চলতি বছরেও এসএমই ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে বঞ্চিত হয়েছেন নতুন নারী উদ্যোক্তারা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসের তথ্য নিয়ে ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণে জানা গেছে, সামগ্রিকভাবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে (এসএমই) ঋণ বিতরণ বাড়লেও এই খাতে নতুন উদ্যোক্তার মধ্যে ঋণ বিতরণের পরিমাণ কমেছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত হয়েছেন নতুন নারী উদ্যোক্তারা।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০১৭ সালের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) নারী উদ্যোক্তাদের মধ্যে এসএমই ঋণ বিতরণ করা হয়েছে দুই হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা। এর আগের বছরের একই সময়ে নারী উদ্যোক্তাদের মাঝে এসএমই ঋণ বিতরণ করা হয়েছিল ৩ হাজার ৮২ কোটি টাকার। সংশ্লিষ্টরা জানান, নারী উদ্যোক্তারা কাক্সিক্ষত হারে ঋণ পাচ্ছে না। তবে দেশে চলমান বিনিয়োগ মন্দার কালেও এই খাতে ঋণ বিতরণ বেড়েছে।
ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৬ সালের প্রথম ছয় মাসে ৭৭ হাজার ৬০১টি নতুন প্রতিষ্ঠান ঋণ পেলেও চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ঋণ পেয়েছে ৭৪ হাজার ৭৯৪টি নতুন প্রতিষ্ঠান। এছাড়া, ২০১৬ সালের প্রথম ছয় মাসে নতুন নারী উদ্যোক্তাদের দেওয়া হয়েছিলো ৫৯৫ কোটি টাকার এসএমই ঋণ, যা এ বছরের প্রথম ছয় মাসে ছিল ৪৯৯ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে ব্যাংকগুলো বিতরণ করা ঋণের মধ্যে ৬০ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা আদায় করেছে। চলতি বছরে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ১ লাখ ৩৩ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা এসএমই খাতে বিতরণের লক্ষ্য ঠিক করেছে। ২০১৬ সালে এ খাতে বিতরণের লক্ষ্য ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৫০৩ কোটি টাকা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে বিতরণ করা হয়েছে ৮৩ হাজার ৫০৬ কোটি টাকার এসএমই ঋণ, যা লক্ষ্যমাত্রার ৬২ দশমিক ৩৯ শতাংশ। এর মধ্যে ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে ৭৯ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা; আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বিতরণ করেছে ৪ হাজার ৩২৯ কোটি টাকা।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬ সালে মোট এক লাখ ৪৬ হাজারের বেশি নতুন উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান ঋণ পেয়েছিল। এর মধ্যে ১৩ হাজার ৭৪২ জন নতুন নারী উদ্যোক্তা পেয়েছিলেন এক হাজার ৯২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ঋণ। ২০১৫ সালে মোট নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা ছিল এক লাখ ৮৮ হাজার ২৩৩ জন।
ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে ২০১৬ সালের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে নারীরা ৮৫ কোটি টাকার ঋণ কম পেয়েছেন। গত বছরের প্রথম ছয় মাসে তারা ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে ঋণ পেয়েছিলেন ৬২৪ কোটি টাকা। এ বছরের একই সময়ে তারা ঋণ পেয়েছে ৫৩৮ কোটি টাকা। এছাড়া ট্রেড খাতে ২০১৬ সালের তুলনায় নারীরা একই সময়ে ঋণ কম পেয়েছেন ৫৪৫ কোটি টাকা। গত বছরের প্রথম ছয় মাসে ট্রেড খাতে তারা ঋণ পেয়েছিলেন ২ হাজার ১৭ কোটি টাকা। এ বছরের একই সময়ে তারা ঋণ পেয়েছেন ১ হাজার ৪৭১ কোটি টাকা।
নারী উদ্যোক্তারা প্রতিক্রিয়ায় বলেন, লোক দেখানো কার্যক্রম বাদ দিয়ে ব্যাংকগুলো সত্যিকার নারীবান্ধব হতে হবে। দেশের অর্থকাঠামো উন্নয়নে প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীরাও যেন এই ঋণ পেতে পারেন সে জন্য এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তারা।