বৈদেশিক অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলোর গতি বাড়াতে বিশেষ নজরদারির উদ্যোগ নিয়েছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ ইআরডি। বিষয়টি অবশ্যই ইতিবাচক। বলার অপেক্ষা রাখে না, বৈদেশিক অর্থায়নের প্রকল্পগুলোর গতি ও ব্যয় বৃদ্ধির অর্থ হচ্ছে বিদেশি আর্থিক সহায়তা ছাড় ত্বরান্বিত করা। এটি আমাদের অবকাঠামো উন্নয়ন গতিশীল করার পাশাপাশি বৈদেশিক সাহায্যের পরিমাণ ও অর্থ ছাড়ে দ্রুতগতি, এমনকি বিদেশে ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরিতে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়। তবে কেবল নজরদারির সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে থাকলেই চলবে না, একই সঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়নে সমস্যা দেখা দিলে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করে কীভাবে সেটা সমাধানের পাশাপাশি তদারকি সুষ্ঠু ও ত্বরান্বিত হয়, তা-ও নিশ্চিত করতে হবে।
জানা যায়, চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট ৩০৭টি প্রকল্পের মধ্যে ৬৬টি প্রকল্পকে বিশেষ নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে পদ্মা সেতুতে রেললাইন সংযোগ ও কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের মতো বড় বড় প্রকল্প রয়েছে। আমরা মনে করি, বিশেষ তদারকির মাধ্যমে এসব প্রকল্প দ্রুত শেষ করে অবকাঠামো উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা সময়ের দাবি। কারণ বড় প্রকল্পে বড় ধরনের গাফিলতি এবং সময় ও বরাদ্দ- দুটোই বাড়িয়ে নেয়ার এক ধরনের অসুস্থ মানসিকতা প্রকল্প বাস্তবায়নকারীদের মধ্যে জেঁকে বসেছে। এ অবস্থায় বিদেশি অর্থায়নের পাশাপাশি নিজস্ব অর্থায়নের বড় প্রকল্পগুলোর প্রতিও বিশেষ নজর দেয়ার বিকল্প নেই। অর্থবছরের শুরু থেকে এমন উদ্যোগ কার্যকর থাকলে যে কোনো প্রকল্পই নির্ধারিত সময়ে শেষ করার আশা করা যায়।
এ বছরই প্রথমবারের মতো প্রকল্পে বিশেষ নজরদারির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এটি প্রকল্প বাস্তবায়নে ফলপ্রসূ, কার্যকর ও ইতিবাচক ভূমিকা নিয়ে আসবে বলে আশা করছেন বিশেষজ্ঞরা। মূলত বৈদেশিক সহায়তার ব্যবহার বাড়াতে এমন উদ্যোগ নেয়া হলেও এর মাধ্যমে দুর্নীতি-অনিয়ম রোধ, সংশ্লিষ্ট অসাধু কর্মকর্তাদের গাফিলতি, এমনকি ঘুষ-কমিশন বাণিজ্যের মতো কোনো বিষয় থাকলে সেটাও দূর করা সম্ভব হতে পারে। এজন্য যারা নজরদারির দায়িত্বে থাকবেন তাদের করিৎকর্মা ও কঠোর পরিশ্রমী হতে হবে এবং নজরদারির প্রতিবেদন একনেকের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর সামনে উপস্থাপন নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় বিশেষ নজরদারি ফলপ্রসূ না হওয়ার আশংকা উড়িয়ে দেয়া যায় না।
অস্বীকার করার উপায় নেই, যে কোনো ক্ষেত্রে বিশেষ তদারকি ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নজরদারি দায়িত্বশীলদের কাজে উৎসাহী করে তুলবে। আর বিদেশি অর্থায়নের প্রকল্পের ক্ষেত্রে কাজের অগ্রগতির সঙ্গে অর্থছাড়ের শর্ত থাকায় এটা বেশ জরুরিও বটে। তবে প্রকল্প বাস্তবায়নে যেসব সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় সেগুলোর কীভাবে নজরদারি ও সমাধান করা হবে, তা সুনির্দিষ্ট করা না থাকলে নজরদারির মাধ্যমে গতি বাড়ানোর সম্ভাবনা কমে যাবে। যেমন প্রকল্পের কাজের নকশায় বা জমি অধিগ্রহণের মতো বিষয়গুলোতে সমস্যা তৈরি হলে আইনি ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার মতো বিষয় দ্রুত সমাধানের পথ খোলা থাকলেই কেবল নজরদারি ফল বয়ে আনবে। এগুলো মাথায় রেখে দেশি-বিদেশি যে কোনো অর্থের প্রকল্পেই দ্রুত সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ, ই-প্রকিউরমেন্ট, আইনি ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিরসনে সমন্বয়ের পদক্ষেপ থাকলে নজরদারি কাজে আসবে বলে আমাদের বিশ্বাস।