কক্সবাজার জেলার চারটি সংসদীয় আসনের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু)। এ আসনটিতে রয়েছে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত।
এ আসনে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতের ত্রিমুখী লড়াই হবে বলে মনে করেন স্থানীয়রা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বছরখানেক বাকি থাকলেও কক্সবাজারে ইতিমধ্যে সরগরম হয়ে উঠেছে রাজনীতির মাঠ। নিজ নিজ ঘর গোছাতে ব্যস্ত প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো। সম্ভাব্য প্রার্থীরা ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টারের মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানিয়ে সময় পার করছেন। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী অর্ধ ডজন। আর বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর একজন করে প্রার্থী মাঠে সরব রয়েছেন। আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীর মধ্যে রয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী কানিজ ফাতেমা আহমেদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য রাশেদুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন সরওয়ার কাবেরী, রামু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোহেল সরওয়ার কাজল ও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক) চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমদ। এর মধ্যে বর্তমান সংসদ সদস্য কমলের পরিবারে তিনজন মনোনয়নপ্রত্যাশী। রামুতে আওয়ামী লীগের রাজনীতি বহুধাবিভক্ত।
ঘরের মধ্যেই ঘোর বিরোধী কমলের বড় ভাই দলীয় উপজেলা সভাপতি কাজল। একইভাবে দলীয় মনোনয়নে আশাবাদী বর্তমান সংসদ সদস্যের বোন নাজনীন সরওয়ার কাবেরীও। আর এ সুযোগ কাজে লাগাতে ভুল করবেন না সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। এ ছাড়া সফল নারী নেত্রী হিসেবে কানিজ ফাতেমা আহমেদের প্রতি মানুষের কিছুটা আগ্রহ আছে। মুজিবুর রহমানের পক্ষে একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার সমর্থন রয়েছে। দক্ষ সংগঠক হিসেবে দলীয় নেতা-কর্মীদের কাছে জনপ্রিয় রাশেদুল ইসলাম। দুঃসময়ে দলের পাশে দাঁড়ানোর জন্য তৃণমূল থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছেও গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে তার। দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা তাকে একবার মহাজোট থেকে মনোনয়নও দেন। আওয়ামী লীগ এখনো কক্সবাজার থেকে একজনও মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী করতে পারেননি। আর তাই আগামী নির্বাচনে বর্তমান কউক চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমদকে দিয়ে আওয়ামী লীগ সেই অভাবটি পূরণ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাই আগামী নির্বাচনে তাকেও দলীয় মনোনয়ন দিতে পারেন বলে ধারণা করছেন অনেকে। রামু উপজেলায় দুই ভাই কমল ও কাজলের দ্বন্দ্বে দলীয় কর্মকাণ্ড ঝিমিয়ে পড়েছে বলে দাবি করছেন আওয়ামী লীগের অনেক ত্যাগী নেতা-কর্মী। এ আসনে এবারও সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে বিএনপি। এ আসনে সবচেয়ে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী এবং কেন্দ্রীয় বিএনপির মত্স্যবিষয়ক সম্পাদক লুত্ফর রহমান কাজল। এ ছাড়া সংস্কারবাদী নেতার তকমা পাওয়া দলবিচ্ছিন্ন সাবেক এমপি শহিদুজ্জামান বিএনপিতে ফিরতে এবং মনোনয়ন পেতে কেন্দ্রে জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে তিনি সফল নাও হতে পারেন বলে জানান কক্সবাজার বিএনপির নেতারা। বিএনপি নেতা লুত্ফুর রহমান কাজল নিয়মিত মাঠ পর্যায়ে যোগাযোগ রাখছেন। ভোটারদের সঙ্গে তার ভালো সখ্য রয়েছে। এ ছাড়া বিএনপির পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত তিনিই একমাত্র প্রার্থী। বিএনপির এই প্রার্থীর অবস্থান অত্যন্ত শক্তিশালী। বিএনপি থেকে বিচ্ছিন্ন থাকলেও এখনো ইমেজ রয়েছে সাবেক এমপি শহিদুজ্জামানের। কক্সবাজারের রাজনীতির মাঠে জামায়াত সবসময় যথেষ্ট প্রভাব রাখে। কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যানের পদে আছেন জামায়াত নেতা। ফলে বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ নির্বাচনে গেলে জামায়াত ভোটব্যাংক হিসাব করে এ আসনটি চাইতে পারে। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জি এম রহিমুল্লাহ ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সলিমুল্লাহ বাহাদুর জামায়াতের মনোনয়ন পেতে স্থানীয়ভাবে এবং কেন্দ্রে যোগাযোগ শুরু করে দিয়েছেন। কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ তারেকের নাম জাতীয় পাটির প্রার্থী হিসেবে শোনা যাচ্ছে। জাপা চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের আস্থাভাজন নেতা হিসেবে জেলা জাপার সিনিয়র সহসভাপতি তারেকই হতে পারেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী।