জন্ম থেকেই দুই হাত ও এক পা না নিয়ে পৃথিবীতে আসে তামান্না আক্তার।আশেপাশের মানুষের অবহেলা ও অসহযোগিতার পরেও দমে যায়নি সে। সব বাধা অতিক্রম করে এখন তামান্না প্রাথমিক ও নিম্ন মাধ্যমিকে সর্বোচ্চ গ্রেডে পাশ করে দশম শ্রেণিতে পড়ছে। যশোরের ঝিকরগাছার রওশন আলীর মেয়ে তামান্না। তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, জন্মের পর থেকে মেয়ের প্রতি চারপাশের মানুষ যে অবহেলা, যে অনীহা আর কুসংস্কারমূলক কথাবার্তা বলেছে, তা আমাকে ভীষণ কষ্ট দিয়েছে। কিন্তু সেই অনীহাই আমাকে উৎসাহিত করেছে তাকে নিয়ে কিছু করার ব্যপারে।
তিনি বলেন, আমার ইচ্ছা ছিল এই মেয়েকে নিয়ে আমি এমন কিছু করে দেখাব যেন সবাইকে বলতে পারি, দেখো আমার মেয়ে প্রতিবন্ধী নয়। তামান্নার বাবা বলেন, চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে সে বেছে নিয়েছে বিজ্ঞান বিভাগ। পা দিয়ে লেখার পাশাপাশি সুন্দর ছবি আকার জন্য অনেকবার প্রশংসিত হয়েছে। তিনি বলেন, আমার মেয়ের জন্য আমি শিক্ষিত হয়েও, কোন চাকরি করিনি। ছোট্ট মেয়েটাকে নিয়ে আমার মনে চ্যালেঞ্জ জাগলো যে ওকে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। প্রথম যখন ওর পায়ের আঙুলের ফাকে চক দেই, ও বলছিল, আব্বু একটু যেন ব্যথা করে। এরপর আমি কলমের মত করে পাটখড়ি দিতাম পায়ের আঙুলের ফাকে। একটা সময় যখন সেটা ওর অভ্যাস হলো, তখন আস্তে আস্তে কলম দিতে শুরু করলাম। কিছুদিন পর সে বর্ণমালা লেখা শিখে ফেললো। কিন্তু স্কুলে ভর্তি করাতে নিয়ে যাবার পর সবাই বললো, একে আনছেন কেনো? এ কি পারবে নাকি? এরকম কথা আমাকে ভীষণ আহত করেছিলো। আমার মনে হয়েছিলো, এই মেয়েকে নিয়ে আমাকে এগিয়ে যেতেই হবে। রওশন আলী বলেন, স্কুলে ভর্তি হবার পর তামান্না প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে প্রথম হয়ে উত্তির্ণ হয়। সেটা যেন ওর উৎসাহ আরো বাড়িয়ে দেয়। তিনি বলেন, ২০১২ সালে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষাতেও জিপিএ-৫ পেয়েছে তামান্না। আর ২০১৬ তে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায়ও তামান্না জিপিএ-৫ পেয়েছে।