রাণীনগরে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেজুর গাছের রস সংগ্রহে ব্যস্ত গাছিরা
22, November, 2017, 4:30:52:PM
বৈচিত্র্যপূর্ণ ছয় ঋতুর দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ। এক একটি ঋতুর রয়েছে এক এক রকমের বৈশিষ্ট্য। তেমনি এক ঋতু হেমন্ত। এই ঋতুতেই দেখা মিলে শীতের। এই শীতের সময়ই শুধু পাওয়া যায় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী সুস্বাদু পানীয় খেজুর গাছের রস। শীতের সকালে মিষ্টি রোদে বসে মিষ্টি সুস্বাদু এই খেজুর গাছের রস খাওয়ার মজাই আলাদা।
আর এই শীত মৌসুমের শুরুতেই নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় খেজুর গাছের রস সংগ্রহ কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা। এখন তাদের দম ফেলার ফুরসত নেই। শীত মৌসুমের প্রতিদিন সকালে গাছিদের খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রক করতে দেখা যায়। বর্তমানে এই পেশার ওপর অনেক মানুষ নির্ভরশীল। তবে পূর্বের তুলনায় বর্তমানে খেজুর গাছের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়ায় এই খেজুর গাছের রসের ঐতিহ্য দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে।
জানা গেছে, এক সময় এলাকায় প্রচুর খেজুর গাছ ছিল। এখন খেজুর গাছের সংখ্যা অনেকটাই কমে গেছে। খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতে হলে প্রথমে খেজুর গাছের মাথার অংশকে ভালো করে পরিস্কার করার কাজ করতে হয়।
এরপর পরিস্কার করা সেই সাদা অংশ থেকে বিশেষ কায়দায় ছোট-বড় কলসি (মাটির পাত্র) দিয়ে রস সংগ্রহ করা হয়। ছোট বড় বিভিন্ন রকমের খেজুর গাছে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়েই গাছিদের কোমরে মোটা রশি বেঁধে গাছে ঝুলে খেজুর গাছের রস সংগ্রহের কাজ করতে হয়।
গাছিরা প্রতিদিন বিকেলে খেজুর গাছের সাদা অংশ পরিস্কার করে ছোট-বড় কলসি (মাটির পাত্র) বাঁধে রসের জন্য। আবার সকাল অনুমান ৬ থেকে ৭টার মধ্যে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে নিয়ে যায় তাদের নির্দিষ্ট স্থানে। কেউ কেউ এই রস এলাকার বিভিন্ন স্থানে ও হাটে-বাজারে (কাঁচা রস) খাওয়ার জন্য বিক্রয় করে আবার কেউ কেউ সকালেই এই রস দিয়ে বিভিন্ন রকমের পাটালি ও লালি গুড় তৈরি করার কাজ শুরু করেন ।
গ্রামের অনেকে মানুষ শীতের সকালে সুস্বাদু এই খেজুর রস ও খেজুর রসের তৈরি গুড় নেওয়ার জন্য অপেক্ষায় থাকে । এই খেজুর রসের তৈরি বিভিন্ন রকমের পাটালি ও লালি গুড় নিজ উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে চালান হচ্ছে জেলা শহরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। যা দিয়ে তৈরি হয় মুখোরোচক খাবার পায়েস ও হরেক রকমের লোভনীয় পিঠা। এটা বাঙালীর হাজার বছরের সংস্কৃতির একটি অংশ। তাই শীত মৌসুমের শুরুতেই খেজুর গাছের রস সংগ্রহ করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন এলাকার গাছিরা।
উপজেলার রাজাপুর গ্রামের রেজাউল ইসলাম, খট্টেশ্বর গ্রামের কালু হোসেন, কাটরাশইন গ্রামের মোতাহার হোসেনসহ আরো অনেক গাছিরা জানান, শীত মৌসুমের শুরুতেই আমরা খেজুর গাছের রস সংগ্রহের কাজ করে থাকি। বছরের এই ৫ মাস আমরা খেজুর গাছের রস সংগ্রহ করে থাকি। এই রস থেকে বিভিন্ন রকমের পাটালি ও লালি গুড় তৈরি করে বাজারে বিক্রি করে আমরা জীবিকা নির্বাহ করে থাকি।
তারা আরো জানান বর্তমানে যে হারে খেজুর গাছ হারিয়ে যেতে বসেছে এক সময় আমাদের এলাকা থেকে খেজুর গাছ হারিয়ে যাবে। এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে চাইলে আমাদের সবার উচিত তালগাছের মতো বেশি করে খেজুর গাছ লাগানো এবং তা যত্ম সহকারে বড় করা। যদি আমরা আমাদের এই হাজার বছরের ঐতিহ্যকে আগামী প্রজন্মের জন্য ধরে রাখতে চাই তাহলে এই কাজে আমাদের সবার এগিয়ে আসা উচিত।