ডিটিভি বাংলা নিউজঃ রমজান বরকতময় মাস। এ মাসে শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। আকাশের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ মাসে এমন একটি মহিমান্বিত রাত রয়েছে যা হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। রসুলে পাক (সা.)-এর রোজাগুলো কেমন ছিল? তিনি সাহরিতে কী খেতেন, ইফতার করতেন কোন ফলটি দিয়ে? আর তাঁর সাহাবিরাই বা রোজা করতেন কোন নিয়মে? সব মুসলমানের মধ্যেই এ সম্পর্কে আগ্রহ থাকাই স্বাভাবিক। রমজানের প্রস্তুতির জন্য শাবান থেকেই নফল রোজা শুরু করতেন নবীজী (সা.)। হজরত আয়শা (রা.) বলেন, ‘আমি রসুল (সা.)-কে শাবান মাস ছাড়া আর কোনো মাসেই এত বেশি নফল রোজা রাখতে দেখিনি। (বুখারি) তিনি (সা.) সাহাবিদেরও রোজার প্রস্তুতির জন্য উৎসাহ দিতেন।
হজরত ইমরান ইবনে হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) কোনো একজনকে বলছিলেন, হে অমুকের পিতা! তুমি কি শাবান মাসের শেষ দিকে রোজা রাখনি? তিনি বললেন, না। রসুল (সা.) বললেন, তাহলে তুমি রমজানের পরে দুটি রোজা পূর্ণ কর। (বুখারি)
রমজানের ঠিক আগে আগেই রসুল (সা.) রমজানের ফজিলত এবং বরকত সম্পর্কে সাহাবিদের জানিয়ে দিতেন। এ সম্পর্কে অনেক হাদিসের মধ্যে একটি হাদিস উল্লেখ করছি। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘রমজান বরকতময় মাস। এ মাসে শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। আকাশের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ মাসে এমন একটি মহিমান্বিত রাত রয়েছে যা হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ।’ (মুসলিম) বিভিন্ন হাদিস থেকে জানা যায় রসুল (সা.) চাঁদ দেখে রোজা শুরু করতেন। হাদিসের বর্ণনা থেকে পাওয়া কেউ এসে তাকে সংবাদ দিত তিনি তা ঘোষণা করার অনুমতি দিতেন। তিনি (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা চাঁদ দেখে রোজা রাখ এবং চাঁদ দেখেই রোজা ছাড়।’ (বুখারি)
জাঁকজমকহীন অনাড়ম্বর রোজা পালন করতেন রসুল (সা.)। নবীজী (সা.)-এর সাহরি ও ইফতার ছিল সাধারণের চেয়েও সাধারণ। হজরত আনাস (রা.) বলেন, ‘রসুল (সা.) কয়েকটি ভিজা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। ভিজা খেজুর না থাকলে শুকনো খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। ভিজা কিংবা শুকনো খেজুর কোনোটাই না পেলে পানিই হতো তার ইফতার।’ (তিরমিজি) রসুল (সা.) সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গেই ইফতার করতে পছন্দ করতেন। ইফতারে দেরি করা তিনি পছন্দ করতেন না। তেমনিভাবে রসুল (সা.)-এর সাহরিও ছিল খুব সাধারণ। তিনি (সা.) দেরি করে একেবারে শেষ সময়ে সাহরি খেতেন। সাহরিতে তিনি দুধ ও খেজুর পছন্দ করতেন। এ সম্পর্কে সময়োপযোগী একটি হাদিস উল্লেখ করতে হয়। আহলে সুফফার অন্যতম সদস্য, সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন আজান শুনে, আর এ সময় তার হাতে খাবারের পাত্র থাকে, সে যেন আজানের কারণে খাবার বন্ধ না করে, যতক্ষণ না সে নিজের প্রয়োজন পূর্ণ না করে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, মুয়াজ্জিন এ আজান দিতেন ফজর উদ্ভাসিত হওয়ার পরই। (সুনানে আবু দাউদ, সাওম অধ্যায়, হাদিস নং ২৩৪২; মুসনাদে আহমাদ; ২য় খণ্ড, হাদিস নং ৫১০, সনদ হাসান।) অন্যান্য সময়ের চেয়ে রমজানে রসুল (সা.)-এর ইবাদতের পরিমাণ বেড়ে যেত। বুখারির বর্ণনা অনুযায়ী তিনি (সা.) প্রবাহিত বাতাসের মতো দান করতেন। রমজানে রসুল (সা.) জিবরাইল (আ.)-কে কোরআন শুনাতেন। আবার জিবরাইল (আ.) হজরত (সা.)-কে কোরআন শুনাতেন। রমজানের রাতে তিনি (সা.) খুব কম সময় বিশ্রাম নিয়ে বাকি সময় নফল নামাজে কাটিয়ে দিতেন। নির্ভরযোগ্য হাদিস থেকে জানা যায়, রসুল (সা.) তিন দিন সাহাবিদের নিয়ে তারাবি পড়েছেন। চতুর্থ দিন থেকে তিনি ঘরে আর সাহাবিরা বাইরে নিজেদের মতো নামাজ পড়তেন। খলিফা ওমর (রা.)-এর সময় জামাতে তারাবি পড়ার প্রচলন হয়। আমাদের দেশে রমজান এলেই তারাবি নিয়ে তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়ে যায়। যা মোটেই কাম্য নয়। তারাবি সুন্নত নামাজ। আর বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হারাম। আমাদের সুবিধামতো আমরা নামাজ পড়ব, অসুবিধা থাকলে না পড়ব। কিন্তু সমাজে ফেতনা সৃষ্টি করার অধিকার আমাদের কারও নেই। শেষ দশ দিন ইতিকাফ করা রসুল (সা.)-এর নিয়মিত সুন্নত ছিল। ইতিকাফে কদরের রাত তালাশ করাই মূল উদ্দেশ্য। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য! শেষ দশকে আমাদের মসজিদগুলো মুসল্লিশূন্য থাকে। রসুল (সা.) শাওয়ালের চাঁদ দেখে রোজা ছাড়তেন।