বৈঠকে রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণ ইস্যু এড়িয়ে যান সু চি : জাতিসংঘ দূত
27, December, 2017, 2:23:53:PM
জাতিসংঘের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে রোহিঙ্গা নারীদের মিয়ানমারের সৈন্যদের দ্বারা ধর্ষণের বিষয়টি এড়িয়ে যান দেশটির স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি। মিয়ানমারে জাতিসংঘের বিশেষ দূত প্রেমিলা প্যাটানের বরাত দিয়ে এই খবর প্রকাশ করে দ্য গার্ডিয়ান।
যৌন নির্যাতন ও সহিংসতা বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত প্রেমিলা ৪ দিনের সফরে মিয়ানমার আসেন এবং এই সংকট নিয়ে দেশটির প্রশাসনকে তার উদ্বেগের কথা জানান।
গার্ডিয়ানকে প্যাটান জানান, মিয়ানমারে সু চির সঙ্গে জাতিসংঘের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বৈঠকে রোহিঙ্গা নারী ও কিশোরীদের সঙ্গে চলা সহিংসতা ও নির্যাতন নিয়ে কোন আলোচনা হয়নি। সু চি দেশটির সামরিক বাহিনী, সীমান্ত রক্ষী বাহিনী এবং রাখাইনের বৌদ্ধ সৈন্যদের দ্বারা সংঘটিত যৌন সহিংসতা নিয়ে বাস্তবসম্মত কোন আলোচনা করতে প্রত্যাখ্যান করেন।
গত সপ্তাহে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টনিও গুতেরেসের কাছে লেখা এক চিঠিতে প্যাটান বলেন, ‘মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলের সঙ্গে হৃদতাপূর্ণ পরিবেশে ৪৫ মিনিট ব্যাপী আলোচনা হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হল, এর কোন কার্যকারিতা ছিল না।’
প্রসঙ্গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমার বাহিনীর নতুন সহিংসতার শিকার হয়ে দেশটির মুসলিম সংখ্যালঘু রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। ৬ লাখ ৫৫ হাজার শরণার্থীশিবিরে পালিয়ে আসলেও মিয়ানমার বাহিনীর জাতিগত নিধনযজ্ঞের শিকার হয়ে নারী ও শিশুসহ ৬ হাজার ৭০০ রোহিঙ্গা নিহত হয়। বেঁচে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা নারী ও কিশোরীদের প্রায় সকলেই ধর্ষণ ও গণ-ধর্ষণের মত বর্বরতার শিকার।
প্যাটান তার চিঠিতে আরো বলেন, ‘এই অভিযোগ নিয়ে সরাসরি কোন আলোচনার করার বদলে সু চি আমাদের জানান, তিনি জাতিসংঘ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক উপভোগ করছেন। বৈঠকে সু চি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ও সরকারের প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে আমাদের জানান, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গা ইস্যুকে অতিরঞ্জিত করছে। তিনি এও বলেন, যারা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে গিয়েছে তারা বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠির সঙ্গে জড়িত এবং আইন লঙ্ঘনকারী।’
মিয়ানমারের সেনা বাহিনীর রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণ, নির্যাতন ও জাতিগত নিধন নিয়ে করা অভ্যন্তরীণ তদন্তকে উড়িয়ে দিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো। প্যাটান লিখেন, ‘ওই তদন্ত দলের প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আয়ে উইন আমাকে জানান, তাদের এই সামরিক তদন্ত বৃহত্তরভাবে চালানো হয়েছিল এবং প্রতিটি সম্প্রদায়ের নিজস্ব মতামত নেওয়া হয়েছিল, এতে কোন অভিযোগ খুঁজে পাওয়া যায় নি।’ তার মতে, ‘৮০০ জনের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছিল কিন্তু এর মধ্যে একজনও নিরাপত্তা ও পুলিশ বাহিনী কর্তৃক কোন যৌন সহিংসতা ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর কোন নির্যাতনের অভিযোগ নেই।’
মিয়ানমারের বাহিনীর বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতার অভিযোগ তদন্ত করা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের গবেষক স্কে উইলার বলেন, ‘মিয়ানমার একটি ‘ভয়ঙ্কর সত্য’ অস্বীকার করছে। তাদের সঙ্গে যা ঘটছে এটি জঘন্য ও ভয়াবহ অপরাধ।’ গার্ডিয়ানকে তিনি বলেন, ‘সু চি ও মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ সৈন্যদের দ্বারা নৃশংসভাবে ধর্ষণের স্বীকার রোহিঙ্গা নারী ও কিশোরীদের নিয়ে উদাসিনতা দেখাচ্ছে। এটিও এক প্রকার হামলা। প্রথমে তাদের বিরুদ্ধে ধর্ষকদের লেলিয়ে দেয়া এবং এরপর এটি অস্বীকার করা।’