ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে সাধারণত পর্যটনের মৌসুম পুরোপুরি শুরু হয়ে যায়, চলে ফেব্রুয়ারি-মার্চ পর্যন্ত। পরীক্ষা শেষের পর এ সময় স্কুল-কলেজে পড়ালেখার চাপ কম থাকে। আবহাওয়াও অনুকূল থাকে। এ সময় পর্যটন নগরী কক্সবাজার থাকে জমজমাট। হোটেল-মোটেলে সিট খালি পাওয়া যায় না। ছুটির দিনে থাকে উপচে পড়া ভিড়।
জানা গেছে, কক্সবাজারে পর্যটনের ভরা মৌসুমে সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও পর্যটকের দেখা মিলছে না। ভরা মৌসুমে পর্যটক-খরায় হতাশ পর্যটন ব্যবসায়ীরা। পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সাধারণত অক্টোবর থেকে পর্যটন মৌসুম শুরু হয়। ওই সময় থেকে আস্তে আস্তে কক্সবাজারে পর্যটক আসা শুরু করে। কিন্তু পর্যটনের মৌসুম শুরু হয় ১৬ ডিসেম্বরের পর থেকে। বছর শেষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হয়। এ সময় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা দল বেঁধে কখনো অভিভাবকদের সঙ্গে, কখনো স্কুলের শিক্ষকদের সঙ্গে কক্সবাজারে বেড়াতে আসে। এ ছাড়া ‘থার্টিফার্স্ট নাইট’ উপলক্ষে রেকর্ড পরিমাণ পর্যটক কক্সবাজারে বেড়াতে আসেন। নানা অনুষ্ঠানে জমজমাট থাকে কক্সবাজার।
কিন্তু থার্টিফার্স্ট নাইট উপলক্ষে সমুদ্রসৈকতে প্রতি বছর যেমন অনুষ্ঠিত হতো বিচ কার্নিভাল, কনসার্ট; এবার চলতি মৌসুমে এ ধরনের কোনো অনুষ্ঠান হয়নি। হোটেল-মোটেলসহ কোথাও বড় কোনো অনুষ্ঠান হয়নি। বিগত বছরগুলোতে এ সময় কক্সবাজারের পর্যটনকেন্দ্রগুলো পর্যটকে ভরপুর থাকলেও চলতি মৌসুমে তার অর্ধেকই নেই। এ ধরনের পরিস্থিতির জন্য রোহিঙ্গা ইস্যুকে দায়ী করছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের (ট্যুয়াক) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এস এম কিবরিয়াহ খান বলেন, ‘কক্সবাজারে পর্যটক না আসায় আমরা হতাশ। বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা ঢুকে পড়ায় একটা ভয় ছিল পর্যটকদের। সে কারণে অধিকাংশ পর্যটক চলতি মৌসুমে তাদের পছন্দের বেড়ানোর জায়গা থেকে কক্সবাজারকে বাদ দিয়েছে। আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি, আমাদের পার্শ্ববর্তী বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে পর্যটকে ভরে উঠেছে। সেখানকার প্রতিটি স্পটে পর্যটকদের হই-হুল্লোড় চলছে।’
সৈকত ঝিনুক মার্কেটের ব্যবসায়ী জালাল আহমদ জানান, ডিসেম্বরের শুরুতেই কিছু কিছু পর্যটক আসা শুরু হয়। এরপর বিজয় দিবসের প্রাক্কালে কিছুটা পর্যটক সংখ্যা বাড়ে। কিন্তু তা গত বছরের মতো একদমই ছিল না। তবে হতাশার কথা হলো, থার্টিফার্স্ট নাইটেও প্রত্যাশার অর্ধেক ছিল পর্যটক। পর্যটকের সুসময় জানুয়ারিতেও আশানুরূপ পর্যটকের দেখা মেলেনি। এখনো একই অবস্থা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, গত শুক্রবার ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন থাকলেও কক্সবাজারের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে পর্যটকের তেমন দেখা মেলেনি। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে স্থানীয় দর্শনার্থী ও পর্যটক মিলে কিছুটা ভিড় দেখা গেছে। অন্য পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে তেমন ভিড় নেই ছিল না বলে জানা গেছে।
কলাতলী সুগন্ধা পয়েন্ট ব্যবসায়ী সবুর আলম জানান, পর্যটনের ভরা মৌসুমেও আশানুরূপ পর্যটক না থাকায় বেচাকেনা যা হচ্ছে তা খুবই কম। এই বেচাকেনায় পোষাচ্ছে না ব্যবসায়ীদের। আগামীতেও এভাবে মন্দা গেলে ব্যবসায়িক ক্ষতির মুখে পড়বেন ব্যবসায়ীরা।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার জানান, শুক্রবার ও শনিবার ছাড়া সপ্তাহের অন্য দিনগুলোতে পর্যটকের আগমন প্রত্যাশার ২০ ভাগও হচ্ছে না। সেই কারণে হোটেল-মোটেলগুলোতে ব্যবসা মন্দা যাচ্ছে। সব হোটেল-মোটেল ও গেস্টহাউসকে লোকসান গুনতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।