ফল চাষে অভূতপূর্ব সাফল্য দেখাচ্ছে বাংলাদেশ। সুমিষ্ট ফল উৎপাদনের পরিমাণ প্রতি বছরই বেড়ে চলেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের (ডিএই) তত্ত্বাবধানে দেশি-বিদেশি ফল উৎপাদনে কৃষকরা দিন দিন উৎসাহিত হচ্ছেন। মোট ফল উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে ২৮তম স্থান অধিকার করেছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) কৃষি পরিসংখ্যান বর্ষগ্রন্থ ২০১৫ অনুযায়ী, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় তিন লাখ ৯১ হাজার মেট্রিক টন ফল উৎপাদন বেশি হয়েছে। বার্ষিক উৎপাদন বৃদ্ধির হার ৭.৭ ভাগ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের আওতায় সারা দেশে ৭৩টি হর্টিকালচার সেন্টার থেকে প্রতি বছর মানসম্পন্ন চারা ও কলম উৎপাদন করে কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হয়। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৭৩টি হর্টিকালচার সেন্টার থেকে ১৭ লাখ ৫২ হাজার ফলের চারা এবং ছয় লাখ ৬৩ হাজার কলম উৎপাদন করা হয়েছে।
বিবিএস কর্তৃক সর্বশেষ প্রকাশিত কৃষি পরিসংখ্যান বর্ষগ্রন্থ ২০১৫ অনুযায়ী, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে তিন দশমিক ২৩ লাখ একর জমিতে মোট ফল উৎপাদিত হয়েছে ৪৬.৯৭ লাখ মেট্রিক টন। অন্যদিকে ২০১২-১৩ অর্থবছরে ফল উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৪৩.৬ লাখ মেট্রিক টন। এ তথ্য অনুযায়ী ফলের বার্ষিক উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে ৭.৭ ভাগ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র উষ্ণ ও অবউষ্ণ মণ্ডলীয় ফলের ওপর নিবিড় গবেষণা কার্যক্রমের মাধ্যমে অদ্যাবধি ৩২টি বিভিন্ন ফলের ৭৬টি উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছে এবং ৭১টি টেকসই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। বারির উদ্ভাবিত মাল্টা, আম, পেয়ারা, কুল, লিচু, কলা, পেঁপে, স্টবেরি, ড্রাগন ফল ইত্যাদি দেশের দক্ষিণাঞ্চলসহ সারাদেশে সম্প্রসারণ করা হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হর্টিকালচার অফিস সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে প্রায় ১৩০ রকমের ফল পাওয়া যায়। এর মধ্যে প্রচলিত ও অপ্রচলিত প্রায় ৭০টি ফলের চাষাবাদ হয়। বর্তমানে দেশে যে পরিমাণ ফল উৎপাদন হচ্ছে তা চাহিদার তুলনায় অর্ধেক। এ কারণে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো ফল উৎপাদনে কৃষকদের আগ্রহী করে তুলছে।
অধিদফতর সূত্র জানায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বিদেশে পাঁচ হাজার ৭৯৭ মেট্রিক টন ফল রফতানি হয়েছে। এটি রফতানির আরও সুযোগ রয়েছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রাণ, আকিজ, স্কয়ার, এসিআই’সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্যাকেটজাত ফল বিদেশে রফতানি করছে। ‘হরটেক্স ফাইন্ডেশন’ ফলের উন্নত প্যাকেজিংয়ের লক্ষ্যে সরকারের সহায়তায় কাজ করে যাচ্ছে। দেশের চেইনশপগুলোও দেশীয় ফল বিপণনে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও বারটান (বাংলাদেশ ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট) এর নির্বাহী পরিচালক মো. মোশাররফ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, সরকারের বহুমুখী উদ্যোগ, কৃষিবিদ, বিজ্ঞানী ও কৃষকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলে ফল চাষ প্রতিদিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তিনি বলেন, আম উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে সপ্তম এবং পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম স্থানে উঠে এসেছে। আর মোট ফল উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বের ২৮তম স্থানে রয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কৃষক ফল উৎপাদন করে যাতে ন্যায্য মূল্য পায় সেদিকে সবাই সজাগ থাকলে ভবিষ্যতে এ দেশ থেকে লাখ লাখ টন ফল বিদেশে রফতানি করা সম্ভব হবে।