কক্সবাজারের নাফ নদী পেরিয়ে সর্বনাশা মাদক ইয়াবার চালান চট্টগ্রামে আসছেই। এরই মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগরীর ডবলমুরিং এলাকার কমিশনার গলিতে একটি ভবনে বিষাক্ত পদার্থ দিয়ে তৈরি ইয়াবা কারখানার আবিষ্কার সকল মহলে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
দেশি ইয়াবাগুলো মূল চালানের সঙ্গে ভেজাল হিসেবে মিশিয়ে দেশব্যাপী বিতরণ করা হচ্ছিল বলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিশ্চিত হয়েছে। ইয়াবা ভয়ঙ্কর ক্ষতিকর কিন্তু ভেজাল ইয়াবা দ্রুত মাদকাসক্তদের শেষ করে দেয় বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
চট্টগ্রামে ইয়াবা তৈরির একটি কারখানা গত ২৭ ডিসেম্বর মহানগরী গোয়েন্দা পুলিশ ডবলমুরিং এলাকার বেপারিপাড়া কমিশনার গলির একটি ভবনে আবিষ্কার করে। সেখান থেকে গ্রেফতার করা হয় কারিগর শ্যামল মজুমদার ও তার ৩ সহযোগীকে। উদ্ধার করা হয় দেড় লাখ পিস বিষাক্ত পদার্থ দিয়ে তৈরি ইয়াবা। যেগুলো মূলত দেশে প্রচলিত জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি, ব্যথানাশক টেবলেট গুঁড়ো করে, তার সঙ্গে বিষাক্ত রং ও এসেন্স মিশিয়ে নির্দিষ্ট ধাতব ডাইস বা ছাঁচে ফেলে তৈরি করা হয়েছে।
চট্টগ্রামের কয়েকটি বিশেষজ্ঞ সূত্র জানান, চট্টগ্রামের কারখানায় তৈরি ইয়াবা এবং মিয়ানমার থেকে চোরা পথে আসা ইয়াবার মধ্যে উপাদানগত অনেক পার্থক্য রয়েছে। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের উপ-পরিচালক শামিম আহমেদ ইত্তেফাককে বলেন, যে মাদকটিকে বাংলাদেশে ইয়াবা বলা হয়, ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে সেটি ক্রিস্টাল, আইয়নসহ নানা নামে পরিচিত। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ায় ১ টনেরও বেশি এ ধরনের মাদক আটক হয়েছে। ইয়াবায় এমসিটামিন নামের একটি পদার্থ থাকায় সেটি নেশার উদ্রেক করে।
সেবনকারীরা শরীরের অস্বাভাবিক কৃত্রিম শক্তির সৃষ্টি করে। সম্প্রতি দেশে তৈরি যেসব টেবলেট উদ্ধার হয়েছে তাতে এমসিটামিন নেই বলেই যথাসম্ভব জানা গেছে। তিনি জানান, ইতিপূর্বে মসুর ডাল দিয়ে তৈরি দেশি ভেজাল ইয়াবার অস্তিত্বও ধরা পড়েছে। অভিযান চলছে সকল সংস্থার পক্ষ থেকেই। বর্তমানে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে ইয়াবা বিরোধী অভিযানে মামলার পরিমাণ আগের তুলনায় দ্বিগুণ হয়েছে। আলামত উদ্ধারের পরিমাণ এবং গ্রেফতারের সংখ্যাও দ্বিগুণ। পাশাপাশি অন্যান্য সংস্থাগুলোও এই অভিযানে আছে। তিনি বলেন, মিয়ানমারের ইয়াবা পাচারের যে উত্স সেখানে বড় ধরনের আঘাত করা না গেলে এই সর্বনাশা মাদক রোধ করা সম্ভব নয়।
এদিকে মহানগরীসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে ইয়াবা সেবনের আস্তানার খোঁজ-খবর প্রায়শঃ মিলছে। সমুদ্র সৈকত পার্কিতে ঝুপড়ি ঘরগুলো ইয়াবা সেবনের বড় আখড়া বলে জানান সেখানকার কয়েকটা সূত্র। পার্কিতে আগে সমুদ্র পথে ইয়াবা আসতো। এখন স্থলপথে আসছে বলে জানা গেছে। চট্টগ্রাম মহানগরীতেও স্টেশন রোড, বরিশাল কলোনি, শহিদ লেইন, আকবর শাহ, বিভিন্ন বাজার ও মার্কেটের চিপাগলিতে ইয়াবা সেবন চলে বলে তথ্য মেলে। আবার ইয়াবা সেবন স্থল ঘন ঘন পরিবর্তিত হয় বলেও জানা যায়।
পরিবেশবাদী সংগঠন পিপলস ভয়েস চট্টগ্রামের সভাপতি শরিফ চৌহান ইত্তেফাককে বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরীতে ইয়াবা কারখানা আবিষ্কার একটি অশনি সংকেত। নগরীতে এ রকম আরো কারখানা থাকতে পারে। এসব কারখানায় যেসব পদার্থ দিয়ে মাদক তৈরি হচ্ছে তা যুব সমাজের স্বাস্থ্য নষ্ট করছে। এগুলো এখনই নির্মূল করা না গেলে এদেশের বিপুল সংখ্যক তরুণ মানসিক ও শারীরিকভাবে পঙ্গুত্ব বরণ করবে।