পবিত্র কাবা শরিফ পৃথিবীতে আল্লাহপাকের একটি নিদর্শন। পৃথিবী সৃষ্টির সূচনাকাল থেকেই আল্লাহপাক কাবাকে তাঁর মনোনীত বান্দাদের মিলনমেলা হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। কাবা ইসলামের রাজধানী হিসেবে একটি পরিচিত নামও। পৃথিবীতে মাটির সৃষ্টি এ কাবাকে কেন্দ্র করেই। হাদিসে এমন এসেছে যে কাবার নিচের অংশটুকু পৃথিবীর প্রথম জমিন। বিশাল সাগরের মাঝে এর সৃষ্টি। ধীরে ধীরে এর চারপাশ ভরাট হতে থাকে। সৃষ্টি হয় একটি বিশাল মহাদেশের। এক মহাদেশ থেকেই সৃষ্টি হয় সাত মহাদেশের। মক্কা ও কাবার পরতে পরতে লুকিয়ে আছে ইবরাহীম (আ.)-এর পদচিহ্ন-স্মৃতি। বর্তমান আহলে কিতাব (আসমানি ধর্মগ্রন্থপ্রাপ্ত) ইহুদি ও নাসারাদের নবীরা তারই পুত্র ইসহাক (আ.)-এর বংশোদ্ভূত হওয়ায় কাবার মর্যাদা ও মাহাত্ম্য তাদের কাছেও সমানভাবে সমাদৃত।
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহপাক কাবা সম্পর্কে বলেছেন, স্মরণ করুন সে সময়কে যখন আমি ইবরাহীমকে বাইতুল্লাহর স্থান নির্ধারণ করে বলেছিলাম যে আমার সঙ্গে কাউকে শরিক করো না। (সুরা হজ, ২৬) এখলাস ও একনিষ্ঠতা এ নির্মাণের অন্যতম উপকরণ ছিল। আল্লাহ বলেন, স্মরণ করো, যখন ইবরাহীম ও ইসমাইল কাবাগৃহের ভিত্তি স্থাপন করছিল। তারা দোয়া করেছিল, হে আমাদের রব! (এ কাজ) আপনি আমাদের পক্ষ থেকে কবুল করুন। (সুরা বাকারা, ১২৭) এই কাবা সর্ম্পকে কিছু অজানা ১০টি তথ্য নিম্নে তুলে ধরা হলো।
১.কাবার পুনর্গঠিন : কাবা অনেক বার পুনর্গঠিত হয়েছে। বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আবার হামলার কারণেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইতিহাসবিদরা মনে করেন কাবা মোট ১২ বার পুনর্গঠিত হয়েছে। সর্বশেষ কাবায় পুনর্গঠনের কাজ হয় ১৯৯৬ সালে। কাবা নির্মাণে অংশগ্রহণ করেছেন, আদম (আ.) ইবরাহিম (আ.) এবং সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)
২.গিলাফের রঙ পরিবর্তন : কাবার গিলাফ বললেই কালো রংটা আমাদের সামনে ভেসে উঠে। আচ্ছা কাবা নির্মিণ হওয়ার পর থেকেই কি কাবার গিলাফের রং কালো? কাবাকে গিলাফ দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে এই প্রচলনই বা আসলো কবে? কাবাকে গিলাফ দিয়ে ঢেকে রাখার প্রচলন শুরু হয় মূলত জুরহাম গোত্রের শাসনামলে। পরে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি সাদা ইয়েমেনি কাপড় দিয়ে কাবাকে আব্রিত করেছিলেন। এর পর বিভিন্ন খলিফারা কাবার গিলাফের বিভিন্ন রং ব্যবহার করেছেন। কেউ ব্যবহার করেছেন লাল রংয়ের গিলাফ আবার কেউ ব্যবহার করেছেন সাদা রংয়ের গিলাফ। তবে আজকে যে আমরা কালো গিলাফ দেখতে পাই তার প্রচলন শুরু হয়েছে আব্বাসী শাসন আমলে।
৩.কাবার আকৃতি : কাবার মূলত ডি আকৃতির (আধা গোলাকার) ছিল, যা হযরত ইবরাহীম (আ.) নির্মাণ করেছিলেন। ইবরাহীম (আ.) এর পরে ইসলামের আগে কুরাইশরা কাবার পুনর্নির্মাণ করে। তখন তাদের টাকার অভাবের কারণে পুরো কাঠামো পুনর্গঠন করতে পারেনি। বর্তমানে যেমন আছে। বাকি স্থানটি এখন হাটিম বলা হয়। একটি ছোট প্রাচীর দ্বারা চিহ্নিত করা আছে।
৪.কাবার দরজা কয়টি : মূল কাবার দুটি দরজা ছিলো যার একটি দিয়ে প্রবেশ করা হত আর একটি বের হওয়ার জন্য ব্যবহৃত হত। এমন ছোট্ট একটি জানালাও ছিলো। তবে বর্তমানে কাবার মূল দরজা একটি। কিন্তু ভেতর দিয়ে কাবার ছাদে উঠার জন্য একটি দরজা আছে।
৫.কাবা ঘরের অভ্যন্তরে কী আছে? এ নিয়ে সবার মনেই প্রশ্ন জাগে। কাবার অভ্যন্তরে তিনটি পিলার মূল ছাদটিকে ধরে রেখেছে। দুই পিলারের মাঝে একটি টেবিলে সুগন্ধি রাখা আছে। দেয়ালের উপরাংশকে একটি সবুজ কাপড়াবৃত করে রেখেছে। কাপড়টিতে কোরআনের বিভিন্ন আয়াত ক্যালিগ্রাফি খচিত।
৬.হাজরে আসওয়াদ : হাজর আল আসওয়াদ পাথরটি এখন একটি ফ্রেমের মাঝে রাখ। এমনকি এখন এই পাথরটি বেশ কয়েকটি টুকরো। অবশ্য এক সময় একটি পাথরই ছিলো। কিন্তু বিভিন্ন কারণে পাথরটা ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। তবে এই পাথর গুলোকে ফ্রেমের ভিতরে রাখার কাজটা করেছেন আব্দুল্লাহ বিন জুবাইর।
৭.আল-শিবীবী পরিবার সর্বদা কাবার রক্ষক ছিলেন : ইসলাম আসার পূর্ব থেকেই এই পরিবারটি কাবার রক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছে। মূলত তারা ১৫ শতাব্দির রক্ষক। এবং এই পরিবারের লোকেরাই উত্তরাধিকার সূত্রে কাবার রক্ষক হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে থাকেন।
৮. বছরে দুইবার কাবা পরিষ্কার করা হয় : আল-শিবীবী পরিবার শাওয়ান ও দুল-কায়েদা জুড়ে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। একটি বিশেষ পরিস্কার মিশ্রণ জমজম পানি থেকে প্রস্তুত করা হয়, তাফ রাশওয়াটার এবং ব্যয়বহুল তেল এতে ব্যবহার করা হয়। এই পরিষ্কার করার অনুষ্ঠানে গভর্নর কয়েকজনকে আমন্ত্রণ জানান।
৯.কাবা দরজা সকলের জন্য উন্মুক্ত : প্রথম দিকে প্রত্যেকে কাবার ভিতরে ঢুকতে পারতো এবং ভিতরে ইবাদত করতে পারবো। কেননা তখন কাবার দরজা সবার জন্যই উন্মুক্ত ছিলো। দিন দিন যেহেতু কাবার তোওয়াফকারীর সংখ্যার বৃদ্ধি পাচ্ছে তাই কাবার ভিতরে এখন আর সবাই প্রবেশ করতে পারে না। কাবার দরজা এখন বিশেষ অতিথিদের জন্য মাঝে মাঝে মাঝে খোলা হয়।
১০. কাবার তোওয়াফ কখনো থামে না : কাবার বিষয়ে সব থেকে বেশি আর্শ্চযের বিষয় হলো কাবার তোওয়াফ কখনো বন্ধ হয় না। ইতিহাস ঘাটলে এমন ঘটনাও পাওয়া যায় যে, বন্যার সময় মানুষ সাঁতার কেটে কেটে তোওয়াফ করেছে। তবুও কাবার তোওয়াফ কখনো বন্ধ হয়নি।