মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনী ও মগদের হাতে নৃশংসভাবে হত্যাযজ্ঞ, নিপীড়ন ও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে নিরীহ রোহিঙ্গারা। পুরো বিশ্ব থেকে এ বিষয়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠলেও এখনো সু চি সরকার ও তার সেনাবাহিনীকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে চীন।
নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানামারের পাশে দাঁড়িয়েছে শি জিন পিং সরকার। মূলত মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে আর্থিক বিনিয়োগ ও অবকাঠামো নির্মাণে ৭.৩ বিলিয়ন বা ৭৩০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে চীন। আর এ কারণেই দেশটি রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর হত্যা এবং নিধনযজ্ঞ ইস্যুতে মিয়ানমারের সরকারের পক্ষে থাকছে তারা এবং বিষয়টিকে আন্তর্জাতিক পরিসরে না নিয়ে একে একটি আভ্যন্তরীণ সমস্যা হিসেবেই দেখাতে সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। এমনটাই মত দিয়েছেন তিনজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিশেষজ্ঞ।
সিঙ্গাপুরের এস রাজারত্নম স্কুল অফ ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ (আরএসআইএস) এর চায়না প্রগ্রাম এর গবেষণা ফেলো ইরিন চ্যান বলেন, ‘রাখাইনে একটি গভীর সমুদ্র প্রকল্পে চীন ৭৩০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে। এছাড়া সেখানে একটি শিল্প পার্ক এবং একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলারও পরিকল্পনা আছে চীনের। আর রাখাইনের মানবিক ইস্যুর চেয়ে এই বিনিয়োগকেই অনেক বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে চীন। ’
অন্যদিকে রয়টার্স জানিয়েছে, চীনের কিছু অফিসিয়াল দলিলপত্র থেকে জানা গেছে, চীনের সিআইটিআইসি কর্পোরেশন রাখাইনের গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্পের ৭০-৮০% শেয়ার চেয়েছে। এটি নির্মাণ হলে চীনের ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড (ওবিওআর) প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে। এবং চীন বঙ্গপোসাগরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে পারবে।
আর জাতিসংঘের মাধ্যমে বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলো যদি রোহিঙ্গাদের রক্ষার্থে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিতে যায় তাতেও সর্বাত্মকভাবে বাধা দিবে চীন।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অবস্থিত সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ এর দক্ষিণ এশিয়া প্রগ্রামের উপ পরিচালক মুরে হাইবার্ট বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীন স্পষ্টতই মিয়ানমার সরকারকে সমর্থন করছে। এমনকি জাতিসংঘও মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিলে চীন বাধা দিবে। আর চীন এখনো রাখাইন সহিংসতার নিন্দা করেনি। তারা বরং রোহিঙ্গাদেরকে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলার জন্য দায়ী করেছে। ’
লন্ডনের কিংস কলেজের অধ্যাপক কেরি ব্রাউন বলেন, ‘চীন হয়তো মিয়ানমার সরকারকে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এবং বড় কোনো সংকট সৃষ্টি না করতে বলবে। কিন্তু তারা কথাটি এমনভাবে বলবে যে ‘ধরি মাছ না ছুই পানি’। আর এর মধ্য দিয়ে তারা মূলত পরোক্ষভাবে মিয়ানমার সরকারকে সমর্থনই যোগাবে।