অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সদ্য সমাপ্ত টেস্ট সিরিজটা সোনালি ফ্রেমে বাঁধাই করিয়া রাখিবার মতো। টেস্টের প্রতাপশালী এই দলটির বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ ড্র করিবার বহু প্রতীক্ষিত লগ্ন এই প্রথম দেশবাসী উপভোগ করিল। আনন্দের এই মাহেন্দ্রক্ষণে দেশব্যাপী জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর...’ গানের চরণটুকু যেন বাস্তবিক পক্ষেই সার্থক হইয়া উঠিয়াছিল। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আহা কী আনন্দ আকাশে বাতাসে’ গানের কথাটিও সার্থকতা পাইয়াছিল সমভাবে। এমনকি সিরিজের প্রথম ম্যাচের জয়কে বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা জয় বলিয়া অভিহিত করিয়াছে একটি বিদেশি প্রচার মাধ্যম। তাহা ছাড়া ৫০তম ম্যাচে দুই ইনিংসে ১০টি উইকেট নিয়া পঞ্চম টেস্ট ক্রিকেটার হিসাবে বিশ্ব রেকর্ড গড়িবার কীর্তিও গড়েন দেশ ও বিশ্ব সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। উপরন্তু নিউজিল্যান্ডের স্যার রিচার্ড হ্যাডলির পাশাপাশি এক টেস্ট ম্যাচে হাফ-সেঞ্চুরি বা উহার বেশি রান এবং ১০ বা ততোধিক উইকেট নিবার তালিকায় দ্বিতীয়বারের মত নিজের নাম লিখান দেশ বরেণ্য এই ক্রিকেটার।
দ্বিতীয় টেস্টেও বাংলাদেশ একসময় জয়ের আশা জাগাইয়াছিল। কিন্তু পরাজয়ে আজ যাহারা ব্যথিত তাহাদের উদ্দেশ্যে বলিতে চাই, বিশ্ব ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়া অন্যতম অভিজাত ক্রিকেট দল। ১৪০ বত্সর ধরিয়া তাহারা টেস্ট খেলিতেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ টেস্ট খেলার স্বীকৃতি পাইয়াছে মাত্র ১৭ বত্সর আগে। এই বিবেচনায় অস্ট্রেলিয়ার সহিত বাংলাদেশের টেস্ট আভিজাত্য ও অভিজ্ঞতার কোনো তুলনাই চলে না। শারীরিক গঠন-কাঠামোর দিক হইতেও আমরা তাহাদের তুলনায় পিছিয়ে। তাহা ছাড়া নবীন দল হিসাবে বাংলাদেশের পক্ষে নিয়মিত টেস্ট খেলাও সবসময় সম্ভব হয় না। বিশেষ করিয়া অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তো টেস্ট খেলিবার অভিজ্ঞতা খুবই কম। ইতোপূর্বে ২০০৩ ও ২০০৬ সালে দেশটির বিপক্ষে আমরা মাত্র দুইটি টেস্ট সিরিজই খেলিতে পারিয়াছি। দেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত একটি টেস্টে জয়ের আশা জাগাইতে পারিলেও সব কয়টি টেস্টই মূলত জিতে নেয় এই টেস্ট ক্রিকেটের পরাশক্তিধর দলটি। তাহার পরও তিন সংস্করণের ক্রিকেটেই আমাদের দেশের প্রাপ্তির হিসাবটা কম সমৃদ্ধ নহে। উপরন্তু খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত সাফল্যগাথাও দৃষ্টিকাড়ার মতোই। বর্তমানে ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটেই সেরা অলরাউন্ডারের খেতাবটি সাকিব আল হাসানের দখলে। টেস্টে কম বয়সে সেঞ্চুরি গড়িবার কীর্তি মোহাম্মদ আশরাফুলের দখলে। অভিষেকে একই টেস্টে সেঞ্চুরি এবং হ্যাটট্রিক করিয়াছেন সোহাগ গাজী। এনামুল হক জুনিয়র সবচাইতে কম বয়সী টেস্ট ক্রিকেটার হিসাবে এক ম্যাচে নিয়াছেন ১০ উইকেট। অভিষেক টেস্টে ১০ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামিয়া সেঞ্চুরি করিবার কৃতিত্ব রহিয়াছে আবুল হাসান রাজুর।
অস্ট্রেলিয়ার ঢাকা সফরের সূচি চূড়ান্ত হইবার পর হইতেই ক্রিকেট পর্যবেক্ষকদের মধ্যে নানান জল্পনা-কল্পনা ছিল। মাঠ কেমন হইবে, পিচের চরিত্র বুঝিয়া সবাই লড়াই করিতে পারিবে কি না- এসবই ছিল আলোচনায়। সর্বোপরি আলোচনায় ছিল গেম টেম্পারমেন্টের বিষয়টি। মিরপুরের নড়বড়ে উইকেটে প্রতিটি বলই ব্যাটসম্যানের দক্ষতা আর মানসিকতার চূড়ান্ত পরীক্ষা নিয়াছে। সেই পরীক্ষায় সাফল্যের সহিত উত্তীর্ণ হইয়াছে বাংলাদেশ। ঢাকা টেস্টে অস্ট্রেলিয়াকে প্রথমবারের মতো হারাইয়া র্যাঙ্কিং রেটিং বাড়াইয়াছে বাংলাদেশ দল। রেটিং পয়েন্ট ৫ পাইয়া অষ্টম স্থানে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজ হইতে মাত্র এক রেটিং পয়েন্ট দূরে রহিয়াছে। অন্যদিকে টেস্টে চতুর্থ হইতে পঞ্চম স্থানে অবনমন ঘটিয়াছে অস্ট্রেলিয়ার। অতএব, চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় টেস্ট নিয়া আফসোসের কিছু নাই। বরং বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ধারাবাহিক উন্নতিতেই আমাদের সন্তুষ্ট থাকা প্রয়োজন।