অবশ্যই তোমাদের জন্য রয়েছে নবিজির জীবনে সর্বোত্তম আদর্শ। সত্যিই নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন সর্বকালের সর্বযুগের বিশ্বমানবতার জন্য অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় উত্তম চারিত্রিক আদর্শের অনন্য নমুনা। এ সম্পর্কে কোরআন সুন্নাহর বর্ণনা শেষ করা যাবে না, যেভাবে আল্লাহর পরিচয়, দয়া ও অনুগ্রহ লিখে শেষ করা যায় না। কেমন ছিল নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুমহান চরিত্র? নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উজ্জ্বল চরিত্র আমাদের জন্য অনুসরণ এবং অনুকরণ করা আবশ্যক। কেননা নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি আমার কাছে সবচেয়ে বেশি অপছন্দনীয় এবং আখেরাতে আমার কাছ থেকে সবচেয়ে দূরে অবস্থান করবে, যে অসচ্চরিত্র। (মুসনাদে আহমাদ), নবিজির সুমহান চারিত্রিক মর্যাদা এতো বেশি ছিল যে, স্বয়ং আল্লাহ তাঁকে সারা বিশ্বজাহানের জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছেন। তাঁর প্রতি তিনি রহমত প্রেরণ করেছেন। ফেরেশতারা রহমত প্রেরণ করেছেন আর ঈমানদার বান্দাদেরও দরুদ ও সালাম প্রেরণে মহান আল্লাহ নির্দশ দিয়েছেন। এসবই তার মর্যাদার বহিঃপ্রকাশ। মর্যাদা ও গুণে যেমন ছিলেন তিনি- ১. তিনি ছিলেন রহমত। বিশ্ববাসীর জন্য রহমত ছিলেন তিনি। আল্লাহ তাআলা বলেন- وَ مَاۤ اَرۡسَلۡنٰکَ اِلَّا رَحۡمَۃً لِّلۡعٰلَمِیۡنَ ‘আর আমি তো আপনাকে বিশ্বজগতের প্রতি শুধু করুণা রূপেই প্রেরণ করেছি।’ (সুরা আম্বিয়া : আয়াত ১০৭) ২. নবিজির নাম শুনলেই তাঁর প্রতি দরুদ পড়া আবশ্যক হয়ে যায়। মহান আল্লাহ, তার ফেরেশতা ও ঈমানদররা তাঁর প্রতি দরুদ পড়েন। আল্লাহ তাআলা বলেন- اِنَّ اللّٰهَ وَ مَلٰٓئِکَتَهٗ یُصَلُّوۡنَ عَلَی النَّبِیِّ ؕ یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا صَلُّوۡا عَلَیۡهِ وَ سَلِّمُوۡا تَسۡلِیۡمًا ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ নবির প্রতি অনুগ্রহ করেন এবং তাঁর ফেরেশতাগণও নবির জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা করে। হে ঈমানদারগণ! তোমরাও নবির জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা করো এবং তাকে উত্তমরূপে অভিবাদন কর তথা (দরুদ ও সালাম পেশ কর।)’ (সুরা আহজাব : আয়াত ৫৬) ৩. আল্লাহ তাআলা নিজেই নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চরিত্রের সার্টিফিকেট দিয়েছেন। কোরআনুল কারিমের মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন- اِنَّكَ لَعَلي خُلُقٍ عَظِيْمٍ ‘নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী।’ (সুরা ক্বালাম : আয়াত ৪) ৪. নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই তাঁর চরিত্রের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন- اِنَّمَا بُعِثْتُ لِاُتَمِّمَ مَكَارِمَ الْاَخْلَاقِ ‘আমি তো উত্তম চরিত্রের পরিপূর্ণতা বিধানের জন্য প্রেরিত হয়েছি।’ (কানযুল উম্মাল) ৫. কেমন ছিলেন নবিজি? এমন প্রশ্নের উত্তরে হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা চমৎকার জবাব দিয়েছিলেন। কী ছিল তাঁর উত্তর? নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চরিত্র সম্পর্কে উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি সংক্ষিপ্ত অথচ অত্যন্ত ব্যাপক অর্থবহ শব্দে বলেন- كَانَ خُلُقُهُ الْقُرْأَنَ ‘আল-কোরআনেই ছিল তাঁর চরিত্র।’ অর্থাৎ কোরআন মাজিদে যেসব উত্তম চরিত্র ও মহান নৈতিকতার কথা উল্লেখ রয়েছে সে সবই তাঁর মাঝে বিদ্যমান ছিল। কোরআনে বর্ণিত চরিত্র অপেক্ষা উত্তম চরিত্র আর কী হতে পারে? তিনি ছিলেন পবিত্র কোরআনের চরিত্রমালার জীবন্ত প্রতীক। এ কারণেই সর্বকালের সর্বযুগের ইসলামিক স্কলারগণ নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চারিত্রিকগুণের গবেষণায় এ কথা বলতে বাধ্য হয়েছিলেন যে, ‘তাঁর সততা ও নবুয়তের জন্য কোনো মুজেজা যদি নাও দেওয়া হতো, শুধুমাত্র তাঁর সুমহান চরিত্রই নবুতের সত্যতা প্রমাণের জন্য যথেষ্ট ছিল। এমনকি নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রহমতি ও বরকতি আকার-আকৃতিতেও এ কথার প্রমাণ হয়ে যেত যে, তিনি একজন সত্যবাদী নবি ও রাসুল।‘ নিঃসন্দেহে এ কথা সত্য যে, ইসলামে উত্তম চরিত্রের মর্যাদা অনেক বেশি। এ তালিম তথা শিক্ষার জন্য আল্লাহ তাআলা হজরত আদম আলাইহিস সালাম থেকে শুরু করে অগণিত অসংখ্য নবি-রাসুল পাঠিয়েছিলেন। আর নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাধ্যমে উত্তম চরিত্রের পূর্ণতা বিধান করেছেন। মহান আল্লাহ উম্মতে মুসলিমাকে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ গ্রহণ করে উত্তম চরিত্রের অধিকারী হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।