ইসলামের প্রথম যুগে মদীনার মু‘মিন অধিবাসী তথা আনসার সাহাবীদের মর্যাদা অনেক বেশি। আমাদের নবী সা. মদীনার আনসার সাহাবীদের অতুলনীয় মর্যাদা সর্ম্পকে অনেক কথা বলেছেন। ইসলামের শুরু যুগে যখন মক্কায় সীমাহীন কষ্ট ও নির্যাতনের শিকার হয়ে মদীনায় হিজরত করেন, তখন এই আনসার সাহাবীরাই মুহাজির তথা মক্কা থেকে আগত মুসলমানদের ভরপুর সাহায্য করেন। যার যে সম্পদ আছে তা দিয়ে মুহাজির মুসলমানদের সহায়তা করেছেন।
কারো দুটি ক্ষেতযোগ্য জমিন থাকলে একটি মুহাজির সাহাবী দিয়ে দিয়েছেন কোন বিনিময় ছাড়াই। কারো দুটি বাড়ি থাকলে একটি মুহাজির সাহাবী সাহাবীকে দিয়ে দিয়েছেন। এজন্য মদীনায় ইসলাম প্রতিষ্ঠায় কেবল আনসার সাহাবীদের অবদান সবচেয়ে বেশী।
এজন্যই আনসার সাহাবীদের মর্যাদা সর্ম্পকে প্রতিটি সহীহ হাদীস গ্রন্থে ব্যাপক আলোচনা করা হয়েছে। সহীহ বুখারি থেকে কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করা হলো। হযরত বারা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, মুমিন ছাড়া আনসারদেরকে কেউ ভালবাসবে না এবং মুনাফিক ছাড়া কেউ তাদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করে না। যে ব্যক্তি তাদেরকে ভালবাসে আল্লাহ তা’আলা তাকে ভালবাসবেন আর যে ব্যক্তি তাদের সাথে হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করবে আল্লাহ তা’আলা তাকে ঘৃণা করবেন। বুখারি হাদীস নং ৩৫১২ আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আনসারদের প্রতি মুহাব্বত ঈমানেরই নিদর্শন এবং তাদের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ পোষন করা মুনাফেকীর পরিচায়ক। বুখারি হাদীস নং ৩৫১৩
রাসূল (সা.)-এর দু’আ : (হে আল্লাহ!) আনসার ও মুহাজিরদের মঙ্গল করুন: আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হে আল্লাহ ! আখিরাতের জীবনই প্রকৃত জীবন। হে আল্লাহ ! আনসার ও মুহাজিরদের মঙ্গল করুন। কাতাদা রা. আনাস রা. সূত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এরূপ বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন হে আল্লাহ ! আনসারকে ক্ষমা করে দিন। (বুখারি হাদীস নং ৩৫২৩)
রাসূল (সা.) এর বাণি : তাদের (আনসারদের মধ্যে নেককারদের পক্ষ হতে (উত্তম কার্য) কবুল কর, এবং তাদের ত্রুটি-বিচ্যুতিকারীদের ক্ষমা করে দাও:
হযরত আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন অন্তিম রোগে আক্রান্ত তখন আবু বকর ও আব্বাস রা. আনসারদের কোনো একটি মজলিসের পাশ দিয়ে যাওয়ার কালে দেখতে পেলেন যে, তারা (সকলেই বসে বসে) কাঁদছেন। তাদের একজন জিজ্ঞাসা করলেন, আপনারা কাঁদছেন কেন? তাঁরা বললেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে আমাদের মজলিস স্মরণ করে কাঁদছি। তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে আনসারদের অবস্থা বললেন, রাবী বললেন, (তা শুনে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চাদরের কিনারা দিয়ে মাথা বেঁধে (ঘর থেকে) বেরিয়ে আসলেন এবং মিম্বরে উঠে বসলেন। এ দিনের পর আর তিনি মিম্বরে আরোহণ করেননি। তারপর হামদ ও সানা পাঠ করে সমবেত সাহাবিদেরকে লক্ষ করে বললেন, আমি আনসারগণের প্রতি বিশেষভাবে লক্ষ রাখার জন্য তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছি; কেননা তাঁরাই আমার অতি আপনজন, তাঁরাই আমার বিশ্বস্ত লোক। তারা তাদের ওপর আরোপিত দায়িত্ব ও কর্তব্য পরিপূর্ণভাবে পালন করেছে। তাদের যা প্রাপ্য তা তাঁরা এখনো পায়নি। তাদের নেক লোকদের উত্তম কার্যকলাপ সাদরে গ্রহণ করবে এবং তাদের ত্রুটি বিচ্যুতি ক্ষমা করবে। (হাদীস নং ৩৫২৭)
হযরত আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আনসারগণ আমার অতি আপনজন ও বিশ্বস্ত লোক। সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকবে আর তাদের সংখ্যা হ্রাস পেতে থাকবে। তাই তাদের নেককারদের উত্তম কার্যাবলী কবুল কর এবং তাদের ত্রু টি-বিচ্যুতি ক্ষমা করে দাও। (হাদীস নং ৩৫২৭)