মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার পুকুরিয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে নাম ঠিকানাবিহীন একজন মানসিক ভারসাম্যহীন মেয়েকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরানোর দায়িত্ব নিয়েছেন শামীম আহমেদ নামে এক ব্যাংক কর্মকর্তা। শনিবার সকাল ১০টায় ওই ব্যক্তি তার কয়েকজন বন্ধু, স্থানীয় সংবাদকর্মী, এলাকাবাসী ও পুলিশের উপস্থিতিতে ঢাকা থেকে নিয়ে আসা একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে মেয়েটিকে ঢাকার মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে নিয়ে যান। সেখানেই চিকিৎসা দেয়া হবে ওই মেয়েটিকে। এর আগে শহরের পুকুরিয়া বাসস্ট্যান্ডে ছোট্ট যাত্রী ছাউনির নিচে মেয়েটি প্রায় দুই বছর ধরে অবস্থান করছিলো। স্থানীয়দের দেয়া খাবার খেয়ে, জরাজীর্ণ পোশাকে খুবই মানবেতর দিন কাটতো তার। পাগল বলে কেউ তার কাছে ভিড়তো না। লোকমুখে এ খবর শুনে মেয়েটিকে বাঁচানোর উদ্যোগ নেন শামীম আহমেদ। এর আগেও তিনি বেশ কয়েকবার এসে মেয়েটিকে খাবার দেয়াসহ খোঁজখবর নেন। তাকে মানসিক চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করার আগ্রহের কথা জানিয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করেন।এবার শামীম আহমেদের এই মহৎকাজের সঙ্গী হয়েছেন তার সহকর্মী আলী সাব্বির, ফেসবুক বন্ধু ডা. শামীম হোসেন, পুলিশের এএসআই সাজিদুর রহমান ও আব্দুল মালেকসহ কয়েজন। এর আগেও বান্দরবানের থানচি এলাকায় বেড়াতে গিয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন এক মেয়েকে দেখে শামীম আহমেদের মানবিকতা জেগে ওঠে। সেখানে স্থানীয়দের সঙ্গে তার ব্যাপারে কথাও বলে আসেন। এরপর ঢাকায় এসে তার জন্য টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। এরপর সিন্ধান্ত নেন ওই মেয়েটিকে তিনি সুস্থ করে তুলবেন। স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকায় জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে তার দেখাশোনার জন্য একজন নারীকে নিয়োগ দেয়া হয়। কয়েক মাসের চিকিৎসায় সু্স্থ হয়ে ওঠে মেয়েটি। এরপর শামীম তার নাম দেন অন্তর।এরপর শুরু হয় অন্তরের (শিউলী রাণী সরকার) স্বজনদের খোঁজার পালা। ফেসবুকসহ স্থানীয়ভাবে প্রচারণা চালিয়ে অন্তরের ঠিকানা উদ্ধার করা হয়। পরে জানা যায় মেয়েটির নাম শিউলী রাণী সরকার। তার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার দাউরিয়া গ্রামে। সে ওই গ্রামের সর্তীথ সরকারের মেয়ে। অন্তর গত ৫ বছর আগে নিখোঁজ হয়েছিল। এরপর শামীম আহমেদ তাকে সুস্থ করে তুলেন এবং তার গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে দেন। তবে এখনো তিনি নিয়মিত তার ওষুধপত্র পাঠাচ্ছেন। মানসিক ভারসাম্যহীন অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর এই নেশা যেন পেয়ে বসেছে শামীম আহমেদকে। একই রকম ঘটনা ঘটেছে গত বছরও। ঢাকার পুরানা পল্টন থেকে একইভাবে তিনি উদ্ধার করে চিকিৎসা করান আরো একজনকে। প্রথম অবস্থায় তার নাম জানা না থাকায় নাম দেয়া হয়েছিলো আদুরী। তিন মাসের চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে ওঠে আদুরী।একইভাবে প্রচারণা চালিয়ে খুঁজে বের করা হয় তার স্বজনদের। পরে জানা যায় আদুরীর আসল নাম জবা। সে নোয়াখালীর মাইজদী উপজেলার লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামের রিকশাচালক আলাল উদ্দিনের মেয়ে। নিখোঁজের ৫ বছর পর শামীম আহমেদের মানবিকতায় জবাকে খুঁজে পায় পরিবারটি। পরিচয়হীন এসব মানুষের ব্যাপারে বলতে গিয়ে শামীম আহমেদ জাগো নিউজকে জানান, মানসিক ভারসাম্যহীন যে সকল নারী-পুরুষ রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় তারা কারো না কারো স্বজন। কিন্তু পাগল বলে তাদেরকে দূরে রাখা হয়। অথচ তাদেরকে আদর-ভালোবাসা দিয়ে সঠিক চিকিৎসা করালে সুস্থ করা সম্ভব। অথচ তাদের নিয়ে সরকারসহ দেশের কোনো সংগঠন কাজ করে না। জানা যায়, নিজের বেতনের টাকার কিছু অংশ বাঁচিয়ে এই কাজ করছেন শামীম আহমেদ। তিনি বলেন, সমাজ যাদের অবহেলা-অবজ্ঞা করছে তাদের মুখে হাসি ফোটানোর যে কি আনন্দ তা ভাষায় বোঝানো যাবে না। তিনি আশা করেন তাকে দেখে সমাজের অন্যরাও যেন মানসিক ভারসাম্যহীনদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন এবং তাদের পাশে দাঁড়ান। শামীম আহমেদের স্বপ্ন ভবিষ্যতে একটি মানসিক হাসপাতাল গড়ে তোলার। যেখানে নাম-পরিচয়হীন মানসিক রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসহ পূণর্বাসন করা হবে।