একসময় বাংলাদেশের সব অঞ্চলেই বিয়ের বরযাত্রায় পালকির প্রচলন ছিল। পরে পালকির জায়গা দখল করে গরু ও মহিষের গাড়ি। তখন গাইবান্ধা শহরের থানসিংপুরের গ্রামবাংলার ঐতিহ্য নিয়ে ‘নোলক’ চলচ্চিত্রটি তৈরি হয়।
‘নোলক’ চলচ্চিত্রে ফেরদৌসী রহমানের গাওয়া আব্বাস উদ্দিনের জনপ্রিয় ‘ও কী গাড়িয়াল ভাই, কত রব আমি পন্থের দিকে চা আয়ারে’... গানটি মানুষের মুখে মুখে শোনা যেত।
কালের বিবর্তনে রিকশা, ভ্যান, টেম্পু, বাস, মাইক্রোবাস, বিমানসহ বিভিন্ন যানবাহনের প্রচলন বেড়ে যাওয়ায় গরু ও মহিষের গাড়ির ব্যবহার বিলুপ্ত হয়। বর্তমানে গ্রাম বাংলার এক সময়ের জনপ্রিয় ঐতিহ্যবাহী গরু বা মহিষের গাড়িতে বিয়ের জন্য বরযাত্রা আর চোখে পড়ে না।
গ্রামগঞ্জের এই ঐতিহ্যকে মনে করিয়ে দিতে এই ডিজিটাল যুগে গরুর গাড়িতে নিজের ছেলে আরিফুল ইসলামের বিয়ের বরযাত্রার আয়োজন করেন আব্দুন নুর। শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়নের চেরেঙ্গা গ্রামের আব্দুন নুর তার ছেলে আরিফুল ইসলামকে বর সাজিয়ে যাত্রী নিয়ে গরুর গাড়িতে করে একই উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের লিটন মিয়ার বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন।
গরুর গাড়িতেই বানানো হয় ছৈ ও পালকির ঘর। নানান রঙের কাপড় দিয়ে তা সাজানো হয়। গরুর গলায় ঘণ্টি ঝুলানো হয়। আর শিং মোড়ানো হয় লাল কাপড় দিয়ে। বরের গাড়ির সামনে লাগান হয় শুভবিবাহ লেখা ফোমের বোর্ড। পথের দুই ধারে ভিড় জমে যায় উৎসুক জনতার এবং মাঝে মাঝে থামিয়ে গরুর গাড়ির সঙ্গে ছবি তুলেছে সবাই।
দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে লিটন মিয়ার মেয়ে সুরাইয়া আকতারকে বিয়ে করতে বরযাত্রী নিয়ে হাজির হন আরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, যান্ত্রিক পরিবহনের চেয়ে গরুর গাড়িতে বরযাত্রী নিয়ে বিয়ে করতে আসায় বেশ ভালো লাগছে।
আব্দুন নুর বলেন, গ্রামীণ ঐতিহ্য ধরে রাখতে আমার ছেলের বিয়ের জন্য এরকম বরযাত্রার আয়োজন করি। এতে পুরনো ঐতিহ্য রক্ষা হলো, খরচও অনেক কম হলো। এ ধরনের আয়োজনে কনেপক্ষও খুশি হয়েছে। বর-কনের জন্য দোয়া প্রার্থনাও করেন তিনি।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার দরবস্ত ইউনিয়নের বালুয়া এলাকার বাসিন্দা ও গাইবান্ধা জেলা পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আরিফুল ইসলাম বিয়েতে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি ব্যবহার করায় মানুষের মধ্যে বিশেষ করে বৃদ্ধদের মধ্যে অতীত ঐতিহ্য স্মরণ করায় কৌতূহল সৃষ্টি করেছে।