বাংলায় একটি প্রবচন আছে—পাপী মরে দশ ঘর নিয়ে। অর্থাৎ সে যখন মারা যায় তখন তার পরিবেশ ও প্রতিবেশের অনেক কিছুকে নিয়ে মরার চেষ্টা করে। তাতে পরিবেশ ও প্রতিবেশের যে ক্ষতি হয় তার পরিমাণ নেহাত কম নয়। হিরোশিমা, নাগাসাকিসহ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে তাকালেই আমরা তা অনুধাবন করতে পারি। জেরুজালেম ইস্যুতে বিশ্বজুড়ে যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে সেখান থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা সবাই করছে। কিন্তু এর বিপরীতে শুধু মার্কিন প্রেসিডেন্ট। আর সে কারণেই বিশ্ব নেতাদের তোপের মুখে এসে দাঁড়িয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে মার্কিন স্বীকৃতির ঘটনায় জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকে তোপের মুখে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। অবস্থা এমন একপর্যায়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে, দেশটির ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স ট্রাম্প প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট তার অবস্থান থেকে সরে না এলে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে নতুন করে যুদ্ধের দামামা বেজে উঠবে। ফলে বিশ্ব রাজনীতি ও অর্থনীতিতে এর একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়ারও সম্ভাবনাও রয়েছে। আমরা কখনোই আর কোনো হিটলারের মুখোমুখি হতে চাই না
জাতিসংঘ সদর দফতরে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে বিষয়টির মীমংসায় ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যে আলোচনার ওপর গুরুত্বারোপ করে যুক্তরাজ্য। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো প্রয়োগের ক্ষমতা থাকায় এ নিয়ে ভোটাভুটির জন্য কোনো প্রস্তাব তোলা হয়নি। তবে জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের স্থায়ী প্রতিনিধি ম্যাথিউ রায়ক্রফট বলেছেন, তেলআবিব থেকে ব্রিটিশ দূতাবাসীকে জেরুজালেমে স্থানান্তরের কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই। যুক্তরাজ্য মার্কিন প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে। একইসঙ্গে ফ্রান্সের প্রতিনিধি ফ্রাঁসোয়া ডেলাত্রে বলেছেন, ট্রাম্পের ঘোষণায় প্যারিস উদ্বিগ্ন। যুক্তরাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্ত পুরো মধ্যপ্রাচ্যের জন্যই ভয়ানক পরিণতি ডেকে আনবে। অন্যদিকে জাতিসংঘের স্থায়ী কমিটির সদস্য রাশিয়াও একই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছে, ট্রাম্পের এই ঘোষণায় মস্কো মারাত্মকভাবে উদ্বিগ্ন। তারা মনে করে, এই ঘোষণা মধ্যপ্রাচ্যের সংকটকে আরো ভয়াবহ করে তুলবে। সুইডেনের দূত ওলোফ স্কুগ বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে আন্তর্জাতিক সনদ লঙ্ঘন করেছেন।
আমরা মনে করি, মার্কিন প্রেসিডেন্টের এ ঘোষণা পুরো বিশ্বকে একটি বিপজ্জনক অবস্থায় নিয়ে দাঁড় করিয়েছে। অনেকেই এই ঘোষণাকে বিশ্বশান্তির জন্য একটি বড় ধরনের হুমকি বলে মনে করছেন। তারা বলছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট তার অবস্থান থেকে সরে না এলে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে নতুন করে যুদ্ধের দামামা বেজে উঠবে। ফলে বিশ্ব রাজনীতি ও অর্থনীতিতে এর একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়ারও সম্ভাবনাও রয়েছে, যা আমাদের কারোই কাম্য নয়। আমরা কখনোই আর কোনো হিটলারের মুখোমুখি হতে চাই না। এটা শুধু আমাদেরই চাওয়া নয়, এ চাওয়া বিশ্বমানবতার।