রাসুল (সা.) এর অসিয়ত : রাসুল (সা.) দশম হিজরির জিলহজ মাসের ৯ তারিখে আরাফার প্রান্তরে উম্মতের উদ্দেশ্যে জীবনের শেষ হৃদয়গ্রাহী অলংকারপূর্ণ ভাষণ দান করেন, লোকসকল! আমার কথা শোনো, তোমাদের জন্য প্রয়োজনীয় সকল বিষয় বর্ণনা করবো, জানি না আগামী বছর আমি আবার তোমাদের সঙ্গে মিলিত হতে পারবো কিনা৷মুসলমানদের জানমাল, ইজ্জতসম্মান তোমাদের জন্য কেয়ামত পর্যন্ত পবিত্র ও সম্মানিত; যেমন এ দিনটি (আরাফর দিন), এ মাসটি (জিলহজ) এবং এ শহরটি (মক্কা) পবিত্র এবং সম্মানিত। তাই যার কাছে আমানত হিসেবে অন্যের যা কিছু গচ্ছিত থাকবে, তা তার মালিকের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে। হে লোকেরা ! তোমাদের স্ত্রীদের তোমাদের ওপর কিছু অধিকার রয়েছে, ঠিক যেমনটি তাদের ওপর তোমাদের অধিকার রয়েছে। হে লোকসকল! সকল মুসলমান ভাই ভাই। কারো পক্ষে তার ভাইয়ের সম্পদ তার সন্তুষ্টি ছাড়া নেয়া হালাল নয়। আমার পর তোমরা আবার কাফের হয়ে যেও না৷একে অন্যের ঘাড়ে আঘাত করতে যেও না। আমি তোমাদের জন্য আল্লাহর কিতাব রেখে যাচ্ছি। তোমরা যদি তার যাবতীয় বিধিবিধান মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরো, তাহলে তোমরা কখনও পথহারা হবে না। হে লোকেরা! তোমাদের প্রতিপালক একজন। তোমাদের আদি পিতা একজন। তোমরা সবাই হজরত আদম (আ.)-এর সন্তান। আর হজরত আদম (আ.) হলেন মাটির তৈরি। তোমাদের মাঝে সবচেয়ে অধিক সম্মানী সে, যে অধিক আল্লাহভীরু। কোনো আরববাসী অনারবির ওপর আল্লাহভীতি ছাড়া শ্রেষ্ঠ হতে পারে না। মনে রেখো, আমি তোমাদের কাছে আল্লাহর দীন পৌঁছিয়েছি। কাজেই অনুপস্থিতদের কাছে উপস্থিত লোকদের এ সকল কথা পৌঁছোনো কর্তব্য।
হজরত আবুবকর (রা.)-এর অসিয়ত : আমার পরে হজরত উমর (রা.)-কে তোমাদের জন্য খলিফা নিযুক্ত করে গেলাম। সুতরাং তাঁর কথা শুনবে এবং তাকে মান্য করবে। আমি তো শুধু তোমাদের জন্য কল্যাণেরই ইচ্ছে করেছি। আমি তো গায়েব সম্পর্কে কিছুই জানি না৷ তবে জুলুমকারী সম্পর্কে অচিরেই স্পষ্ট হয়ে যাবে। ইন্তেকালের কিছুক্ষণপূর্বে বললেন, ‘আমার ব্যবহৃত এই চাদরদুটো হেফাজত করে রাখবে। আমার মৃত্যুর পর ধুয়ে তাতেই আমায় দাফন করবে। কারণ মৃত ব্যক্তির চেয়ে জীবিত ব্যক্তি নতুন কাপড়ের প্রতি বেশি মুখাপেক্ষী। আমার গোসল যেনো দেয় আমার প্রিয়তমা স্ত্রী আসমা।
হজরত উমর (রা.)-এর অসিয়ত : একদিন লোকদের বললেন, আমি স্বপ্নে দেখলাম, একটি মোরগ আমায় ঠোকর দিলো। এটা অবশ্যই আমার মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসার লক্ষণ। এরপর বললেন, সবশ্রেণির লোক আমার কাছে আমার পরে খলিফা নিযুক্ত করে যাওয়ার আবেদন করেছে। আল্লাহতায়ালা অবশ্যই তার দীন ও খেলাফতকে বিনষ্ট করবেন না। হঠাৎ যদি আমার মৃত্যু চলে আসে, তাহলে ঐ ছয় ব্যক্তির পরামর্শে খলিফা নিযুক্ত হবে, যাদের প্রতি রাসুল (সা.) মৃত্যু পর্যন্ত সন্তুষ্ট ছিলেন। তারা হলেন, হজরত উসমান (রা.), হজরত আলী (রা.), হজরত তালহা (রা.), হজরত জোবায়ের (রা.), হজরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) এবং হজরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.)। এরপর বললেন, হজরত আয়েশাকে বলো, উমরের ইচ্ছে হলো তার দুই সঙ্গীর সঙ্গে শায়িত হওয়ার। হজরত আয়েশা (রা.) এ বলে অনুমতি দিলেন, আমার নিজের ওপর আমি হজরত উমরকে প্রাধান্য দিই।’ হজরত উমর (রা.) বললেন, জানাজা প্রস্তুত হওয়ার পর দ্বিতীয়বার অনুমতি চাইবে। অনুমতি না দিলে সাধারণ লোকদের গোরস্থানে আমায় দাফন করবে। পুত্র আবদুল্লাহকে অসিয়ত করলেন, বেটা! ইমানের বৈশিষ্ট্যগুলোকে ভালোভাবে আঁকড়ে ধরো; আর তা হলো, প্রচণ্ড গরমের মৌসুমে রোজা রাখবে, তরবারি দিয়ে জিহাদ করবে, বিপদে ধৈর্যধারণ করবে, শীতকালে ভালোভাবে অজু করবে এবং মেঘাচ্ছন্ন দিনে তাড়াতাড়ি নামাজ আদায় করবে। আরবদের লক্ষ্য করে অসিয়ত করলেন, গায়ে চাদর দিয়ে লুঙ্গি পরবে, নিয়মিত তীর চালাবার অনুশীলন করবে, পূর্বপুরুষ আদনানের পুত্র মাদানের মতো সাদাসিধে জীবনযাপন করবে, মোটা খাবার খাবে, মোটা কাপড় পরবে, পরস্পর ভাই ভাই হয়ে থাকবে, অহংকারি জিন্দেগি এখতিয়ার করা থেকে বেঁচে থাকবে, লাফ দিয়ে ঘোড়ায় চড়বে, রিকাব কেটে ফেলবে এবং রোদে থাকার অভ্যেস গড়বে।