শহীদ নূর হোসেন দিবস। বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনে এক অবিস্মরণীয় নাম শহীদ নূর হোসেন। ১৯৮৭ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলাকালে পুলিশের গুলিতে তিনি নিহত হন।
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় শহীদ নূর হোসেনের আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানাতে প্রতিবছর এদিনটি পালন করা হয় নূর হোসেন দিবস হিসেবে। এদিন জোটবদ্ধ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ‘ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি’ গ্রহণ করে। এই কর্মসূচির লক্ষ্য ছিল এরশাদ সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি আদায়।
সেদিন নূর হোসেন স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর এক অভিনব পন্থা অবলম্বন করেন। তিনি খালি গায়ে বুক ও পিঠে সাদা রঙে লিখিয়ে নেন ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক: গণতন্ত্র মুক্তি পাক’। মিছিলের অগ্রভাগেই ছিলেন তিনি। মিছিলটি ঢাকা জিপিও-র সামনে জিরো পয়েন্টের কাছাকাছি আসলে পুলিশের গুলিতে নূর হোসেন নিহত হন। এসময় বহু আন্দোলনকারী আহত হন।
এই শহীদের নামানুসারে সেই জিরো পয়েন্টের নামকরণ হয়েছে নূর হোসেন চত্বর। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের ডাকবিভাগ তার নামে প্রকাশ করে স্মারক ডাকটিকিট। তার গায়ে লেখাযুক্ত ছবিটি বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের এক গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
নূর হোসেন ১৯৬১ সালে ঢাকার নারিন্দায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মুজিবর রহমান ছিলেন বেবি-ট্যাক্সি চালক। নূর হোসেনের পৈতৃক নিবাস পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলাধীন ঝাটিবুনিয়া গ্রামে। স্বাধীনতার পর থেকে তাদের পরিবার ঢাকায় বনগ্রাম রোডের ৭৯/১ নং বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। নূর হোসেন প্রাথমিকশিক্ষা লাভ করেন বনগ্রামের রাধাসুন্দরী প্রাইমারি স্কুলে। ঢাকার গ্রাজুয়েট হাইস্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে তিনি পড়াশোনা বন্ধ করে মোটর ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। নূর হোসেন ছিলেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের বনগ্রাম শাখার প্রচার সম্পাদক। বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুরুদ্ধারে তার এ আত্মত্যাগ অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
শহীদ নূর হোসেন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় গুলিস্থনস্থ নূর হোসেন স্কয়ারে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন এবং তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন শহীদ নূর হোসেন দিবস যথাযথ মর্যাদায় পালনের কর্মসূচি নিয়েছে।