বাংলাদেশে এই প্রথম সরকারিভাবে তিনটি কাঁকড়া হ্যাচারি নির্মাণ করা হচ্ছে। কাঁকড়া চাষ সম্প্রসারণ ও গবেষণার জন্য প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে হ্যাচারি তিনটি নির্মাণ করছে মৎস্য অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট(বিএফআরআই)। এর মধ্যে মৎস্য অধিপ্তর একটি এবং বিএফআরআই ছোট আকারের দু’টি হ্যাচারি নির্মাণ করছে। নির্মাণ শেষে হ্যাচারি তিনটি কার্যক্রম শুরু করলে বাংলাদেশের কাঁকড়া চাষ সম্প্রসারণ ও গবেষণা কাজের প্রতিবন্ধকতা অনেকটাই কেটে যাবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
মৎস্য অধিদপ্তরের বাংলাদেশের নির্বাচিত এলাকায় কুচিয়া ও কাঁকড়া চাষ এবং গবেষণা প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. বিনয় কুমার চক্রবর্তী বলেন, বাংলাদেশে এই প্রথম সরকারিভাবে এধরনের হ্যাচারি নির্মাণ করা হচ্ছে। বাংলাদেশের নির্বাচিত এলাকায় কুচিয়া ও কাঁকড়া চাষ এবং গবেষণা প্রকল্পের আওতায় এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। বাংলাদেশে এর আগে সরকারিভাবে এধরনের কোনো হ্যাচারি ছিলনা। আগামী ডিসেম্বর বা জানুয়ারি মাসে হ্যাচারিটির নির্মাণ কাজ শুরু হবে। হ্যাচারিটির উৎপাদন শুরু হলে দেশের কাঁকড়া চাষিদের চাহিদার ৩০ ভাগ মেটানো যাবে বলে ধরণা করা হচ্ছে। এব্যাপারে গবেষণা কর্মকর্তা সমীর সরকার বলেন, কক্সবাজারের কলাপুলিতে তিন কোটি টাকার এই হ্যাচারিটি নির্মাণ করা হচ্ছে। ফিলিপাইন থেকে বিশেষজ্ঞ আসার পর এমাসেই হ্যাচারিটির টেন্ডার হতে পারে। কাঁকড়া নিয়ে তিন বছর আগে সরকারিভাবে তেমন কাজ ছিলনা। বেসরকারিভাবে সাতক্ষীরার শ্যামনগরে ছোট আকারের একটি কাঁকড়া হ্যাচারি গড়ে উঠেছে।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট এর কাঁকড়া কুচিয়া প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. ডুরিন আখতার জাহান বলেন, এই প্রকল্পের আওতায় দুই কোটি পঁচিশ লাখ টাকা খরচে করে খুলনার পাইকগাছার লোনাপানি কেন্দ্রে এবং কক্সবাজারের সামুদ্রিক মৎস্য প্রযুক্তি কেন্দ্রে দু’টি কাঁকড়া হ্যাচারি নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ২৫৬ বর্গমিটারের(প্রতিটি) হ্যাচারি দু’টির নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। আগামী কাঁকড়া চাষ মৌসুম অর্থাৎ ২০১৮ সালের মার্চ মাস থেকে হ্যাচারি দু’টি কার্যক্রম শুরু করতে পারবে বলে আশা করা যায়। এই হ্যাচারিগুলোতে গবেষণার মাধ্যমে কাঁকড়া পোনা উৎপাদনের প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হবে।
বিদেশে রপ্তানী চাহিদার প্রায় ১০০% ভাগ এবং দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদার শত ভাগই প্রকৃতি থেকে আহরণ করা কাঁকড়ার ওপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশের উপকুলীয় অঞ্চল খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ভোলা, পটুয়াখালি, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, সন্দীপ, সুন্দরবন এবং চকোরিয়াসহ বিভিন্ন অঞ্চলে শীলা কাঁকড়া পাওয়া যায়। পূর্ব এশিয়ার চীন, তাইওয়ান, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, জাপান, হংকং এবং আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রকৃতি থেকে আহরিত শিলা কাঁকড়া রপ্তানী হচ্ছে। ২০১৩-২০১৪ সালে বাংলাদেশ কাঁকড়া রপ্তানী করে ২ কোটি ২৯ লাখ ডলার আয় করে। বর্তমানে আড়াই থেকে তিন লাখ লোক কাঁকড়া আহরণ ও বিপননের মাধ্যমেই জীবিকা নির্বাহ করে। এতে আহরণের পরিমাণ উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় প্রকৃতিতে কাঁকড়ার মজুদ হুমকির মুখে পড়ে। কাঁকড়া গভীর সমুদ্রে ডিম পেড়ে উপকুলের বালিতে বিচরণ এবং বসবাস করে। তাই সহজেই এরা শিকারিদের হাতে ধরা পড়ে।