নারী ও পুরুষদ ইসলামের দৃষ্টিতে সমান নয়। পুরুষের যেমন নিজেস্ব দক্ষতা ও সম্মান আছে ঠিক তেমনই নারীরও নিজেস্ব সম্মান ও দক্ষতা আছে। ইসলাম এমনই শিক্ষা দিয়েছে। অনেকে বলে থাকেন নারী, পুরুষ সমান। এটা আসলে কখনো ছিলো না। আমরা যদি ইসলাম আসার পূর্বে লক্ষ্য করি তাহলে দেখবে সমাজে নারীদের অবস্থান ঠিক কতটা নিম্ন ছিলো আর ইসলাম এসেছে এই সম্মান ঠিক কতটা উপরে তুলে দিয়েছে। শুধু উচ্চ সম্মানই দেয়নি। অনেক ক্ষেত্রে নারীকে দিয়েছে বিভিন্ন প্রকার অধিকার। যে বিষয়টি ইসলাম আসার পূর্বে ছিলো কল্পনাতীত।
ইসলামের মহাগ্রন্থ আল কুরআনে ‘নিসা’ অর্থাৎ ‘মহিলা’ শব্দটি ৫৭ বার এবং ‘ইমরাআহ’ অর্থাৎ ‘নারী’ শব্দটির ২৬ বার উল্লেখ হয়েছে। পবিত্র কোরআনে ‘নিসা’ তথা ‘মহিলা’ শিরোনামে নারীর অধিকার ও কর্তব্যসংক্রান্ত একটি স্বতন্ত্র বৃহৎ সূরাও রয়েছে। এ ছাড়া কুরআনের বিভিন্ন আয়াত ও হাদিসে নারীর অধিকার, মর্যাদা ও তাদের মূল্যায়ন সম্পর্কে সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। ইসলাম নারীর ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করেছে। দিয়েছে নারীর জান-মালের নিরাপত্তা ও সর্বোচ্চ সম্মান।
ইসলাম কিছু কিছু ক্ষেত্রে পুরুষের তুলনায় নারীকে অনেক বেশি সম্মান দিয়েছে। নিম্নে এমন কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করছি সেখানে পুরুষের থেকে নারীর সম্মান অনেক বেশি।
১.স্ত্রীকে সম্মান করা ঈমানি দায়িত্ব : পবিত্র কুরআন মহান আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, হে ঈমানদারগণ ! তোমাদের জন্য জোরপূর্বক নারীদের উত্তরাধিকারী হয়ে বসা মোটেই হালাল নয়। আর তোমরা যে মোহরানা তাদেরকে দিয়েছো তার কিছু অংশ তাদেরকে কষ্ট দিয়ে আত্মসাৎ করাও তোমাদের জন্য হালাল নয়। তবে তারা যদি কোন সুস্পষ্ট চরত্রহীনতার কাজে লিপ্ত হয় (তাহলে অবশ্যই তোমরা তাদেরকে কষ্ট দেবার অধিকারী হবে) তাদের সাথে সদ্ভাবে জীবন যাপন করো। যদি তারা তোমাদের কাছে অপছন্দনীয় হয়, তাহলে হতে পারে একটা জিনিস তোমরা পছন্দ করো না কিন্তু আল্লাহ তার মধ্যে অনেক কল্যাণ রেখেছেন। (নিসা: ১৯) যারা আল্লাহ ও তার রাসুলের উপর বিশ্বাস রাখে তারা কখনো তার স্ত্রীদের সাথে খারাপ ব্যবহার করতে পারে না। কেননা যারা তাদের স্ত্রীদের সম্মান দেয় না আল্লাপাক তাদের পছন্দ করেন না।
২. মায়ের পায়ের নীচে জান্নাত: মা হচ্ছে একজন নারীর জীবনের প্রধান ভূমিকা। নারীর এই ভূমিকাকে ইসলাম সম্মান করার জন্য তাদের দিয়েছেন বিশেষ এক উপহার। একটি হাদিসে নবী (সা.) বলেছেন জান্নাত হচ্ছে মায়ের পায়ের নীচে। এই কথাটা একটা অর্থ হলো আপনি আপনার মায়ের সাথে ভালো করেছেন তো আপনি সব ভালো করেছেন আর আপনি আপনার মায়ের সাথে খারাপ করেছে তো সব খারাপ করেছেন। অন্য একটি হাদিসে আমাদের নবী (সা.) আরো বলেছেন, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলের (সা.) দরবারে উপস্থিত হয়ে জানতে চাইলেন, হে আল্লাহর রাসূল সা.! মানুষের মাঝে আমার নিকট থেকে সর্বোত্তম সেবা লাভের অধিকার কার? নবী (সা.) বলেন, তোমার মায়ের। লোকটি পুনরায় জানতে চাইলেন, তারপর কার? তিনি বললেন, তোমার মায়ের। লোকটি পুনরায় জানতে চাইলেন, তার পর কার? তিনি বললেন, তোমার মায়ের। লোকটি আবারও জানতে চাইলেন, তারপর কার? তিনি বললেন, তোমার পিতার। (সহিহ বোখারি ও মুসলিম)
৩. কন্যা সন্তানকে ভালোবাসা দিয়ে গড়ে তুলুন : হাদিসে এমন এসেছে যে, আল্লাহ যাকে দুইটি কন্যা সন্তান দিয়েছেন আর সে যদি তাদেরকে ভালোভাবে শিক্ষিত করে উপযুক্ত স্বামীর হাতে তুলে দেয় তাহলে তিনি জান্নাত লাভ করবেন। ইসলাম আসার পূর্বে সমাজে মেয়েদের অবস্থা ছিলো হতাশাজনক। মেয়েদের জীবিত কবর দেওয়া হত। এমনকি মেয়েদেরকে সমাজের বোঝা হিসেবে গণ্য করা হতো। কন্যা সন্তানের জন্মদানকারি মা নির্যাতনের শিকার হতেন। ইসলাম আসার সাথে সাথে এই দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন ঘটে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নারীদেরকে পুরুষদের থেকে বেশি সম্মান দেওয়া হয়েছে। মানুষকে জান্নাতে প্রবেশ করার জন্য তাদেরকে একটি উপায় তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। পরিবারের নারী অথবা মেয়ে ভালো হলে আপনি তিনটি বিষয় লাভ করবেন। ১. জান্নাত ২. মজবুত ঈমান ৩. বিচার দিবসে নবী (সা.) এর সঙ্গ লাভ কখনো নারী ও পুরুষ সমান নয়। তাদের উভয়েরই নিজেস্ব সম্মান ও মুল্য আছে। আল্লাহপাক সবাইকে রক্ষা করুন। আমীন।