স্মার্টজাতীয় পরিচয়পত্র কিংবা ভোটারজাতীয় পরিচয়পত্র ‘এনআইডি’ সারা দেশে আনা-নেয়ার ক্ষেত্রে বহনকারী হিসেবে কাজ করবে ডাক বিভাগ। ঝিমিয়ে পড়া পুরোনো ব্যবস্থাটি এই প্রক্রিয়াতে গতি ফিরে আসবে-এমনটাই আশা করছেন নীতিনির্ধারকরা।
বাঙালির বিজয়ের মাস ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এ সংক্রান্ত চুক্তির প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে পারে। চুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন এনআইডির ডিজি অথবা তার প্রতিনিধি এবং একইভাবে পোস্ট অফিসের ডিজি ও তার মনোনীত প্রতিনিধি। কার্ডপ্রতি সর্বোচ্চ খরচ হবে ৩০ টাকা। পাশাপাশি প্রতিবছর ১৮ বয়সী নাগরিকদের ছবি তুলে ভোটার করতে হয় নির্বাচন কমিশনকে (ইসি)। একই সঙ্গে নতুন ভোটারদের পরিচয়পত্র পৌঁছানো, পরিচয়পত্রের ভুল সংশোধন, হারানো কার্ড উত্তোলন এবং মৃত ব্যক্তিদের নাম কর্তন নানা কর্মযজ্ঞে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতিনিয়ত ব্যস্ত থাকতে হয়।
এমনকি জাতীয় সংসদ নির্বাচন, স্থানীয় সরকারের জেলা পরিষদ, সিটি করপোরেশন, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন এবং এগুলোর শূন্য হওয়া আসনে উপনির্বাচনও বছরজুড়ে অনুষ্ঠিত হয়। বিশাল এই কর্মযজ্ঞ সম্পন্নে রীতিমতো গলদঘর্ম নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এনআইডিসহ এসব কাজের জন্য প্রতিনিয়ত ঢাকায় আসতে হয় কমিশনের মাঠ কর্মকর্তাদের। এতে একদিকে যেমন কর্মঘণ্টা ও শ্রমের অপচয় হচ্ছে। অপরদিকে মোটা অংকের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, নতুন-পুরোনো কিংবা সংশোধিত জাতীয় পরিচয়পত্র কমিশনের সব কর্মকাণ্ডে রাষ্ট্রীয় সংস্থা যুক্ত হলে জটিলতা অনেকাংশে কমে আসবে। কারণ আগামীতে এনআইডির সব কার্যক্রম পরিচালিত হবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে।
জানতে চাইলে এনআইডির ডিজি ব্রি. জে. মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র বহনে ডাক বিভাগকে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। আধুনিক অনেক পার্সেল সার্ভিস থাকার পরও এই মাধ্যমকে বেছে নেওয়ার পেছনে একটাই উদ্দেশ্য-রাষ্ট্রীয় স্বার্থ। কারণ এনআইডির কার্যক্রম চলমান। প্রযুক্তির ভিড়ে হারিয়ে যাওয়া প্রাচীন এই মাধ্যমটি পরিচয়পত্র আদান-প্রদানের মধ্য দিয়ে তাদের কাজে গতিশীলতা তৈরি করবে। এতে সরকারের রাজস্ব আয়ও বাড়বে। আশা করছি অচিরেই এ সংক্রান্ত চুক্তির কার্যক্রম দৃশ্যমান হবে।
জাতীয় পরিচয়পত্রে কর্মরতরা জানান, এনআইডি তথ্যভান্ডারে বর্তমানে ভোটার সংখ্যা ১০ কোটি ১৭ লাখ। চলতি বছর হালনাগাদ শেষে আরো কয়েক লাখ নতুন ভোটার এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। এটি চলমান প্রক্রিয়া। শুধু ভোটার হওয়ার পরই এর কার্যক্রম শেষ হয় না। কারণ প্রতিনিয়ত হারাচ্ছে পরিচয়পত্র। আবার অনেকের পরিচয়পত্রে ভুল থাকায় তা সংশোধন করতে হয়। প্রতিবছরই যাদের বয়স ১৮ বছর হয় তাদের তালিকাভুক্ত করতে হয় ইসিকে; যা বিস্তৃত দেশজুড়ে।
বর্তমানে হারানো কার্ড উত্তোলন, ভুল সংশোধন ও নতুন নাগরিকের ভোটার হওয়া সব কার্যক্রম সম্পন্ন হচ্ছে নিজ নিজ উপজেলাতে। এসব হারানো, সংশোধিত এবং নতুন ভোটারের কার্ড কেন্দ্রীয় সার্ভার ঢাকা জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগ থেকে উত্তোলন করতে হয়। ফলে একটি কার্ডের পুরো প্রক্রিয়া শেষ হতে দু’দফায় ঢাকায় আসতে হয় নির্বাচন কমিশনের মাঠ কর্মকর্তাদের। আগামীতে ডাক বিভাগের সঙ্গে সমঝোতা হলে এ পর্যায়ের দুর্ভোগ কমে আসবে।
এ কাজটি সম্পন্ন করতে প্রতিটি কার্ডের পেছনে এনআইডির ব্যয় হবে সর্বোচ্চ ৩০ টাকা। এর মধ্যে পোস্ট অফিসের নিট ফি ১৯ টাকার মধ্যে রেজিস্ট্রেশন ফি ৪ টাকা ও নিশ্চিতকরণ ফি ১৫ টাকা। এ ছাড়া প্রথম প্রতি ৪০০ গ্রামের জন্য ১০ টাকা এবং পরবর্তী প্রতি ৪০-২০০ গ্রাম পর্যন্ত ফি ২ টাকা। অর্থাৎ একটি কার্ডের পেছনে ব্যয় হবে ৩০ টাকা। কারণ ৪০০ গ্রামের একটি কার্ডের বান্ডিলে ন্যূনতম ২৫-৩০টির মতো কার্ড থাকবে।