পৃথিবীর বুকে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অন্যতম মূল কারণ হচ্ছে, মানবজাতির মধ্যে শ্রেণী ও বর্ণবৈষম্য। এর ফলে মানুষ হারিয়ে ফেলে ভ্রাতৃত্ববোধ, বিলীন হয়ে যায় তাদের মধ্যকার পারস্পরিক মায়া-মমতা, বন্ধুত্ব ও সৌহার্দপূর্ণ মধুর সম্পর্ক। তাদের জীবনে নেমে আসে শ্রেণী ও বর্ণবৈষম্যের ঘোর অন্ধকার। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বিশ্বমানবতার মুক্তির দূত প্রিয়নবী (সা.)- এর আগমনের পূর্বে গোটা পৃথিবী শ্রেণী ও বর্ণবৈষম্যের অতল তলে নিমজ্জিত ছিলো। এর ফলে সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ছিলো চরম অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, দেশ ও রাষ্ট্র পর্যায়ে যুদ্ধংদেহী মনোভাব, এমনকি এর ফলে সামান্য কোনো তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে প্রতিহিংসার কারণে বছরের পর বছর ধরে চালিয়ে যেত ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ। রাসুল (সা.) পৃথিবী থেকে এই শ্রেণী ও বর্ণবৈষম্য দূরীকরণের লক্ষে আল কুরআনের নির্দেশ বাস্তবায়ন করাই ছিলো তার দায়িত্বসমূহের মধ্যে অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। ফলে ইতিহাস সাক্ষী, মহানবী (সা.)- এর আমলে মদিনায় ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর সেখানে কোনোরকম শ্রেণী ও বর্ণবৈষম্যের লেশ মাত্রও ছিলো না। অধুনা বিশ্বে এই অশান্ত, অস্থিতিশীলতা শ্রেণী ও বর্ণবৈষম্য দূর করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করার একমাত্র উপায় হচ্ছে রাসুল (সা.) এর অনুসরণ ও আনুগত্য।
মহানবী (সা.)- এর সুন্নাহর আদর্শ সার্বজনীনতায় দিগন্তবিস্তৃত। আমরা যদি এ দিকসমূহের বাস্তবায়নে দৃষ্টি দেই, তাহলে দেখবো রাসুল (সা.) তার শ্রেষ্ঠ উদাহরণের মাধ্যমে তা প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ফলে অল্পকালের মধ্যেই ইসলামি সভ্যতা সংস্কৃতির শীর্ষচারী অবস্থান মানবজাতি প্রত্যক্ষ করেছে। এ জয়যাত্রার আওতায় যেসব জনপদ এসেছে, সেসব এলাকার জনসাধারণ মহানবীর অনুসারীদের সালাম জানিয়ে গ্রহণ করেছে। যুগ যুগ ধরে, শতাব্দীর পর শতাব্দী কাল পরিক্রমায় যে মানুষ শোষিত-বঞ্চিত, নির্যাতিত-নিপীড়িত ছিলো, তাদের শোষণ-বঞ্চনা, অত্যাচার-নিপীড়নের অবসান ঘটলো। সৃষ্টি হলো ধর্ম-বর্ণ এবং আর্থ সামাজিক শ্রেণী নির্বিশেষে সানন্দ সহাবস্থানের মানব পরিবেশ, বাস্তবে সর্বজনীনতা। পবিত্র কুরআনে যত সুন্দর, সত্য, সততা, মানবতা ও কল্যাণময় গুণাবলীর কথা বলা হয়েছে, তার নিখুঁত নিখাদ ও পরিপূর্ণ চিত্রায়ন ঘটেছিলো রাসুল (সা.)- এর জীবনাদর্শে। মানব সমাজের উন্নতি, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, আর্থিক ও চারিত্রিক সকল ক্ষেত্রে গৌরবময় উত্তরণের পথই হলো অনুসরণীয় আদর্শ। আদর্শহীন কোনো জনগোষ্ঠী পৃথিবীতে সমাদৃত হতে পারে না। তাই আজকের এই করুণ ও অবক্ষয় মুহূর্তেও যদি মুসলিম উম্মাহ ফিরে পেতে চায় তাদের হারানো অতীত, তাহলে তাদের অনুসরণ করতে হবে প্রিয়নবী (সা.)- এর সীরাত বা পবিত্র জীবনচরিত। সুতরাং সেই পথেই হোক আমাদের নব যাত্রা। আদর্শিক প্রত্যয়ে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠুক আমাদের সমাজ জীবন।