স্বাধীনতার বয়স এখন ৪৫ বছর। অনেকে বলেন, একটি দেশের জন্য এ আর এমন কোনো বয়স নয়। আমরা মনে করি, বয়স বিচারে বাংলাদেশ এখন মধ্যগগনে অর্থাৎ মাঝ বয়সী। এ বয়সে যার হবে না ৯০ বছরেও তার কাছে কিছু আশা করা যায় না। আমরা মনে করি, ৪৫ বছর বয়সে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে, তবে ব্যর্থতাও কম নয়।
কেমন আছে আমাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়? মিডিয়ার তথ্যমতে, ভালো নেই। তারা বলছে, দেশের প্রায় ১৭ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন জরাজীর্ণ হয়ে আছে কয়েক বছর। এবারের দুই দফা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরো প্রায় তিন হাজার বিদ্যালয় ভবন। বন্যায় নদীতে বিলীন হয়ে গেছে প্রায় আড়াইশ বিদ্যালয়। ঝুঁকিপূর্ণ এবং ক্ষতিগ্রস্ত এসব ভবন সংস্কার ও বিলীন হয়ে যাওয়া বিদ্যালয়ের পুনর্নির্মাণ প্রশ্নে কারো কোনো মাথাব্যথা নেই। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় উদ্বিগ্ন হলেও তাদের যেন কিছুই করার নেই। তারা জানিয়েছে, অবকাঠামোগত উন্নয়ন বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ নেই। সেইসঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি অবহেলিত প্রাথমিক শিক্ষা। সংস্কারের জন্য মন্ত্রণালয়ে কয়েক দফা তাগাদা দেওয়া হলেও সেখান থেকে কোনো ফল পাওয়া যায়নি।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, প্রকল্পে দুর্নীতির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মিত হলেও তা মানসম্পন্ন হয় না। তাই কিছুদিন যেতে না যেতে তা অকেজো হয়ে পড়ে। অপর এক তথ্যমতে, দেশে শিক্ষাব্যয়ের প্রায় ৯০ শতাংশই বেতন ও ভাতা বাবদে খরচ হয়। বেনবেইসের তথ্যমতে, প্রাথমিক শিক্ষায় বরাদ্দের ৪ শতাংশও ব্যয় করা হয় না অবকাঠামো উন্নয়নে। আবার যেটুকু ব্যয় হয় তার একটি বৃহৎ অংশ চলে যায় দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের মনোরঞ্জনে।
একটি কথা বলা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় আমাদের ব্যর্থতা ও সিদ্ধান্তহীনতার মাত্রা সীমা অতিক্রম করলেও দুর্নীতিতে আমাদের সফলতাকে একটি মাইলফলক বলা যেতে পারে। যেখানে আমরা অনেকবারই গোল্ড মেডেল পেয়েছি। উদাহরণ হিসেবে হুদা কমিশনের ইভিএমের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। যেখানে সরকারকে গচ্চা দিতে হয়েছে প্রায় হাজার কোটি টাকা। যা প্রাথমিক শিক্ষায় খরচ করা হলে দেশ ও জাতি অনেক বেশি লাভবান হতে পারত।
আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মতের ভিত্তিতে বলতে চাই, একটি দুর্নীতিমুক্ত দেশের মর্যাদাবান নাগরিক হয়ে বেঁচে থাকার জন্যই আমাদের পূর্ব পুরুষরা যুদ্ধ করে এ দেশ স্বাধীন করেছিলেন। আমরা দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার মধ্য দিয়ে তাদের সেই আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানাতে চাই। একইসঙ্গে জাতির মেরুদণ্ডকে সোজা করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে শিক্ষাব্যবস্থাকে বিশেষ মর্যাদায় এগিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া দেখতে আগ্রহী। যথাযথ কর্তৃপক্ষ নিশ্চয়ই আমাদের প্রত্যাশা পূরণে এগিয়ে আসবে।