খুব প্রয়োজন কিংবা জরুরি না হলে যাত্রীরা অটোরিকশায় উঠতে চান না। আর এই সুযোগটিই নেন চালকরা। তারা নানা অজুহাতে যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করেন। সরকারের নির্দেশনা আছে, চালকদের গন্তব্য নিয়ে কোনো প্রশ্ন করা চলবে না। এমনকি ভাড়া নিয়েও কোনো দর-দাম করা যাবে না। কারণ, মিটারের ভিত্তিতে ভাড়া উঠবে।
কিন্তু রাজধানীর কোনো সিএনজিচালিত অটোরিকশা মিটারে চলে না। যাত্রীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে যাত্রীদের মিটারের চেয়ে তিন গুণ ভাড়া গুনতে হয়। যাত্রী সাধারণের প্রশ্ন—এই নৈরাজ্য দূর হবে কবে? আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলে অটোরিকশার চালকরা কি মিটার উপেক্ষা করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে পারতেন? উপরন্তু তাদের মর্জির ওপর নির্ভর করেই যাত্রীদের গন্তব্যে যেতে হয়।
তবে যে যাই বলুক, গণপরিবহনে আইনি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা না গেলে অটোরিকশার ভাড়া সন্ত্রাস দূর করা যাবে না। এ ক্ষেত্রে বিআরটিএ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আন্তরিক হলেই যাত্রীদের মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
রাজধানীতে অটোরিকশার চালকদের ভাড়ানৈরাজ্য ও যাত্রী হয়রানির ওপর এক পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতি অভিযোগ করেছে, এসব অটোরিকশার অধিকাংশই কোনো আইন-কানুনের ধার ধারে না। এ ছাড়া চাহিদার তুলনায় এই বাহনের সংখ্যা কম। ফলে চালকদের ইচ্ছার কাছে যাত্রীরা বছরের পর বছর ধরে জিম্মি হয়ে আছেন। অটোরিকশা সংকটের কারণে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেশি ভাড়া দিয়েও গোপনে চুক্তিতে যাতায়াত করছে যাত্রী সাধারণ।
গত রোববার সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে সংগঠনটির পক্ষ থেকে ভাড়ানৈরাজ্য ও যাত্রী হয়রানি বন্ধে সাত দফা সুপারিশ করা হয়। এতে বলা হয়, ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে নতুন অটোরিকশা নামানোর উদ্যোগ নেওয়া। গণমালিকানার পরিবর্তে কোম্পানিভিত্তিক অথবা অ্যাপসভিত্তিক অটোরিকশা পরিচালনার ব্যবস্থা করা। মিটারবিহীন ও প্রাইভেট অটোরিকশা চলাচল বন্ধে উদ্যোগ নেওয়া। জমা ও ভাড়া বৃদ্ধি, সিলিং নির্ধারণ, মনিটরিং কমিটিতে যাত্রী সাধারণের প্রতিনিধিত্ব রাখা।
নীতিমালা লঙ্ঘন করে চলাচলকারী অটোরিকশা এক বছর আটকে রাখার বিধান করা। আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার ও আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের মুনাফা সরকার কর্তৃক নির্ধারণ করে দেওয়া এবং নতুন অটোরিকশা নিবন্ধনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা ও অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করা।
আমরা মনে করি, সবকিছুর নীতিনির্ধারক সরকার। জনস্বার্থের বিষয়টি তারাই মূল্যায়ন করবে। এ বাস্তবতায় শুধু এইটুকু বলা যায়, সরকারকে জনগণের কল্যাণের বিষয়কেই অগ্রাধিকার দিতে হবে। কারণ, দেশে সিএনজি অটোরিকশার নৈরাজ্য নতুন কিছু নয়। বর্তমানে রাজধানীতে এটি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। কথায় কথায় সাধারণ মানুষকে জিম্মি করা তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এ অনিয়ম রোধ করতে হবে।
যত দ্রুত সম্ভব গণপরিবহনকে সহজ ও যাত্রীবান্ধব করার জন্য সিএনজি অটোরিকশার চালকদের মিটারে ভাড়া আদায় ও মালিকদের জমা নেওয়ার বিষয়ে নজরদারি জোরদার করতে হবে। যাতে কোনোভাবেই যাত্রীস্বার্থ বিনষ্ট না হয়।