কী কারণে এ নজরদারি? সরকারপক্ষের বক্তব্য, ‘শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এ নজরদারি’। কোথায়? সরকারি ভাষ্য, দেশে কর্মরত বেসরকারি সংস্থাগুলোকে (এনজিও) শৃঙ্খলায় আনা যাচ্ছে না। নানামুখী চাপ, যথাযথ আইন ও লোকবলের অভাবে নজরদারির বাইরে থেকে যাচ্ছে এসব সংস্থার কার্যক্রম।
কাজে সমন্বয় আনতে এখনো সব এনজিওকে একই ছাতার নিচে আনা সম্ভব হয়নি। নিবন্ধন না নিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে অনেক প্রতিষ্ঠান। আবার নিবন্ধিত এনজিওগুলোও ঠিক কী কাজ করছে—সে ব্যাপারে দেখভাল করার মতো ক্ষমতা এবং যোগ্যতাও নেই নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানগুলোর। স্বাভাবিক কারণেই প্রশ্ন এসে যায়, তাহলে কি নিয়ন্ত্রণহীনভাবেই চলছে এসব প্রতিষ্ঠান!
সম্ভবত বলার কোনো সুযোগ নেই। বাস্তবতা বলছে, নিয়ন্ত্রণহীনভাবেই চলছে এসব প্রতিষ্ঠান। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এনজিওদের মাধ্যমে এ দেশে অনুদান এসেছে ৬৭ কোটি ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা পাঁচ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা। এর ৯০ শতাংশ অর্থ কোথায়, কীভাবে ব্যয় করা হচ্ছে, তার কোনো হদিস নেই সরকারের কাছে। কিন্তু তবু চলছে।
বর্তমানে এনজিওর সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার। এর মাঝে ২৫০টি বিদেশি এবং দেশি দুই হাজার ২৪৪টি। আর বর্তমান সময়ে বিভিন্ন অভিযোগে ২৪৬টির নিবন্ধন বাতিল করেছে সরকার। অভিযোগ রয়েছে, বেশ কিছু এনজিও রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে তারা বিধিবহির্ভূত কাজ করছে
আলাদা সংস্থার কাছ থেকে নিবন্ধন নিয়ে বেশ কিছু এনজিও জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে না জানিয়ে তাদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ আবার এক জেলার নামে নিবন্ধন নিয়ে কাজ করছেন অন্য জেলায়। স্বেচ্ছাশ্রমের নামে চালানো হচ্ছে বিধিবহির্ভূত ব্যবসা। নিয়ম মেনে নবায়নও করছেন না অনেকেই। আইন অমান্য করে শত শত এনজিও ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বছরের পর বছর। আইন অমান্যকারী এসব এনজিওর বিরুদ্ধে রয়েছে গ্রাহকদের জমাকৃত অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ। নামে-বেনামে এরা বিভিন্ন সময়ে গ্রাহকদের ফাঁদে ফেলে বিশেষ কৌশলে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছে।
বর্তমানে এনজিওর সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার। এর মাঝে ২৫০টি বিদেশি এবং দেশি দুই হাজার ২৪৪টি। আর বর্তমান সময়ে বিভিন্ন অভিযোগে ২৪৬টির নিবন্ধন বাতিল করেছে সরকার। অভিযোগ রয়েছে, বেশ কিছু এনজিও রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে তারা বিধিবহির্ভূত কাজ করছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকার বাংলাদেশে এনজিওগুলোর সব ধরনের কার্যক্রমের ওপর নজরদারি বাড়াতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কঠোর নির্দেশ দিয়েছে।
আমরা মনে করি, এ দেশে বহুবার বহুজনে বহুবিধ কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন, কিন্তু বাস্তবে এ নির্দেশনা বানের জলের সঙ্গে ফি বছরই ভেসে গেছে। এবারও কি প্রতিবারের ন্যায় তথৈবচ ভঙ্গিতে হারিয়ে যাবে! আমরা আশা করব, অন্তত একবার এ নির্দেশনা কার্যকর ভূমিকায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করুক। আমরা ধন্য হব।