চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে কৃষি ও পল্লী ঋণের খেলাপির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ১১২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। যা গেলো অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৪ হাজার ৫২৯ কোটি ৭২ লাখ টাকা। সে হিসেবে এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৫৮২ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষি ঋণ ও আর্থিক সেবাভুক্তি বিভাগের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য ওঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কৃষি খাতের ঋণ খেলাপির সিংহভাগই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর। এসব ব্যাংকের ঋণ খেলাপির পরিমাণ ৪ হাজার ৯৪০ কোটি ১২ লাখ টাকা। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। বিশেষায়িত এই ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২ হাজার ৩০৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা। এরপরই রয়েছে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড। এ ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৩৩০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৮৩৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। প্রতিবেদনে বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রথম তিন মাসে দেশের ব্যাংকগুলো মোট ৪ হাজার ২৩৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা কৃষি ঋণ বিতরণ করেছে; যা লক্ষ্যমাত্রার ২০ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এরমধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো কৃষি ঋণ বিতরণ করেছে প্রায় ১ হাজারা ৪৭৫ কোটি টাকা। বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে ২ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা। চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে কৃষি খাতে ব্যাংকগুলোর ২০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এ লক্ষ্যমাত্রা আগের অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১৬ দশমিক ২৪ শতাংশ বেশি। গেলো অর্থবছর কৃষি খাতে ১৭ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বিতরণ হয় ২০ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকা। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা আরটিভি অনলাইনকে বলেন, দেশে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বেসরকারি অনেক ব্যাংক এখন কৃষি ঋণ বিতরণে মনোযোগ দিয়েছে। এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোও লক্ষ্যমাত্রার আলোকে ঋণ বিতরণ করছে। ফলে আগের চেয়ে কৃষি ঋণ বিতরণের হার অনেক বেড়েছে। এ ঋণ বিতরণে দুই একটা অনিয়ম হলেও এই ঋণের গুণগত মান আগের চেয়ে বেড়েছে বলে মনে করেন তারা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ আরটিভি অনলাইনকে বলেন, ছোট ছোট ঋণের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো অনেক সময় নিয়ম রক্ষার জন্য মামলা করে দেয়, যা বাড়তে বাড়তে লাখ ছাড়িয়েছে। এদিকে সোমবার বেসরকারি বাণিজ্যিক ও বিদেশী ব্যাংকসমূহের কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে নতুন নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নির্দেশনায় বলা হয়, আগামী অর্থবছর থেকে মোট ঋণের কমপক্ষে আড়াই শতাংশ কৃষি খাতে বিতরণ করতে হবে। যা আগে ছিল ২ শতাংশ। নির্দেশনায় আরো বলা হয়, ব্যাংকগুলো প্রত্যেক অর্থবছরে কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণের একটি যুক্তিসঙ্গত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করবে। এ লক্ষ্যমাত্রা পূর্ববর্তী অর্থবছরের ৩১ মার্চের অবস্থাভিত্তিক নিট ঋণ ও অগ্রিমের ২ দশমিক ৫০ শতাংশের চেয়ে কম হবে না। চলতি অর্থবছরে ব্যাংকভিত্তিক নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অপরিবর্তিত থাকবে। তবে যেসব ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম হবে না, তাদের অর্থবছর শেষে লক্ষ্যমাত্রার অনর্জিত অংশ বাংলাদেশ ব্যাংকে বাধ্যতামূলকভাবে জমা করতে হবে। ব্যাংক ওই জমার ওপর কোনো সুদ পাবে না।