রাস্তায় বেরুলে প্রতিনিয়ত শুনতে হয় গাড়ির কর্কশ হর্ন। গাড়ি চালকরা প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে হর্ন বাজিয়ে কানের বারোটা বাজিয়ে দেন। বিশেষ করে শহরে যাদের বসবাস ব্যাপারটির সঙ্গে তারা খুব ভালোভাবেই পরিচিত।
অথচ গত ১৮ বছর গাড়ি চালিয়ে একবারো হর্ন বাজাননি এক ব্যক্তি। কিন্তু তিনি গাড়ি চালিয়েছেন শহরের বিভিন্ন অলি-গলিতে। অনেকে শুনলে হয়তো বলেই ফেলবেন- দূর এসব বানানো গল্প। এটা কী করে সম্ভব?
তবে এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন কলকাতার গাড়িচালক দীপক দাস। এমন তাক লাগানো কর্মের জন্য তিনি পেয়েছেন ‘কলকাতা মানুষ সম্মান পুরস্কার।’ তার গাড়িতে শুধুমাত্র সাধারণ যাত্রী নয়, বিখ্যাত তবলা বাদক পণ্ডিত তন্ময় বোস, গিটারিস্ট কুণালসহ একাধিক নামকরা ব্যক্তি তার গাড়িতে চড়েছেন। তারা লক্ষ্য করেছেন, দীপক গাড়ির হর্ন বাজান না। শব্দ দূষণ কমাতে তার এই পদক্ষেপ। দীপকের এই কৃতিত্বকে সম্মান জানিয়েছে মানুষ মেলা।
এ প্রসঙ্গে দীপক দাসের ভাবনা চলুন তার মুখ থেকেই শুনি: ‘‘আমি মনে করি, প্রত্যেক চালকের উচিৎ ‘হর্ন পলিসি’ মেনে চলা। তা হলেই গাড়ি চালানোর সময় অনেক বেশি মনোযোগী ও সচেতন হওয়া যায়। এটা করা অসম্ভব নয়। কঠিনও নয়। দূরত্ব বজায়, স্পিড ঠিক রাখা ও সময় জ্ঞান ঠিকঠাক থাকলে কাউকে হর্ন বাজাতে হয় না।’’
কখনো কি যাত্রীরা হর্ন বাজানোর কথা বলেনি? এমন প্রশ্নের উত্তরে দীপক বলেন, ‘বলে, কিন্তু আমি তাদের বলি, এটা কোনো সমস্যার সমাধান হতে পারে না।’
দীপকের গাড়িতে একটি প্ল্যাকার্ড লাগানো থাকে। যেখানে লেখা রয়েছে, ‘হর্ন ইজ অ্যা কনসেপ্ট। আই কেয়ার ফর ইয়োর হার্ট।’ এ প্রসঙ্গে দীপক বলেন, ‘কোনো কিছু অর্জন করা যাবে না বা খুব কঠিন কাজ এটা ভাবা সম্পূর্ণ ভুল। আমি মনে করি, এ জন্য প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক সহযোগিতারও প্রয়োজন আছে।’
প্রসঙ্গত, মানুষ মেলার এটা দ্বিতীয় বছর। নিজ চেষ্টায় যারা সমাজে অবদান রাখছেন তাদের এই সংগঠনের পক্ষ থেকে সম্মান জানানো হয়। মানুষ মেলার অন্যতম উদ্যোক্তা সুদীপা সরকার বলেন, যারা দীপক দাসের গাড়ি ভাড়া করেছেন, কিংবা চড়েছেন তারা সকলেই তার এই অসামান্য কৃতিত্বের কথা বলেছেন। ফলে তিনিই এই পুরস্কারের দাবিদার। গত বছর এই সম্মান ঝুলিতে পুরেছেন বীণা উপাধ্যায়ক। নিজের আর্থিক অস্বচ্ছলতা সত্ত্বেও রাস্তার পশুদের উদ্ধার করে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করায় তাকে এই পুরস্কার দেয়া হয়।