হায়রে বাংলাদেশ! আজ যদি বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকতেন লজ্জায় মাথা লুকাতেন কোথায় ? এই লজ্জা বঙ্গবন্ধুর ; এই লজ্জা সমগ্র বাঙ্গালী জাতির। ছাত্র রাজনীতির উদার পাঠশালা থেকে নেতৃত্বের গুনাবলি বিকাশিত করে একটি জাতিকে স্বাধীনতা উপহার দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। আর বর্তমানে ছাত্ররাজনীতি হয়ে উঠেছে কিছু বিবেক-বুদ্ধিহীন, চাটুকার, তেলবাজ, সন্ত্রসী, ধর্ষণকারী তৈরির কারখানা। যেই রাজনীতি ছাত্রদের নার্ভ বুঝতে পারে না, ছাত্রদের যৌক্তিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয় না, বরং সেই ছাত্র আন্দোলন দমনে রাষ্ট্রের লাঠিয়াল বাহিনী কাজ করে, সেই রাজনীতি ছাত্রদের জন্য তো নয়ই, সর্বোপরি দেশের জন্য কোন কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না।
বঙ্গবন্ধু যখন ১৯৭৫ সালে বাকশাল গঠন করেছিলেন বেশির ভাগ মানুষ তাকে ভুল বুঝেছিলেন। তৎকালীন আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের অনেকেই না বুঝে বাকশালে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু তারা কখনোও বাকশালের মর্মার্থ বুঝতে পারেনি এবং বাকশালের চেতনা দেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারেনি। যার মূল্য বঙ্গবন্ধু দিয়ে গেছেন জীবন দিয়ে। এমনকি বর্তমানেও বাকশালকে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গালি হিসাবে ব্যবহার করা হয়। বেশির ভাগ আওয়ামী লীগের ভাইয়েরা তা এড়িয়ে যান অথবা কুতর্কে জড়িয়ে পরেন। আজ ছাত্রলীগের মেধা -মননের চর্চা না থাকায় আওয়ামী লীগ কে বার বার লজ্জিত হতে হয়।
চীনের কিংবদন্তি নেতা মাও সে তুং ১৯৬৬ সালে দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন, যার ফলশ্রুতিতে আজ চীন বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ও শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ, যাকে নিয়ে চীনা কমিউনিষ্ট পার্টি এবং সমগ্র চীন গর্ব করে। অথচ একই উদ্দ্যেশে একই প্রক্রিয়ায় দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে তার জীবন উৎসর্গ করতে হল। আর আওয়ামী লীগ আজও বয়ে বেড়াচ্ছে বাকশালের অপবাদ। এই ব্যার্থতা কার ? অনেকের অনেক ধরনের উত্তর থাকতে পারে। কিন্তু আমি মনে করি এই ব্যর্থতা সম্পূর্ন রূপে ছাত্রলীগের , যারা তাদের দায়িত্ব-কর্তব্য ভুলে আওয়ামী লীগের লেজুড় এবং সরকারের পেটুয়া বহিনীতে পরিণত হয়েছে। মেধার চর্চা না থাকলে ছাত্ররাজনীতি তার উদ্দেশ্য হাসিলে ব্যর্থ হয় তা আমরা বাঙ্গালীরা ছাড়া কেই বা ভাল বুঝবে?
ছাত্রলীগের রয়েছে এক গৌরবময় ইতিহাস, অথচ আজ ছাত্রলীগের বদনামের অন্ত নেই। কোটা পদ্ধতি সংষ্কারের মত একটি যৌক্তিক ছাত্র আন্দোলন দমনে আজ ব্যবহৃত হচ্ছে ছাত্রলীগ।
ছাত্রলীগের ভাইদের রাজপথের এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের গত কয়েকদিনের কর্মকান্ডে জাতি বাকরুদ্ধ। বিশেষ করে লন্ডনে সেচ্ছা নির্বাসিত একজন সাবেক ছাত্রলীগ নেতার অনলাইন কর্মকান্ড জাতিকে ব্যাথিত করেছে। তবে তাদের মনে রাখা উচিত ছাত্রদের বিরুদ্ধে গিয়ে ছাত্র রাজনীতি করা যায় না। আর ছাত্রলীগ যদি এই পথেই হাটে তবে তা আওয়ামীলীগের বোঝা ভারি করা ছাড়া কোন ইতিবাচক ফলাফল দিতে পারবে না। আওয়ামী লীগ বিরোধী নিন্দুকেরা একটা হাস্যকর প্রবাদের জন্ম দিয়েছিল বহু আগে “তুই মানুষ না, তুই আওয়ামী লীগ” আর এখন সমগ্র বাংলাদেশ বলে “তুই ছাত্র না, তুই ছাত্রলীগ”।