পরিবেশ বিপর্যয় ও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, খরা, সুনামি ও ভূমিকম্পসহ নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রতিবছর বাংলাদেশের অন্তত ১২ লাখ মানুষ গৃহহারা হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এছাড়া বিশ্বের প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ গৃহহারা হচ্ছে। জাতিসংঘের এক রিপোর্টে এ তথ্য জানানো হয়।
‘আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস’ উপলক্ষে গত শুক্রবার এই জরিপের তথ্য প্রকাশ করা হয়। জাতিসংঘের দুর্যোগ ঝুঁকি প্রশমন দফতর (ইউএনআইএসডিআর) এবং নরওয়ের শরণার্থী কাউন্সিলের অভ্যন্তরীণ গৃহহারাদের পুনর্বাসন সম্পর্কিত মনিটরিং সেন্টার যৌথভাবে এ জরিপ পরিচালনা করে।
এতে বলা হয়, বন্যা, সাইক্লোন, হারিকেন, খরা, সুনামি ও ভূমিকম্পসহ নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ গৃহহারা হচ্ছে। এ ধরনের দুর্যোগ রোধে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে না পারলে টেকসই উন্নয়ন দূরের কথা, প্রাত্যহিক কর্মকান্ড পরিচালনা করাই কঠিন হয়ে পড়বে।
জাতিসংঘ মহাসচিবের দুর্যোগ হ্রাসসংক্রান্ত বিশেষ প্রতিনিধি রবার্ট গ্ল্যাসার বলেন, গৃহহারাদের সংখ্যা হ্রাসে প্রয়োজনীয় কর্ম-কৌশল নিতে হবে। দুর্যোগের ঝুঁকিগুলো কমানোর পথে আমাদের মনোযোগী হতে হবে।
পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখতে সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রাণহানির পাশাপাশি বসতবাড়ি নিশ্চিহ্ন হয়ে পড়ার ঘটনাও কম বেদনাদায়ক নয়। নতুন করে বসতি গড়া অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয় নয়। এ ধরনের পরিস্থিতির অবসানে জাতিসংঘের সংস্থাগুলোকে সরব থাকতে হবে বলে মন্তব্য করেন গ্ল্যাসার।
জরিপের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৭ সালে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মানুষ গৃহহারা হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াও মানবসৃষ্ট দাঙ্গা-হাঙ্গামার ঘটনাও ঘটছে। এ জন্য অসংখ্য মানুষ বসতবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে সীমানা পাড়ি দিতে বাধ্য হচ্ছে।
২০৪টি দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে প্রতি ১০টি দেশের ৮টিতেই বিপুল জনগোষ্ঠীর গৃহহারা হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতেও বাস্তুহারা মানুষের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়বে বলে গবেষণা জরিপে বলা হয়।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, ভারতে প্রায় ২৩ লাখ মানুষ বাস্তুহারা হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। চীনে এই সংখ্যা ১৩ লাখ, বাংলাদেশে ১২ লাখ, ভিয়েতনামে ১০ লাখ, ফিলিপাইনে ৭ লাখ ২০ হাজার, মিয়ানমারে ৫ লাখ ৭০ হাজার, পাকিস্তানে ৪ লাখ ৬০ হাজার, ইন্দোনেশিয়ায় ৩ লাখ ৮০ হাজার, রাশিয়ায় ২ লাখ ৫০ হাজার এবং যুক্তরাষ্ট্রে ২ লাখ ৩০ হাজার মানুষ উদ্বাস্তু হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
জরিপের প্রতিবেদনে প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগের ফলে কী ধরনের আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে, সেই চিত্রও তুলে ধরা হয়। এমন পরিস্থিতিতে হারিকেন, সাইক্লোন, জলোচ্ছ্বাস ও বন্যার কবল থেকে বাড়িঘর রক্ষা করা যায় এমন প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটাতে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ।