রাজধানী ঢাকায় ছড়িয়ে পড়েছে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে আসা জায়ান্ট মিলিবাগ। ইতোমধ্যে এখানকার অনেক ম্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ ভবন চত্বরে দেখা গেছে এদের বেপরোয়া বিচরণ। পরিস্থিতি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ব্যস্ততাকে বাড়িয়ে দিয়েছে। যেখান থেকেই অভিযোগ পাচ্ছেন সেখানেই ছুটে যাচ্ছেন ডিএই কর্মকর্তারা। জায়ান্ট মিলিবাগ একধরণের ধীর গতির পোকা। যা কাঁঠাল, আম, পেঁপে, লিচু, কলা, পেয়ারা, কুল, লেবু, বেগুণ, শসা, টমোটো, বাঁধাকপি, রেইন্ট্রি ও বাঁশসহ বিভিন্ন গাছপালার রস চুষে খায়। পোকাটি আমের জন্য ভয়ংকর। এটি মানুষকে আক্রমণ এবং স্বাস্থ্যের ক্ষতি না করলেও সংবেদনশীল মানুষের শরীরে লাগলে চুলকানি হতে পারে।
তবে দলে দলে এদের বিচরন অনেক সময় কমলমতি মানুষের ভীতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। হোমপ্টেরা বর্গের মনোফ্লেবিডি পরিবারের ড্রসিকা ম্যানজিফেরি নামের এ পোকার জীবন চক্রে ৩টি পর্যায় বিদ্যমান। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু করে জানুয়ারী মাসের ২য় সপ্তাহ পর্যন্ত ডিম ফুটে বাচ্চা বা নিম্ফ বের হয়ে গাছকে আক্রমণ করে। এরা গাছের কচি কান্ড, পাতা, ফুলের কুড়ি, ফুল ও ফল হতে রস চুষে খায় এবং বড় হতে থাকে। তারপর ০৩ বার খোলস বদলায়ে পূর্ণাঙ্গ পোকায় পরিণত হয়। পূর্ণাঙ্গ স্ত্রী পোকার পাখা নেই, শরীর সাদা পাউডার জাতীয় পদার্থে জড়ানো থাকে। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে সাদা পাউডারের পরিমাণ বাড়তে থাকে। পূরুষ পোকা লাল বর্ণের এবং এর দুই জোড়া পাখা থাকে। এপ্রিল মাসের শেষের দিকে স্ত্রী পোকা ডিম পাড়ার জন্য গাছ থেকে নেমে আসে মাটিতে এবং আবর্জনার নীচেয় মাটিতে ডিম পাড়ে। ডিম পাড়ার সময় এরা একধরণের সাদা থলি তৈরী করে। এই থলির ভিতরেই স্ত্রী পোকা ২০০ থেকে ৬০০টি ডিম পাড়ে। ডিম পাড়ার পর স্ত্রী পোকাটি মারা যায়। ডিম তাতক্ষণিকভাবে না ফুটে মাটির নীচেয় সুপ্তাবস্থায় পরবর্তী ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত থাকে। এই ডিম পীঁপড়ার মাধ্যমে এবং বর্ষার পানিতে এবং অন্য কোনোভাবে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে থাকে।
ডিএই সুত্রে জানা যায়, ২০১১ সাল থেকে এই পোকা বিমান বাহিনী ঘাটিসহ ঢাকার মহানগরের বহু প্রতিষ্ঠান ও বাড়িতে এই জায়ান্ট মিলিবাগ দমন করা হয়েছে। বিদেশের বনে জঙ্গলে, পাহাড়ে পর্বতে চলাচলে ব্যবহৃত মটর যানের মাধ্যমে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে পোকাটি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় এসেছে বলে ধারণা করা হয়। ঢাকা এবং ঢাকার আশপাশ ছাড়া এ পোকা এখনো দেশের অন্য কোথাও দেখা যায়নি। এ বছর শের ই বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ফার্মগেট, আসাদ গেটের আশপাশ, আগারগাঁও, জাতীয় সংসদের আশপাশ এবং কলেজ রোডের আশপাশের ভবন চত্বরের বাগানের বহু গাছে এই পোকার দেখা মিলেছে। পোকার বিচরণের সত্যতা স্বীকার করে বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের উপ প্রকল্প পরিচালক কৃষিবিদ মো. নূরুল ইসলাম বলেন, ডাইমোথোয়েড, ক্লোরোপইরিফস, ইমিডাক্লোপ্রিড ও সাবান পানি একসঙ্গে মিশিয়ে পরপর ২বা ৭দিন পরপর স্প্রে করলে এ পোকা দমন করা যায়। তবে সমন্বিতভাবে ঢাকার সব এলাকায় এক সঙ্গে ম্প্রে করা ছাড়া এপোকা সমূলে দমন হবেনা।