য হাসিলে ব্যর্থ হয় তা আমরা বাঙ্গালীরা ছাড়া কেই বা ভাল বুঝবে?
ছাত্রলীগের রয়েছে এক গৌরবময় ইতিহাস, অথচ আজ ছাত্রলীগের বদনামের অন্ত নেই। কোটা পদ্ধতি সংষ্কারের মত একটি যৌক্তিক ছাত্র আন্দোলন দমনে আজ ব্যবহৃত হচ্ছে ছাত্রলীগ।
ছাত্রলীগের ভাইদের রাজপথের এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের গত কয়েকদিনের কর্মকান্ডে জাতি বাকরুদ্ধ। বিশেষ করে লন্ডনে সেচ্ছা নির্বাসিত একজন সাবেক ছাত্রলীগ নেতার অনলাইন কর্মকান্ড জাতিকে ব্যাথিত করেছে। তবে তাদের মনে রাখা উচিত ছাত্রদের বিরুদ্ধে গিয়ে ছাত্র রাজনীতি করা যায় না। আর ছাত্রলীগ যদি এই পথেই হাটে তবে তা আওয়ামীলীগের বোঝা ভারি করা ছাড়া কোন ইতিবাচক ফলাফল দিতে পারবে না। আওয়ামী লীগ বিরোধী নিন্দুকেরা একটা হাস্যকর প্রবাদের জন্ম দিয়েছিল বহু আগে “তুই মানুষ না, তুই আওয়ামী লীগ” আর এখন সমগ্র বাংলাদেশ বলে “তুই ছাত্র না, তুই ছাত্রলীগ”।
মো: হারিস চৌধুরী
সাবেক শিক্ষার্থী ও চাকুরীপ্রার্থী
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
|
মো: হারিস চৌধুরী:
হায়রে বাংলাদেশ! আজ যদি বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকতেন লজ্জায় মাথা লুকাতেন কোথায় ? এই লজ্জা বঙ্গবন্ধুর ; এই লজ্জা সমগ্র বাঙ্গালী জাতির। ছাত্র রাজনীতির উদার পাঠশালা থেকে নেতৃত্বের গুনাবলি বিকাশিত করে একটি জাতিকে স্বাধীনতা উপহার দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। আর বর্তমানে ছাত্ররাজনীতি হয়ে উঠেছে কিছু বিবেক-বুদ্ধিহীন, চাটুকার, তেলবাজ, সন্ত্রসী, ধর্ষণকারী তৈরির কারখানা। যেই রাজনীতি ছাত্রদের নার্ভ বুঝতে পারে না, ছাত্রদের যৌক্তিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয় না, বরং সেই ছাত্র আন্দোলন দমনে রাষ্ট্রের লাঠিয়াল বাহিনী কাজ করে, সেই রাজনীতি ছাত্রদের জন্য তো নয়ই, সর্বোপরি দেশের জন্য কোন কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না।
বঙ্গবন্ধু যখন ১৯৭৫ সালে বাকশাল গঠন করেছিলেন বেশির ভাগ মানুষ তাকে ভুল বুঝেছিলেন। তৎকালীন আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের অনেকেই না বুঝে বাকশালে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু তারা কখনোও বাকশালের মর্মার্থ বুঝতে পারেনি এবং বাকশালের চেতনা দেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারেনি। যার মূল্য বঙ্গবন্ধু দিয়ে গেছেন জীবন দিয়ে। এমনকি বর্তমানেও বাকশালকে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গালি হিসাবে ব্যবহার করা হয়। বেশির ভাগ আওয়ামী লীগের ভাইয়েরা তা এড়িয়ে যান অথবা কুতর্কে জড়িয়ে পরেন। আজ ছাত্রলীগের মেধা -মননের চর্চা না থাকায় আওয়ামী লীগ কে বার বার লজ্জিত হতে হয়।
চীনের কিংবদন্তি নেতা মাও সে তুং ১৯৬৬ সালে দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন, যার ফলশ্রুতিতে আজ চীন বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ও শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ, যাকে নিয়ে চীনা কমিউনিষ্ট পার্টি এবং সমগ্র চীন গর্ব করে। অথচ একই উদ্দ্যেশে একই প্রক্রিয়ায় দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে তার জীবন উৎসর্গ করতে হল। আর আওয়ামী লীগ আজও বয়ে বেড়াচ্ছে বাকশালের অপবাদ। এই ব্যার্থতা কার ? অনেকের অনেক ধরনের উত্তর থাকতে পারে। কিন্তু আমি মনে করি এই ব্যর্থতা সম্পূর্ন রূপে ছাত্রলীগের , যারা তাদের দায়িত্ব-কর্তব্য ভুলে আওয়ামী লীগের লেজুড় এবং সরকারের পেটুয়া বহিনীতে পরিণত হয়েছে। মেধার চর্চা না থাকলে ছাত্ররাজনীতি তার উদ্দেশ্য হাসিলে ব্যর্থ হয় তা আমরা বাঙ্গালীরা ছাড়া কেই বা ভাল বুঝবে?
ছাত্রলীগের রয়েছে এক গৌরবময় ইতিহাস, অথচ আজ ছাত্রলীগের বদনামের অন্ত নেই। কোটা পদ্ধতি সংষ্কারের মত একটি যৌক্তিক ছাত্র আন্দোলন দমনে আজ ব্যবহৃত হচ্ছে ছাত্রলীগ।
ছাত্রলীগের ভাইদের রাজপথের এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের গত কয়েকদিনের কর্মকান্ডে জাতি বাকরুদ্ধ। বিশেষ করে লন্ডনে সেচ্ছা নির্বাসিত একজন সাবেক ছাত্রলীগ নেতার অনলাইন কর্মকান্ড জাতিকে ব্যাথিত করেছে। তবে তাদের মনে রাখা উচিত ছাত্রদের বিরুদ্ধে গিয়ে ছাত্র রাজনীতি করা যায় না। আর ছাত্রলীগ যদি এই পথেই হাটে তবে তা আওয়ামীলীগের বোঝা ভারি করা ছাড়া কোন ইতিবাচক ফলাফল দিতে পারবে না। আওয়ামী লীগ বিরোধী নিন্দুকেরা একটা হাস্যকর প্রবাদের জন্ম দিয়েছিল বহু আগে “তুই মানুষ না, তুই আওয়ামী লীগ” আর এখন সমগ্র বাংলাদেশ বলে “তুই ছাত্র না, তুই ছাত্রলীগ”।
মো: হারিস চৌধুরী
সাবেক শিক্ষার্থী ও চাকুরীপ্রার্থী
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
|
|
|
|
খুব প্রয়োজন কিংবা জরুরি না হলে যাত্রীরা অটোরিকশায় উঠতে চান না। আর এই সুযোগটিই নেন চালকরা। তারা নানা অজুহাতে যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করেন। সরকারের নির্দেশনা আছে, চালকদের গন্তব্য নিয়ে কোনো প্রশ্ন করা চলবে না। এমনকি ভাড়া নিয়েও কোনো দর-দাম করা যাবে না। কারণ, মিটারের ভিত্তিতে ভাড়া উঠবে।
কিন্তু রাজধানীর কোনো সিএনজিচালিত অটোরিকশা মিটারে চলে না। যাত্রীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে যাত্রীদের মিটারের চেয়ে তিন গুণ ভাড়া গুনতে হয়। যাত্রী সাধারণের প্রশ্ন—এই নৈরাজ্য দূর হবে কবে? আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলে অটোরিকশার চালকরা কি মিটার উপেক্ষা করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে পারতেন? উপরন্তু তাদের মর্জির ওপর নির্ভর করেই যাত্রীদের গন্তব্যে যেতে হয়।
তবে যে যাই বলুক, গণপরিবহনে আইনি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা না গেলে অটোরিকশার ভাড়া সন্ত্রাস দূর করা যাবে না। এ ক্ষেত্রে বিআরটিএ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আন্তরিক হলেই যাত্রীদের মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
রাজধানীতে অটোরিকশার চালকদের ভাড়ানৈরাজ্য ও যাত্রী হয়রানির ওপর এক পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতি অভিযোগ করেছে, এসব অটোরিকশার অধিকাংশই কোনো আইন-কানুনের ধার ধারে না। এ ছাড়া চাহিদার তুলনায় এই বাহনের সংখ্যা কম। ফলে চালকদের ইচ্ছার কাছে যাত্রীরা বছরের পর বছর ধরে জিম্মি হয়ে আছেন। অটোরিকশা সংকটের কারণে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেশি ভাড়া দিয়েও গোপনে চুক্তিতে যাতায়াত করছে যাত্রী সাধারণ।
গত রোববার সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে সংগঠনটির পক্ষ থেকে ভাড়ানৈরাজ্য ও যাত্রী হয়রানি বন্ধে সাত দফা সুপারিশ করা হয়। এতে বলা হয়, ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে নতুন অটোরিকশা নামানোর উদ্যোগ নেওয়া। গণমালিকানার পরিবর্তে কোম্পানিভিত্তিক অথবা অ্যাপসভিত্তিক অটোরিকশা পরিচালনার ব্যবস্থা করা। মিটারবিহীন ও প্রাইভেট অটোরিকশা চলাচল বন্ধে উদ্যোগ নেওয়া। জমা ও ভাড়া বৃদ্ধি, সিলিং নির্ধারণ, মনিটরিং কমিটিতে যাত্রী সাধারণের প্রতিনিধিত্ব রাখা।
নীতিমালা লঙ্ঘন করে চলাচলকারী অটোরিকশা এক বছর আটকে রাখার বিধান করা। আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার ও আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের মুনাফা সরকার কর্তৃক নির্ধারণ করে দেওয়া এবং নতুন অটোরিকশা নিবন্ধনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা ও অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করা।
আমরা মনে করি, সবকিছুর নীতিনির্ধারক সরকার। জনস্বার্থের বিষয়টি তারাই মূল্যায়ন করবে। এ বাস্তবতায় শুধু এইটুকু বলা যায়, সরকারকে জনগণের কল্যাণের বিষয়কেই অগ্রাধিকার দিতে হবে। কারণ, দেশে সিএনজি অটোরিকশার নৈরাজ্য নতুন কিছু নয়। বর্তমানে রাজধানীতে এটি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। কথায় কথায় সাধারণ মানুষকে জিম্মি করা তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এ অনিয়ম রোধ করতে হবে।
যত দ্রুত সম্ভব গণপরিবহনকে সহজ ও যাত্রীবান্ধব করার জন্য সিএনজি অটোরিকশার চালকদের মিটারে ভাড়া আদায় ও মালিকদের জমা নেওয়ার বিষয়ে নজরদারি জোরদার করতে হবে। যাতে কোনোভাবেই যাত্রীস্বার্থ বিনষ্ট না হয়।
|
|
|
|
স্মৃতির বিনুনি সুতায় বেঁধে রাখি মমতার ছাঁয়াকোল। বিভুঁই উষ্ণতায় চৈতন্যচ্যুত পরাণেও হঠাৎ খেলে যায় উদয়-অস্তের খেয়াল। যদিও জং ধরা টিনে ছাওয়া হয়েছে মননের চৌচাল, তবু বিস্মিত হই, যখন দেখি দেশনন্দিত আবদুল্লাহর জনক সে আমাদেরই পড়শি এক, অতিথি নয়-এলাকার গৌরব।
অপার তৃষ্ণায় ছুটে যাই স্বরূপ বিশ্লেষণে। যদিও কার্পণ্যতায় আড়ষ্ট হয় কণ্ঠস্বর, তবু দেখি সামনে মূর্ত্যমান এক দিব্য জ্যোতি কথাশিল্পী, সাহিত্য সাধক। যদিও একক পরিচয়ে নয় সীমাবদ্ধ। শিক্ষা বোর্ডের সর্বোচ্চ সম্মানিত পদে আসীন। স্বীয় মেধা, মনন, প্রজ্ঞা বলে খানবাহাদুর উপাধিতে ভূষিত। কলকাতার ‘শিক্ষক’ পত্রিকা এক মহৎ কর্মোদ্যোগ, বিনির্মাণের অপূর্ব শৈলী, জ্ঞান বিকাশের আলোক মিশন, তবু চেনার মধ্যে অনেক অচেনা, জানার মধ্যে সুদূর অজানা। অথবা প্রচেষ্টাহীন নশ্বর জীবন আমাদের সেই জিতেন্দ্রীয় সাধককে উন্মোচনের। গণ্ডিবদ্ধ অসারতায় যেন আটকে আছে হৃদয়।
সাহিত্যবোধের অপূর্ব রসে সমৃদ্ধ তার ‘আবদুল্লাহ’। গ্রাম-বাংলার খেটে খাওয়া, ভুখা-নাঙ্গা মানুষের জীবনযাপনের বাস্তব প্রতিচিত্র। দুঃখ-ক্লেশের সোশ্যাল দর্পণ। কখনো কখনো একটি কবিতা বা একখানি সফল উপন্যাস কাউকে লেখকের মানদণ্ডের বিচারে করে শ্রেষ্ঠ। পৌঁছে দেয় খ্যাতির উচ্চশিখরে। কাজী ইমদাদুল হকের ‘আবদুল্লাহ’ যেন তেমনই এক।
জীবন সংগ্রামে প্রত্যয়ী যুবক আবদুল্লাহর চরিত্র সৃষ্টায়নের দক্ষ রূপায়ণ। যেন হাজার বছর ধরে লিখেও শেষ হবে না তার বন্দনা। কখনো সে সমুদ্রের মতো প্রসারিত এক বিশালতা, কখনো উনুনমুখী আগুনের আঁচে পুড়ে যাওয়া মাটির হৃদয়। কিন্তু এই রঞ্জিত মাটির প্রাণ রসায়নকে বাষ্পোন্মোচিত করার সুতীব্র প্রাণোন্মাদনা আমাদের কই?
এখন পরাবাস্তব কোয়ার্কের কার। হাইজেন বার্গের অনিশ্চয়তা নিয়ে বিভ্রান্ত সবাই। তবে হৃদয়ের লাব-ডাব এখনো সাহিত্যের কথা বলে। হোক না যন্ত্রায়ণ। পাখির কণ্ঠ থেকে গান চুরি করার মতো দুঃসাহস নেই কোনো যন্ত্রদানবের। তবু কৌলিন্যতা আর অসারতা যেন আমাদের সমাজের রন্ধ্রজাত প্রবণতা। প্রতি বছর ৪ নভেম্বরে জন্মদিন এলে শুধু দু-চার লাইন তোড়জোড়। গুটি কতক ভক্তের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার নামে মাত্র সম্মান রক্ষা। বাকি সময় যেন দীপ জ্বালানোর নেই কোনো প্রহরী।
দক্ষিণবঙ্গের লক্ষ হাজার মানুষের জন্য সম্মানের মুকুট ছিনিয়ে আনা এই সাহিত্য রত্নটিকে হয়তো সবাই জানি ‘আবদুল্লাহর’ জনক রূপে। কিন্তু কীভাবে তিনি তা হয়েছিলেন, ছড়িয়ে ছিলেন সাহিত্যের দিপ্যমান আলোকচ্ছটা, কবে তার জন্ম, কবে তার মৃত্যু সেই উদয়-অস্তের খবর রাখে কজনা। আমরা কি পারি না একটু সজাগ হতে? আমাদের মানবিক বোধকে একটু জাগ্রত করে ঋণ পরিশোধ করতে!
|
|
|
|
এক দিন নয়। আজ সেই দিন। আমরা করব জয়। গত ১৬ মার্চ আমরা তা দেখিয়েছি। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও স্নায়ুচাপের চূড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল ফাইনালে। শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে প্রমাণ করেছে তারাও বিশ্বের যেকোনো দলের বিপক্ষে একটি আতঙ্ক। যেখান থেকে উঠে এসে তারা বিজয়কে ছিনিয়ে এনেছে-এর প্রশংসা না করলেই নয়। তাদের প্রতি দেশের ১৬ কোটি মানুষের শুভেচ্ছা রইল।
এখানে একটি কথা না বললেই নয়, দেশের প্রতি প্রগাঢ় ভালোবাসা নিয়ে মাঠে দাঁড়াতে পারলে এ রকম খেলা উপহার দেওয়া সম্ভব। অনেক দিন পরে হলেও আমরা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে শ্রীলঙ্কার প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে খেলতে দেখলাম একঝাঁক তরুণকে। নাম উচ্চারণ না করেই বলব, দু-একজনের মধ্যে প্রেমে ঘাটতি ছিল। তারা মাহামুদউল্লাহর মাঠে থাকাকালীন অভিব্যক্তির দিকে তাকিয়ে শিখতে পারেন। ভেতরে দেশপ্রেম থাকলে অভিব্যক্তি কী রকম হতে পারে, ১৬ মার্চ প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে মাহামুদউল্লাহই তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
আমরা মনে করি, আজ দলের প্রতিটি খেলোয়াড় মাহামুদউল্লাহর মতো দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে মাঠে নামবেন। বিশেষ করে যাদের মধ্যে এখনো ঘাটতি আছে, তারা তা শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করবেন বলেই আমাদের বিশ্বাস। দলের প্রতিটি সদস্যকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, আজ তারা বিশ্বসেরা একটি দলের বিপক্ষে মাঠে নামছেন। এ দলের বিপক্ষে জিততে হলে সর্বাগ্রে চাই নিখাদ দেশপ্রেম। দলের প্রতিটি সদস্যকে তার নমুনা দেখাতে হবে।
আমরা সেই দেশপ্রেমের অভিব্যক্তিই দেখতে চাই প্রতিটি খেলোয়াড়ের মধ্যে। আমরা জানি, খেলায় হারজিৎ খেলারই একটি অংশ। হারা বা জেতা নিয়ে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই। আমাদের বক্তব্য অত্যন্ত সহজ এবং সরল। আমরা হারলেও লড়াই করে হারতে চাই। নির্লজ্জের মতো হারাকে কোনো দেশপ্রেমিকই সহজভাবে গ্রহণ করতে পারেন না। আর নির্লজ্জের মতো দল তখনই হারবে, যখন দলটি হবে দেশপ্রেমবিবর্জিত।
আমরা আশা করি, আজ ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের যে দলটি মাঠে নামবে, তাদের চিন্তা ও চেতনায় থাকবে দেশপ্রেমের নির্যাসে গড়া আসাদের মতো, রফিক-শফিক-জব্বারের মতো একঝাঁক তরুণ মুক্তিযোদ্ধা। যারা নিশ্চয়ই জয় ছিনিয়ে আনবে। যেভাবে ১৬ মার্চ শ্রীলঙ্কার কাছ থেকে ছিনিয়ে এনেছে রক্তিম সূর্যটা। এক দিন নয়। আজই। আমরা করব জয়।
|
|
|
|
মেরুদণ্ড ছাড়া যেমন কোনো মানুষ দাঁড়াতে পারে না, ঠিক তেমনি শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতি মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না। আর এ কারণেই বলা হয় ‘শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড’। বর্তমান সময় এমন হয়েছে, শিক্ষিত জনগোষ্ঠী জাতির মেরুদণ্ডকে ভেঙে দিতে চায়। তাই বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে অনেকেই বলতে বাধ্য ‘সুশিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড’। কারণ, সব শিক্ষা জাতিকে উঁচু করে দাঁড় করাতে পারে না। শিক্ষার অপব্যবহারের ফলে জাতি আজ দুর্নীতিগ্রস্ত, লিপ্ত অন্যায় অপরাধে। লিপ্ত প্রশ্নপত্র ফাঁসে।
পরীক্ষা মেধাবী শিক্ষার্থী গঠন ও বাছাইকরণের অন্যতম পন্থা। পরীক্ষার মাধ্যমে মানুষ সম্মানিত বা অপমানিত হয়। যারা কঠোর পরিশ্রম করে লেখাপড়া করে তারাই ভালো ফলাফল অর্জন করে, অথবা তারা ভালো ফলাফলের আশাবাদী। আমাদের দেশে এখন আর লেখাপড়া করতে হয় না। লেখাপড়া না করেও এ+ পাওয়ার আশা করে বসে থাকে। আর করবেই না কেন? পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র হাতে পেলে আর লেখাপড়া করতে হয় নাকি? আরো আপডেটভাবে বলতে হয়, শুধু প্রশ্নপত্র নয়, এখন প্রশ্নপত্রের সঙ্গে মিলছে উত্তরপত্রও। যেমন : চলমান এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা এবং বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় সাম্প্রতিক সময়ে প্রশ্ন ফাঁসের ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। যে অভিযোগগুলো সত্য বটে।
১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ বাংলা প্রথম পত্রের বহুনির্বাচনী অভীক্ষার ‘খ’ সেট পরীক্ষার প্রশ্ন ও ফেসবুকে ফাঁস হওয়া প্রশ্নের হুবহু মিল ছিল। পরীক্ষা শুরুর এক ঘণ্টা আগেই তা ফেসবুকে পাওয়া যায়। ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ সকালে পরীক্ষা শুরুর প্রায় ঘণ্টাখানেক আগে বাংলা দ্বিতীয় পত্রের নৈর্ব্যক্তিক (বহুনির্বাচনী) অভীক্ষার ‘খ’ সেটের উত্তরসহ প্রশ্নপত্র পাওয়া যায় ফেসবুকে। যার সঙ্গে অনুষ্ঠিত হওয়া প্রশ্নপত্রের হুবহু মিল পাওয়া যায়। ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ পরীক্ষা শুরুর অন্তত দুই ঘণ্টা আগে সকাল ৮টা ৪ মিনিটে ইংরেজি প্রথম পত্রের ‘ক’ সেটের প্রশ্ন ফাঁস হয়। যার সঙ্গে অনুষ্ঠিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের হুবহু মিল পাওয়া গেছে। ৭ ফেব্রুয়ারি বুধবার পরীক্ষা শুরুর অন্তত ৪৮ মিনিট আগে সকাল ৯টা ১২ মিনিটে ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের ‘খ’ সেটের প্রশ্নপত্রটি হোয়াটসঅ্যাপের একটি গ্রুপে পাওয়া গেছে। অনুষ্ঠিত হওয়া প্রশ্নপত্রের সঙ্গে যা হুবহু মিলে গেছে। ৮ ফেব্রুয়ারি হোয়াটসঅ্যাপের একটি গ্রুপে ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষার বহুনির্বাচনী অভীক্ষার ‘খ’ সেটের প্রশ্নপত্রটি পাওয়া যায়। এটিও অনুষ্ঠিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সঙ্গে হুবহু মিলে গেছে। ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা ৫৯ মিনিটে হোয়াটসঅ্যাপের একটি গ্রুপে গণিতের ‘খ’ সেটের প্রশ্নপত্রটি পাওয়া যায়, যা অনুষ্ঠিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সঙ্গে হুবহু মিলে যায়। এ ছাড়া আইসিটি বিষয়ের প্রশ্নপত্র রোববার সকাল ৮টা ৫১ মিনিটে হোয়াটসঅ্যাপের একটি গ্রুপে ‘ক সেট’ প্রশ্ন পাওয়া যায়। আর সকাল ৯টা ৩ মিনিটে ‘গ’ সেটের প্রশ্নও ফাঁস হয়।
তা ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নপত্রও ফাঁস হওয়ার অভিযোগ ওঠে। শুধু তাই নয়, বরগুনায় দ্বিতীয় শ্রেণির প্রশ্নও ফাঁস হয়েছিল ১৪০টি স্কুলে। এ ঘটনায় পরীক্ষাও স্থগিত করা হয় ওইসব স্কুলে। বিগত বছরের ৬ অক্টোবর সিনিয়র স্টাফ নার্স পরীক্ষার প্রশ্নও ফাঁস হয়ে যায় বলে অভিযোগ ওঠে। এসব প্রশ্ন ফাঁস করা বা ফাঁসকারী কোনো শিক্ষিত মহল বা তৎসংশ্লিষ্ট কোনো গোষ্ঠী ছাড়া হাল-চাষরত ব্যক্তি নিঃসন্দেহে এতে জড়িত নয়। একটা শিক্ষিত সমাজ কীভাবে তার দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এ যদি হয় আমাদের লেখাপড়ার অবস্থা তাহলে দেশ ও জাতি এ রকম শিক্ষিত মানুষ থেকে কতটুকু উপকৃত হবে? কেমন হবে আমাদের আগামী শিক্ষিত প্রজন্ম? এ রকম শিক্ষিত লোক দিয়ে সমাজের মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়া ছাড়া মাথা উঁচু করে দাঁড় করানো অসম্ভব।
শিক্ষার মূল উদ্দেশ্যের মধ্যে অন্যতম একটি হলো, নৈতিক চরিত্রের উন্নতি সাধন। কিন্তু আমাদের সমাজে তা কি সম্ভব হয়েছে? উত্তর অবশ্যই না। যদি নৈতিক চরিত্রের উন্নতি হতো তাহলে প্রশ্ন ফাঁসের মতো এ রকম নিকৃষ্ট কাজে শিক্ষিত মহল জড়িত থাকত না। আগে নৈতিক চরিত্রের অধিকারী হতে হবে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় নৈতিকতাকে আরো গুরুত্ব দিতে হবে।
প্রশ্ন ফাঁস রোধ করতে না পেরে বিভিন্ন জন বিভিন্ন মত দিচ্ছেন। যার অনেকটা হাস্যকর বটে। শিক্ষামন্ত্রী প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে বলেছেন, এমসিকিউ পদ্ধতি তুলে দিতে। তাতে কি প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ হবে? হাত-পায়ে অ্যালার্জি বা চর্মরোগ হলে হাত-পা কেটে তা দূর করতে হয় না। উপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে তা নিরাময় সম্ভব। কারণ, হাত-পায়ে এখনো ক্যানসার হয়নি। সেটা উপযুক্ত কাজ নয়। কারণ, যারা প্রশ্ন ফাঁস করার তারা প্রশ্ন ফাঁস করবেই। সেটা পরীক্ষার দিন সকালে প্রশ্ন করলেও। বরং এসব অপরাধীদের তন্নতন্ন করে খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় এনে অত্যন্ত কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। ক্ষত জায়গায় ওষুধ না দিয়ে ক্ষত জায়গা কেটে ফেললে রোগের উপশম হবে না।
শিক্ষাসচিব মো. সোহরাব হোসাইন বলেছেন, পরীক্ষার বর্তমান পদ্ধতিতে প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়া রোধ কোনোভাবেই সম্ভব নয়। পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র না ছাপিয়ে বই খুলে পরীক্ষা নেওয়ার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।
প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ সম্ভব নয় বললে এটা ব্যর্থতার ভাষা হিসেবে বোধগম্য হয়। তার মানে কী, আগে প্রশ্নপত্র ফাঁস ছাড়া পরীক্ষা হয়নি? অবশ্যই হয়েছে। আমরাও তো বাংলাদেশে লেখাপড়া করেছি। এই তো সেদিন দাখিল, আলিম, ফাজিল, অনার্স, মাস্টার্স, কামিল সমাপন করলাম। ২০০৩ সালে প্রথম পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলাম। সে সময় তো আর প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়নি। শিক্ষার্থীরাও এ রকম কল্পনা করেনি। তাহলে এখন সম্ভব নয় কেন? প্রশ্ন ফাঁসকারীদের যেকোনো মূল্যে শনাক্ত করুন। এরা আমাদের সমাজেরই লোক। যারা প্রশ্ন ফাঁস করছে এরা কোনো না কোনোভাবে প্রশ্ন প্রণয়নে লিপ্ত। কঠোর হস্তে দমন করুন। কঠিন শাস্তির আওতায় আনুন। তখন প্রশ্ন ফাঁস রোধ অবশ্যই সম্ভব। তা না হলে ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে উপযুক্ত মহলের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করুন। এটাই এখন সময়ের একমাত্র দাবি।
|
|
|
|
তরুণ ও যুবসমাজই দেশ-জাতির ভবিষ্যৎ। এরাই জয় করে অজেয়। অসম্ভবকে করে তোলে সম্ভব। বহু কবি তারুণ্যের সম্ভাবনাকে স্বপ্নময় করে অনেক কবিতা-গান রচনা করেছেন। তরুণদের ওপর ভরসা করেই সমগ্র দেশ ও জাতি বুক বেঁধে থাকে। অভিভাবক যেমন তরুণদের নিয়ে স্বপ্ন দেখেন, রাষ্ট্রও তেমনই তরুণদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে নানা উদ্যোগ নেয়। সমাজপতি, ব্যবসায়ী, চিন্তাবিদ, শিক্ষাবিদ সবাই তরুণদের যথাযথভাবে গড়ে তোলার জন্য বিনিয়োগ করেন, প্রতিষ্ঠান গড়েন।
দেশ ও জাতির সোনালি স্বপ্নকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে অনেক স্কুল-কলেজ, মাদরাসা, বিশ্ববিদ্যালয়। সরকারি ও বেসরকারি মিলে দেশে এখন ১৩২টির মতো বিশ্ববিদ্যালয়। বেসরকারিভাবে প্রতিষ্ঠিত অনেক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য হাসিলের অভিযোগ উঠলেও ঢালাওভাবে সবাইকে অভিযুক্ত করা যায় না। অর্থাৎ দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ গঠনে সব না হলেও অনেক প্রতিষ্ঠানই দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখছে। তাই সবাই ব্যবসায়িক স্বার্থ বিবেচনা করে স্কুল-কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় খুলে বসেছেন এমন ধারণা পোষণ হবে অবিবেচনাপ্রসূত। তবে ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থাপনাসহ আরো অনেক সমস্যা বহু প্রতিষ্ঠানেই রয়েছে-এ কথা নিশ্চিত করেই বলা যায়।
প্রায় ১০০-এর কাছাকাছি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বর্ষে ৩৫ থেকে ৪০ লাখ ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করে। এসব প্রতিষ্ঠানে টিউশন ফিসহ অন্যান্য ব্যয়াদিও বিপুল। শুধু ধনাঢ্য পরিবারের সন্তানরাই নয়, অনেক মধ্য ও নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েও বাধ্য হয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। এ জন্য অনেক অভিভাবককে জায়গাজমি, ভিটেমাটিসহ সবকিছু বিক্রি করে প্রায় ফতুর হতে হয়।
বেসরকারি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগই মেধাবীও। এদের অনেকে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ পেয়ে অসাধারণ কৃতিত্বও দেখিয়েছে। এতে বোঝা যায়, তরুণরা সুযোগ-সুবিধা পেলে অনায়াসে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম। তাই পাবলিক ভার্সিটিতে অনেক ভর্তুকি দিয়ে এদের যেমন পড়াশোনার সুযোগ দেওয়া হয়, তেমনই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রাণান্ত চেষ্টা করে অনেক অভিভাবক সন্তানদের লেখাপড়া করান।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, এই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ও কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া ধনাঢ্য ঘরের সন্তানদের বিরুদ্ধেই সন্ত্রাস ও জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে। নামকরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদেরই কয়েকজন জঙ্গি তৎপরতা চালানোর সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী ও নিরাপত্তা বাহিনীর অ্যাকশনে নিহত হয়েছে। কর্মব্যস্ত জীবনের ছোটাছুটি ও সাফল্যের উন্মাদনায় মানুষকে দিন দিন যন্ত্রে পরিণত করছে। এই সন্তানদের সঙ্গে কিছু সময় কাটানোর সেই সময়টুকুও আজ যেন অভিভাবকদের হাতে নেই। কিন্তু পরিবারে দেওয়া সামান্য সময়টুকু একটি পরিবারকে আসন্ন ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে পারে।
আমাদের প্রত্যেকটি পরিবারের প্রতিটি সন্তান আমাদের অমূল্য সম্পদ। এই সন্তানদের প্রতি আমাদের (বাবা-মাদের) উদাসীনতার কারণে আজ তারা বিপদগামী হচ্ছে। আর এই সুযোগটা কাজে লাগাচ্ছে একশ্রেণির ধর্মীয় মৌলবাদী জঙ্গিগোষ্ঠী এবং যাদের মদদদাতা হিসেবে রয়েছে কোনো না কোনো পরাশক্তি। ওরাই আমাদের আদরের সন্তানদের ব্রেন ওয়াশ করে জঙ্গিতে পরিণত করে তাদের দিয়ে রক্তের হোলিখেলায় নিয়োজিত করছে। এখনো সময় আছে, বড় ধরনের বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতে হলে আমরা আমাদের সন্তানদের দিকে দৃষ্টি দেই।
কেমন আছে আমার সন্তান? সময়, পরিবেশ-পরিস্থিতি, আধুনিকতার ছোঁয়া ও প্রযুক্তির আগ্রাসন আমার সন্তান কতটুকু পজেটিভভাবে গ্রহণ করছে, না এর অপব্যবহারের শিকার হয়ে বিপথগামী হচ্ছে। তা সন্তানের বাবা-মা বা অভিভাবককে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। সন্তানের সঙ্গে বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্ক তৈরি করে তাকে সময় দিতে হবে। দূরত্ব কমিয়ে আনতে হবে। চাল-চলন বা আচার-ব্যবহারে কোনো রকম অস্বাভাবিক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হলে তার সঙ্গে শেয়ারিং করে সমস্যার সমাধান করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে নিশ্চিন্ত থাকা যাবে না। প্রতিনিয়ত খোঁজখবর রাখতে হবে। দেশের প্রতিটি বাবা-মা বা অভিভাবককে এই দায়িত্ব নিতে হবে।
আমাদের সমাজে অধিকাংশ ছেলেমেয়ে বখে যাওয়ার কারণ তাদের মা-বাবার দায়িত্বজ্ঞানহীন অসচেতনতা। তাই একজন সচেতন অভিভাবকের কর্তব্য সন্তান কী করছে, কার সঙ্গে মিশছে, মিথ্যা কথা বলে কোনো বখাটের সঙ্গে মেলামেশা করছে কিনা-সে বিষয়ে সর্বদা খোঁজ রাখা এবং একই সঙ্গে সমাজ নির্মাণকারীদের দায়িত্ব হলো সমাজকে তরুণদের স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠার মতো পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া। সম্ভবত এ দেশে এ কাজটি করতে নির্মাণকারীরা পুরোপুরিই ব্যর্থ হয়েছেন। যেখান থেকে বেরিয়ে আসাটাই এখন সময়ের দাবি।
|
|
|
|
১৯৪৮ সালে মার্কিন সরকার ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়ার পর থেকেই কারো সন্দেহ থাকার কথা নয়, আরব বিশ্বের সঙ্গে ইসরায়েলের দ্বন্দ্বে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান কোথায়। তার পরও সর্বদাই ইসরায়েলপন্থি রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্বের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক আইন ও বিশ্বজনমতকে শ্রদ্ধা করত। এটাও সত্য, বিভিন্ন সময় ফিলিস্তিন প্রশ্নে কিছু পদক্ষেপযোগ্য প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে তারা; কিন্তু জেরুজালেম প্রসঙ্গ সামনে এলেই যুক্তরাষ্ট্রের আসল অবস্থানটি স্পষ্ট হয়ে যায়। দীর্ঘদিন সারা বিশ্বের মতো যুক্তরাষ্ট্রও সব সময় ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে জেরুজালেম দখলকে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করেছে এবং শহরটিকে ফিলিস্তিনের অন্যান্য শহরের মতোই দখল করা ভূখন্ড হিসেবে দেখে আসছে।
জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বীকৃতি দেওয়ার পর সংগত কারণেই বিশ্বব্যাপী তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, এ সিদ্ধান্ত মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রক্রিয়াকে বিপর্যস্ত করবে; একই সঙ্গে নতুন সহিংসতা ছড়িয়ে দেবে। স্বভাবতই শান্তিকামী মানুষ, জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক দায়িত্বশীল সংস্থাগুলোর কাছে ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত অনভিপ্রেত হিসেবে প্রতিভাত হয়েছে। ট্রাম্প ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে জেরুজালেমকে স্বীকৃতি দেওয়ার পর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকে তীব্র তোপের মুখে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে ওই বৈঠকের পর ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এক বিবৃতিতে জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের এ স্বীকৃতি অসহযোগিতামূলক।
এ অবস্থায় মধ্যপ্রাচ্যের উন্মাতাল অবস্থা আরো উত্তপ্ত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, প্রকারান্তরে যা বিশ্বকেই আরো অস্থির করে তুলবে। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী মানুষের পক্ষে সর্বদা সহমর্মিতা ও সমর্থন প্রকাশ করে আসছে বাংলাদেশ। এরই মধ্যে জেরুজালেমকে স্বীকৃতি দেওয়ার ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের বিভিন্ন সংগঠন প্রত্যাখ্যান করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের এ ঘোষণা মুসলিম বিশ্বে গ্রহণযোগ্য নয়। ফিলিস্তিন-ইসরায়েলের বিষয়ে জাতিসংঘের প্রস্তাবকে অগ্রাহ্য করা কেউ মেনে নেবে না বলে তিনি জানান। মূলত প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যে ফিলিস্তিনের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থনকারী এ দেশের মানুষের সারকথাই প্রতিফলিত হয়েছে।
এদিকে জেরুজালেমকে রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পর ইসরায়েলের হিংস্রতা বেড়েই চলেছে। প্রতিবাদকারী ফিলিস্তিনিদের ওপর আগ্রাসী হয়ে উঠেছে ইসরায়েলি সেনারা। লাঠিপেটা ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপের পর এবার বিক্ষোভকারীদের প্রতি গুলি এবং বোমাবর্ষণ করা হচ্ছে; বিমান হামলা চালানো হয়েছে গাজায়। হতাহতের ঘটনা ঘটছে। এ থেকে স্পষ্ট, ট্রাম্পের ঘোষণা ইসরায়েলকে উসকে দিয়েছে এবং ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মুসলিমবিদ্বেষী মনোভাবের যে অভিযোগ রয়েছে, তা প্রতীয়মান হয়েছে বলে ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা। যুক্তরাষ্ট্র বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তি। অনিবার্য কারণেই বিশ্বব্যাপী শান্তি রক্ষার্থে দেশটির দায়িত্বশীল ভূমিকা সবাই প্রত্যাশা করে। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রক্রিয়ায় অংশীজন হওয়া সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র কেন বিতর্কিত সিদ্ধান্তে উপনীত হলো, তা আমাদের বোধগম্য নয়।
তাছাড়া ফিলিস্তিনের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারকে স্বীকৃতি দিতে হবে। অন্যদিকে নিজেকে অতিক্রম করার সক্ষমতা ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেই। প্রতিবারই এ অক্ষমতার পরিচয় দেন তিনি; বারবার একই কাজ করেন। প্রায় সাত দশকের মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির বিপরীতে দাঁড়িয়ে এবার তিনি ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে জেরুজালেমকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিলেন। এর ফলে নানা ধরনের নেতিবাচক ঘটনার জন্ম হবে। অনেক ঘটনাই ঘটতে পারে, যেসবের বিষয়ে ইঙ্গিত করা এ মুহূর্তে অসম্ভব। ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন যেসব বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত ফয়সালায় পৌঁছতে পারেনি সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জেরুজালেম। দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনায় এ ব্যাপারে বারবার মতভেদ দেখা দিয়েছে।
কারণ জেরুজালেম খুবই সংবেদনশীল প্রসঙ্গ। ফিলিস্তিনিদের আবেগ-অনুভূতিকে অগ্রাহ্য করে জটিল এই প্রসঙ্গে ঢুকে পড়লেন ট্রাম্প; যেন কোনো চায়না শপে ষন্ড ঢুকেছে, সব তছনছ করে দিয়েছে। নিঃসন্দেহে ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জেরুজালেম। এ শহর ফিলিস্তিনি মুসলিম ও খ্রিস্টানদের পরিচয়ের মূল নির্ধারক বিষয় ধর্ম দুটির আবির্ভাবের সময় থেকেই। অপরদিকে ফিলিস্তিন সংকট যত তীব্র হয়েছে, এ প্রসঙ্গের গুরুত্বও তত বেড়েছে। জেরুজালেমকে কেন্দ্র করে বিরোধ চরমে পৌঁছার কারণ দুই পক্ষের কাছেই এ শহর পবিত্র (মুসলিমদের জন্য হারাম আল শরিফ ও ইহুদিদের জন্য টেম্পল মাউন্ট)। সবিশেষ গুরুত্বের কারণেই কোনো ফিলিস্তিনি রাজনীতিকরা এর ব্যাপারে আপস করতে রাজি নন।
উল্লেখ্য, ট্রাম্পের ঘোষণা শুধুই একটি ঘোষণা নয়। তিনি ইসরায়েলের অবস্থানকেই সমর্থন করেছেন। ইসরায়েলিরা মনে করে, জেরুজালেম শুধু তাদের। ১৯৬৭ সালে তারা আরব-অধ্যুষিত পূর্ব জেরুজালেম দখল করে নেয়, ট্রাম্প সেই দখলের বিষয়টিকেও বৈধতা দিয়েছেন। শুধু দখল নয়, পূর্ব জেরুজালেমে বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের ওপর বৈষম্যমূলক আইনও চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। ট্রাম্প যে ক্ষতি করলেন তা অপূরণীয়, এ ঘোষণা রদ করা যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে আর সম্ভব হবে না। ট্রাম্পের ঘোষণার ফলে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের ভূমিকার অবসান ঘটল। মধ্যস্থতার বিষয়ে একতরফা, একচেটিয়া দাবি ছিল তাদের। তার জামাতা জারেড কুশনার শান্তি পরিকল্পনা করছেন। মধ্যস্থতাকারীর ঐতিহাসিক দাবির সূত্রে এটিকে ফিলিস্তিনিদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন কুশনার। ট্রাম্পের ঘোষণা আরব বিশ্বের মতপ্রকাশের অধিকারকেই অগ্রাহ্য করল।
জেরুজালেম প্রসঙ্গে আরবদেরও যে অভিমত আছে সে কথা কার্যত অস্বীকার করা হলো। আরব একনায়করা বা নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী রাজারা যুক্তরাষ্ট্রকে যা-ই বলুক না কেন, জেরুজালেমের ব্যাপারে ফিলিস্তিনের দাবির প্রতি সমর্থন জোগাতে আরব জনগণ একাট্টা। ট্রাম্পের পদক্ষেপের বিষয়ে তারা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করবেই। ফলে পুরো আরব অঞ্চলে মার্কিন স্বার্থ বিঘিœত হবে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস ২০১৩ সালে বলেছিলেন, কমান্ডার হিসেবে (সেন্ট্রাল কমান্ড) প্রতিদিন আমাকে মূল্য চুকাতে হয়েছে। কারণ ইসরায়েলের ব্যাপারে পক্ষপাতদুষ্ট হিসেবেই মার্কিনদের দেখা হয়েছে। এই সর্বশেষ কূটনৈতিক বে-চালের মধ্য দিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন গোটা বিশ্বের অভিমতকে অগ্রাহ্য করার, অবজ্ঞা করার চরম নজির স্থাপন করল।
বিশ্বের আর কোনো দেশ জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী মনে করে না। এ ব্যাপারে বৈশ্বিক মতৈক্য রয়েছে। সেটি হলো, চূড়ান্ত ফয়সালা হওয়ার আগেই আলোচনার ফল নির্ধারণ করে ফেলা বেআইনি কাজ। এমনটি করা হবে না, এ আশ্বাস দিয়েই ১৯৯১ সালে মাদ্রিদ শান্তি সম্মেলনে ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। এ কথা বলতেই হয়, ইসরায়েলের অনুকূলে, তাদের স্বার্থের পক্ষে দাঁড়ানোর দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। জেরুজালেম ইস্যুতে ইসরায়েল বা তাদের গুরু যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে পক্ষপাতহীন আচরণ আশা করা কারোই উচিত নয়। ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যে স্থায়ী সমঝোতার বিষয়টি এখন খুবই কঠিন হয়ে পড়ল। ট্রাম্পের পদক্ষেপ আত্মনিবর্তনের স্মারক, কূটনীতির দলিল দস্তাবেজে এ ক্ষতের ছাপ দীর্ঘকাল থেকে যাবে।
যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক ভূমিকা এরই মধ্যে সংকুচিত। এ পদক্ষেপের ফলে মুসলিম ও আরবদের সঙ্গে এবং বিশ্বের শুভচিন্তার মানুষের সঙ্গে দেশটির সম্পর্ক আরো সংকুচিত হবে। আরব, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপীয় নেতারা ট্রাম্পকে এ ধরনের পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকার জন্য বলেছিলেন। তিনি তাদের পরামর্শে কান দেননি। তিনি তার সুহৃদ ও তাদের ইসরায়েলি চরমপন্থি সহমর্মীদের জন্য আনন্দের উপলক্ষ তৈরি করেছেন বটে, কিন্তু ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধানের বিষয়টিকে আরো কঠিন করে ফেলেছেন। এই আনাড়ি পদক্ষেপের কারণে শতাব্দীর সেরা চুক্তিতে উপনীত হওয়ার বদলে শতাব্দীর চরমতম বিপর্যয়ে পৌঁছতে যাচ্ছেন তিনি। তার এই ঘোষণার দিনটি আন্তর্জাতিক আইনের জন্য, ফিলিস্তিনের জন্য এবং মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি কামনাকারী সব মানুষের জন্য বেদনার দিন।
এ ছাড়া ফিলিস্তিনি জনগণ, এমনকি অনেক বিশিষ্ট ইসরায়েলি নাগরিকও জেরুজালেমের মতো স্পর্শকাতর ইস্যুতে একক সিদ্ধান্ত না নিতে ট্রাম্পকে হুশিয়ার করেছেন। কাজেই সারা বিশ্বই একমত, জেরুজালেম কখনই মার্কিন প্রেসিডেন্টের খেয়ালখুশি হতে পারে না। মার্কিন প্রেসিডেন্ট যদি জেরুজালেমে দূতাবাস স্থানান্তরের অঙ্গীকার পূরণ করতেই চান, সে জন্য একটি সহজ ও গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি হতে পারে আনুষ্ঠানিকভাবে দুই রাষ্ট্র সমাধান গ্রহণ করা। তারপর পশ্চিম জেরুজালেমকে ইসরায়েলের ও পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিতে পারেন। এ রকম একটি ঘোষণা ট্রাম্পের নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণ ও একই সঙ্গে স্থায়ী শান্তিপ্রক্রিয়ার জন্য তার দূতদের প্রতিও সমর্থন হতে পারে। এর বাইরে কোনো কিছুই সময়োপযোগী ও ন্যায়সঙ্গত নয়। দুর্ভাগ্যবশত ট্রাম্প সব সময়েই শান্তির ওপর যুদ্ধ এবং ন্যায়বিচারের ওপর আগ্রাসন ও অবিচারকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। পরিশেষে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের ভাষায় বলতে হয়, পুরো মধ্যপ্রাচ্যকেই ‘আগুনের বৃত্তে’ ছুড়ে ফেলবে। তাই শান্তির স্বার্থেই অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসতে হবে।
|
|
|
|
বাংলায় একটি প্রবচন আছে—পাপী মরে দশ ঘর নিয়ে। অর্থাৎ সে যখন মারা যায় তখন তার পরিবেশ ও প্রতিবেশের অনেক কিছুকে নিয়ে মরার চেষ্টা করে। তাতে পরিবেশ ও প্রতিবেশের যে ক্ষতি হয় তার পরিমাণ নেহাত কম নয়। হিরোশিমা, নাগাসাকিসহ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে তাকালেই আমরা তা অনুধাবন করতে পারি। জেরুজালেম ইস্যুতে বিশ্বজুড়ে যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে সেখান থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা সবাই করছে। কিন্তু এর বিপরীতে শুধু মার্কিন প্রেসিডেন্ট। আর সে কারণেই বিশ্ব নেতাদের তোপের মুখে এসে দাঁড়িয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে মার্কিন স্বীকৃতির ঘটনায় জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকে তোপের মুখে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। অবস্থা এমন একপর্যায়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে, দেশটির ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স ট্রাম্প প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট তার অবস্থান থেকে সরে না এলে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে নতুন করে যুদ্ধের দামামা বেজে উঠবে। ফলে বিশ্ব রাজনীতি ও অর্থনীতিতে এর একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়ারও সম্ভাবনাও রয়েছে। আমরা কখনোই আর কোনো হিটলারের মুখোমুখি হতে চাই না
জাতিসংঘ সদর দফতরে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে বিষয়টির মীমংসায় ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যে আলোচনার ওপর গুরুত্বারোপ করে যুক্তরাজ্য। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো প্রয়োগের ক্ষমতা থাকায় এ নিয়ে ভোটাভুটির জন্য কোনো প্রস্তাব তোলা হয়নি। তবে জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের স্থায়ী প্রতিনিধি ম্যাথিউ রায়ক্রফট বলেছেন, তেলআবিব থেকে ব্রিটিশ দূতাবাসীকে জেরুজালেমে স্থানান্তরের কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই। যুক্তরাজ্য মার্কিন প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে। একইসঙ্গে ফ্রান্সের প্রতিনিধি ফ্রাঁসোয়া ডেলাত্রে বলেছেন, ট্রাম্পের ঘোষণায় প্যারিস উদ্বিগ্ন। যুক্তরাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্ত পুরো মধ্যপ্রাচ্যের জন্যই ভয়ানক পরিণতি ডেকে আনবে। অন্যদিকে জাতিসংঘের স্থায়ী কমিটির সদস্য রাশিয়াও একই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছে, ট্রাম্পের এই ঘোষণায় মস্কো মারাত্মকভাবে উদ্বিগ্ন। তারা মনে করে, এই ঘোষণা মধ্যপ্রাচ্যের সংকটকে আরো ভয়াবহ করে তুলবে। সুইডেনের দূত ওলোফ স্কুগ বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে আন্তর্জাতিক সনদ লঙ্ঘন করেছেন।
আমরা মনে করি, মার্কিন প্রেসিডেন্টের এ ঘোষণা পুরো বিশ্বকে একটি বিপজ্জনক অবস্থায় নিয়ে দাঁড় করিয়েছে। অনেকেই এই ঘোষণাকে বিশ্বশান্তির জন্য একটি বড় ধরনের হুমকি বলে মনে করছেন। তারা বলছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট তার অবস্থান থেকে সরে না এলে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে নতুন করে যুদ্ধের দামামা বেজে উঠবে। ফলে বিশ্ব রাজনীতি ও অর্থনীতিতে এর একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়ারও সম্ভাবনাও রয়েছে, যা আমাদের কারোই কাম্য নয়। আমরা কখনোই আর কোনো হিটলারের মুখোমুখি হতে চাই না। এটা শুধু আমাদেরই চাওয়া নয়, এ চাওয়া বিশ্বমানবতার।
|
|
|
|
পত্রিকার পাতায় শিরোনাম হয়ে এসেছে—‘দেশজুড়ে চলছে রমরমা কোচিং বাণিজ্য’। বাণিজ্যটি যে অনৈতিক তা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, কোন বাণিজ্য বাংলাদেশে অনৈতিক এবং রমরমা নয়! এমন একটি বাণিজ্যকে খুঁজে পাওয়া খুবই কষ্টকর। একেবারে যে নেই তাও বলা যাবে না। কিন্তু অনৈতিকতার চাপে নৈতিকতা এমন এক অবস্থায় উপনীত হয়েছে যে, তাকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
সময় বদলেছে। আমরা এখন করপোরেট বাণিজ্য যুগে বসবাস করি। ইমোশন এখানে মূল্যহীন। নৈতিকতার দ্বীপচালান হয়েছে। মানবিক মূল্যবোধকে বিসর্জন দিয়ে সবাই যেন রকেটগতিতে ছুটছি এমন এক সোনার হরিণের পেছনে—মানবিক জীবনে যার কোনো মূল্য নেই। তবে অসুস্থ, অকার্যকর ও অনৈতিক সমাজব্যবস্থায় এরাই নায়ক এবং মহানায়ক।
আমরা এমন একটি সমাজব্যবস্থার অধীনে বসবাস করছি, যে সমাজব্যবস্থা আপাদমস্তক ক্যানসারে আক্রান্ত। দেহের এমন কোনো অঙ্গ নেই যে, সে এই দুরারোগ্য ব্যাধির আক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছে। দুর্বৃত্ত পুঁজির দুর্বৃত্তায়নের যুগে এখান থেকে বেরিয়ে আসাটা যেমন কঠিন, একইভাবে সহজও বটে। সভ্যতার ইতিহাস আমাদের সে কথাই বারবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছে।
অসুস্থ বৃক্ষকে সুস্থ করে তোলার জন্য আমরা গাছের গোড়া কেটে মাথায় পানি ঢেলে বৃক্ষটিকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছি। যদিও এই পথ্যপত্র ইতোমধ্যেই পরিত্যাজ্য বলে বিবেচিত হয়েছে। তবুও আমরা আফিম বাগানে, আফিম বাতাসে, আফিম গ্রহণের মাঝে আমাদের সবকিছু বিলিয়ে দিয়ে বেঁচে থাকাকেই শ্রেয় বলে মনে করছি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে সরে এসে আজ আমরা ভোগবাদী সমাজব্যবস্থার মহাসড়কে পা রেখে বলছি, ‘আহ্ কি সুন্দর!’ অথচ আমরা জানতেও পারিনি যে, নিজের অজ্ঞাতেই আমরা কখন যেন করপোরেট পুঁজির সেবাদাসে পরিণত হয়ে এক মাদকাসক্তের মতো পেছনের দিকে এগিয়ে চলেছি।
পত্রিকা বলছে, দেশজুড়ে দুই লাখ কোচিং সেন্টার। শিক্ষাব্যয়ের এক-তৃতীয়াংশ বহন করতে হচ্ছে পরিবারকে। কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করার লক্ষ্যে সাড়ে ছয়শ শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে সরকার। বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণে শিক্ষা আইনেও পরিবর্তন আনার কথা শোনা যাচ্ছে। কিন্তু লাভটা কী! এদেশে লাভের গুড় সবসময় পিঁপড়ায় খেয়ে গেছে। এবারও যে তার ব্যতিক্রম হবে না; গ্যারান্টি কোথায়!
তাই আমরা মনে করি, রোগাক্রান্ত সমাজকে সুস্থ করে তুলতে হলে প্রথমেই গাছের গোড়া কাটা বন্ধ ও গোড়াতে পানি ঢালার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। আর এজন্য প্রয়োজন একটি সাংস্কৃতিক বিপ্লব। প্রয়োজন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ এক বলিষ্ঠ সরকারের ইতিবাচক নেতৃত্ব।
|
|
|
|
আমরা শান্তিপ্রিয় বাঙালি। দেশের কিছু কিছু প্রশাসন থেকে কত মহৎপ্রাণই তো বিদেশে শান্তি মিশনে গিয়ে প্রাণ পর্যন্ত বিসর্জন দিচ্ছেন। কিন্তু এই শান্তিপ্রিয় দেশে মনের মধ্যে সবাই কি শান্তি লালন করেন? কেউ কেউ তাই মনের দুঃখে বলেও থাকেন—‘শান্তিবালা মরে গেছে!’ ঠিকই তো, গ্রাম থেকে শহরে সবখানে আজ শান্তির নামে একশ্রেণির মানুষ কেবলই অশান্তির চাষাবাদে ব্যস্ত। তাদের অশান্তির বীজে উৎপাদিত পণ্যদ্রব্য অর্থাৎ তাদের ‘বিবেক এবং মেধা’য় কীট-পতঙ্গের উপদ্রব থাকলেও তা নিবারণের কোনো কীটনাশক নেই, নেই কোনো প্রতিকারের পথ!
‘শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড’ বলে এখান থেকেই শুরু করা যেতে পারে। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে একজন শিক্ষকই পারেন জাতির মেরুদন্ড সোজা রাখতে। আজকাল সেই শিক্ষক যেমন সেই মহৎ কাজটি করতে ব্যর্থ, তেমনি কোনো কোনো শিক্ষক আবার সেটা সোজা রাখতে গিয়েও কি মূল্যায়ন পাচ্ছেন কোনো? আজ অনেক শিক্ষকই প্রতিষ্ঠানে মনোযোগী না হয়ে তাদের ব্যবসায়িক কোচিং সেন্টারে বা প্রাইভেট পড়ানোর কাজে মগ্ন আছেন! তিনি যা বেতন পাচ্ছেন তা হারাম নাকি হালাল—সে প্রশ্নের জবাব কখনই চাই না। তবে প্রশ্ন হলো তিনি কি তার বিবেকটুকু বিসর্জন দিয়েছেন? যা হোক, এখানে আবার শুধু শিক্ষকদের দোষ দিয়েই আমরা পার পেতে পারি না। শিক্ষকদের নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানও তো এখানে দায় এড়াতে পারে না। বারবার সিলেবাসে কিছু সংযোজন বা সেখান থেকে কিছু বিয়োজন শিক্ষকদের শিক্ষা প্রদানে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। নতুন একটা বিষয় বা পরীক্ষার পদ্ধতি পরিবর্তন হতেই পারে। সাথে সাথে সেটা নিয়ে কাজ ও কথা নড়াচড়ায় অনেক ব্যয়-খরচ করা হলেও এক সময় ফল খুব একটা ভালো পাওয়া যায় কি? সে ফল শূন্য না হলেও যেটুকু আউটপুট পাওয়ার কথা তা আর পাওয়া যায় না অনেক সময়।
আবার পূর্বে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত শিক্ষকদের পন্ডিত বলা হতো (যেমন ‘পণ্ডিত মশাই’ লিখেছেন সৈয়দ মুজতবা আলী), তাদের সম্মান করা হতো। অভিভাবকদের মুখেও একটা কথা প্রচলিত ছিল ‘বাপ-মা বানায় ভূত, ওস্তাদে বানায় পুত’। বড়দের কাছে গল্প শুনেছি যে, অভিভাবকরা তাদের সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করানোর পর পন্ডিতজিকে বলতেন, ‘এর চামড়াগুলো আপনার, হাড়গুলো আমার!’ এর মানে এই নয় যে, পন্ডিতজি ছাত্রকে মেরে ছাত্রের গায়ের চামড়া ছিঁড়ে ফেলবেন। শাসনের দিককে প্রাধান্য দিতে এমনটি বলা হয়েছে, যাতে করে সেসব অভিভাবকের সে সন্তানরা শাসনের মাধ্যমে আদব এবং সঠিক শিক্ষা নিয়ে মানুষ হতে পারে। এখন তো চিত্র তার সম্পূর্ণ বিপরীত। কোনো শিক্ষক কোনো ছাত্রকে বেত্রাঘাত করলে বরং শিক্ষকদেরই এখন চামড়া ছেঁড়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে! কোনো ছোট ক্লাসের ছাত্র ক্লাসের ফাঁকে বা টিফিন পিরিয়ডে স্কুলের দ্বিতীয় তলা থেকে নিচে যে কোনো শিক্ষক বা অন্য ছাত্রের গায়ে থুতু ফেলবে! আর তাকে শাসন করা যাবে না—এটাও যেমন মেনে নেওয়া যায় না, তেমনি তাকে যে ভীষণভাবে মেরে রক্তাক্ত করে শাসন করতে হবে, এমনটিও কিন্তু কখনই নয়। তাকে সোহাগ এবং শাসনের সুরে মধ্যপন্থা অবলম্বন করে ওদের আদব শিক্ষাসহ সুন্দর করে গড়ে তোলার পরিবেশ বা শিক্ষা আজ কোথায়? তাই শিক্ষক আর শিক্ষার্থীর মাঝে এখন ব্যাপক ব্যবধান সৃষ্টি হয়েছে। ছাত্রের প্রতি স্নেহ এবং শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ উঠে যাচ্ছে! শিক্ষার্থী কর্তৃক শিক্ষক প্রহৃত বা লাঞ্ছিত হওয়ার মতো কর্মটা তো এদেশে সচরাচর চোখে পড়ে!
আমরা বাঙালি প্রকল্প ভালোবাসি। প্রকল্পের মধ্য দিয়ে যেমন দেশের উন্নয়ন বা গরিবকে সাহায্য করা যায়, তেমনি কিছু কিছু খয়ের খাকেও দীর্ঘদিন বসে রাখার কারণে বশে রাখা যায়। বিভিন্ন প্রকল্পের নামে অর্থ লুটপাট আমাদের দেশে একটা সাধারণ ঘটনা। প্রকল্পপ্রেমী সবাই না হলেও যারা লুটে খাওয়ার তারা খাচ্ছে, খাওয়াচ্ছে! দেশ-জনতা বা গরিবের হকে ঢুকছে অন্য অনেকের হক! সেখানে ঢুকছে কোনো কোনো প্রকল্পধারী স্বজনদের অংশ। রাস্তা, সেতু, মসজিদ, মন্দির, বা গরিবদের অংশে অনেকেই ভাগ বসায় এখানেই। অনেক দিন ঘুরে ভুক্তভোগীরা যা খরচ করে অনেক প্রকল্পের সুযোগে তারা সে খরচের অংশটুক একসঙ্গে পেয়ে নিজেদের এতদিনের শ্রমকে ভাগ্যের ওপর চাপিয়ে দিয়ে খুশি থাকে! আবার অনেক উন্নয়নমূলক কাজের জন্য প্রকল্পের টাকা ভাগ-বাটোয়ারাতে কোনো কাজের কাজ হয় না! এখানে শুধু কতিপয় প্রকল্পপ্রেমীই দায়ী নয়, বরং যারা প্রকল্পের সুবিধাভোগী তারাও অন্যায়ভাবে প্রকল্পের অর্থের সুযোগ নিতে অনেক সময় মন্দপথ অবলম্বন করে থাকে।
আমরা বাঙালি, খোলা হাতে দান করি। বিশেষ করে বন্যায় বা শীতে দানের হিড়িক পড়ে যায়। পত্রপত্রিকায় প্রতিদিন কিছু শীতবস্ত্র বা বন্যার্তদের দানের মৌসুমি চিত্র দেখে ওসব আমাদের সয়ে গেছে। আমন্ত্রিত হয়ে বা না হয়ে এমন অনেক অনুষ্ঠানে ফটোসেশনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রবীণ মহিলা বা পুরুষকে টেনে এনে ত্রাণ বা শীতবস্ত্র বিতরণের অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। ছবি এবং সংবাদ ছাপাতে যা করতে হয়, তাও করা দেখেছি। আমাদের দানের হাত এত বড়! সে কি আর এমনি এমনি বড় হয়? সবাইকে দোষ দিয়ে তো আর দায় বহন করতে পারব না, তাই বলি—বিভিন্ন প্রশাসন বা বিভিন্ন বিভাগের কেউ কেউ কলমে গোপনে চুরি করি, ঘুষ খাই আর প্রকাশ্যে দান করি, যদিও বা সে চুরি আর ঘুষের আনুপাতিক হার দানের চেয়ে হাজার গুণেও বেশি বলতে হয়! এমনকি বিদেশে কোনো গেমসে খেলতে গিয়ে গামছার লোভ সামলাতে না পেরে তা চুরিরও অভিজ্ঞতা রয়েছে আমাদের। তাতে করে এ জাতির নাম বিভিন্ন মিডিয়ায় ফলাও করে প্রকাশ করা হয়েছে, বিশ্ব আমাদের কীর্তি দেখেছে! বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময় উদাহরণ বা কোনো কিছু বোঝাতে আমার এক শ্রদ্ধেয় শিক্ষক ইংরেজিতে একটা কথা বলেছিলেন যার বাংলাটা এ রকম—‘কখনো কখনো সীমাকে লঙ্ঘন কর, সীমাকে জানতে।’ দান করতে তাই চুরি করাটা কি সে রকমই মহৎ চিন্তার প্রকাশ? যারা ঠিক চুরি করেন, ঘুষ খান—ঠিক তারাই এটা বলতে পারবেন হয়ত!
পিয়ন দরজা না খুললে বস্ কী করে অফিসে ঢুকবেন? তাই কোনো কোনো অফিসে পিয়নের ক্ষমতা দেখে যত না বিমোহিত, অভিভূত হই, বিস্মিত হই তারও বেশি! কোথাও কোথাও কাজ করতে গেলে আমাদের মতো অফাটা কেষ্টদের আগে পিয়নের হাতেই গলা বাড়িয়ে দিতে হয়। প্রচলিত বিধানে আমরা তাদের শিকার বলেই কি পার পেতে পারি? না পারি না! কারণ আমরাই কি বেশি ভালো! না-জায়েজ কাজকে জায়েজের ফর্মুলায় সেঁটে দিতে পিয়নের হাত ধরে বসের দরজায় পৌঁছে ভাব করি বসের সঙ্গে! যেচে ঘুষ দিয়ে দারুণ সফলতা অর্জন করে ফেলি! আর যেখানে আমাদের ধান্ধা ধোপে টেকে না, সেখানে বসের কাজও পিয়নের দ্বারা সম্পন্ন করে নিতে পটু আমরাই। এক্ষেত্রে পিয়ন আমাদেরই যোগ্যতম বস্ হয়ে ওঠার নজিরও দেখে থাকি কেউ কেউ! কারণ বাংলায় কত অযোগ্যজনই তো টাকা বা মামার জোরে বস্ সেজেছেন! কত যোগ্যজনও তো সুবিধার অভাবে পিয়নই থেকে গেছেন! আমার কথায় কারো রাগ বেড়ে যাওয়ার কিছু নেই। এ চিত্রটি বাংলা সিনেমায়ও বেশ উপভোগ্য নয় কি?
নাম নিয়ে বড় থাকা মানুষদের কীর্তি দেখে আর সব মান-মর্যাদায় কম হওয়া মানুষ (সকল মানুষ সমান—মুখে বলি, কিন্তু কিছু মানুষ বেশি মর্যাদাবান, যা হৃদয়ে তা লালন করি) যেমন—চাষি, মজুর, শ্রমিক, কামার, কুমোর, জেলে, মুচি এমন অনেকেই পরিস্থিতির শিকারে হোক, ক্ষুধার জ্বালায় হোক আর লোভের বশেই হোক নীতি থেকে বঞ্চিত থেকে নিজের কর্ম সম্পাদন করে গেলে তার দায় কেউ কেউ নিতে অপারগ!
এ সবই তো শেষ কথা নয়। আরো অনেক বলা যাবে, লেখাও যাবে। কতজনই তো তার নিজের স্বার্থকে বহাল রাখতে মিডিয়ায় পত্রিকার পাতায়, টক শোতে প্যাঁচালে মত্ত রয়েছেন! ভালো হতে পয়সা না লাগলেও উপদেশ লাগে! কিন্তু কারো দেওয়া উপদেশও তো আরেকজনের অন্তরে নয়, বরং মুখেই উপনীত হয়ে বাতাসে মিলিয়ে যায়! তাই বেশি বেশি উপদেশমূলক শুদ্ধি বা পরিশীলনের কথা বলে আর কী লাভ হবে? বেশিকিছু না বললেও জ্ঞানীরা তো ইশারায় বুঝে ফেলেন। তবে জ্ঞানী প্রশ্নেও আমাদের একটা সামান্য দাবি আছে—দেশে কিছু জ্ঞানী মানুষের খুব দরকার, দরকার কিছু যোগ্য মানুষেরও।
|
|
|
|
সৌদি আরব ও ইরান মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাধা হিসেবে পরস্পর ‘ব্লেইম গেম’ খেলছে। কথা হলো আসলে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাধা কোথায়? মধ্যপ্রাচ্যে চলছে ভূ-রাজনীতিতে মোড়ল হওয়া আর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াই। সম্প্রতি যুবরাজ এমবিসি সৌদি রাজপরিবারের প্রিন্সদের ঘাড়ে দুর্নীতির তকমা লাগিয়ে যে গণগ্রেফতার চালিয়েছে-যা এখনো চলমান, তার একমাত্র কারণ যুবরাজের সিংহাসন নিশ্চিত ও ক্ষমতাকে দৃঢ় করার প্রয়াস। সৌদি আরবের ২০১১ সালে সিরিয়াতে, ২০১৫ সালে ইয়েমেনে যুদ্ধে জড়ানোর কারণ হিসেবে যতটা শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য; তার চাইতে বড় কথা হলো ইরানের প্রভাব ঠেকানো। ২০১১ সালে শিয়া শাসক বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করে সেখানে সুন্নি মতাদর্শের সরকার প্রতিষ্ঠার আশায় সৌদি আরব সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের অর্থ, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে। ফলে সেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠা করার মনোভাব কতটা তা এখন স্পষ্ট হয়ে গেছে।
রাশিয়ার সোচিতে গত ২২ নভেম্বর পুতিন, রুহানি ও এরদোগানের সম্মিলিত প্রয়াসে সিরিয়াতে বিরোধী ও সরকার দলকে নিয়ে ‘সিরিয়ান পিপলস কংগ্রেস’ সরকার গঠনের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তা থেকেই প্রকৃত চিত্র স্পষ্ট। কারণ সিরিয়াতে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য পশ্চিমা মিত্রদের নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব যে যুদ্ধ শুরু করেছিল তাতে রক্তের হোলিখেলা ছাড়া কোন শান্তি প্রতিষ্ঠার আলামত মেলেনি। সিরিয়া যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি ব্যর্থ। তারা রক্ত ঝরানো ছাড়া কোনো সমাধান দিতে পারেনি। এখানে ওয়াশিংটন-রিয়াদ কৌশলগতভাবে পরাজিত হয়েছে। প্রকৃত শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ বাশারমিত্র তেহরান ও মস্কোই নিয়েছে আর তাতে বাশারবিরোধী হয়েও তুরস্ক নিজেকে শামিল করেছে। ২৮ নভেম্বর জেনেভায় জাতিসংঘ সিরিয়াকে নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
সৌদি আরব কেন সিরিয়া ও ইয়েমেনে সাধারণ মানুষের রক্ত ঝরাল? লেবানন নিয়ে কেন এত ‘ড্রামা’ চলছে? এর পেছনে মূল কারণ ইরানের সমর্থিত হিজবুল্লাহভীতি। কারণ সৌদিতে চলছে রাজতন্ত্রের শাসন আর হিজবুল্লাহ রাজতন্ত্রের বিরোধী, যা রিয়াদের বড় মাথাব্যথার কারণ। অন্যদিকে রিয়াদমিত্র তেলআবিবের গলার কাঁটা হলো হামাস ও হিজবুল্লাহ, যার জন্য গাজা উপত্যকা গিলতে পারছে না। ফিলিস্তিনের মুক্তি আন্দোলনের অন্যতম সংগঠন হামাসের সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে শিয়া হিজবুল্লার। হামাস ও হিজবুল্লাহ উভয়েই আবার মিসরের ইসলামী আন্দোলনকারী দল ব্রাদারহুডের সমর্থক। মুসলিম ব্রাদারহুডের আরেক সমর্থনকারী দল তুরস্কের এরদোগান সরকারের একে পার্টি। যারা এখন রাষ্ট্রক্ষমতায় আছে। আবার সব ক’টি দল একই সঙ্গে রাজতন্ত্রবিরোধী এবং ইসরায়েলবিরোধী।
তাই একদিকে ইসরায়েল ভয়ে আছে তার ভবিষ্যৎ অস্তিত্ব নিয়ে আর সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস) আছে তার আগামী দিনের রাজতন্ত্রী সিংহাসন নিয়ে। আরব দেশগুলোর নেতৃত্ব দানকারী সৌদি আরব ইসরায়েলের মদদে মধ্যপ্রাচ্যে প্রত্যক্ষভাবে ইরানকে ঠেকাতে চাচ্ছে আর পরোক্ষ ভয়ে আছে তুরস্কের অভ্যুত্থান নিয়ে। কারণ তুরস্ক ন্যাটোর সদস্য রাষ্ট্র। ন্যাটোর ৫নং ধারা অনুযায়ী কোনো সদস্য রাষ্ট্র আক্রান্ত হলে অন্য রাষ্ট্র তার সাহায্যে এগিয়ে আসবে। তাই সৌদি আরব সরাসরি তুরস্ককে দমনের কথা বলতে পারছে না। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের অন্য রাষ্ট্রগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চেষ্টার ত্রুটি করছে না।
গত ৫ জুন কাতারের ওপর অবরোধের অন্যতম কারণগুলোর মধ্যে একটি হলো তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। কিন্তু সৌদি আরব এখানেও ইরান-তুরস্কের জন্য ব্যর্থ হয়েছে। অবরোধের প্রাথমিক দিকে মনে হচ্ছিল কাতারকে হয়তো ইয়েমেনের মতো ভাগ্য বরণ করতে হবে। কিন্তু তুরস্ক তার কাতার সেনাঘাঁটিতে আরো বাড়তি সেনা মোতায়েন করে আর ইরানের সঙ্গে মিলে খাদ্য সহায়তা দেয়, যার ফলে সৌদি অবরোধে কাতারের ওপর তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। সৌদি জোট যে অজুহাত ইরানকে নিয়ে পেশ করছে তার কোনো বাস্তবতা নেই। ইরান বিরোধিতার বড় কারণ আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চল থেকে ইরাক, সিরিয়া ও লেবাননে ইরানের সফল প্রভাব বিস্তার। ইরান শিক্ষা, সংস্কৃতি ও জ্ঞান-বিজ্ঞানে সৌদিকে টপকে শীর্ষে অবস্থান করছে। তাই ইরানের প্রভাব বাড়তে থাকলে এক সময় সে প্রভাবে রাজতন্ত্রের সিংহাসন হয়তো থাকবে না, এ প্রভাব রাজতন্ত্রী অন্য আরব দেশগুলোর ওপর যে পড়বে না, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই সৌদি আরব ইরানকে ঠেকাতে আরব জোটভুক্ত দেশগুলো নিয়ে কাজ করছে।
এখানে সৌদি আরব যতটা নিজের জন্য দৌড়াচ্ছে তার চাইতে বেশি মিত্র ইসরায়েলের জন্য গলদঘর্ম করছে। ২০১৫ সালে ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে ইরানের স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তি পি৫+১ এর ঘোর বিরোধী ছিল নেতানিয়াহু প্রশাসন। ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই এ চুক্তির বিরোধিতা করেছেন। ক্ষমতায় এসে চুক্তি বাতিলের কথাও বলেছেন। অন্য রাষ্ট্রগুলো এ বিষয়ে আপত্তি তুলেছে, তারা চুক্তি বাস্তবায়নের পক্ষে। এই নিয়ে ওয়াশিংটন অনেকটাই একঘরে হয়ে পড়েছে। তার মানে এই চুক্তি বাস্তবায়ন হবে। কিন্তু এই চুক্তি বাস্তবায়িত হলে মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব বাড়বে, বেকায়দায় পড়বে ইসরায়েল-সৌদি আরব। তাই সৌদি আরব ইরানের ওপর সন্ত্রাসবাদের মদদের গুজব এনে ইরানকে নানা কৌশলে দমন করতে চাচ্ছে। আর এই দমনে ইসরায়েল খুব সুন্দরভাবে ব্যবহার করছে সৌদি আরব ও অন্য আরব দেশগুলোকে। দমনের পাঁয়তারা হিসেবেই লেবানেন নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরির পদত্যাগ নাটক। রফিকপুত্র সাদ সৌদি নাগরিক। সে তার জীবনের হুমকির জন্য হিজবুল্লাহ ও ইরানকে দায়ী করছে। জীবন বাঁচাতে সাদ পদত্যাগ করে সৌদি আরবে ভ্রমণে গিয়ে। কিন্তু হিজবুল্লাহ নেতা নাসরুল্লাহ এই পদত্যাগকে নাটক বলে আখ্যায়িত করে। লেবানিজরাও তাদের প্রধানমন্ত্রীকে ফেরত চেয়ে রাস্তায় নামে। দেশে ফিরে সাদ রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র দিলেও রাষ্ট্রপতি তাকে আপাতত পদত্যাগ না করার কথা বললে হারিরি তা মেনে নেয়। ঘটনাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, নাসরুল্লাহ প্রদত্ত নাটকতত্ত্ব সত্য বলেই মনে হচ্ছে।
তাহলে লেবাননে হিজবুল্লার প্রভাব মুক্ত করতেই এই নাটক সাজানো হয়েছিল? আর বলির পাঁঠা করা হতো সাধারণ লেবানিজদের? যেমনটা ইয়েমেনে সুন্নি সরকার হাদিকে বহাল রাখতে গিয়ে ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ বাধিয়েছে এমবিএস। যাতে প্রাণ হারিয়েছে প্রায় ১০ হাজার মানুষ, লাখ লাখ মানুষ হয়েছে বাস্তুচ্যুত, ৭০ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষে পতিত হয়েছে, ১ হাজার ৭৪০ জন কলেরায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। ২০ লাখ শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে। কিন্তু পরিস্থিতি দেখ মনে হচ্ছে, যুবরাজ এমবিএস লেবাননে তার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারবে না।
এত রক্তপাতের পরও রিয়াদ জয়ী হতে পারছে না। এদিকে হাইছিরা ক্রমে ক্রমে সম্পূর্ণ ইয়েমেনের নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে। সব দিক থেকে পরাজয় আর প্রভাব খর্ব হতে দেখে ক্ষেপাটে যুবরাজ কখন যে ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। হারিরি পদত্যাগের আগে হাইছিরা সৌদির বিমানঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছে বলে অভিযোগ করেছে রিয়াদ। আর এই ক্ষেপণাস্ত্রের জোগানদাতা হিসেবে ইরানকে দায়ী করা হয়েছে। এ রকমভাবে উত্তেজনা চলতে থাকলে যেকোনো সময় হামলা বা যুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে। ইরান-সৌদি আরব যুদ্ধ শুরু হলে ইরান মস্কো-আঙ্কারা ছাড়া আর কোনো দেশকে পাশে পাবে না।
অন্যদিকে সৌদির পাশে জোরালো অবস্থান নেবে তেলআবিব ও ওয়াশিংটন, যা মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধাকাশে নতুন ধোঁয়াটে পরিবেশ সৃষ্টি করবে। ইরান-সৌদি যুদ্ধের পুরো ফায়দা লুটবে ইসরায়েল। দীর্ঘদিনের শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ্ব প্রমশিত হবে না, বরং গোটা মধ্যপ্রাচ্যে শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ্ব চরমে উঠবে। সিরিয়া, ইরাক, লেবানন, বাহরাইনসহ শিয়া অধ্যুষিত দেশগুলোতে গৃহযুদ্ধের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধবিধ্বস্ত মুসলিম দেশগুলোতে নিভন্তপ্রায় অগ্নিগর্ভে নতুন করে ঘি ঢেলে আগুন ধরানো হবে।
|
|
|
|
মহাত্মা গান্ধীর হত্যাকাণ্ডটি আজও রহস্যের ঘেরাটোপে আবদ্ধ। সম্প্রতি এই রহস্যজট উদ্ঘাটনের বিষয়টি যাচাইয়ের লক্ষ্যে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ আদেশ প্রদান করেন। আদেশ অনুযায়ী নিয়োগকৃত একজন এমিকাস কিউরি বিষয়টির তদন্ত করবেন। বিভিন্ন যৌক্তিকতার বিশ্লেষণে বলা যায় অবশ্যই এ রায়টি সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। বিশেষত, হত্যাকাণ্ডটি কীভাবে এবং কেন ঘটেছে—এ দুটি বিষয় স্পষ্ট করাই এ ক্ষেত্রে মুখ্য বলে প্রতীয়মান হয়। উপরন্তু মামলার অভিযোগেও বিষয় দুটি বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। মামলার বাদী ‘অভিনব ভারত’-এর ট্রাস্টি পঙ্কজ ফাদানিস উক্ত মামলায় অভিযোগ করেন যে, হত্যাকাণ্ডটির সঙ্গে বৈদেশিক সম্পৃক্ততা রয়েছে। যদিও অভিযোগটি এখনো প্রমাণিত হয়নি।
তবে আমি স্মৃতিচারণ করে একটি ব্যাপারে মোটামুটি নিশ্চিত হয়েছি যে, এ হত্যাকাণ্ডটিতে যথেষ্ট নিরাপত্তার ঘাটতি ছিল। তখন (হত্যাকাণ্ডের সময়) আমি উর্দু দৈনিক ‘আনজাম’-এর নিউজ ডেস্কে কাজ করতাম। সেই সময় একদিন আমি সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের টেলিপ্রিন্টারের আওয়াজ শুনতে পাই। যদিও তারা কদাচিত্ আমাদেরকে সংবাদ পাঠাত। তাই আমি ডেস্ক ছেড়ে এক লাফে গিয়ে প্রতিবেদনটি পড়ি। কিন্তু তাতে শুধু একটি মাত্র বাক্যই লেখা ছিল। তা হলো, ‘মহাত্মা গান্ধীকে গুলি করা হয়েছে।’ এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে আমি তখন আমার এক সহকর্মীকে মোটর সাইকেলযোগে হত্যাকাণ্ডের স্থান ‘বিড়লা হাউজ’-এ পৌঁছে দেওয়ার অনুরোধ করি। কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে পৌঁছেও যাই। কিন্তু ঘটনাস্থলে গিয়ে আমি বাস্তবিক অর্থেই নিরাপত্তার ঘাটতি দেখতে পাই। দেখি, দরজায় দাঁড়িয়ে তখন শুধু একজন ব্যক্তি দুঃখ প্রকাশ করতেছে।
কিন্তু আজ, সেই দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থার কথা বেমালুম ভুলে গিয়ে অনেককেই মহাত্মা গান্ধী হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে শোক প্রকাশ করতে দেখা যায়। তাই সকলের জ্ঞাতার্থে বলছি, গান্ধী যে সেসময় চরমপন্থী একদল হিন্দু কর্তৃক আক্রান্ত হতে পারেন—এ ব্যাপারে তত্কালীন সরকারের নিকটও যথেষ্ট তথ্য-উপাত্ত ছিল। কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, এমন পরিস্থিতিতেও তাঁর জন্য যত্সামান্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রদান করা হয়েছিল।
অথচ ঘটনার মাত্র ৪৮ ঘণ্টা আগেও উগ্রপন্থী দলের মদনলাল গান্ধীজীর প্রার্থনাকক্ষের প্ল্যাটফর্মের পিছনে বোমা স্থাপন করেছিল। এ প্রসঙ্গে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা হলো—আমি প্রায়শই এই প্রার্থনা সভায় উপস্থিত থাকতাম। এমনকি বিস্ফোরণের দিনও আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম। তখন আমি একটি বিষয় খুব গভীরভাবে প্রত্যক্ষ করলাম। তা হলো—এতবড় একটি দুর্ঘটনা ঘটার পরও তিনি নিঃসঙ্কোচেই তাঁর প্রাত্যহিক প্রার্থনা সম্পন্ন করলেন। উপরন্তু তাঁর ভাবখানাও এমন ছিল যে, ক্ষণকাল পূর্বে আসলেই এখানে খারাপ কিছু ঘটেনি। এমতাবস্থায় আমি নিজেও বিষয়টিকে একটি পটকা ফাটার মতো ঘটনা হিসেবে ভাবতে শুরু করলাম। কিন্তু যখন আমি পরের দিনের সংবাদপত্র পড়ি, শুধু তখনই বুঝতে পারি যে গান্ধীজী সেসময় কতটা মৃত্যুর সন্নিকটে ছিলেন।
এই ঘটনায় তখন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সরদার প্যাটেল নিজের ব্যর্থতা স্বীকার করে পদত্যাগপত্র জমা দেন। কিন্তু তখন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু তাকে এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার পরামর্শ দেন। তিনি তখন তাকে গান্ধীজীর একটি অর্পিত দায়িত্বের কথা জানান। তিনি বলেন, গান্ধীজী চেয়েছিলেন, তারা দু’জন যেন ভারতকে আধুনিক একটি রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলেন। এমনকি আরএসএসের (রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ) ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন।
এরই ধারাবাহিকতা হিসেবে সেই সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে হিন্দুদের অধিকার কতটা রক্ষিত হচ্ছে—এ বিষয়েই অধিক মনোযোগী হতে দেখা গেছে। যদিও সেসময় হত্যাকাণ্ডটির রহস্য উদ্ঘাটন করা সবচেয়ে জরুরি ছিল। কিন্তু এর পরিবর্তে সেসময় সরদার প্যাটেলকে এমন মন্তব্য করতেও শোনা গেছে যে, আরএসএসের সৃষ্ট এমন পরিস্থিতিতে এমন ঘটনা ঘটা অস্বাভাবিক ছিল না। যাই হোক, ১৯৫৫ সালে যখন আমি তথ্য অফিসার হিসাবে যোগদান করি, তখন আমি এ ব্যাপারে নানা সূত্র খোঁজার চেষ্টা করেছি। কিন্তু সেখানে আমার চাকুরি জীবনের প্রায় ১০ বছরেও এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো আলামত খুঁজে পাইনি। তবে একটি ব্যাপার নিশ্চিত হয়েছি যে, পাছে মামলাটি যাতে যথাযথভাবে সমাপ্ত না হয়, সেজন্য সেখানে সর্বত্রই তথ্য গোপনের একটি জঘন্য প্রবণতা রয়েছে। অন্যথা খোদ সরকারও চাচ্ছিলেন না যে, এ ব্যাপারে কোনো তথ্য প্রকাশিত হোক। হয়তো-বা তাতে এ হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে সরকারের কোনো ব্যক্তির সম্পৃক্ততা প্রকাশ হয়ে যাবার আশঙ্কা ছিল।
আদৌ ভারতের আর্কাইভ কর্তৃপক্ষ এই হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত কোনো দলিলপত্র হস্তান্তরের ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পায়নি। কিন্তু ব্রিটিশরা এদেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার দুই তিন বছরের মধ্যে তাদের নিজেদের মতো করে প্রকাশিত তিন খণ্ডের একটি পুস্তিকায় এ ব্যাপারে হালকা কিছু রেখাপাত করেছে মাত্র।
তবে মহাত্মা গান্ধী হত্যার অল্প কিছুক্ষণ পর যখন আমি বিড়লা হাউজে পৌঁছালাম, তখন এমন কিছু বিষয় প্রত্যক্ষ করেছি, বস্তুত যা ভিন্ন কিছুরই ইঙ্গিত দেয়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—গান্ধীজীর গুলিবিদ্ধ নিথর দেহটি যেখানে পড়েছিল, এর আশেপাশে কোনো রক্ষী ছিল না। সেসময় আমি প্রার্থনার প্লাটফর্ম বেয়ে তাঁর তাজা রক্ত গড়িয়ে যেতে দেখেছি। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে এই রক্ত সংরক্ষণের জন্য আমি সেখানে কোনো পুলিশ সদস্যকে দেখতে পাইনি।
যাই হোক, আবারও বর্তমান প্রসঙ্গে ফিরে আসি। আমি প্রত্যক্ষ করছি যে, হাল আমলেও এ হত্যাকাণ্ডটি নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও বিধিবাম। বস্তুত সাম্প্রতিক কালের কোনো সরকারই এ ব্যাপারে পুরনো এসব গুরুত্বপূর্ণ আলামতকে আমলে নিতে চান না। এক্ষেত্রে আমি বিজেপির দুর্বলতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। কোনো অবস্থাতেই দলটি চায় না যে এ ব্যাপারে তাদের পরামর্শদাতা আরএসএসের কোনো সংশ্লিষ্টতা বেরিয়ে আসুক। কিংবা অতীতের কোনো প্রমাণযোগ্য বিষয় পুনরায় সামনে আসুক। কিন্তু কংগ্রেসের তো এ ব্যাপারে বহু আগে থেকেই আদা-জল খেয়ে নামা উচিত ছিল।
তথাপি কংগ্রেসের দীর্ঘ ইতিহাসে এর প্রতিফলন কদাচিতই দেখা গেছে। এমনকি গান্ধীজী হত্যার পর তাঁর অনুসারীদের যে পরিস্থিতি ভোগ করতে হয়েছিল, বোধ করি আজও তাদের অবস্থা একই আছে। বরাবরের মতো আজও সরকার তাদেরকে বিরুদ্ধশক্তি হিসেবেই মনে করে। উপরন্তু ক্ষমতার দোলাচলে বিজেপির কিছু বেপরোয়া ভাবও লক্ষ্য করার মতো।
তবে এ বিষয়েও কোনো সন্দেহ নেই যে, গান্ধী হত্যাকাণ্ডের সময়ে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই খারাপ ছিল। তথাপি একটি সংশয়ের মীমাংসা আজও হয়নি। তা হলো—এমন একজন ব্যক্তির গুপ্তহত্যার পরও কেন কোনো পুলিশ ঘটনাটির গ্রহণযোগ্য আলামত সংগ্রহ করেনি? তবে একথা সত্য যে, সেসময় কিছু হিন্দু উগ্রবাদী গ্রেপ্তার হয়েছিল। তা সত্ত্বেও আমি মনে করি, নাটকের এ মঞ্চটি আরো প্রশস্ত ছিল। এতে উচ্চপর্যায়ের বহু লোক জড়িত থাকতে পারে। তা ছাড়া মালেগাঁওয়ের বোমা বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িত স্বামী অসীমানন্দের স্বীকারোক্তি থেকেও একথা স্পষ্ট হয়েছিল যে, হিন্দু চরমপন্থীদের নেটওয়ার্ক যথেষ্ট বিস্তৃত। সুতরাং গান্ধীজী হত্যাকাণ্ডের বিষয়টিও এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম কিছু নয়।
|
|
|
|
কী কারণে এ নজরদারি? সরকারপক্ষের বক্তব্য, ‘শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এ নজরদারি’। কোথায়? সরকারি ভাষ্য, দেশে কর্মরত বেসরকারি সংস্থাগুলোকে (এনজিও) শৃঙ্খলায় আনা যাচ্ছে না। নানামুখী চাপ, যথাযথ আইন ও লোকবলের অভাবে নজরদারির বাইরে থেকে যাচ্ছে এসব সংস্থার কার্যক্রম।
কাজে সমন্বয় আনতে এখনো সব এনজিওকে একই ছাতার নিচে আনা সম্ভব হয়নি। নিবন্ধন না নিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে অনেক প্রতিষ্ঠান। আবার নিবন্ধিত এনজিওগুলোও ঠিক কী কাজ করছে—সে ব্যাপারে দেখভাল করার মতো ক্ষমতা এবং যোগ্যতাও নেই নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানগুলোর। স্বাভাবিক কারণেই প্রশ্ন এসে যায়, তাহলে কি নিয়ন্ত্রণহীনভাবেই চলছে এসব প্রতিষ্ঠান!
সম্ভবত বলার কোনো সুযোগ নেই। বাস্তবতা বলছে, নিয়ন্ত্রণহীনভাবেই চলছে এসব প্রতিষ্ঠান। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এনজিওদের মাধ্যমে এ দেশে অনুদান এসেছে ৬৭ কোটি ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা পাঁচ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা। এর ৯০ শতাংশ অর্থ কোথায়, কীভাবে ব্যয় করা হচ্ছে, তার কোনো হদিস নেই সরকারের কাছে। কিন্তু তবু চলছে।
বর্তমানে এনজিওর সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার। এর মাঝে ২৫০টি বিদেশি এবং দেশি দুই হাজার ২৪৪টি। আর বর্তমান সময়ে বিভিন্ন অভিযোগে ২৪৬টির নিবন্ধন বাতিল করেছে সরকার। অভিযোগ রয়েছে, বেশ কিছু এনজিও রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে তারা বিধিবহির্ভূত কাজ করছে
আলাদা সংস্থার কাছ থেকে নিবন্ধন নিয়ে বেশ কিছু এনজিও জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে না জানিয়ে তাদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ আবার এক জেলার নামে নিবন্ধন নিয়ে কাজ করছেন অন্য জেলায়। স্বেচ্ছাশ্রমের নামে চালানো হচ্ছে বিধিবহির্ভূত ব্যবসা। নিয়ম মেনে নবায়নও করছেন না অনেকেই। আইন অমান্য করে শত শত এনজিও ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বছরের পর বছর। আইন অমান্যকারী এসব এনজিওর বিরুদ্ধে রয়েছে গ্রাহকদের জমাকৃত অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ। নামে-বেনামে এরা বিভিন্ন সময়ে গ্রাহকদের ফাঁদে ফেলে বিশেষ কৌশলে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছে।
বর্তমানে এনজিওর সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার। এর মাঝে ২৫০টি বিদেশি এবং দেশি দুই হাজার ২৪৪টি। আর বর্তমান সময়ে বিভিন্ন অভিযোগে ২৪৬টির নিবন্ধন বাতিল করেছে সরকার। অভিযোগ রয়েছে, বেশ কিছু এনজিও রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে তারা বিধিবহির্ভূত কাজ করছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকার বাংলাদেশে এনজিওগুলোর সব ধরনের কার্যক্রমের ওপর নজরদারি বাড়াতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কঠোর নির্দেশ দিয়েছে।
আমরা মনে করি, এ দেশে বহুবার বহুজনে বহুবিধ কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন, কিন্তু বাস্তবে এ নির্দেশনা বানের জলের সঙ্গে ফি বছরই ভেসে গেছে। এবারও কি প্রতিবারের ন্যায় তথৈবচ ভঙ্গিতে হারিয়ে যাবে! আমরা আশা করব, অন্তত একবার এ নির্দেশনা কার্যকর ভূমিকায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করুক। আমরা ধন্য হব।
|
|
|
|
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আবহাওয়ায় উষ্ণতার পরিমাণ বাড়ছে। গলছে হিমবাহ ও মেরু অঞ্চলের বরফের স্তর। বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। ফলে সমুদ্রতীরবর্তী অনেক দেশের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশও জলবায়ু পরিবর্তনের অশুভ পরিণতির অন্যতম শিকার।
যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়তে থাকায় আগামী ১০০ বছরের মধ্যে ছোট-বড় সব মিলিয়ে বিশ্বের ২৯৩টি শহর পুরোপুরি পানির নিচে ডুবে যাবে। তালিকায় বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী চট্টগ্রামের নামও রয়েছে। নিউইয়র্ক, লন্ডন, টোকিও, কলম্বো, মুম্বাই, বেঙ্গালুরু, হংকং, সাংহাইসহ বেশ কয়েকটি মেগাসিটির নামও রয়েছে অনিবার্য ধ্বংসের তালিকায়।
নাসার অন্যতম বিজ্ঞানী সুরেন্দ্র অধিকারী বলেছেন, বিশ্বের আরো ২৯২টি শহরের সঙ্গে চট্টগ্রামও হারিয়ে যাবে জলের অতলে, ১০০ বছর পর। সমুদ্রের পানির স্তর যেভাবে বাড়ছে, তাতে চট্টগ্রামকে বাঁচানো হয়তো সম্ভব হবে না। নাসার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতি ১০ বছর অন্তর ১ দশমিক ৪ সেন্টিমিটার পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রাম নগরী। এই হারে পানি বাড়তে থাকলে আগামী ১০০ বছরের মধ্যেই চট্টগ্রাম ১৪ দশমিক ১ সেন্টিমিটার পানির নিচে চলে যাবে। সে সময় আর এই মহানগরীর কোথাও শুকনো মাটির অস্তিত্বই থাকবে না।
নাসার প্রতিবেদন অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি আশঙ্কার মধ্যে রয়েছে জাপানের রাজধানী টোকিও। ভারতীয় উপমহাদেশ ও সংলগ্ন এলাকাগুলোকে সবচেয়ে বিপদাপন্ন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে নাসার প্রতিবেদনে। বলা হয়েছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের পানি আর ১ মিটার বৃদ্ধি পেলেই উপমহাদেশের অন্তত ১৪ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা তলিয়ে যাবে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি বা জলবায়ু পরিবর্তন মানব জাতিকে এক ভয়ঙ্কর হুমকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বিশ্বের যেসব দেশ এই হুমকির সম্মুখীন তার সামনের সারিতে রয়েছে বাংলাদেশের নাম। বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় এর কুফল ইতোমধ্যে অনুভূত হচ্ছে। সমুদ্রের লোনা পানির আগ্রাসনে সাতক্ষীরার হাজার হাজার মানুষ উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতার পেছনেও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির সম্পর্ক রয়েছে। অস্তিত্বের স্বার্থেই এ বিপদ থেকে সতর্ক থাকতে হবে। নিতে হবে নিজেদের সুরক্ষার প্রস্তুতি।
বাংলাদেশ চির ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ দেশ হিসেব পরিচিত। দেশের মানুষ বড় বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়েছে। আইলা, সিডর, নার্গিস ইত্যাদি সাইক্লোনে উপকূল অঞ্চল লন্ডভন্ড হয়েছে। লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু ও সম্পদহানি হয়েছে। এর ওপর আবহাওয়ার বিরূপ পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবহাওয়ার এই পরিবর্তন শুধু বাংলাদেশের ক্ষেত্রেই হচ্ছে না, বৈশ্বিকভাবেই হচ্ছে। এর জন্য উন্নত বিশ্বের শিল্পায়ন এবং অতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণকে দায়ী করা হচ্ছে। বিশ্বে জলবায়ুর এ পরিবর্তন ঠেকাতে জোট গঠিত হয়েছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র এ জোট থেকে বের হয়ে গেছে। জলবায়ুর পরিবর্তন ঠেকাতে একটি বৈশ্বিক ফান্ড আগেই গঠন করা হয়েছে। এ ফান্ড থেকে ঝুঁকিপূর্ণ দেশসহ বিভিন্ন দেশকে সহায়তা দেওয়া হয়। বাংলাদেশও এ সহযোগিতা পাচ্ছে। তবে এ অর্থ কোথায় কীভাবে ব্যয় করা হচ্ছে, তার স্পষ্ট কোনো চিত্র নেই। ফান্ডের অর্থ যথাযথভাবে ব্যবহার না করার অভিযোগও রয়েছে। উপকূলে নামকাওয়াস্তে কিছু বনায়ন করে অর্থের ব্যবহার দেখানো হয়েছে। অর্থাৎ জলবায়ুর বিরূপ পরিবর্তন ঠেকাতে যে ধরনের উদ্যোগ নেওয়া দরকার, তা নেওয়া হচ্ছে না। এর নেতিবাচক প্রভাব আমাদের প্রধান খাত কৃষিতে ইতোমধ্যে পড়া শুরু করেছে। খরা, অতি বৃষ্টিপাত এবং বন্যা ভয়াবহ রূপ লাভ করছে। ধান ও গমে প্রতিবছরই ব্লাস্ট রোগ বিস্তার লাভ করছে। এতে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
পরিসংখ্যান বলছে, বছরে এক শতাংশ হারে কৃষিজমি কমছে। অপরিকল্পিত নগরায়ণ, কৃষিজমিতে বাড়ি-ঘর ও অবকাঠামো নির্মাণের ফলে আশঙ্কাজনক হারে জমি হ্রাস পাচ্ছে। কিছুদিন আগে পাহাড়ি ঢলে পুরো হাওর অঞ্চলের ফসল পানিতে তলিয়ে যায়। পাহাড় ধসে শতাধিক মানুষের প্রাণহানি হয়। আবহাওয়ার পরিবর্তনের ফলে দেশে বজ্রপাতের হার ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। গত কয়েক দশকের মধ্যে এ বছর সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত এবং মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আবহাওয়ার বিরূপ পরিবর্তন এবং নির্বিচারে পরিবেশ ধ্বংসের কারণে এ ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দিচ্ছে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং দেশের নদ-নদীতে নাব্য কমে যাওয়ায় একদিকে নোনাপানি যেমন উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষিজমিতে প্রবেশ করছে, তেমনি সাগরে অবস্থিত ছোট ছোট দ্বীপগুলোতে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। আবহাওয়ার এই বৈরী আচরণ মোকাবিলায় কার্যকর কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না।
জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে দেশে টাইফুন ও সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতের হার আরো বাড়বে বলে এডিবির প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। এডিবির প্রতিবেদন ছাড়াও স্বাভাবিক দৃষ্টিতে বাংলাদেশের আবহাওয়ার নেতিবাচক পরিবর্তনটি দেখা যায়। বাংলাদেশের ষড়ঋতুর বৈশিষ্ট্য ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। বেশ কয়েকটি ঋতু অনুভব করা যায় না। এর ওপর রয়েছে ন্যায্য পানিপ্রাপ্তি নিয়ে ভারতের বিরূপ আচরণ। প্রতিবেশী দেশটির কারণে শুষ্ক মৌসুমে উত্তরাঞ্চল মরুরূপ নিচ্ছে। অন্যদিকে বর্ষায় উজানে দেওয়া সব বাঁধ খুলে দেওয়ায় বন্যায় ভেসে যাচ্ছে গোটা দেশ। এবার যে বন্যা দেখা দিয়েছে তা এই বাঁধ খুলে দেওয়ার কারণেই হচ্ছে। পানি নিয়ে প্রতিবেশীর এই অমানবিক আচরণ এবং দেশের অভ্যন্তরে নির্বিচারে পরিবেশ ধ্বংসের কারণে আবহাওয়ার নেতিবাচক পরিবর্তন দ্রুত হচ্ছে। এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার একমাত্র উপায় সচেতন হওয়া।
সামুদ্রিক ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা পেতে উপকূলজুড়ে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলা অপরিহার্য। সমুদ্রে জেগে ওঠা দ্বীপগুলোর ভাঙন ঠেকাতে বাঁধ নির্মাণ ও ব্যাপক হারে বনায়ন জরুরি হয়ে পড়েছে। কৃষি ও কৃষিজমি রক্ষার্থে পরিকল্পিত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অনাবাদি ভূমি ব্যবহার উপযোগী করার কথা ভাবতে হবে। জলবায়ুর যে তহবিল রয়েছে তার যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষার কর্মসূচি নিতে হবে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে পাহাড় কাটা ও বসতি স্থাপন ঠেকাতে কঠোর আইন এবং আইনের প্রয়োগ কার্যকর হতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করে তা প্রচারের যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়াটাই হবে সময়োপযোগী একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত বিরূপ প্রভাব ও ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদি ব্যাপক পরিকল্পনা এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তার বাস্তবায়নের বিকল্প নেই।
|
|
|
|
চলমান জেএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে বলে কয়েকটি অনলাইন পোর্টালে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এর সত্যতা নিয়ে যদিও প্রশ্ন রয়েছে। তবে প্রশ্ন ফাঁসের পুরো প্রক্রিয়াটি বেশ সুন্দর করে ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। সেসব বর্ণনা দেখে মনে হয়েছে, প্রশ্ন ফাঁসকারীরা আগের থেকে আরো বেশি কৌশল অবলম্বন করছে। আর এ কাজে তারা ফেসবুক ব্যবহার করছে। এসব খবর প্রকাশের পর কিছু মেধাবী ছাত্র এবং তাদের অভিভাবকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাতেও প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। এই ফাঁসের দড়িতে ঝুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠগুলোতে এমন কিছু ভাগ্যবান সুযোগ পেয়েছে যারা আদৌ সেখানে ভর্তি হওয়ার যোগ্যতা রাখে না। এর সংখ্যা কত তা বলা সম্ভব নয়। তবে প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার ফলে আমাদের দেশে মেধা যে মারাত্মক অধঃপতনের দিকে যাচ্ছে সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। কয়েক দিন পরেই পিইসি পরীক্ষা শুরু হবে।
প্রাইভেট ব্যবসা অনেক পুরনো এবং এটি বহাল তবিয়তেই চলছে। এখন যেসব ছাত্রছাত্রী শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়ে পরীক্ষার আগে তাদেরকে ওই শিক্ষকদের অনেকেই প্রশ্ন বলে দেন। আজ যে প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে তার একমাত্র উদ্দেশ্যই হচ্ছে টাকা। আজকের শিক্ষার্থীদের আগের তুলনায় অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হয়। এবেলা ওবেলা তাদের প্রাইভেট কোচিং নিয়ে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। কোচিং সেন্টারগুলো এবেলা ওবেলা পরীক্ষা নিয়ে এ প্লাস পাওয়ানোর শর্তে ছাত্রছাত্রীদের কোচিং সেন্টারে টেনে আনে। এখানে দায় শুধুমাত্র কোচিং সেন্টারকে দিলেই হবে না। খানিকটা অভিভাবকের ওপরও পড়ে। যারা দিনরাত লেখাপড়া, বেশি বেশি পরীক্ষা আর পরীক্ষায় অন্তত গোল্ডেন এ প্লাসকে সামাজিক মর্যাদা বলে মনে করেন। তাতে তাদের সন্তান আর যাই হোক না কেন প্রকৃত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়।
শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। আর শিক্ষক শিক্ষার। শিক্ষকদের আচার আচরণ, নীতি-নৈতিকতার ওপর প্রজন্মের পর প্রজন্ম প্রভাবিত হয়। আগেও তাই হয়েছে এখনো তাই হচ্ছে। ভবিষ্যতেও তাই হবে। কিন্তু নৈতিকতাবিরোধী কাজকর্মের জন্য শিক্ষক সমাজের ওপর দুর্নাম আসছে। আসলে যারা এ ধরনের নৈতিকতাবিরোধী কাজকর্ম করছেন তাদের শিক্ষকের অন্তর্ভুক্ত করা যায় না। কারণ শিক্ষক হতে গেলে যে গুণাবলি অর্জন, যে মূল্যবোধ থাকা প্রয়োজন তা তাদের নেই। তাই পেশাগতভাবে তারা শিক্ষকতা করলেও আসলে শিক্ষক হওয়ার কোনো যোগ্যতাই তাদের নেই। তাই গুটিকতক লোভী ও নীতিহীন শিক্ষকের জন্য পুরো শিক্ষকসমাজ দায় নিতে পারে না। আজ শিক্ষার মান নিয়ে যে প্রশ্ন উঠছে তার দায় শিক্ষকরা এড়াতে পারেন না। কারণ প্রশ্ন ফাঁস নামক একটি অসৎ কাজের পেছনে গুটিকতক শিক্ষক জড়িয়ে রয়েছেন। প্রশ্ন ফাঁসের কারণে ছাত্রছাত্রীদের ভালো রেজাল্ট হয়তো হচ্ছে, কিন্তু মেধার বারোটা বেজে যাচ্ছে যা তারা বুঝতে চাইছেন না। এভাবে শুধু যে তারা দেশটাকে পিছিয়ে দিচ্ছেন শুধু তা নয়, ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তেও নিয়ে চলেছেন। যা কখনই জাতির কাম্য হতে পারে না। তাই শিক্ষার মেরুদন্ড ভেঙে যারা দেশের অপূরণীয় ক্ষতিসাধন করছেন তাদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনা আজ জরুরি। আর এমনটাই মনে করছেন সমাজ বিশ্লেষকরা।
শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে দেশে সামগ্রিকভাবে একটা সমালোচনা চলছে। অনেক দিন আগে থেকেই মেধাবীদের মূল্যায়ন ও শিক্ষা পদ্ধতিতে মেধার সঠিক মূল্যায়ন করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। পাসের হার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আমরা কতটা মেধাবী শিক্ষার্থী বের করতে পারছি তা নিয়েই মূলত প্রশ্ন উঠেছে। কারণ ভালো ফল করা ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন মেধা পরীক্ষায় হতাশ করার মতো ফল করছে। দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিক্ষিত বেকার বৃদ্ধি দেশের জন্য কোনো সুখবর নয়। কিন্তু সেটাই ঘটে চলেছে। কয়েক বছর আগে থেকে অনেকেই দেশে মেধাবীর সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে বলে জানিয়ে আসছেন। মেধা মূল্যায়নের সঙ্গে সঙ্গে কয়েকটি বিষয় নিয়ে মূলত শিক্ষাব্যবস্থা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সৃজনশীল প্রশ্নপদ্ধতির প্রয়োগে দক্ষতার অভাব, পাঠ্যসূচিতে পরিবর্তন, আনাচে-কানাচে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা কিন্ডারগার্টেন এবং অধিকাংশ পরীক্ষার আগে প্রশ্নফাঁস এসব এখন শিক্ষার সঙ্গে যেন আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেছে। কোনো মতেই যেন এর থেকে বের হওয়া যাচ্ছে না। কথায় আছে সর্ষের ভেতরই যদি ভূত থাকে তাহলে এ ভূত তাড়াবে কে! প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে নীতিহীন কতিপয় কর্মকর্তা ও শিক্ষক। বিবেকহীন এসব অসৎ ব্যক্তির মূল লক্ষ্যই হলো নিজেদের পকেট ভারী করা। এর সঙ্গে আরো জড়িত বড় বড় সাইনবোর্ডের আড়ালে শিক্ষা ও মেধা নিয়ে ব্যবসা করা কোচিং সেন্টার, যেকোনো মূল্যে সন্তানের ভালো রেজাল্ট নিশ্চিত করা কিছু অভিভাবক ও অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী নিজেই।
অথচ এই বাঙালিরাই বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীর বুকে মেধা, দক্ষতা আর গৌরবের স্বাক্ষর রেখেছেন। সাহিত্য, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, খেলাধুলা সর্বোপরি প্রতিটি ক্ষেত্রেই বাঙালি এবং বাংলার কথা জ্বলজ্বল করছে। বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, বেগম রোকেয়াসহ কত নাম মেধার অনন্য উদাহরণ হয়ে আছে। এই নাম কিন্তু আপনা-আপনি বা হালের রেওয়াজ প্রশ্ন ফাঁস করে সম্ভব হয়নি। প্রকৃত মেধা আর যোগ্যতার বলেই এসব করতে পেরেছি আমরা। আমরা যখন পড়াশোনা করতাম তখন প্রশ্নপত্র ফাঁস তো দূরের কথা স্যারের কাছে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন দাগিয়ে আনতেও ভয় পেতাম। ভয় পেতাম এই ভেবে, পাছে আবার অন্য ছাত্ররা বলে বসবে প্রশ্ন না দাগিয়ে আনলে পরীক্ষায় মোটেই ভালো করতে পারতাম না। আর এখন অনেকেই ফোন দিয়ে জিগ্যেস করে, ভাই প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে না কি! অবশ্য যারা এই অশুভ প্রক্রিয়া চালায় তারা শুধু জেএসসি বা এসএসসি নয়, বরং চাকরির পরীক্ষাগুলোতেও একই চেষ্টা অব্যাহত রাখে—সে কথা বলাই বাহুল্য। একটি জাতির মেধাকে ধ্বংস করে দেওয়ার এর চেয়ে আর ভালো উপায় কী হতে পারে? জানি না এর পেছনে কারা জড়িত আর কেনই বা আমাদের আগামী প্রজন্মকে আমরা এমন পঙ্গু করে দিতে উঠেপড়ে লেগেছি। এতদিন চাকরির পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। আমরা ধরেই নেই কোথাও না কোথাও প্রশ্ন ফাঁস হবেই। তবে সেখান থেকে স্কুল পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হবে স্বপ্নেও ভাবিনি। জাতিকে এভাবে মেধাশূন্য করার পেছনে যারা কাজ করে যাচ্ছে তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় ছাত্রছাত্রী থাকবে, শিক্ষক থাকবে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও থাকবে, তবে লেখাপড়া করার বা করানোর খুব বেশি দরকার হবে না। রাত জেগে ছেলেমেয়েদের পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ারও দরকার হবে না। আর সেটা হলে আমরাই বিপদে পড়ব।
|
|
|
|
শহীদ নূর হোসেন দিবস। বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনে এক অবিস্মরণীয় নাম শহীদ নূর হোসেন। ১৯৮৭ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলাকালে পুলিশের গুলিতে তিনি নিহত হন।
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় শহীদ নূর হোসেনের আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানাতে প্রতিবছর এদিনটি পালন করা হয় নূর হোসেন দিবস হিসেবে। এদিন জোটবদ্ধ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ‘ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি’ গ্রহণ করে। এই কর্মসূচির লক্ষ্য ছিল এরশাদ সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি আদায়।
সেদিন নূর হোসেন স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর এক অভিনব পন্থা অবলম্বন করেন। তিনি খালি গায়ে বুক ও পিঠে সাদা রঙে লিখিয়ে নেন ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক: গণতন্ত্র মুক্তি পাক’। মিছিলের অগ্রভাগেই ছিলেন তিনি। মিছিলটি ঢাকা জিপিও-র সামনে জিরো পয়েন্টের কাছাকাছি আসলে পুলিশের গুলিতে নূর হোসেন নিহত হন। এসময় বহু আন্দোলনকারী আহত হন।
এই শহীদের নামানুসারে সেই জিরো পয়েন্টের নামকরণ হয়েছে নূর হোসেন চত্বর। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের ডাকবিভাগ তার নামে প্রকাশ করে স্মারক ডাকটিকিট। তার গায়ে লেখাযুক্ত ছবিটি বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের এক গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
নূর হোসেন ১৯৬১ সালে ঢাকার নারিন্দায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মুজিবর রহমান ছিলেন বেবি-ট্যাক্সি চালক। নূর হোসেনের পৈতৃক নিবাস পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলাধীন ঝাটিবুনিয়া গ্রামে। স্বাধীনতার পর থেকে তাদের পরিবার ঢাকায় বনগ্রাম রোডের ৭৯/১ নং বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। নূর হোসেন প্রাথমিকশিক্ষা লাভ করেন বনগ্রামের রাধাসুন্দরী প্রাইমারি স্কুলে। ঢাকার গ্রাজুয়েট হাইস্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে তিনি পড়াশোনা বন্ধ করে মোটর ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। নূর হোসেন ছিলেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের বনগ্রাম শাখার প্রচার সম্পাদক। বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুরুদ্ধারে তার এ আত্মত্যাগ অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
শহীদ নূর হোসেন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় গুলিস্থনস্থ নূর হোসেন স্কয়ারে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন এবং তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন শহীদ নূর হোসেন দিবস যথাযথ মর্যাদায় পালনের কর্মসূচি নিয়েছে।
|
|
|
|
|
|
|