ইসলামের বিধান অনুসারে, অজু হল দেহের অঙ্গ-প্রতঙ্গ ধৌত করার মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জনের একটি পন্থা। মুসলমানেরা নামাজের পূর্বে অজু করে নেয়। পবিত্র কুরআনে আছে, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তওবাকারীকে ভালবাসেন এবং যারা পবিত্র থাকে তাদেরকেও ভালবাসেন। (বাকারা:২২২)
অজুর মহত্ব ও গুরুত্ব এর থেকে অধিক আর কি হতে পারে যে, মহান আল্লাহপাক কুরআনে তার শুধু হুকুমই নয় বরং বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা করেছেন যে, অজুতে দেহের কোন কোন অংগ ধুতে হবে। আর এ কথাও সুস্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে, অজু নামাজের অপরিহার্য শর্ত। পবিত্র কুরআনে এসেছে, যারা তোমরা ঈমান এনেছো জেনে রাখো, যখন তোমরা নামাযের জন্যে দাঁড়াবে তার আগে নিজেদের মুখ-ম-ল ধুয়ে নেবে এবং তোমাদের দু‘হাত কুনুই পর্যন্ত ধুয়ে নেবে এবং মাথা মাসেহ করবে এবং তারপর দু‘পা চাখনু পর্যন্ত ধুয়ে ফেলবে- (মায়েদাহ: ৬) নবী (সা.) অজুর ফজিলত ও বরকত বয়ান করতে গিয়ে বলেছেন, অজু করার কারণে ছোটো খাটো গুনাহ মাফ হয়ে যায় এবং অজুকারীকে আখেরাতে উচ্চ মর্যাদায় ভুষিত করা হব এবং অজুর দ্বারা শরীরের সমস্ত গুনাহ ঝরে পড়ে (বুখারী, মুসলিম)
যে যে অবস্থায় অজু ফরয হয় : ১. প্রত্যেক নামাজের জন্য অজু ফরয, সে নামায ফরয হোক অথবা ওয়াজেব। সুন্নাত বা নফল হোক। ২. জানাযার নামাজের জন্য অজু ফরয। ৩. সিজদায়ে তেলাওয়াতের জন্যে অজু ফরয। যে সব অবস্থায় অজু ওয়াজেব : ১. বায়তুল্লাহ তওয়াফের জন্য। ২. কুরআন পাক স্পর্শ করার জন্য। যে সব কারণে অজু সুন্নাত : ১. শোবার পূর্বে অজু সুন্নাত। ২. গোসলের পূর্বে অজু সুন্নাত।
অজুর ফরযসমূহ : অজুর চারটি ফরয এবং প্রকৃতপক্ষে এ চারটির নামই অজু। এ চারের মধ্যে কোন একটি বাদ গেলে অথবা চুল পরিমাণ কোন স্থান শুকনো থাকলে অজু হবে না। ১. একবার গোটা মুখম-ল ধোয়া। অর্থাৎ কপালের উপর মাথার চুলের গোড়া থেকে থুতনির নীচ এবং এক কানের গোড়া থেকে অপর কানের গোড়া পর্যন্ত সমস্ত মুখম-ল ধোয়া ফরয। ২. দু‘তাহ অন্তত: একবার কুনুই পর্যন্ত ধোয়া। ৩. একবার মাথা এক চতুর্থাংশ মুসেহ করা। ৪. একবার দু‘পা টাখনু পর্যন্ত ধোয়া।
অজুর মসনুন তরিকা : অজুকারী প্রথেমে মনে মনে এ নিয়ত করবে, আমি শুধু আল্লাহকে খুশী করার জন্য এবং তাঁর কাছ থেকে আমলের প্রতিদান পাবার জন্য অজু করছি। অজুর জন্যে প্রথমে ডানে হাতে পানি নিয়ে দু‘হাত কব্জি পর্যন্ত খুব ভাল করে তিনবার ঘষে ধুতে হবে। তারপর ডান হাতে পানি নিয়ে তিনবার কুল্লি করতে হবে। মিসওয়াকও করতে হবে। নবী (সা.) মিসওয়াককে অসাধারণ গুরুত্ব দিতেন। হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, নবী (সা.) দিনে বা রাতে যখনই ঘুম থেকে উঠতেন, তার অভ্যাস ছিল, অজুর পূর্বে অবশ্যই মিসওয়াক করতেন (আবু দাউদ)
কোন সময়ে মিসওয়াক না থাকলে শাহাদৎ অঙ্গুরি দিয়ে ভালো করে ঘষে দাত সাফ করতে হবে। রোযা না থাকলে তিনবারই গড়গড়া করে কুল্লি করতে হবে। তার উদ্দেশ্যে গলদেশের ভেতর পর্যন্ত পানি পৌছানো। তারপর তিনবার এমনভাবে নাকে পানি দিতে হবে যেন নাসিকার ভেতর পর্যন্ত পৌছে। অবশ্য রোযার সময় সাবধানে কাজ করতে হবে। তারপর বাম হাতের আঙ্গুল দিয়ে নাক সাফ করতে হবে। প্রত্যেকবার নাকে নতুন পানি দিতে হবে। তারপর দু‘হাতের তালু ভরে পানি নিয়ে তিনবার সমস্ত মুখম-ল (চেহেরা) এমনভাবে ধুতে হবে যেন চুর পরিমাণ স্থানও শুকনো না থাকে। দাঁড়ি ঘন হলে তার মধ্যে খেলাল করতে হবে যেন চুলের গোড়া পর্যন্ত পানি পৌছে যায়। তারপর দু‘হাত কনুই পর্যন্ত ভালো করে ঘষে ধুবে। প্রথম ডান হাত এবং পরে বাম হাত তিন তিনবার করে ধুতে হবে। হাতে আংটি থাকলে এবং মেয়েদের হাতে চুড়ি-গয়না থাকলে তা নাড়াচাড়া করতে হবে যেন ভালোভাবে পানি সবখানে পৌছে। হাতের আঙ্গুলগুলিতে আঙ্গুল দিয়ে খেলাল করতে হবে। তারপর দু‘হাত ভিজিয়ে মাথা এবং কান মাসেহ করতে হবে। এর পরে দুই পা ভালোভাবে ধুইতে হবে। আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে এই বিধানটি ভালোভাবে পালন করার তৌফিক দান করুন। আমীন।