ভয়বহ যানজটের কবলে পড়েছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক। আজ মঙ্গলবার ভোর রাত থেকে নরসিংদীর কান্দাইল থেকে পাঁচদোনা মোড় পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার এবং টঙ্গী-পাঁচদোনা সড়কের পাঁচদোনা থেকে ঘোড়াশাল হয়ে গাজীপুরের মিরেরবাজার পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার সড়ক অচল হয়ে আছে। জানা যায়, কাঞ্চন সেতু মেরামতের কারণে ঢাকা বাইপাস বন্ধ এবং দুর্ঘটনায় কয়েকটি গাড়ি বিকল হওয়ায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক এবং টঙ্গী-পাঁচদোনা সড়কে এই তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। আজ দুপুরে কান্দাইল বাসস্ট্যান্ড থেকে পাঁচদোনা মোড় হয়ে ঘোড়াশাল পর্যন্ত ঘুরে এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মেরামত কাজের জন্য গত ২০ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত ঢাকা বাইপাস সড়কের কাঞ্চন সেতুতে যান চলাচল বন্ধ থাকে। ২৩ তারিখ থেকে সীমিত আকারে যান চলাচল শুরু হলেও ভারী যানবাহন এখনও ওই সেতু দিয়ে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। গাজীপুর জেলা হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. তারেক আহম্মেদ বলেন, রাস্তা কাটার কারণে এক লাইন করে গাড়ি ছাড়ছে। এ কারণে যানবাহনের জট লেগে গেছে। তিনি জানান, জেলা পুলিশের সদস্যদের পাশাপাশি ট্রাফিক পুলিশের ছয় জন এসআই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছেন। রাস্তায় কাজ চলছে। দুদিক থেকে গাড়ি টানতে পারছে না। এ কারণে এখনও বলা যাচ্ছে না যানজট কখন ছাড়বে। তবে এখন যা পরিস্থিতি তাতে যানবাহন আস্তে আস্তে চলতে পারছে। জানা যায়, ওই রুটের চালকদের আপাতত টঙ্গী-ঘোড়াশাল-পাঁচদোনা সড়ক ধরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ব্যবহার করার নির্দেশনা দিয়েছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। এই কারণে চট্টগ্রাম থেকে গাজীপুর এবং উত্তরবঙ্গগামী যানবাহনের চাপ বেড়েছে সিলেট মহাসড়ক এবং টঙ্গী-পাঁচদোনা সড়কে। কিন্তু এই সড়কেও উন্নয়নকাজ চলায় ভাটপাড়া এলাকায় মোটামুটি ১০০ মিটার এলাকায় সড়কের এক লেন বন্ধ রয়েছে। সড়কের ওই অংশে ২ মুখী যানবাহন এক লেন দিয়ে চলার কারণে দুদিকেই যানবাহন আটকে জট দীর্ঘ হচ্ছে। এই অবস্থার মধ্যে মঙ্গলবার ভোরে ভাটপাড়া এলাকায় একটি কাভার্ডভ্যান বিকল হলে পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে পড়ে। এছাড়া সিলেট মহাসড়কের ভগীরথপুর এলাকায় পাকিজা স্পিনিং মিলের সামনে সকাল সাড়ে ৬টায় সিলেটগামী মিতালী পরিবহনের সঙ্গে একটি পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। ফলে দুদিক থেকে যান চলাচল কিছু সময় বন্ধ থাকে। আজ সকালে সিলেট মহাসড়কের পাঁচদোনায় কথা হয় দিনাজপুর থেকে সিলেটগামী একটি ট্রাকের চালক পারভেজ রানার সঙ্গে। তিনি বলেন, জট দেখে মিরেরবাজার থেকে ঘুরে ঢাকা হয়ে আসেন তিনি। কিন্তু এরপরও যানজট এড়াতে পারেননি। গতকাল রাইতে মিরেরবাজার আসছি। জ্যাম দেইখা ট্রাক ঘুরাইয়া ঢাকার বাড্ডা, রামপুরা হইয়া ডেমরা দিয়া এই দিকে আসছি। কিন্তু সকালে সাড়ে ৫টার সময় মাধবদী আইসা আবার জ্যামে পড়ছি। এই ৩ কিলোমিটার রাস্তায় সাড়ে ৪ ঘণ্টা ধইরা আইটকা আছি। ঘোড়াশালে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের কাভার্ড ভ্যান চালক মো. বশির উদ্দিন জানান, কক্সবাজার থেকে এসে ভোর ৫টায় মাধবদীর আগে যানজটে পড়েন তিনি। সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত তিনি পাঁচদোনা মোড়ে পৌঁছাতে পেরেছেন। এই ৫ কিলোমিটার জায়গা আইলাম সাড়ে ৫ ঘণ্টায়। হাতে পায়ের গিরায় ব্যথা হয়্যা গ্যাছে ভাই। চট্টগাম থেকে গাজীপুরের কালিয়াকৈরগামী গার্মেন্ট পণ্যের একটি ট্রাকের চালক আসলাম জানান, বাইপাস সড়ক বন্ধ থাকায় এই সড়কে এসে যানজটে আটকে গেছেন তিনি। বাইপাস সড়কে তো সব সময় যানজট লাগে। রাতেও মদনপুর থেকে গাউসিয়ার পথে কিছুটা যানজট ছিল। কিন্তু মাধবদী আসার পর গাড়ি আর আগায় না। এইখানে পাক্কা তিন ঘণ্টা। যানজটে ভোগান্তিতে পড়েছেন দূরপাল্লার বাসের যাত্রীরাও। ইউনিক পরিবহনের যাত্রী অমৃত গুঁড়া মসলা কোম্পানির কর্মকর্তা পলাশ দাম জানান, অফিসের কাজে তাকে সিলেট যেতে হচ্ছে। কিন্তু সময়মত পৌঁছাতে পারছেন না। দুপুরের আগে সিলেট পৌঁছানো দরকার ছিল। কিন্তু এখানেই বসে আছি প্রায় ২ ঘণ্টা। এই জ্যাম কখন ছাড়ে আর কখন পৌঁছাব কিছুই বুঝতে পারছি না।